লবঙ্গ লতিকা পাঠ-১৫

#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১৫

তমা সকালে ঘুম থেকে উঠেই আগে নিজেদের বাড়িতে গেল। সেখান থেকে নিজের বিদ্যালয়ের পরনে পোশাকটা নিয়ে এলো। তারপর নাস্তা করে বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে।

অনেকদিন পরে তমাকে শ্রেনীকক্ষে উপস্থিত দেখে সবাই অবাক। তমা হচ্ছে বিশ্ব ফাঁকিবাজ। মাঝেমধ্যে শ্রেনীকক্ষে উপস্থিত থাকে। তারপর আবার বেশ কিছুদিনের জন্য হাওয়া! যখন ইচ্ছে হয় তখন শ্রেনীকক্ষে আসে আরকি।

তমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বৃষ্টি এসে তমার পাশে বসলো। শ্রেনীকক্ষে উপস্থিত না থাকলেও তমার সাথে বৃষ্টির নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তমার বিয়ের দিনও তমার সাথেই ছিল বৃষ্টি। বৃষ্টি সাদকেও দেখেছে। সাদের পাদ নামক নামটা তমার বৃষ্টিরই আবিষ্কার করা।

তমা আর বৃষ্টি সামনের বেঞ্চের দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বসলো। নাহলে,বোর্ডের লিখা দেখা যায় না ঠিকঠাক ভাবে। তমা খেয়াল করলো পাশের কয়েকটা মেয়ে কী একটা হাতে নিয়ে যেন কাড়াকাড়ি করছে। তমা বৃষ্টিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বোঝালো। বৃষ্টি অঙ্গভঙ্গি করে বোঝালো সেও জানে না কী। তমা এবার বাধ্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো,” এই তোদের হাতে কীরে?”

মেয়েগুলো একজোট হয়ে তমাকে বললো,”বলবো,কিন্তু কথা দিতে হবে কাউকে বলতে পারবি না। আমাদের মধ্যেই থাকবে সবকিছু। ”

তমা আশ্বাস দিয়ে মেয়েগুলোকে বললো, “যা কথা দিলাম।”

মেয়েরা চুপিচুপি ব্যাগ থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট বার করলো। তমা সিগা/রেটের প্যাকেট ওদের হাতে দেখে চমকে উঠলো।তমা চমকে উঠে মেয়েগুলোকে বললো,”ইয়া আল্লাহ! তোদের হাতে এসব কী? কে দিয়েছে এগুলো?”

মেয়েগুলো হাতের পিঠে সিগা/রেটের প্যাকেটটা লুকিয়ে বললো,” বলিস না কাউকে! তুইও ভাগ পাবি। চিন্তা করিস না।”

এটুকু বলেই তমার হাতে সিগা/রেটের প্যাকেট থেকে একটা সিগা/রেট বের কীে গুঁজে দিলো। তমা কিছু বলার আগেই ক্লাসের ঘন্টা দিয়ে দিলো। অগত্যা তমা লুকিয়ে সবার আড়ালে গিয়ে সিগা/রেটটা নিজের ব্যাগে লুকিয়ে রাখলো।

ক্লাস শেষ করে তমা সোজা বাড়িতেই এলো। এসেই আঙুর বালার বাটন ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন ঘাটাঘাটি করলো। অনিতার নাম্বার থেকে একটা ম্যাসেজ এসেছে। তাতে সাদের নতুন সিমের নাম্বার দেওয়া আছে। তমা তা দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো। সাহস থাকলে আর কখনো তমার সাথে মেজাজ দেখানোর মতো সুযোগ পাবে না সাদ। তমা অতি গোপনে নিজের ফোনে সাদের নাম্বারটা টুকে রাখলো। এখন থেকে সাদকে এই নাম্বারেই কল দেবে।

পুতুল আর নাদিয়াকে নিয়েই তমার দিনের বেশিরভাগ সময় কেটে যায়। হেরা সারাদিন কাজকর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। প্রথম প্রথম তমাকে খুব একটা পছন্দ না করলেও এখন খুব একটা খারাপ লাগে না। তমা প্রচন্ড মিশুক প্রকৃতির একটা মেয়ে।খুব সহজেই আদর ভালোবাসা আদায় করে নিতে পারে।

আঙুর বালা প্রতি দিনকার মতোই খেয়ে দেয়ে দুপুর বেলা ঘুমোতে গেলেন। তমা যেন আজ এই সুযোগটারই অপেক্ষা করছিল। তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে সাদের নাম্বারে কল দিলো। আঙুর বালা জেগে থাকলে সাদের সাথে তমা কথাই বলতে পারে না। দু/ষ্ট বুড়ি শুধু বারবার তমার সামনে ওসব নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে।

ফোনের রিং বাজতেই সাদ ফোন ধরলো। নাম্বারটা সাদের চেনা। তাই ফোনটা ধরতে আর অসুবিধে হয়নি। সাদ ফোন ধরতেই তমা বললো,”হঠাৎ নাম্বার পরিবর্তন করলেন কেন?”

সাদ ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,”আগের নাম্বারটা মেইবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। আজগুবি সব লোকজন কল দিয়ে বিরক্ত করছিল। তাই, সিম চেঞ্জ করে ফেলেছি। তা কী বলবে বলো।”

তমা মুখ গোমড়া করে বললো,” কিছু না, এমনি ফোন দিয়েছিলাম।”

সাদ ফোন অন্য হাতে নিয়ে বললো,” আচ্ছা, আমি রাখছি তাহলে। পরে কথা হবে।”

তমা তাড়াতাড়ি সাদকে বললো,” কী করছেন আপনি? সবসময় এত ব্যস্ততা দেখান কেন? আগে তো এত ব্যস্ত থাকতেন না। এখন দূরে ওই শহরে গিয়েছেন বলেই এত ভাব এত ব্যস্ততা? রাখুন আপনি ফোন। আমি কথা বলবো না আর আপনার সঙ্গে। আর কখনো কথা বলবো না আপনার সঙ্গে। ”

তমা রাগ করে ফোন কেটে দিয়ে বসে রইলো। সাদ আরো কয়েকবার কল দিলো। কিন্তু, তমা রাগে বিছানায় ঠেস দিয়ে শুয়ে ছিল। আর তুলবে না সাদের ফোন। যা ইচ্ছে হোক। সাদের সঙ্গে আর কোনো কথা নেই তমার।

আঙুর বালা বিকেলে নামাজ আদায় করে উঠোনে গিয়ে পানের ডাবা খুলে বসলো। সুপারি, জর্দা, চুন, সাদা পাতা দিয়ে মুড়ে একটা পানের খিলি বানিয়ে মুখে পুরলো। নাদিয়া উঠোনে বসে বসে হাঁড়ি-পাতিল খেলছে। আর পুতুল ঘরে ঘুমিয়ে আছে। তমা পা টিপে টিপে উঠোনের কোনে দাঁড়িয়ে আঙুর বালার অবস্থান লক্ষ্য করলো। জলদি আবার আঙুর বালার ঘরে ঢুকে ঘরের দরজা হালকা করে লাগিয়ে দিলো।

ব্যাগ থেকে চুপিসারে সিগা/রেটটা বার করলো। আহা! কত দিনের শখ এই জিনিসটা একবার টেষ্ট করার। শফিক ভাই চায়পর দোকানে বসে বসে সিগা/রেট খেতো। সেই থেকে তমার খুব শখ।সেও শফিকের মতো সিগা/রেট খাবে।
আঙুর বালার ঘরের টেবিলের ডয়ার থেকে ম্যাচের বাক্সটা বের করে সিগা/রেটে আগুন ধরালো। দু’আঙুলের মাঝে সিগা/রেটটা পুরে দিয়ে জোরেশোরে একটা টান দিলো। মুহুর্তেই তমা জোরে জোরে কাশি দিয়ে উঠলো। সিগা/রেটের ধোঁয়া নাকে মুখে ঢুকে গেছে। পুরো ঘর ধোঁয়া ধোঁয়া হয়ে গেছে। তমা তাড়াতাড়ি সিগা/রেটট নিভিয়ে আগের জায়গায় রেখে দিলো। হঠাৎই ঘরে আঙুর বালা প্রবেশ করলো। ঘরময় এত ধোঁয়া দেখে তমাকে বললো,” কীরে বউ ঘরে এত ধোঁয়া ক্যা?”

তমা আমতাআমতা করে বললো,” কই ধোঁয়া? কুয়াশা পরেছে তো তাই এমন লাগছে দেখতে।”

আঙুর বালা নাক কুঁচকে তমাকে বললো, “ওই ছে/ড়ি তোর মাথা কী আছে না গেছে? এই কু/ত্তা কোকাইন্না গরমে তুই কুয়াশা পাস কই?”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here