লবঙ্গ লতিকা পাঠ-৯

#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ৯

আঙুর বালা তমাকে কড়া গলায় কয়েকটা কথা বলে আবার ঘুমিয়ে পরলেন। তমা ভয়ে ভয়ে চোখ বন্ধ করলো। পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ রেখে চোখ খুলতেই আবার দেখলো একটা ছায়া একটু পরপর ঘোরাঘুরি করছে। তমা নিঃশব্দে খাট থেকে নামলো। পা টিপে টিপে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ভয়ে চোখ বন্ধ করে আলতোভাবে দরজা খুলতেই। সাদ জোরে ভাউ করে উঠলো। তমা চমকে পেছনে যেতেই দরজার সঙ্গে মাথায় চোট পেল। মাথায় হাত দিয়ে সাদের দিকে রোষারক্ত দৃষ্টিতে তাকালো।

সাদ মুখে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে হাসা শুরু করলো।তমা অগ্নি দৃষ্টিতে সাদের দিকে তাকালো। এরপর বেশ শব্দ করে ঘরের দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিলো। সাদ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে হেসেই চলেছে। আর তমা ভেতরে বসে বসে রাগে ফুসছে। সাদকে আসলে একটা শিক্ষা দিতেই হবে।

পরদিন সকালে তমাদের বাড়িতে তমা আর সাদ যেতে বলা হয়েছে। সাদ আর তমা সকাল বেলাই চলে গেছে ও-বাড়িতে। সাদকে দেখতে তমাদের অনেক পাড়া-পড়শী এসেছে। সাদ সবার সাথে টুকটাক হাসি মজা করছে। জুলেখা সাদের সামনে কয়েক পদের খাবার সাজিয়ে রেখেছে। সাদ মাঝেমধ্যে একটু আকটু খাবার মুখে দিচ্ছে। আর বাকি সময়টা সবার সাথে গল্প করেই কাটাচ্ছে।

বিকালে প্রতিদিনের মতোই সাদ হাঁটতে বের হলো। তমাদের বাড়ির আশেপাশেই ঘুরাঘুরি করছে সাদ। এদিকে ওদিক হেঁটে হেঁটে সবটা দেখছে।বাড়ির পেছন দিকটা থেকে তমার গলার আওয়াজ শুনতে পেল সাদ। সাদ কৌতুহল বশত বাড়ির পেছন দিকটায় চলে গেল। তমা তাঁর বান্ধবী সুমাইয়ার সাথে বসে বসে গল্প করছে। তমা আজকে বড়দের মতো করে শাড়ি পরেছে।সাদকে দেখে সুমাইয়া লজ্জা পেয়ে তমার সামনে থেকে চলে গেল। তমা নারকেল গাছ ধরে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। সাদ গিয়ে তমাকে বললো,”কোথায় যাচ্ছো?”

তমা চেঁচিয়ে উত্তর দিলো,”আপনার মাথায়। যাবেন?”

সাদ নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে তমাকে বললো,” কোথায়? আমার মাথায় তো তুমি নেই!”

তমা সাদের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো।তমাকে চুপ থাকতে দেখে সাদও চুপ হয়ে গেল। তমা সাদকে রেখেই অন্যদিকে হাঁটা শুরু করলো। সাদ নিজেও তমার পিছু নিলো।তমা বড় মাঠের দিকে দৌড় দিলো। ছোট ছোট ঘাস ভর্তি মাঠের মধ্যিখানে কয়েকটা গরু হেঁটে হেঁটে ঘাস খাচ্ছে। তমা গিয়ে গরু গুলোর দুটো শিংয়ের মাঝখানে হাত বুলিয়ে দিলো। গরুটা তমার আদর পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো। সাদ তমার পিছু পিছু গিয়ে বললো,”এগুলোর গায়ে হাত দিও না। ওরা কামড় দেবে।”

তমা দম ফাটিয়ে হেসে উঠলো। সাদ নিজের ভুল বুঝতে পেরে বোকার ন্যায় মাথা চুলকে হেসে বললো,” ইয়ে মানে, শিং দিয়ে গুঁতো দেবে আরকি।”

তমা নিজের মতো ঘোরাঘুরি করছে। সাদ তমাকে আবার বললো,” সন্ধ্যা হয়ে যাবে তো। বাড়ি যাবে না?”

তমা ব্যস্ত হয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে বললো,” এদিক দিয়ে যাবো না। ওদিক দিয়ে চলুন।”

তমা সাদকে নিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে বের হলো। সাদ আশেপাশে বারবার তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। সাদ হঠাৎ তমাকে বললো,” জায়গাটা কত সুন্দর! ”

তমা অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,” মানুষদের জায়গা হলে সুন্দর হতো না। মানুষরা থাকে না বলেই এত সুন্দর।”

সাদ আমতা আমতা করে তমাকে বললো,”মানে?”

তমা কিছুটা কাতর কন্ঠে সাদকে বললো,” আপনি যেই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছেন। এখানে একটা মেয়েকে আলগা জিনিস মেরে উল্টো করে মাটিতে গেঁড়ে রেখে ছিল।”

সাদ এক লাফে সেই জায়গা থেকে সরে গিয়ে বললো,” কিহ!”

তমা বললো,” হুম” এটুকু বলেই তমা পা উল্টো করার ভান ধরে একটু একটু করে সাদের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করেছে। তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামবে। রাস্তায় লোকজন তেমন নেই। সুনসান নীরব রাস্তা দেখে সাদ ভয় এক পা এক পা করে সরে যেতে শুরু করলো। তমা চোখ উল্টিয়ে খোঁড়া হওয়ার ভান ধরে সাদের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলো। হঠাৎ বাতাসে একটা চিকন ডাল সাদের ঘাড়ে এসে বারি খেলো। সাদ ভয়ে পাশ ফিরে তাকালো। রাস্তার পাশে একটা কবর। ওপরে যাঁর কবর তাঁর নাম লিখা। সাদ নামটা পড়ার চেষ্টা করলো। নামের জায়গায় লিখা মোসাঃতমা খাতুন। সাদ চিৎকার করে জোরে জোরে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ পরে ভো দৌড় মারলো। তমা সাদকে পালাতে সাদকে পেছন থেকে তাড়া করতে শুরু করলো। সাদ দৌড়াচ্ছে আর বলছে ” ইয়া আল্লাহ! বাঁচাও আমাকে! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ! ” সাদ বেশি দূর যেতে পারলো না। ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরলো। তমা সেটা দেখে হেসে ফেললো। কালকে রাতের দুষ্টুমির শাস্তি এটা! হুহ্!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here