লবঙ্গ লতিকা পাঠ-১৪

#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১৪

আঙুর বালা আলমারি থেকে তমার জন্য সোনার আংটি,চেইন,কানের দুল এসব বের করে রেখেছেন। নতুন বউ যদি একটু সেজেগুজে না থাকে তাহলে কী আর বউ মনে হয়? বিয়ের এতদিন হয়ে গেছে তবুও পাড়ার লোকেরা নতুন বউকে দেখতে আসে।

তমা হাতে নতুন সোনার আংটি পরলো। কানে দুল পরলো। গলায় চেইন পরলো।একটা নতুন নাকের ফুলও দিয়েছে আঙুর বালা। তমা সেটাও আস্তে করে নিজের নাকে পরে ফেললো। তমার নাক আগে থেকেই ফোড়ানো। তাই আর বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়নি।

তমার একটা বিষয় নিয়ে বেশ মন খারাপ। অনিতা ফোন করে বলেছে কালকে থেকে তমাকে স্কুলে যেতে হবে। পড়াশোনায় ফাঁকি দেওয়া কোনোভাবেই চলবে না। এখন থেকে রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে সোজা তমা ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাবে। সন্ধ্যা হলেই ব্যাগ নিয়ে পড়তে বসবে।

দুপুর বেলা খাওয়া দাওয়া শেষ করে আভুর বালা বিছানায় শরীর এলিয়ে ঘুমিয়ে পরলেন। তমা চুপিচুপি নিজের ডয়ার থেকে নিজের ফোনটা বের করলো।সাদের নাম্বারে একটা কল দিলো। প্রথমবার রিং হলেও সাদ কল রিসিভ করার আগেই কেটে গেল। তারপর সাদ নিজে থেকেই তমাকে ফোন দিলো। তমা কল রিসিভ করে সাদকে বললো,”আপনার মায়ের সমস্যাটা কী? আমার পড়াশোনা নিয়ে এত ঘাটাঘাটি করছে কেন? বিয়ে হয়ে গিয়েছে সংসার করবো। এখন আবার স্কুলে গিয়ে ক্লাস করতে হবে কেন? পড়াশোনা করারই বা কী দরকার? ”

সাদ কানের সামনে ফোন নিয়ে জোরে চিৎকার করে বললো,”কীহ! তোমার মনে যদি এসব চিন্তা ঘোরে তো বাদ দাও। পড়াশোনা করতেই হবে তোমাকে। পড়াশোনা করা ছাড়া কোনো মানুষের কাছে মূল্য পাবে না। সময় থাকতে ভালো হয়ে যাও তমা। আমি তোমার ব্যাপারে প্রতিদিন খোঁজ নেবো। যদি শুনেছি পড়াশোনা বাদ দিয়ে সারাদিন টইটই করছো। তো,দেখো কী অবস্থা করি তোমার।”

তমা বিলাপের স্বরে সাদকে বললো,” ধুর! আমার ভালো লাগে না পড়াশোনা। সারাদিন শুধু পড়া আর পড়া। ছাতার মাথা!”

সাদ নিবিড় কন্ঠে তমাকে বললো,” শোনো, ভালো স্টুডেন্ট হওয়ার জন্য সারাদিন গরুর মতো পড়াশোনা করতে হয় না। কিছু টেকনিক মাথায় থাকলেই হয়। ”

তমা উৎসাহী কন্ঠে বললো,” কী টেকনিক?”

সাদ তমার প্রশ্নের উত্তরে বললো,” পরে শিখিয়ে দেবো। এখন যাও নিজের কাজে যাও।”

তমা আদুরে কন্ঠে বললো,”থাকি না আরেকটু? এই একটু!”

সাদ তপ্ত কন্ঠে তমাকে বললো,”উহুম,একটুও না। নয় এখন ঘুমাবে নয় পড়তে বসবে। কিন্তু তিরিং বিরিং করা মোটেও চলবে না।”

সাদ এটুকু বলেই ফোন কেটে দিলো। তমা অভিমানের অকূল সাগরে গা ভেজালো। কত শখ করে আজ একটু ফোন দিয়েছিল। তবুও এতটুকু মায়া দয়া নেই। কীভাবে নির্দয়ের মতো ফোনটা রেখে দিলো। এখানে থাকাকালীন কত গল্প করতো সাদ।সারাদিন ঘুরাঘুরি করতো! আর এখন! সারাদিনে তমার একটুও খোঁজ নেয় না। একটা বার মনেও করে না তমার কথা। তমা বিক্ষিপ্ত হৃদয়ে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেল। আঙুর বালা কিছুক্ষন পরই তমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললেন। তমাকে নিয়ে আজ একটু কেনাকাটা করতে বের হবেন। নতুন বউ তেমন কিছু কিনেও দিতে পারেননি। অনিতা নিজে এসব কিছু করতে চাইলেও পারেননি। তমার সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারেননি অনিতা। এরপর তো চলেই গেলেন। তাই আঙুর বালাকে বলেছেন, তমার পছন্দ অনুযায়ী তমাকে কিছু কেনাকাটা করে দিতে।

তমা বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো। আঙুর বালা তমাকে বললেন তৈরি হয়ে নিতে। তিনি তমাকে সঙ্গে নিয়ে বাইরে যাবেন।

তমা আর আঙুর বালা বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় নাদিয়াও বায়না ধরলো। সেও তাদের সঙ্গে যাবে। তমা আদর করে নাদিয়ার ছোট দুটো হাত ধরে আঙুর বালার সঙ্গে বেরিয়ে পরলো।

আঙুর বালা তমাকে নিয়ে বড় বাজার মার্কেটে ঢুকলো। এখানে মেয়েদের জামা কাপড় বেশি ভালো পাওয়া যায়। তমা অনেকক্ষন বাছাবাছি করার পর জামাকাপড় কিনলো। আঙুর বালা নাদিয়া আর পুতুল দু’বোনের জন্যও দুটো জামা নিলেন। জামাকাপড় দর্জির কাছে বানাতে দিয়ে আসার সময় তমা আঙুর বালাকে বললো,” আমি একটু বাথরুমে যাবো। তুমি দাঁড়াও তো এখানে।”

আঙুর বালা নাদিয়ার হাত ধরে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো। তমা বাথরুমে গিয়েছিল অন্য উদ্দেশ্যে। উদ্দেশ্য সাধন করে তমা মুচকি হাসতে হাসতে আঙুর বালার সঙ্গে বাড়ি ফিরে গেল।

বাড়ি ফিরে নাদিয়া নিজের নতুন জামা পরে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তমা পুতুলকেও নতুন জামা পরিয়ে দিলো। তমা আদুরে গলায় পুতুলকে বললো,” বাবুন সোনা কী বেরু দিতে যাবে? কোথায় যাবে ময়না পাখিটা?”

পুতুল কিছু না বুঝেও খিলখিল করে হাসলো। হাত পা নাড়িয়ে নাড়িয়ে বিছানায় বসে খেলতে লাগলো। সন্ধ্যার পর সাদ নিজেই তমাকে ফোন দিলো। তমা কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে সাদ বললো,” আমার নাম্বার কী তুমি কাউকে দিয়েছো তমা? এত কল আসছে কেন ফোনে? দু’মিনিট পরপর কী সব অজানা মানুষজন কল দিয়ে বলছে টিস্যু পেপার কিনবে। আমি কী টিস্যু বিক্রেতা না কি?”

তমা মুখে হাসি চেপে রেখে বললো,” আমি কী জানি? আমি আপনার নাম্বার আর কাকে দেবো?”

সাদ এটুকু শুনে তমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। অগত্যা ফোন কেটে দিলো তমা। ফোনের লাইন কেটে দিয়ে জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো তমা। এটা তখন ফোন কেটে দেওয়ার ফল। ওরনার আঁচলে একটা কলম বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল তমা।সে সময়ে মার্কেটের বাথরুমে গিয়ে বাথরুমের দেয়ালে সাদের নাম্বার লিখে দিয়ে এসেছে তমা। শুধু এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বাথরুমে কোনো টিস্যু পেপার ছিল না। তাই দেয়ালে সাদের নাম্বারের ওপরে লিখে দিয়েছে, ” পাইকারি দরে টিস্যু পেপার বেচি। কেউ নিতে চাইলে এই নাম্বারে যোগাযোগ করুন।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here