#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১০
সাদ জ্ঞান ফিরলে দেখতে পেল সে এখনও রাস্তায় পরে আছে। সাদ হাত পা ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালো। হাঁটুর বেশ খানিকটা অংশ পরে গিয়ে কেটে গেছে। সাদ ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক ফিরে তাকালো।আশেপাশে কোথাও তমাকে দেখতে পেল না।
অন্ধকার নেমে গেছে চারপাশে। সাদের রাতের আঁধারে পথ চিনে;বাড়ি ফিরতে বেশ বেগ পেতে হলো। সাদ সোজা তমাদের বাড়িতেই ফিরে গেল। তমা উঠোনে বসে বসে আচার খাচ্ছে। সাদকে বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকতে দেখে তমা কিছুটা হকচকিয়ে উঠলো। আচারের বয়াম ফেলে দৌড়ে পালালো। সাদ হাঁটু চেপে ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে উঠোনে এসে বসলো। জুলেখা তখন সবেমাত্র রান্নাঘর থেকে বের হয়েছে। অন্ধকারে সাদের আবছা অবয়ব দেখেই চিনে ফেললেন। এগিয়ে গিয়ে দেখলেন সাদের হাঁটু, হাতের কনুইয়ের অংশে গভীর ক্ষত। র/ক্ত বের হচ্ছে একটু। জুলেখা দৌড়ে গিয়ে সাদকে বললো, “বাবা, তোমার এই অবস্থা হলো কী করে? পরে-টরে গিয়েছো না কি?”
সাদ প্রত্যুত্তরে কোনো জবাব দিলো না। জুলেখা সাদের চাহনি দেখে কিছু একটা আঁচ করে ফেললো। জোরে চিৎকার করে তমাকে ডাকলো। তমা আমতা আমতা করে জুলেখার সামনে এলো। জুলেখা তমাকে দেখামাত্রই চুলের মু/ঠি ধরে বসিয়ে দিলো এক ঘা। সাদ উঠোনের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রয়েছে। তমা ধপাস করে মাটিতে আছাড় খেয়ে পরলো। জুলেখা তমাকে মাটি থেকে ওঠার সুযোগ না দিয়েই বেদম পিটু/নি দিতে শুরু করলো। তমা জোরে জোরে মাগো বলে চিৎকার করতে শুরু করলো। সাদ উঠোন থেকে উঠে তাড়াতাড়ি জুলেখাকে পেছন থেকে সরিয়ে নিলো। তমা মাটিতে বসে কাঁদছে। জুলেখার চোখে রাগে দুঃখে জল চলে এসেছে। মেয়েটা আর কবে বুঝবে এসব? বেশি আদরে আদরে লাই দিয়ে ফেলেছে!
সাদ জুলেখাকে শান্ত করে ঘরে নিয়ে গেল। তমা উঠোনের এক কোনে মাথা গুঁজে বসে আছে। সাদ তমার পাশে গিয়ে চুপটি করে বসলো। গলা হালকা করে খাঁখারি দিয়ে উঠলো। তমা অগ্নি দৃষ্টিতে সাদের দিকে তাকালো। ক্রন্দনরত গলা বললো,” আবার এসেছেন কেন? একবার মার খাইয়ে শান্তি হয়নি? আবার নালিশ করতে এসেছেন? যান করুন নালিশ! আমার সঙ্গেই সবার যত শত্রুতা!”
সাদ নিজের থুতনিতে হাত বুলিয়ে বললো, ” আমি তো তোমার সঙ্গে কখনো শত্রুতা করতে চাইনি। তুমিই তো বারবার আমার সঙ্গে বিনা কারণে ঝগড়া করেছো। আমি কিছু বললেই আমাকে শুধু শুধু শাস্তি দিয়েছো। এবার বলো কে কার সঙ্গে শত্রুতা করতে গিয়েছে?”
তমা হাত ইশারা করে সাদকে বললো,”আপনি যান তো এখন! আমি আপনার সঙ্গে কোনো কথা বলবো না। আপনি এখন যান।”
সাদ অগত্যা উপায়হীন হয়ে তমার সামনে থেকে সরে গেল।
সকালে তমাদের বাড়িতে নাস্তা সেরে সাদ তমাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। বেলা তখন সকাল আটটা বেজে গেছে।সাদ নিজের বাড়িতে ঢুকতেই দেখলো, বাড়িতে সবাই এখনও ঘুমে। বাড়িতে সবাই একটু দেরি করেই ঘুম থেকে ওঠে। আঙুর বালা উঠোনে বসে বসে পান চিবোচ্ছে। আর কাজের লোকেরা কাজ করছে।এছাড়া বাড়িতে সবাই গভীর নিদ্রায়।
তমা সাদের সামনে থেকে দৌড় দিয়ে সরে গেল। আঙুর বালা পানের পিক ফেলে; তমাকে উদ্দেশ্য বললো,” এই ছেঁ/ড়ি এত লাফালাফি হুরাহুরি করোস ক্যা? পইরা তো ঠ্যাং ভাঙবি!”
তমা আঙুর বালার কথায় পাত্তা দিলো না। দৌড়ে গিয়ে ছাঁদে উঠলো। ছাঁদে গিয়ে তমা দেখলো,ছাঁদের কড়কড়ে রোদে পাটি বিছিয়ে আচারের বয়াম সাজিয়ে রাখা। তমা চুপিসারে একটা আচারের বয়াম নিজের হাতে তুলে নিলো। বয়ামের মুখ খুলে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে এক থবলা আচার নিয়ে নিলো। এরপর বয়াম আবার আগের মতো সাজিয়ে রাখলো।
আচার শেষ করে হেলেদুলে ছাঁদের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো তমা। বাড়ির সবাই সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছে। তমা মাথায় ঘোমটা দিয়ে ভদ্র মেয়ের মতো নিচে নামলো। নাদিয়া পুতুলকে কোলে নিয়ে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। তমা নাদিয়ার সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। পুতুলও তমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। তমা আলতোভাবে পুতুলকে হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিলো। পুতুল তমার কোলে গিয়ে হেসে তমার দিকে তাকালো। অনিতা পেছন থেকে তমাকে বললো,”এই দুটো কিন্তু তোমার ননদ। আদরে রেখো।”
তমা পুতুলের পিঠে হাত ছুইঁয়ে অনিতার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
সাদ ফোনে গেমস খেলছে। নাদিয়া অধীর আগ্রহে সাদের পাশে বসে তা দেখছে। একটা ছোট্ট বিড়াল ফোনের স্ক্রিনে। বিড়ালটাকে গোসল করাতে হয়। খাওয়াতে হয় এটাই নাদিয়ার সবচেয়ে পছন্দের গেমস। সাদ গেমস খেলবে শুনলেই নাদিয়া সাদের পাশে বসে বসে গেমস খেলা দেখে। গেমসটার নাম (Angela)। নাদিয়া এত শুদ্ধ করে গেমসের নাম বলতে পারে না। নাদিয়ার ভাষায় এই গেমসটার নাম ইনজেলা। সাদের হাতে ফোন দেখলেই নাদিয়া সবার প্রথমে বলবে,” ভাইয়া, ইনজেলার গেম খেলি চলো।”
তমা পুতুলকে কোলে নিয়ে সাদের ঘরে ঢুকলো। সাদ পুতুলকে দেখেই আদুরে ভঙ্গিতে হাত ইশারা করে বললো,” আমাল পুতুল সোনাটা কোথায় রে!”
পুতুল ছোট ছোট হাত বাড়িয়ে দিলো সাদের দিকে। সাদ তমার কাছ থেকে পুতুলকে নিজের কোলে উঠিয়ে নিলো। তমা চোখ কুঁচকে সাদের দিকে তাকালো। সাদ নিজের ফোনট নাদিয়ার হাতে দিয়ে দিলো। নাদিয়া মনের মাধুরি মিশিয়ে গেমস খেলছে। আর সাদ পুতুলকে নিয়ে দুষ্টুমিতে মেতে রয়েছে। তমা নাদিয়ার পাশে গিয়ে বসলো। ফোনের স্ক্রিনে উঁকি দিয়ে দেখলো। নাদিয়া বিড়ালটাকে গোসল করিয়ে জামা পরাচ্ছে। তমাকে নিজের পাশে বসতে দেখে নাদিয়া তমার হাতের বা’পাশে হেলান দিয়ে বসলো। ফোনের স্ক্রিনের দিকে আঙুল দিয়ে তমাকে বললো,”বলো তো কোন জামাটা সুন্দর? ইনজেলা কোনটা পরবে?”
তমা নাদিয়ার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না। কোনো জবাব না দিয়ে সেভাবেই বসে রইলো। সাদ ব্যস্ত পুতুলকে নিয়ে। আর নাদিয়া ব্যস্ত ফোন নিয়ে। তমা বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো। হেলে দুলে উঠোনের সামনে ঘুরাঘুরি শুরু করলো। আঙুর বালা তমাকে দেখতে পেল। দেখেই তমার দিকে এগিয়ে গেল। পান চিবুতে চিবুতে তমাকে বললো,” এত ঘুরাঘুরি করিস পা ব্যাথা করে না রে?”
তমা আঙুর বালার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনি ঘুমের ঘোরো ভসভস করে নাক ডাকেন। আমি কী কখনো আপনাকে বলেছি যে, এত নাক ডাকেন নাক ব্যাথা করে না কেন?”
আঙুর বালা তমার কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। রেগেমেগে তমাকে বললো,”নাক ডাকলে আমি ডাকসি। তোর কী রে? আমার নাক যতবার ইচ্ছা আমি ডাকমু। তুই কওয়ার কে? নাক ডাকানি হুনতে ভালা না লাগলে কানে তুলা গুইজা থো।”
তমা আঙুর বালাকে ভেঙিয়ে বললো, “আমার পা আমি হাঁটবো। তাতে কার কী? আমার পা দেখে হিংসে হলে নিজের পায়ে দুটো বারি মারুন। সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
আঙুর বালা রাগে কড়মড় করতে করতে তমার দিকে তাকালো। তমা সেদিক খেয়াল না করে বললো,” নিজের তো লাঠি ভর করে হাঁটাচলা করতে হয়। তাই,আমার পা দেখে এত হিংসে হয়। থাক বুড়ো হলে এমনিই হবে। তুমি আর দুঃখ করো না।”
আঙুর বালাকে কিছু বলার সুযোগ না
দিয়ে তমা গানের সুর ধরে বললো,”লাঠিওয়ালা দাদু মেরা গানা বাজা দো। লাঠিওয়ালা দাদু মেরা গানা বাজা দো। গানা বাজা দো!”
আঙুর বালা তমার দিকে ধেড়ে এসে বললো,” অস/ভ্য ছেড়ি! তোর একদিন কী আজ আমার একদিন কী! আমি এহনও কত জোয়ানী আমারে কস বুড়ি। বজ্জা/ত মাইয়া তোরে কী করি দেহিস তুই!”
চলবে….