#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ১৭
৪২.
সম্পূর্ণ পেন্টিংটা মুগ্ধ হয়ে দেখার পর সিলিভিয়া চোখ তুলে তেহভীনের দিকে তাঁকালো।তেহভীনের ঠোঁটের কোণে হাসির রেশ। সিলিভিয়াকে তাঁকাতে দেখে তেহভীন বলল,
— কেমন হয়েছে?
— খুব সুন্দর। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন
আপনি বাংলা লিখতে পারেন?
— না আমি লিখিনি সিলভার,আমার
ব্রাদারকে দিয়ে লিখিয়েছি।
— উনি বাংলা লিখতে জানেন?
— হ্যাঁ,ব্রাদারের জন্ম বেংলাডেশে।
আমি আর তামান্না সিস স্কটল্যান্ডে।
— আচ্ছা উনি জানতে চাননি বাংলায় এটা
লেখার কারণ?
— চেয়েছেন,আমি বলেছি আমার একজন
স্পেশাল বেঙ্গলি ফ্রেন্ড কে গিপ্ট করতে
চাই। ব্রাদার আর জিজ্ঞেস করেনি কিছু।
— ওহ
সিলিভিয়া পূনরায় পেন্টিংটার দিকে তাকালো।
কি সুন্দর।এটা কোথায় রাখতে হবে? এখান থেকে
গিয়ে সোজা ডরমিটরিতে গিয়ে ব্যাগে রেখে দিবে ভাবলো সিলিভিয়া।
— ওহ সিলভার,তোমাকে ফেকাল্টি ক্লাব
দেখানো হয় নি। চলো,সেটাও দেখিয়ে আনছি।
সিলিভিয়া তেহভীনের তাক করা আঙুলটি অনুসরণ করে ফেকাল্টি ক্লাবের দিকে তাঁকালো। একটা বাড়ির মতে দেখতে ক্লাবটি। তবে সুন্দর। সিলিভিয়ার এখন সেখানে যাওয়ার মন নেই। তাই সে বলল,
— না থাক,অন্য একদিন যাবো।
— এজ ইউর উইস। বাট আমি না
আসা অবধি কারো সাথে কোথাও যাবে না
তুমি। ইট’স এ হাম্বল রিকুয়েষ্ট।
সিলিভিয়া দু’দিকে মাথা নেড়ে বলল,
—তেহভীন আমার ফ্রেন্ডরা, প্রত্যেক অফ’ডে তে
আউটিং এ যায়। তো আমি কেন শুধু শুধু বসে
থেকে বোর হবো।তাই আমিও তাদের সাথে জয়েন হই।
সিলিভিয়া কথাটা ততটা বাচবিচার না করে বললেও,তেহভীন কথাটাকে জটিলভাবে নিলো। সিলিভিয়ার দিকে চেয়ে বলল,
— তোমার যা ইচ্ছে করো, আমি বলার কে।
— তেমন কিছু নয় তেহভীন।আমি
বলতে চেয়েছি…।
— ইট’স ওকে সিলভার, আমি কিছু মনে করিনি।
বসো। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
সিলিভিয়ার শীতল চোখে তাঁকালো তেহভীনের দিকে। তেহভীন কেমন যেনো ঢোক গিলে গিলে কথা বলছে। যার জন্য ‘আডামস আপেল’ বার বার উঠা-নামা করছিলো। সেটার আর তেমন গুরুত্ব দিলো না সিলিভিয়া। পেন্টিংটা ভালোভাবে ধরে দৃঢ়ভাবে গাড়ির সিটে বসলো।তেহভীন বসলো একদম চুপচাপ। ড্রাইভারকে বলল ডরমেটরির পথে নামিয়ে দিয়ে নিজেদের গন্তব্যের পথে রওনা দিতে। গাড়ি সাঁই সাঁই বেগে চলতে লাগলো। তেহভীনকে চুপ মেরে বসে থাকতে দেখে সিলিভিয়া জিজ্ঞেস করলো,
— তেহভীন আপনি আজ চলে যাবেন?
— হ্যাঁ সিলভার। কেন?
— না এমনি।
তারপরও অনেকক্ষণ দুজনে চুপ থাকলো।
সিলিভিয়া পূনরায় বলল,
— আপনি কি অসুস্থ বোধ করছেন?
কথার পিঠে জবাব দেওয়ার পূর্বে তেহভীনের কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ দৃশ্যমান ছিলো।এরপর সিলিভিয়ার দিকে ফিরে বলে উঠে,
— সিলভার, তোমার গায়ে কখনো ফোস্কা পড়েছে?
সিলিভিয়া কথাটা শুনে বোকা হয়ে যায়। পিটপিট করে চেয়ে মনে করতে লাগলো আদৌও কখনো তার গায়ে ফোস্কা পড়েছিলো?
মনে করতে না পেরে সিলিভিয়া বলল,
— না তো,পড়েনি সিউর।কেন?
— রিসেন্টলি আমার গায়ে যখন তখন
ফোস্কা পড়ছে। সি এখানে,এখানে দেখো
সবখানে এতো ফোস্কা পড়ছে কেন?
তেহভীন নিজের শার্টের হাতা উন্মুক্ত করে সিলিভিয়াকে দেখালো। সিলিভিয়া তাজ্জব বনে গেলো তেহভীনের আচরণে।আরে কোথায় ফোস্কা? আমার চোখে তো পড়ছে না। সিলিভিয়া হালকা কেশে বলল,
— তেহভীন আমার চোখে সমস্যা করছে মে-বি।
আমি ফোস্কা দেখতে পাচ্ছি না।
তেহভীন ফিচেল হেসে বলল,
— এক্সাক্টলি! কিছু ফোস্কা তো খালি
চোখেও দেখা যায় না।বাদ দাও সিলভার আমি
মজা করছিলাম।
— ওহ,আমি ভেবেছি সত্যিই ফোস্কা পড়েছে।
তেহভীন প্রতিউত্তরে কিছু বললো না আর।
চুপ থাকলো। ডরমেটরির সামনে এসে গাড়ি থামলেই সিলিভিয়া নিজের পেন্টিংটা হাতে নিয়ে নেমে পড়লো। তেহভীন এবার বিদায় সংলাপ বাদ রেখে বলল,
— সিলভার, আমি একটা ক্যাম্পিং করতে
চাই এই ক্যালিফোর্নিয়ার যেকোনো একটি দর্শনীয় স্থানে ।কিন্তু কোথায় সেটা এখনো ভাবিনি।ফিরে আসি, তখন সিদ্ধান্ত নিবো। তুমি যাবে আমার সাথে?
সিলিভিয়া চুপ মেরে থাকলো। প্রতিউত্তর দিলো না।
তেহভীন সিলিভিয়াকে চুপ দেখে ক্ষীণ হাসলো।
এরপর বলল,
— তুমি আমার কাছে সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ সিলভার।
তারপরও যদি আমাকে বিশ্বাস না হয়।তাহলে আমি ফোর্স করবো না। টেক খেয়ার সিলভার।
হাতের এক ইশারাতেই ড্রাইভার গাড়ির চালিয়ে সিলিভিয়ার সামনে থেকে উধাও হয়ে যায়।আরে!উত্তর দেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত পেলো না সিলিভিয়া।সিলিভিয়া বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো গাড়ির পেছনের অংশের দিকে।
৪৩.
— ক্যাডি আমার মনে হয় পড়াশোনার
ফাঁকে ফাঁকে একটা জব করা উচিত। আমার
কাছে যতো মানি আছে সেগুলো হয়তো এনাফ নয়।
সিলিভিয়ার কথায় ক্যাডি ফোন থেকে চোখ
সরিয়ে বলল,
— অফকোর্স জব করা উচিত। তবে সেটা ইউনিভার্সিটিতে করলে ভালো হয়। এখান থেকে
বাইরে গিয়ে কোন জব করতে গেলে মানসিক ধকল
সামলানোর মতো শক্তি থাকতে হবে।
সিলিভিয়য়া ক্যাডির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
— টিচিং,রিসার্চ,গ্রেজুয়েট এসিস্ট্যান্টশীফ এগুলো?
— হ্যাঁ এগুলোই তো। আমি তো টিচিং করছি।
এসিস্ট্যান্টদের বিভিন্ন কোর্সের খাতা দেখি,আর স্টুডেন্টদের হেল্প করি। এতে আমার টউশন ফি টা উঠে যায় তুমি কি করতে চাও?
সিলিভিয়া ভ্রুঁ কুচকে ল্যাপটপের দিকে চেয়ে বলল,
— প্রোগ্রামীং অথবা ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ করতে চাইছি। এতে সফলতা কতটুকু? নিশ্চিত হতে পারছি না।
আমারা হেয়ার ব্রাশ করা থামিয়ে বলল,
— তুমি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজ পারো?
এটা তো খুবই কঠিন। এম.ই.আর.এন আর এম.ই.এ.এন এই দুটি স্ট্যাকের কাজ জানতে হয়। আমার জানা মতে।
সিলিভিয়া স্মিত হেসে জবাবে বলল,
— আমারা’ চেষ্টা করে দেখলে কোন কিছুই কঠিন হয়না। আর আমি সিঙ্গেল ল্যাংগুয়েজ ‘জাভাস্ক্রিফ্ট দিয়ে ফ্রন্ট এন্ড এবং ব্যাক এন্ডের কাজ করতে পারি।
ক্যাডি বলল,
— তুমি কোথায় থেকে শিখেছো এটা?
— আমার ব্রাদারের কাছে শিখেছি।ইভেন সব খুঁটিনাটি আমি আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেছি এতোদিন।। আমার ব্রাদার ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজের জন্য মাসে টুয়েন্টি কে স্টার্টিং স্যালারি পায়।সে সুবাধে এখানে পরিমাণ টা বেশি।তাই আমি শুরুটা এখান থেকেই করতে চাচ্ছি। আর সেজন্য তোমরাও নাহয় আমার সাথে এসো, এই জার্নিতে।
আমারা আর ক্যাডি একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো। এরপর সিলিভিয়ার পাশে গিয়ে বসলো। সিলিভিয়া হেসে আমারা এবং ক্যাডিকে জাভাস্ক্রিপ্ট সম্পর্কে ধারণা দিতে লাগলো।সাথে আরো অনেক খুঁটিনাটি প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু।
প্রায় একঘন্টা ডিসকাশন করার পর আমারা আর ক্যাডি ড্যাবড্যাব করে সিলিভিয়ার দেখে চেয়ে থাকলো। সিলিভিয়া সেটা দেখে বলল,
— বুঝেছো তোমরা?
ক্যাডি ক্লান্তচোখে জিজ্ঞেস করলো,
— তোমার কতদিন লেগেছে শিখতে?
— দুই বছর মতো।
— তো আমরা একঘন্টায় কিভাবে বুঝবো?
যেখানে তোমার এতোদিন লেগেছে।
— একদম সহজ এটা।আমি তো ইচ্ছে করে সময়
নিয়েছি।তোমরাও নাও। মানসিক ভাবে ধৈর্যশীল হতে হবে তোমাদের।মেজাজ শান্ত,আর প্রচুর ধৈর্যের বিনিময়ে একটা প্রজেক্ট কম্পলিট করা সম্ভব।
আমারা আর ক্যাডি একসাথে বলল,
— সিলিইইভিয়া আমাদের ঘুম পাচ্ছে। গুডনাইট!
তাদের কথা শুনে সিলিভিয়া ফিক করে হেসে দিলো। আমারা আর ক্যাডি শুয়ে পড়েছে। শুধু সিলিভিয়া রাতজাগা পাখি হয়ে আছে।
৪৩.
ক্যাথরিনকে দেখে মনে মনে প্রচণ্ড বিরক্ত হলো তেহভীন। মুখে সেটা প্রকাশ না করে হাসিমুখে লিভিংরুমে আসলো সে।ক্যাথরিন তেহভীনকে দেখে বসা থেকে উঠে এসে জড়িয়ে ধরলো।তেহভীন সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো। সোফায় তার মম আর আন্টি বসে তাদের দিকে চেয়ে আছেন। সৌজন্য বজায় রাখতে তাদের দিকে চেয়ে তেহভীন মৃদু হাসলো।
ক্যাথরিন তেহভীনের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে সরে দাঁড়ালো,হাস্যময় কন্ঠে বলল,
— আই মিস ইউ সো মাচ টেহভীন।
ক্যাথরিনের মম আলেক্সা বললেন,
— টেহভীন তুমি ওল্ড টাউন যাচ্ছো জানলে
ক্যাথরিনকেও তোমার সাথে পাঠাতাম।তুমি বলোনি কেন?
তেহভীন স্মিত হাসলো।বলল,
— আমরা মেইল ফ্রেন্ডরা গিয়েছি আন্টি। সেজন্য
ক্যাথরিনকে বলিনি।সে আমাদের সাথে কম্পোর্ট ফিল করতো না।
— অহ,আই সি।
তেহভীন চলে আসতে নিলে,ক্যাথরিন জিজ্ঞেস করলো,
— কোথায় যাচ্ছো টেহভীন।
— ক্যাথরিন তুমি বসো,আমি টয়লেট থেকে আসছি।
তেহভীন ক্যাথরিনকে মিথ্যে বলে সেই রুমের ভেতরে ঢুকলো আর বের হলো না। সাথে দরজাটাও ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলো,যাতে ক্যাথরিন আসতে না পারে। গায়ের টি-শার্ট খুলে চুপচাপ বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে পড়লো তেহভীন। কাল থেকে কাজে ফিরতে হবে।আজকের দিনটুকু সে ঘুমিয়ে কাটাবে।
(চলবে)