#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ৩
আজকে সাদদের পুরো বাড়িতে মিলাদ পরানো হবে। এটা যদিও আঙুর বালার ইচ্ছে। তাই কেউ আর দ্বিমত করেনি। তমাদের বাড়ি থেকে সাদদের বাড়ির দুরত্ব খুব বেশি নয়। তাই,সকাল সকাল তমাকেও চলে আসতে বলেছেন অনিতা। সাদও বাড়ির কাজে আজ বেশ ব্যস্ত। এতিমখানা থেকে বাচ্চাদের নিয়ে আসতে বলেছেন অনিতা সাদকে। এছাড়াও বাড়িতে আজ বেশ কাজের চাপ। বাবুর্চি দিয়ে রান্না করাচ্ছেন বাড়িতে।
তমা ধীর পায়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো। অনিতা বাড়ির উঠানে পিঁড়ি পেতে বসে ছিলেন। তমা ঘোমটা ঠিক করতে করতে অনিতার সামনে গিয়ে অনিতাকে সালাম দিলো। অনিতা তমার সালামের জবাব দিয়ে তমাকে পাশে বসতে বললো। এবং তমাকে প্রশ্ন করলেন “কার সাথে এসেছো?
তমা ধীর কন্ঠে উত্তর দিলো, “ভাইয়ার সঙ্গে” অনিতা তমাকে আবার বললেন,”এসো। এবার আমার পাশে চুপটি করে বসো।”
তমা অনিতার পাশে বসতেই অনিতা তমাকে ভালো মন্দের ব্যাপারে বলতে শুরু করলো। তমা অনিতার পাশে বসে অনিতার কথা শুনে যাচ্ছে। আর একটু পরপর মাথা নাড়াচ্ছে। যতই হোক অনিতা তমার গুরুজন। হবু শাশুড়ী বলে কথা।
বাড়ির কাজে নিয়োজিত একজন হঠাৎ এসে বললেন, “আম্মা আপনারে দাদীজান ডাকে।” অনিতা শাশুড়ির কথা শুনেই উঠে দাঁড়ালেন। দৌড়ে শাশুড়ির ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
তমা উঠানের এক পাশে একা বসে রইলো। আশেপাশে টুকটাক মানুষজন আছে। তবে, এদের কাউকেই তমা চেনে না। তাই আর আগ বাড়িয়ে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেনি।
তমার কথা সাদ জানে না। সাদ রান্নাঘর থেকে এক কাপ চা নিয়েই বাড়ির উঠানে গা এলিয়ে দিয়ে বসলো। হঠাৎ খেয়াল করলো তমা সেখানে। সাদ চায়ের কাপ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ক্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেল তমার দিকে। তমা সাদকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ঘোমটা ঠিক করে আঁটসাঁট হয়ে বসলো। সাদ চায়ে চুমুক দিতে দিতে তমার পাশে এসে বসলো।
সাদকে নিজের পাশে বসতে দেখেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো তমা। সাদ ঠাট্টার ছলে তমাকে বললো, “তোমাকে আবার কে দাওয়াত দিলো?” তমা কিছু বলার আগেই সাদ আবার তমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,”ওহ, আমার তো মনেই নেই। তোমার আবার কোনো দাওয়াত ফাওয়াত লাগে না। তুমিই হচ্ছো বিনা দাওয়াতী মেহমান। ”
তমা রেগে গিয়ে সাদের দিকে তাকালো। সাদ তমাকে কটাক্ষের স্বরে বললো, “এভাবে তাকাচ্ছো কেন? আমি ভয় পেয়েছি সত্যি! দেখো ভয়ে আমার কিডনির হাড্ডি ভেঙে গেছে! ”
তমা আর সহ্য করতে না পেরে এবার সাদকে বলেই ফেললো, “আপনার খেয়ে দেয়ে কোনো কাজ নেই?যখনই দেখি শুধু আমার পেছনে পরে থাকেন। আমি জানি আমি সুন্দরী তাই বলে এত পেছনে পেছনে ঘুরতে হবে?”
সাদ চায়ের কাপটা পাশে রেখে তোমার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,” আহারে পারাম সুন্দারী! সুন্দর আন্নের বায়ি বায়ি ফরে। এক্কান বালতি হাতি দি? তোমাকে পুরো জং/লী বিড়ালের মতো লাগছে! মনে হচ্ছে এখনি এগিয়ে এসে কামড়ে দেবে।”
তমা রেগে গিয়ে এবার সাদের হাতে বড় করে দুটো আঁচড় দিলো। সাদ ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো। সাদের চিৎকার শুনে তমা শান্তির নিঃশ্বাস ফেললো। সাদ তমাকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে বললো,” তুমি আসলেই একটা জং/লী বেড়াল! দেখো আমার হাতটা পুরো লাল হয়ে গেছে! বেয়া/দব মেয়ে!
তমা চেঁচিয়ে উঠে সাদকে বললো,” তাহলে আপনি কী? আপনি তো কুকুর! কালকে আমার আঙুলে ওভাবে কামড় বসালেন কেন?
সাদ উত্তেজিত হয়ে তমাকে বললো,” তো কী করবো? চুমু দেবো তোমায়? তুমি বেয়া/দবি করবে আর আমি শাসন করলেই দোষ? ”
তমা সাদের কথা শুনে জিহ্বা বের করে সাদ ভেংচি কাটলো। সাদ তোমার হাতদুটল জাপটে ধরে বললো,” কালকে কুকুর বললে কেন আমাকে? তোমার কী আমাকে কুকুর মনে হয়?”
তমা সাদের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বললো,” তো কী বলবো? কুকুরকে তো আর বিড়াল বলা যায় না।”
সাদ তমার দিকে তাকিয়ে বললো, ” বিড়াল তো তুমি! একটা জংলি বিড়াল! শুধু মানুষকে খামঁচি দিয়ে বেড়াও। খামঁচি রানী!”
তমা উঠোন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সাদকে উদ্দেশ্য করে বললো,” এর শোধ আমি তুলবোই তুলবো! বজ্জাত ছেলে!”
সাদ পেছন থেকে উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করলো। তমা একবার রাগী চোখে পেছন ফিরে তাকালো। তাকিয়ে শুধু সাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখলো। এরপর আবার সোজা বরাবর হাঁটতে শুরু করলো। সাদ তমার রাগ দেখে আবারও হেসে ফেললো।
বাড়ির সবার সাথেই হাতে হাতে কাজ করছে তমা। তমার আচরণ দেখে আঙুর বালা তো বলেই ফেললেন “কী লক্ষী মেয়ে দেখেছো? কীভাবে সবাইকে আপন করে নিলো!”
অনিতা অবশ্য শাশুড়ীর কথায় চুপ করে ছিলেন। তমা আসলেই অতিরিক্ত লক্ষী একটা মেয়ে। সাদের বিয়ে নিয়ে অনিতার শাশুড়ির প্রতি চাপা একটা রাগ কাজ করলেও। এই রাগের প্রভাব তমার ওপরে অনিতা পরতে দেয়নি। যে কিছু জানে না বোঝে না তাঁর ওপর রাগ ঝেড়ে কোনো লাভ নেই। ছোট্ট মানুষ! এখন কিছু বলেও কোনো লাভ নেই। কিছুই বুঝবে না।
তমা সবার হাতে হাতে কাজ করার সময় খেয়াল করলো অনেকটা সময় ধরে সাদ তাঁর পিছু পিছু ঘুরছে। তমা সবার থেকে একটু দূরে গিয়ে সাদকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে বললো,” যাদের কোনো কাজ নেই তাঁরাই মানুষের পেছনে ঘুরাঘুরি করে। আমি কিন্তু ভালো! আমি আজকে অনেক কাজ করেছি হুহ!”
সাদ তমার দিকে তেড়ে গিয়ে তমাকে বললো,” আমি সকাল থেকে গাধার মতো খাটা-খাটনি করেছি। তোমার থেকেও বহুগুণে বেশি কাজ করেছি আমি। এখন এটুকু করেই অহংকারে মাটিতে পা পরছে না তোমার।”
তমা সাদের কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে বললো,” গাধা তো গাধার মতোই খাটবে!”
সাদ তমার কথা শুনে বেশ রেগে গেল। তমার একেবারে সামনে গিয়ে বললো,”তুমি আমাকে গাধা বললে?”
তমা বেশ ঢঙ্গি স্বরে বললো,”তো আমি কী গাধাকে ঘোড়া বলে ডাকবো?”
সাদ এবার তমার প্রতি বেশ রেগে গেল। তমা মাথার ঘোমটা ঠিক করতে করতে সাদকে বললো,” আর কী যেন বললেন একটু আগে? আমার মাটিতে পা পরছে না? তো আমি কী হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছি? হাত পা ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছি? ”
সাদ রাগ সহ্য না করতে পেরে তমাকে বললো,” বাচ্চা মানুষ ভেবে কিছু বলছি না তোমাকে। নাহলে দেখতে কী করতাম।”
তমা আঙুল উঁচু করে সাদের দিকে এগিয়ে গেল। রেগে গিয়ে বললো,” কী করবেন আপনি? দেখি কী করবেন!
সাদ টুপ করে তমার আঙুলে আগের বারের মতো কামড়ে দিলো। তমার দিকে আরও এক হাত এগিয়ে গিয়ে বললো,” এভাবে কামড়ে দেবো।”
তমা সাদের কথায় কোনো নজর না দিয়ে বললো,” ভালোই হলো। আমার আর হাত ধুতে হলো না।একটু আগে নাকের ময়লা পরিস্কার করেছিলাম এই আঙুল দিয়ে।”
তমা এটুকু বলেই আঙুলটা নিজের নাকের ভেতর গুঁজে দিলো। সাদ আর এক মুহুর্তে সেখান দাঁড়ালো না। ওয়াক! করে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল। পেছন থেকে শুধু শুনতে পেল তমার হাসির শব্দ।
চলবে…