লবঙ্গ লতিকা পাঠ-১৩

#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১৩

রাতে তমা আঙুর বালার ছোট্ট বাটন ফোনটা নিয়ে অনেকক্ষন গুঁতোগুতি করলো। সাদের নাম্বারটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অবশেষে সাদের ফোন নাম্বারটা খুঁজে পাওয়া গেল। একেবারে সবার শেষে ছিল সাদের নাম্বার। তাই নাম্বার খুঁজে পেতে এত বেগ পেতে হয়েছে।

তমা ফোন হাতে একবার পাশ ফিরে তাকালো। নাহ! আঙুর বালা ঘুমিয়ে পরেছে। এবার আর কোনো চিন্তা নেই। তমা কাঁপা কাঁপা হাতে সাদকে একটা কল দিলো।সাদ ফোন রিসিভ করে বললো,”হ্যালো”
তমা সাদের গলার স্বর শুনতে পেয়ে কিছুটা কেঁপে উঠলো। যেন কত যুগ ধরে এই কন্ঠটা তমা শোনেনি। তমা চুপ করে ফোন কানে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সাদ অপর প্রান্ত থেকে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। তবু, তমা একেবারে নিরুত্তর।

তমা শেষ পর্যায়ে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বললো,”হ্যালো।” সাদ উদ্বিগ্নতা কাটিয়ে উত্তর দিলো,”এত রাতে কল দিলে কেন দাদু? বেশি সমস্যা হচ্ছে? শরীর খারাপ লাগছে? ছোট চাচ্চুকে কল দেবো?”

তমা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো, “আমি তমা!” সাদ কিছুটা চমকে উঠে কানে হাত দিলো। সত্যিই কী এটা তমার গলা? তমা এত রাতে ফোন দেবেই বা কেন? সাদ গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো,”হুম বলো।”

তমার এবার বেশ মন খারাপ হলো। ভেবে ছিল সাদ হয়তো তমার কথা শুনে খুশি হবে। কিন্তু নাহ! সাদ তো আরো হতাশ হয়ে কথা বললো। তমা উদাস কন্ঠে বললো,” না,কিছু না। আমি ফোন রাখছি।” তমা এটুকু বলেই ফোনটা রেখে দিলো। হঠাৎ টুং করে একটা আওয়াজ হলো। তমা বাটন ফোনটায় কান পাতলো। আওয়াজটা কোনো ম্যাসেজের। তমা ম্যাসেজের ওখানে গিয়ে দেখলো, সাদের ফোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ এসেছে। তমা আগ্রহের সহিত ম্যাসেজটাতে চোখ বোলালো। তাতে লিখা ছিল,”এরপর ফোন দেওয়ার হলে নিজের ফোন থেকে দিও। অন্যের ফোন নিয়ে হাতাহাতি করার অভ্যাস পাল্টাও।”

তমা নিজের নতুন ফোনটা দিয়ে সাদের ফোনে একটা কল দিলো। রিং বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সাদ রিসিভ করে হ্যালো বললো। তমা কোনো কথা না বলে ফোন কেটে দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো। শফিক ভাইয়ের থেকে শিখেছিল কীভাবে এসব বড় বড় ফোন দিয়ে কল দিতে হয়।

সাদ তমার নাম্বারটা টুকে রাখলো। ফোনে সেভ করলো লবঙ্গ লতিকা নামে। লবঙ্গ লতিকা নামটার কথা মনে হতেই সাদ একটু মুচকি হাসলো। নাহ! তমা মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না। সারাদিন শুধু তমার কথা মাথায় ঘুরছে!

আঙুর বালা রোদে উঠোনে বসে বসে পান চিবোচ্ছে। তমা উঠোনের পেয়ারা গাছটার ডাল ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। আঙুর বালা ইশারায় তমাকে নিজের কাছে ডাকলো। তমা আঙুর বালার কাছে এসে বসলো। আঙুর বালা পেছনে ঘুরে পানের পিক ফেলে তমাকে বললো,” কীরে কালকে রাতে এমনে ফ্যাচ ফ্যাচাইয়া কানলি ক্যা?”

তমা ইতস্তত হয়ে বললো,” মায়ের কথা মনে পরছিল তাই ”

আঙুর বালা ঠোঁট টিপে হেসে বললো,”মার কথা মনে পরে না কি নিজের জামাইয়ের কথা মনে পরে?”

তমা লজ্জায় মুখ লুকোলো। আঙুর বালা তমার থুতনি ধরে বললেন,” হুন, আমার লগে এডি লইয়া মিথ্যা কথা কইয়া লাভ নাই। তোগো বয়স আমরাও পার কইরা আইসি। জামাইয়ের লাইগা হারারাইত কাইন্দা সকালে উইঠ্যা কবি মার লাইগা কানসি এডা কিন্তু হইবো না। কালকে তুই যে চুরি কইরা রাইতে বেলা ওরে ফোন দিলি। কী কইসে ও?”

তমা মুখ লুকিয়ে বললো,” কী বলবে? আমি লজ্জায় কল কেটে দিয়েছি।”

আঙুর বালা তমার মুখ উঁচু করে ধরে বললেন,”প্রথম প্রথম এমনি লজ্জা থাকবো। পরে দেখবা নিজেই জামাইয়ের পিছে পিছে ঘুরতাসো।”

তমা ভ্রু নিচু করে বললো,” মোটেও না!”

আঙুর বালা হেসে বললেন,” আমার কথা মিলাইয়া নিস। কয়দিন হ্যানে আসিলো তাই গেসে গা দেইখা কাইন্দা মরলি। এহন আবার এডি কস। ”

তমা উঠোন ছেড়ে দৌড়ে পালালো। এই বুড়িটাও যা তা! খালি লজ্জা ফেলে দেয়!

তমা পুতুলকে কোলে নিয়ে বসে আছে। পাশে নাদিয়াও বসে আছে। নাদিয়ার হাতে পাঁকা কলা। ছোট ছোট দাঁত দিয়ে কুট কুট করে কামড় দিয়ে খাচ্ছে। তমা নাদিয়ার হাত থেকে একটু কলা ভেঙে নিলো। আঙুল দিয়ে মিহি টুকরা করে পুতুলের মুখে গুঁজে দিলো। পুতুল টুপ করে গিলে ফেললো। দাঁতও গজায়নি এখনও পুতুলের। তাতেই এই দশা! পুতুল মুখে থাকা খাবার শেষ করে তমাকে আঙুল দিয়ে ইশারা করলো। আরেকটু কলা ভেঙে মুখে দেওয়ার জন্য। তমা বুঝতে না পেরে এদিক ওদিক তাকালো। পুতুল দিশা না পেয়ে তমার আঙুল ঠোঁট দিয়ে চাটতে শুরু করলো। তমা সুরসুরি লাগায় তমা আঙুল সরিয়ে হেসে ফেললো। পুতুলের দিকে তাকিয়ে তমা হেসে বললো,” দুষ্ট বুড়ি শুধু দুষ্টুমি করে! পঁচা মেয়ে! ” পুতুল কিছু না বুঝেও তমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। তমা পুতুলের গাল দুটো ধরে টুকুস করে একটা কামড় দিয়ে বসলো।

বিকেলে সাদের ছোট চাচা রাফসীন কাজের লোক দিয়ে উঠোনের উত্তর দিকে থাকা পেয়ারা গাছ থেকে পেয়ারা পারিয়েছে। তমা আঙুর বালার ঘরে বসে বসে সেই পেয়ারা খাচ্ছে। একেবারে ডাঁসা ডাঁসা সব পেয়ারা। আঙুর বালা কচকচ করে পেয়ারা খাওয়ার শব্দ শুনে তমার দিকে তাকালো।

আঙুর বালাকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে, তমা আরো জোরে আঙুর বালাকে দেখিয়ে দেখিয়ে পেয়ারায় কামড় বসালো। আঙুর বালা এক পর্যায়ে রেগে গিয়ে তমাকে বললো,” ওই ছেঁ/ড়ি! জীবনে পেয়ারা খাস নাই? এমন আওয়াজ কইরা কইরা খাস ক্যা?”

তমা পেয়ারায় কামড় বসাতে বসাতে বললো,” কেন? তোমার হিংসে হয় না কি?”

আঙুর বালা পান চিবুতে চিবুতে বললেন,” ক্যা? আমার হিংসা ক্যা হইবো?”

তমা পেয়ারায় বড় একটা কামড় বসিয়ে বললো,” হিংসে যদি না হয় তবে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? জীবনে খাওনি পেয়ারা? না কি আমার মতো এত সুন্দর করে পেয়ারা খেতে পারো না বলে আফসোস হয়?”

আঙুর বালা রেগে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে বললো,” কী কইলি! আমি তোর খাওন দ্যাহা পারি না? তোরে হিংসা করি?”

একথা বলে আঙুর বালা পেয়ারা ঝুড়ি থেকে একটা পেয়ারা বার করলো। তাতে তমার মতো করে জোরে একটা কামড় বসালো। কচ করে জোরে একটা আওয়াজ হলো। তমা চমকে উঠে আঙুর বালার দিকে তাকালো। হঠাৎই তমা জোরে শব্দ করে হেসে উঠলো। আঙুর বালা নিজের হাতে থাকা পেয়ারার দিকে তাকালো। নিজের একটা দাঁত ভেঙে একেবারে আঁটকে গেছে পেয়ারায়। আঙুর বালা আয়নায় গিয়ে চোখ কুঁচকে তাকালো। তারপরে বিছানার নিচ থেকে একটা ঝাড়ু নিয়ে তমার দিকে নিক্ষেপ করে জোরে চিৎকার করে বললো,” শয়/তান ছেড়ি! অস/ভ্য মাইয়ালোক! তোর লাইগা আমার একটা দাঁত পইরা গেসে! বেয়া/দব মাইয়া!”

তমা কোনো রকমে উঠে দৌড়ে পালালো ঘর থেকে। বাইরে গিয়ে দম ফাটিয়ে হাসতে লাগলো। শেষে কিনা এই বুড়ো বয়সে পেয়ারা খেতে গিয়ে দাঁত হারাতে হলো! হায় কপাল!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here