লবঙ্গ লতিকা পাঠ-৪

#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ৪

গ্রামে বেড়াতে আসলে একটা জিনিস সবচেয়ে বিরক্ত লাগে সাদের। সন্ধ্যা হয়ে গেলেই সব একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এরমধ্যে আবার আজকে কারেন্ট চলে গেছে। গরমে অতিষ্ঠ সাদ! একে তো গরম এরমধ্যে সব অন্ধকার। বিরক্ত হয়ে ফোনটা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল সাদ। আর ভালো লাগে না! কবে যে বিয়েটা শেষ হবে। তাহলে অন্তত নিজের বাড়িতে গিয়ে একটা শান্তির ঘুম ঘুমানো যাবে।

সাদ ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে হাঁটতে শুরু করলো। কেমন একটা ঝিঁঝি আওয়াজ চারপাশে। হয়তো ঝিঁঝি পোকারই আওয়াজ হবে।

সাদ নিরব কবির ন্যায় পথ চলতে শুরু করলো। মাঝে রাস্তায় বেশ কয়েকজনকে টর্চ লাইট নিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখেছে। অনেকেই রাতে ছিপ দিয়ে মাছ ধরে। রাতে মাছ ওঠেও ভালো। সাদ অজানা গন্তব্যের দিকে পা বাড়িয়েছে। একেবারে অজানাও বলা যায় না। তমাদের বাড়ি এদিকেই। এপাশেরই কোনো একটা বাড়ি হবে হয়তো। অন্ধকার হওয়ায় খুব একটা চেনা যাচ্ছে না।দিনের আলোয় সবকিছু স্পষ্ট চেনা গেলেও;রাতের বেলা খুব কষ্ট। অন্ধকারে সবকিছু ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা মনে হয়। চেনা জিনিসও প্রচন্ড অচেনা লাগে।

কারেন্ট চলে যাওয়াতে বাড়িতে গরম লাগলেও। বাইরে বেশ ঠান্ডা। সাদ ফোনের ফ্লাশলাইট ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে শুরু করলো। সাদ হঠাৎ একটা বাড়ির দিকে আলো নিক্ষেপ করলো। হঠাৎ সেখান থেকে একটা মহিলার গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে চমকে উঠলো সাদ। মহিলা কন্ঠটি চেঁচিয়ে উঠে সাদকে বলছে,”লাইট মারে ক্যাডারে? মহিলা মাইনষে খারায় রইসে। তাও কোনো শরম লজ্জা নাইগ্যা। আরও লাইট মাইরা তাকায়া তাকায়া দ্যাহে! বেশ/রম জানি কোনহানকার! ”

সাদ বিপদের সংকেত বুঝতে পেরে দ্রুত সেই স্থান হতে প্রস্থান করলো। এগোতে এগোতে বেশ সামনে চলে এলো। আরেকটু এগোলেই দু-রাস্তার মোড়। সাদ হালকা ভাবে কারো গলার স্বর শুনতে পেল। প্রথমবার আমলে না নিলেও দ্বিতীয়বার ব্যাপারটা খেয়াল করলো। আওয়াজের সূত্র ধরে কিছুটা এগিয়ে গেল। বড় উঠোনে একটা মেয়েসহ কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়ে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে কী যেন পরছে।পাশে রাখা বেশ কয়েকটা মোমবাতি। বাতাসে বারবার নিভু নিভু করছে আলো। সাদ একটু সময় নিয়ে চারপাশটা তাকিয়ে দেখলো। ওহ! হ্যাঁ! মনে পরেছে! এটাই তো তমাদের বাড়ি। আচ্ছা, সামনে থাকা মেয়েটা কী তমা? সাদ কী তমাকে ডেকে কথা বলবে? সাদ এবার এক প্রকার বিড়ম্বনায় পরে গেল। একটু একটু অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে। এটা যদি তমা না হয়? তাহলে তো মানুষ অন্য কিছু ভাববে। সাদ হঠাৎ গলা খাখাড়ি দিলো। সাদের সামনে থাকা মেয়েটি চমকে উঠে সাদের দিকে তাকালো। সাদ হালকা শব্দ করে বললো,”তমা!”

তমা সাদের গলা শুনে বুঝতে পারলো এটা আসলে সাদ। তমা তাঁর সাথে থাকা বাচ্চাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললো,”এই তোরা পড়তে থাক। আমি একটু আসছি।”

তমা এটুকু বলেই উঠোন মাড়িয়ে সাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। ভ্রু কিছুটা কুচকে সাদকে বললো,” এত রাতের বেলায় এই দিকে কী? নিজের বাড়িতে এতই ভাতের অভাব বুঝি? মানুষের বাড়িতে রাত-বিরেতে এত ঘুরাঘুরি কীসের? ”

সাদ বড় একটা হাই তুলে তমাকে বললো,”এই গরমে ঘরে পঁচে মরার চেয়ে মানুষের বাড়ির সামনে ঘুরাঘুরি করে হাওয়া বাতাস খাওয়া কী ভালো না?”

তমা সাদের কথা শুনে মুখ বাঁকালো।নিজের মুখের এক পাশে হাত রেখে বললো,” বাড়ি যান তো আপনি। আমাদের বাড়ি চিনলেন কীভাবে? মাত্র তো একদিন এসেছিলেন।”

সাদ চোখ কুঁচকে বললো,” তোমার মতো ফাটা বাঁশ বাড়িতে থাকতে আমার পথ চেনার কী দরকার? যেই গলা তোমার! এলাকায় মাইকের কোনো দরকার নেই। তোমার মতো ফাটা বাঁশ একটা থাকলেই হবে।”

তমা সাদের কথা শুনে বেশ ক্ষেপে গেল। সাদ অবশ্য তমাকে রাগানোর জন্যই কথাটা বলেছে। সাদ ঠোঁট টিপে হাসতে শুরু করলো। তমাকে রাগাতে ক্ষ্যাপাতে সাদের বেশ লাগে। তমা সাদের দিকে এক পা এগিয়ে গিয়ে বললো,” তাই বলে যাঁর তাঁর বাড়িতে ঢুকে পরবেন? বেহা/য়া জানি কোথাকার! ”

তমার কথা শুনে সাদও বেশ রেগে গেল। সাদ রাগের প্রকাশ না ঘটিয়েই বললো,”আমাকে এত কিছু বললে। তো তুমি কী? কাকের মতো সারাদিন কা কা করে আমাকে বললে বেহা/য়া। সারাদিন কাজকর্ম বাদ দিয়ে শুধু টইটই। পড়াশোনার তো বালাই নেই। ”

সাদের মুখে পড়াশোনার কথা শুনতে পেয়ে তমা বেশ রেগে গেল। আঙুল উঁচু করে সাদের দিকে আবার তেড়ে এসে বললো,” এই আপনি দেখেছেন আমি পড়াশোনা করি না? এই দেখুন এখনও তো আমি পড়ছিলাম। আপনিই তো এসে আমার কাজে বাগড়া দিলেন। এখন আবার আমাকেই এত কথা শোনাচ্ছেন?”

সাদ তমার কথা শুনে খিলখিল করে হেসে ফেললো। তমার সাদের হাসির আওয়াজ শুনতে পেয়ে আরও এক দফা রেগে গেল। সাদ হাসি থামিয়ে তমাকে বললো,” তুমি তো অনেক পড়াশোনা করো তাই না?”

তমা ভ্রু নাড়িয়ে বললো,”হুম অবশ্যই, আমি ক্লাসের সবচেয়ে ভালো ছাত্রী। প্রতিবছর পরীক্ষার ফলাফল শেষে পুরস্কার পাই।”

সাদ তমার কথা শুনে ঠোঁট টিপে হাসলো। হাসির রেখা মুখ থেকে সরিয়ে বললো,”তাই না কি? তা আমি তো শুনলাম ক্লাস নাইনে না কি তুমি আরও একবার পড়েছো? ফেইল করলেও বুঝি তোমাদের স্কুলে পুরস্কৃত করে? এত ভালো স্কুল তোমাদের? ”

তমা সাদের কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।আমতা আমতা করে ইনিয়ে বিনিয়ে সাদকে বললো,”ওসব গুজব গুজব! গুজবে কান দিতে নেই। আমার ভালো দেখতে পারে না তো। তাই এসব গুজব রটিয়ে বেড়াচ্ছে। ওসবে কান দেবেন না। সব আমার বিরুদ্ধে করা চক্রান্ত।”

সাদ নিজের চুলে হাত বুলিয়ে বললো,”ওহ তাই না কি? তোমার ভাই তো আজ আমাকে নিজে বললো। তুমি না কি পরীক্ষায় ফেইল করে এই নিয়ে দুবার বাইনে পড়ছো। তোমার ভাইও বুঝি তোমার বিরুদ্ধে গুজব রটাচ্ছে?”

তমা আরেক দফা চমকে উঠলো। রেগে গিয়ে সাদকে বললো,” আপনি কিন্তু এবার বেশি বেশি করছেন! ভালো হচ্ছে না কিন্তু!”

সাদ তমার কথায় কান না দিয়ে বললো,”বেশ করেছি। আরও করবো;দেখি তুমি করতে পারো!”

তমা সাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো, “দেখবেন কী করতে পারি?”

সাদ তমার কথায় কর্ণপাত না করে বললো,”দেখি তুমি কী এমন করো!”

তমা আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে জোরে চেঁচিয়ে উঠলো। চিৎকার করে বললো,”ভাইয়া গো! বাড়িতে চোর ঢুকেছে! আমাকে বাঁচাও ভাইয়া! ও ভাইয়া কোথায় তুমি! আমাকে বাঁচাও গো!”

সাদ তমার কথা শুনে ক্যাবলা কান্তের মতো তমার দিকে তাকিয়ে রইলো। তমার ভাই শফিকুল ঘর থেকে বড় লাঠি নিয়ে বের হলেন। মোমবাতি হাতে তমার সাঙ্গপাঙ্গরা ছুটে এলো। তমার ভাই শফিকুল সাদকে চোর ভেবে সাদের মাথায় লাঠি দিয়ে জোরে আঘাত করলো। আঘাত পেয়ে সাদ মাথা ধরে মাটিতে বসে পরলো। চিৎকার করে সাদ বললো,” আমাকে বাঁচাও গো আমি ডাকাতের পাল্লায় পরেছি গো!”

তমা এবং শফিকুল দুজনেই সাদের কথা শুনে চমকে উঠলো। চোর নিজেই কিনা বলে সে ডাকাতের পাল্লায় পরেছে! হায় কপাল! শেষমেশ চোর কিনা পরলো ডাকাতের কবলে!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here