লবঙ্গ লতিকা পাঠ-৬‌

#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ৬

পরন্ত বিকেল, শফিকুল সাদের জন্য নিজের মায়ের হাতে বানানো পিঠেপুলি নিয়ে এসেছে। নিজের হবু জামাইকে খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে পিঠেগুলো বানিয়ে শফিকুলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। শফিকুল সাদদের বাড়িতে ঢুকতেই সবাই আদর আপ্যায়ন শুরু করলো। শফিকুল গত দিনের ঘটনার জন্য বেশ দুঃখ করলো। না জেনে না শুনেই কী ভয়াবহ মারটা সাদকে মেরেছেন।

সাদের মনে মনে তমার প্রতি আগে থেকেই বেশ রাগ ক্ষোভ ছিল। শফিকুলকে একা পেয়েই গড়গড় করে সাদ গত কয়েকদিনের ঘটনা শফিকুল বলে ফেললো। সাদকে ফাটা ফুচকা ডাকা, সাদের নাম নিয়ে ব্যঙ্গ করা, চোর উপাধি প্রদান করে মার খাওয়ানো। সবটা উগলে নিজের ভেতর থেকে বার করে দিলো সাদ। শফিকুল পর্যায়ক্রমে একের পর এক ঘটনা শুনে প্রচন্ড রেগে গেলেন। সাদকে আশ্বাস দিলেন তমাকে এরজন্য শাস্তি দিবেন। তমার শাস্তি পাওয়ার কথা শুনে সাদ আনন্দে আটখানা হয়ে উঠলো। এবার তমা বুঝতে পারবে। তমা কতবড় ভুল করেছে।

এদিকে শফিকুল রাগে পুরো ঝলসে যাচ্ছে। আজ তমাকে সামনে পেলে আচ্ছা করে মার দেবে। দুদিন পরে যাঁর সংসার করবে তাঁর সঙ্গে এসব কেমন ধরনের আচরণ? শফিকুল সাদদের বাড়ি থেকে যাওয়ার পথে গাছ থেকে মোটা ডাল ছিঁড়ে নিলো। এই ডাল আজকে তমার পিঠেই ভাঙবে।

শফিকুল বাড়ি গিয়ে দেখলো তমা উঠোনে বসে চুল পাথর দিয়ে খেলছে। শফিকুল বাড়িতে ঢুকেই তমার পিঠে লাঠি দিয়ে দিলো এক ঘা। তমা আঁতকে উঠে শফিকুলের দিকে তাকালো। শফিকুল লাঠি দিয়ে তমাকে এলোপাথারি মার মারলো। তমা ব্যাথায় কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে হাত পা ছিটিয়ে বসে পরলো। তমার মা জুলেখা শফিকুলকে অনেকবার থামানোর চেষ্টা করলো। শেষে তমার কান্নাকাটি দেখে শফিকুল লাঠি ফেলে দিয়ে ঘরে চলো গেল।

শফিকুল যে-ই না ঘরো ঢুকলো। সেই মাত্রই তমা দৌড় দিয়ে এক ছুটে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। জুলেখা পেছন থেকে বহুক্ষন ডাকাডাকি করলো। তমা সাড়া না দিয়েই বের হয়ে গেল। কোথায় গেছে কী কারণে তমা বের হয়েছে এটা কেউ জানে না। জুলেখা অনেকক্ষন বাড়ির আশেপাশে তমাকে খোঁজাখুজি করলো। কিন্তু তমা নিরুদ্দেশ! কোথাও তমাকে খুঁজে পেলেন না।

সন্ধ্যা বেলা! এখনই হয়তো আজান দিয়ে দেবে। সাদ হেলতে দুলতে রাস্তা দিয়ে বাড়ির পথের দিকে রওনা হচ্ছে। রাসেল কাকার দোকানে চা-টা বেশ মজার! খেলেই মাথা ব্যাথা, ঘাড় ব্যাথা সব গায়েব! সাদ আনমনে হেঁটেই চলেছে। পুকুর পাড়ের ওই অংশটায় একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। ঘোমটা দেওয়া মাথায়। বসে থাকার ধরন দেখে মনে হচ্ছে তমা। কিন্তু, তমা সন্ধ্যা বেলায় একা একা পুকুর ঘাটে কী করবে? সাদ এক পা এক পা করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলো। সাদের মন বারবার বলছে সিঁড়িতে বসে থাকা মেয়েটাই তমা। কিন্তু, তমা এখানে কেন? তমার তো শাস্তি পাওয়ার কথা ছিল। তমা কী তাহলে তাঁর উপযুক্ত শাস্তি পায়নি? তাহলে শুধু শুধু শফিকুল ভাই সাদকে মিথ্যা কথা কেন বললো?

সাদ নিশ্চুপ ভাবে মেয়েটার পাশে বসলো। উঁকি দিয়ে মেয়েটার মুখ দেখলো। হ্যাঁ! এটা তো তমা-ই!সাদ গলা খাঁকারি দিয়ে একটা শব্দ করলো। তমা একটু নড়েচড়ে বসলো। সাদ তমার কানের সামনে ফিসফিস করে বললো,” কী হয়েছে? ”

তমা চোখ মুছতে মুছতে উত্তর দিলো,”কিছু না”

সাদ পুকুরে পানিতে পায়ের কিছুটা অংশ ডুবিয়ে রেখে বললো,” তাহলে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছো কেন? ”

তমা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, ” ভাইয়া! মেরে/ছে! ”

সাদ ঠোঁট টিপে হেসে বললো,” বেশ করেছে! যেমন কর্ম তেমন তাঁর ফল। আরো করো আমার সাথে ফাইজ/লামি।”

তমার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরতে শুরু করলো। সাদ হাসতে হাসতে তমার দিকে আবার তাকালো। নাহ! এবার তমার জন্য আসলেই খারাপ লাগছে। এতবড় মেয়ের গায়ে হাত তোলাটা উচিত হয়নি। ঠান্ডা মাথায় একটু বোঝালেই তো ঠিক হয়ে যেতো। সাদ তমার আরেকটু কাছে এসে বসলো। যাকে বলে একেবারে পাশাপাশি বসা। সাদ তমার হাত ধরে বললো,” আমি বুঝতে পারিনি তোমাকে মার/বে। জানলে এসব বলতাম না। আমি তো ভেবেছি তোমাকে হালকা বকাঝকা করবে তারপর শেষ। এরমধ্যেই এত কাহিনি হয়ে যাবে এটা কে জানতো!”

তমা আর সময়ের অপেক্ষা করলো না। উঠে দাঁড়িয়ে হুট করে সাদের হাত দু’টো মুঠো করে চেপে ধরলো। সাদের হাতে জোরে চাপ দিয়ে বললো,” আমি জানতাম! তুই-ই আমার নামে ভাইয়ের কাছে বিচার দিয়েছিস। একেবারে নিশ্চিত হওয়ার জন্যই ঢং করলাম। দেখ এবার তোকে কী করি।”

সাদ মুহুর্তেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। মানে কী এসবের! এই মেয়ের তো চালাকির অন্ত নেই! হঠাৎ পানির নিচ থেকে একটা হাত সাদের বাম পা জোরে চেপে ধরলো। সাদ হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো। সাদের পা ধরে বারবার পানির ভেতর নিয়ে যেতে চাচ্ছে। সাদ জোরে চিৎকার করে উঠলো। তমা নিজের হাতে থাকা গামছা দিয়ে সাদের মুখ, হাত বেঁধে দিলো। এতক্ষন এই গামছা দিয়েই তমা চোখের পানি নাকের পানি মুছেছে। এটা সামনে ছিল বলেই তমা সাদের মুখ বেঁধে দিলো। সাদ দু-হাত দিয়ে বারবার তমাকে আটকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু, একদিকে পা ধরে টানাটানি আরেকদিকে মুখের জবান বন্ধ কিছুই করা কিংবা বলা যাচ্ছে না।

তমা বড় একটা ডাল ছিঁড়ে আনলো গাছ থেকে। এনে ধাম করে সাদের পিঠে একটা বারি দিলো। সাদ বেচারা ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। তমা পুকুর পাড়ের সামনে গিয়ে বললো,”হুম পা ছাড় এবার!”

পানিতে থেকে ৮-৯ বছরের দুটো বাচ্চা উঠে এলো। এদেরকে সবসময় তমার সঙ্গে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। বাচ্চা দুটোকে দেখেই সাদ আসল ঘটনা বুঝতে পারলো। তমা সাদের সামনে গিয়ে বসে বললো,” আর কোনোদিন লাগতে আসবি আমার সঙ্গে? ”

সাদ উপায় না পেয়ে দু’দিকে মাথা নাড়ালো। যাঁর অর্থ বোঝায় না। তমা সাদের পিঠে জোরে আরেকটা বারি দিয়ে বললো,” আর যদি কোনোদিন আমার সঙ্গে ঝামেলা করেছিস। তো! বলে দিলাম মে/রে পুকুর পাড়ে ফে/লে দেবো।”

তমা এবার সাদের হাতের বাঁধন খুলে দিলো। সাদ বাঁধন থেকে মুক্তি পেতেই দৌড়ে ছুটে পালালোর চেষ্টা করলো। তমা হাসতে হাসতে পেছন থেকে সাদকে বললো,” আস্তে যা ফাটা ফুচকা। উ/ষ্টা খেয়ে পরে মর/লে বলবি তমা মেরে/ছে!”

সাদ অগ্নি দৃষ্টিতে তমার দিকে তাকালো। তমা সাদের দিকে তাকিয়ে বললো,” যাচ্ছিস না কেন?তোকে কী আবার ঘোড়ার গাড়িতে করে বাড়িতে দিয়ে আসতে হবে?”

সাদের পা পুরো ভেজা। সাদ মাটিতে পা রাখা মাত্রই পা পিছলে মাটিতে ছিটকে পরলো। সাদকে পরে যেতে দেখে তমা জোরে হেসে ফেললো। হাসতে হাসতে বললো,” ফাটা ফুচকায় খায় উষ্ঠা! উষ্ঠার নাই শ্যাষ ফাটা ফুচকায় খায় ঠ্যাস!

চলবে…

(পেজের রিচ ডাউন। সবাই একটু রেসপন্স করবেন প্লিজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here