লবঙ্গ লতিকা পাঠ-২৪

#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ২৪

“তমা দেখো তো কোন শাড়িটা বেশি সুন্দর? ” অনিতা এটুকু বলেই তমার দিকে বেশ কিছু শাড়ি এগিয়ে দিলো। তমা কিছুটা দ্বিধায় পরে গেল। দোকানে এত এত শাড়ি। কোনটা থেকে কোনটা বেছে নেবে? তমা শাড়িগুলো আবার অনিতাকে এগিয়ে দিয়ে বললো,” আমার তেমন পছন্দ অপছন্দ নেই। আপনি পছন্দ করুন আম্মু।”

অনিতা বেছে একটা নীল বেনারসি শাড়ি বের করলো। তমাকে দেখিয়ে বললো, এই “শাড়িটা কত সুন্দর। দেখো তমা! পছন্দ হলে বলো এটাই নেবো।”

তনার পাশাপাশি সাদও শাড়িটার দিকে একবার তাকালো। কিন্তু, পরোক্ষনেই আবার মুখ ফিরিয়ে নিলো। মা যে বলেছিল তমাকে লাল শাড়ি পরিয়ে ঘরে তুলবে? তাহলে এখন কথার বরখেলাপ করলো কেন? সাদ একবার কথাটা মুখ ফুটে বলতে চাইলো। তবে, সেই সুযোগ পেল না। তমাও সম্মতি জানিয়ে দিয়েছে। শাড়িটা তমারও বেশ পছন্দ হয়েছে। অনিতা ওই নীল বেনারসিটাই নিয়ে নিলো তমার জন্য। অনুষ্ঠানের দিন তমা এটাই পরবে।

কেনাকাটা শেষ করে সবাই খুশি মনে বাড়ি ফিরলো। সাদের মন প্রচন্ড খারাপ। এমন কেন হলো তাঁর সঙ্গে? কত স্বপ্ন বুনে ছিল এই লাল শাড়ি নিয়ে। মা কেন লাল শাড়ি কিনলো না? বেছেবুছে ওই কড়কড়া নীল শাড়িটাই কেন নিলো? কী কড়কড়ে রঙ! দেখলেই চোখ ঝলসে যায়! মা তবুও ওই বা/জে রঙের শাড়িটাই নিলো তমার জন্য!

সাদ দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি থেকে বের হলো। রিকশা ভাড়া করে বেনারসি পল্লি পৌঁছালো। আজকে অফিস কামাই দিয়েছে সাদ। সকালে গিয়েছিল বউ ভাতের অনুষ্ঠানের জন্য কার্ড ছাপাতে দিতে। এরপর তমার শাড়ি কেনার জন্য বেনারসি পল্লিতে এসেছিল।

সাদ বহু খোঁজাখুজির পর আগের দোকানটার খোঁজ পেল। ভেতরে ঢুকেই দূর থেকে একটা লাল শাড়ির দিকে ইশারা করে দোকানদারকে প্যাক করে দিতে বললো। এই শাড়িটাই তখন সাদের পছন্দ হয়েছিল। মাকে বলার আগেই মা ওই নীল শাড়িটা নিয়ে নিলো। নাহলে, নিশ্চিত এই শাড়িটাই সাদ তমার জন্য নিয়ে নিতো।

সাদ শাড়িটা নিয়ে বাড়ি ফিরে চললো। শাড়িটা তো কেনা হলো। তবে, তমাকে এই শাড়িটা দেবে কীভাবে? মা যদি রাগ করে?
সাদ এক প্রকার চিন্তায় পরে গেল শাড়ি নিয়ে। বাড়ির সবাই নিশ্চিত এটা নিয়ে হাসাহাসি করবে।!

সাদ বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেল। বাড়ি ফিরে সাদ দেখলো তমা সোফার রুমে বসা। সাদ শাড়িটা তমাকে দিয়ে বললো,” এটা পড়ো অনুষ্ঠানের দিন।” সাদ কথা শেষ করেই চলে এলো। ভীষন লজ্জা লাগছিল সেই মুহূর্তে তমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে। কিন্তু, কিছুই করার ছিল না। আর যাইহোক, অনুষ্ঠানের দিন তমা লাল শাড়ি পরবেই!

তমা শাড়িটা হাতে নিয়ে হতবিহ্বলের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। এখন কী হবে? একবার হাত দিয়ে শাড়িটা বের করে দেখলো তমা। শাড়িটা খুব সুন্দর। সিঁদুর লাল! কিন্তু, অনিতাও তো একটা শাড়ি দিয়েছে। কোনটা পরবে তমা?

তমা ঘরে গিয়ে অনিতাকে শাড়িটা খুলে দেখালো। অনিতা জিজ্ঞেস করলো,” এই শাড়িটা কে দিলো? আমি তো তোমার জন্য অন্য শাড়ি কিনেছি।” তমা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো,” সাদ দিয়েছে! ” অনিতা প্রথমে একটু বিষ্মিত হলো। তাঁর এত লাজুক ছেলেটা বউয়ের জন্য শাড়ি কিনে নিয়ে এলো? তাও কাউকে না জানিয়ে! অনিতা তনার অগোচরে মুচকি হেসে বললো, “তোমার ইচ্ছে যেটা খুশি পরো।”
তমা চিন্তিত গলায় বললো, ” কিন্তু”
অনিতা তমাকে কিছু না বলতে দিয়ে নিজেই বললো,” তোমার বর তোমার জন্য শাড়ি কিনে এনেছে। আমার আর কী বলার থাকতে পারে? তোমরা তো আর ছোট না।”
তমা এরপর অভয়ে শাড়ির প্যাকেটটা হাতে নিয়ে চলে গেল।

সাদ সকালে অফিসে যাবে। তমা আর অনিতা তখন রান্নাঘরে। আঙুর বালা ডাইনিং রুমে বসে আছে। সাদ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বললো,” আম্মু আমি গেলাম। তুমি গেটটা লাগিয়ে দাও।”

অনিতা কাজের ব্যস্ততায় তমাকে গেটটা লাগিয়ে দিয়ে আসতে বললো। সাদ চলে গেছে ভেবে তমা যে-ই না গেটের সামনে দাঁড়িয়েছে তখনই সাদ তমার গালে একটা জোরে চিমটি কেটে দিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে। গাল ঘষতে ঘষতে তমা বিরক্তমাখা মুখ নিয়ে জোরে গেট লাগালো। এটা কোন ধরনের অসভ্য/তামী!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here