লাভ রেইন পর্ব-৩১

0
1872

#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ৩১

৮০.

কিছু সময় অতিক্রম করার পর অকস্মাৎ, পেছন থেকে একটা বলিষ্ঠ হাতের ধাক্কা অনুভব করলো এলসা। ভয়ে চিৎকার করে উঠলো সে।হাতের মগটি ছিঁটকে নিচে পড়ে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তৎক্ষনাৎ। এমন একটা কঠিন পরিস্থিতির আগমনে এলসার রুহ কেঁপে উঠলো ভয়ে। তারপরও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পেয়েছে সে।পেছনে কেউ একজন তার হাতটা অদ্ভুত শক্তভাবে ধরে রেখেছে।বহু কষ্টে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাঁকালো এলসা। ঘুম জড়ানো দৃষ্টি, মারাত্মক সুন্দর একটা চেহারা দৃশ্যমান হলো। এলসা গভীর একটা ঢোক গিললো পুরুষটির মুখের দিকে চেয়ে।এরপর মন বুলানো একটা হাসি দিলো।তেহভীন এলসার হাসিতেও পলক ফেললো না, কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ তুলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মুখের রাগ স্পষ্ট।একদম নিস্তব্ধ রাগ। তেহভীন পেছনে তাঁবুর দিকে চেয়ে পূনরায় এলসার দিকে দৃষ্টি ছুঁড়লো। অন্যহাতে পকেট থেকে ফোন হাতে নিয়ে তানজিদের ফোন কল দিলো। তানজিদ তখন ঘুমে আচ্ছন্ন। ফোনের রিংটোন বাজতেই ফোন হাতে তুলনায় নিয়ে কানে ঠেকালো।
তেহভীন মুখ ভাব আগের ন্যায় রেখে চাপা কন্ঠে বলল,

— এখুনি বেরিয়ে আসো,নয়তো তোমার
এলসাকে আমি ধাক্কা মেরে পাহাড় থেকে
ফেলে দিতে বাধ্য হবো।

তানজিদ লাফিয়ে উঠলো শোয়া থেকে। পাশে ফাঁকা বিছানায় দৃষ্টি ছুঁড়ে দেখলো তেহভীন নেই। নিশ্চয় বাইরে। কন্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারলো তেহভীন রেগে আছে। গায়ে শার্ট জড়িয়ে হুড়মুড়িয়ে তাঁবু থেকে বের হলো তানজিদ। খানিকটা দূরে তেহভীন আর এলসাকে অস্বাভাবিক রূপে দেখে ছুটে গেলো সে। তানজিদ এগিয়ে তেহভীনের কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বললো,

— হোয়াট হ্যাপেন্ড তেহভীন?

তেহভীন এলসার দিকে দৃষ্টি তাক করে বলল,

— তোমার গার্লফ্রেন্ড জানতে
চায়ছে আমি ভা/র্জি/ন কিনা? কিন্তু সেটা আমাকে জিজ্ঞেস না করে সিলভারকে জিজ্ঞেস করেছে সে।

তানজিদ মূল বিষয়টা বুঝলো এবার। এলসাকে
বাঁচাতে বলল,
— ভুল করেছে ফেলেছে। ছেড়ে দাও ওকে
পড়ে যাবে।

তেহভীন ফিচেল হাসলো,

— পড়ে যাওয়ার জন্যেই তো এভাবে ধরেছি।
তার প্রশ্নের উত্তরটা দিয়ে দেই আগে।তারপর
নাহয় ফেলে দিবো। হোয়াট স্যেয়?

— নোহ,নো টেহভীন,প্লিজ,আ’ম স্যরি!
প্লিজ লিভ মি। আ’ই ডোন্ট ওয়ান্ট টু ডাই।আ’ম স্যরি।

এলসার কথায় তেহভীন ক্ষীণ হাসলো। তানজিদের দিকে চেয়ে বলল,

— রিডিকিউলাস! ব্রো,তুমি জানো তোমার গার্লফ্রেন্ড আমাকে লাইক করে। সি ওয়ান্ট’স টু সিডি’উচ মি।

তানজিদ প্রচণ্ড অবাক হলো তেহভীনের কথায়। তবে এটা অবিশ্বাস্য কথা নয়। এলসাকে শেষ একটা সুযোগ দিয়েছিলো সে,ভালো হওয়ার জন্য। কিন্তু মেয়েটা নিজের ভাইকেও আকৃষ্ট করতে লেগে পড়বে সেটা তার ধারণায়ও ছিলো না। তানজিদ এবার রেগে গেলো খুব। এলোমেলো শার্টের হাত গুটিয়ে বলল,

— ছাড়ো,ওকে।

তেহভীন সেটা কানে তুললো না। এলসাকে টেনে দাঁড় করিয়ে গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।তানজিদ থেমে গেলো,এলসা চড় খেয়ে তানজিদের নিকটে আশ্রয় চাইলো।তানজিদ ঝট করে সরিয়ে দিলো এলসাকে।

— যাস্ট গুউ টু হেল।এন্ড লেট মি গুউ।

তানজিদ রাগে, ক্ষোভে, দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।সোজা তাঁবুতে চলে গেলো। এলসা তেহভীনের দিকে তাকালেই,তেহভীন বলে উঠে,

— ড্যিড’নট হেয়ার হোয়াট হি স্যেইড? গেট
আউট ওফ হিয়ার।

তেহভীন হাত দিয়ে চলে যাওয়ার রাস্তাটা ইশারা করে দেখিয়ে দিলো। এলসার লজ্জায়,অপমানে মাথা নিচু করে তৎক্ষনাৎ জায়গা প্রস্থান করলো। আশেপাশে আরো অনেকে আছে যাদের সাথে কাল সুন্দর একটা সম্পর্ক হয়েছিলো। তাই তেহভীনকে কিছু বলার সাহস করলো না সে। কারণ যার কথায় কাজটা করেছিলো তার থেকে এমাউন্টটা আগেবাগে পেয়ে গিয়েছিলো সে।
বাইরের এতকিছুর কিঞ্চিৎ খবরও সিলিভিয়া পেলো না। কারণ নরম তুলতুলে বিছানায় শুতেই তার চোখে রাজ্যের ঘুম এসে ভর করেছিলো। এলসা ঝটপট নিজের ব্যাগপত্র ঘুছিয়ে তৎক্ষনাৎ সেই স্থানটা ত্যাগ করলো।

৮১.

সময়ের খেয়াল নেই সিলিভিয়ার।দৃষ্টিজোড়া গভীর তন্দ্রায় নিমজ্জিত হলেও,মস্তিষ্ক তখনো সজাগ ছিলো তার। খুব সুন্দর একটা পুরুষালি কন্ঠ কর্ণভেদ করলো তার। মৃদু আদর মাখা গলায় ডাকছে তাকে। ‘সিলভার,ওয়েক-আপ! ওয়েক-আপ!
তেহভীন সিলিভিয়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে থাকলো অনড় দৃষ্টিতে। সৌন্দর্যের ডেফিনেশন না বুঝা রমণীটাই আজ তার অত্যধিক প্রিয় রমণী। তেহভীন চোখে হাসলো,মোলায়েম স্বরে একটা ইংলিশ পোয়েট বলতে শুরু করলো,

You brought me sunshine,
When I only saw rain,

You brought me laughter,
When I felt pain…..

তুমি আমাকে রোদ এনে দিয়েছিলে,
যখন আমি বৃষ্টি দেখছিলাম,
তুমি আমার জন্য হাসি এনেছিলে,
যখন আমি ব্যাথা অনুভব করছিলাম….

চার বাক্যের অনুভূতিময় কবিতা শুনে সিলিভিয়ার চেতন মস্তিষ্ক নেচে উঠলো যেনো। দ্রুত সিলিভিয়াকে বার্তা দেয় যাতে তার বন্ধ চোখজোড়া খুলে ফেলে। যাতে সে শুনে তার প্রিয় পুরুষের কন্ঠস্বর কতোটা মধুময় আর প্রশান্তিময়। তাই সিলিভিয়া নিজের ঘুমন্ত দৃষ্টিজোড়া মেললো। শীতল চোখে তাকালো তেহভীনের দিকে। কিন্তু তেহভীনের দৃষ্টি তার চেয়ে দ্বিগুণ শীতল এবং গাঢ় ছিলো। তেহভীন তখন সিলিভিয়ার একহাত তার হাতের মুঠোয় শক্তভাবে চেপে ধরে রেখেছে। সিলিভিয়াকে চোখ মেলতে দেখে তেহভীন বলল,

— উঠো,ব্রেকফাস্ট করবে না?

— তুমি এখানে কেন?

তেহভীন ভারী অবাক হওয়া কন্ঠে বলল,

— কেন? আমি এখানে আসতে পারবো না?

— অবশ্যই না,এখানে ছেলেদের প্রবেশ নিষেধ!

— সিলভার,ভেবে বলছো তো?
কারণ আমি যদি চলে যায়,আর কখনো ফিরে
আসবো না। তুমি হাজার বার বললেও না। তাই
মন থেকে সন্দেহটা দূর করো…এখনি!

সিলিভিয়া এই পর্যায়ে এসে মিঁইয়ে গেলো।বুঝলো তখন এলসার বলা কথা তেহভীন শুনে ফেলেছে। সিলিভিয়া চোখ মুছে বিছানার পাশ থেকে পানির বোতলটা হাতে নিয়ে দ্রুতবেগে বেরিয়ে আসতে চাইলো। তেহভীন সিলিভিয়ার হাতটা ধরে ফেলে,এবং সে নিজেই বিছানায় শুয়ে পড়ে। সিলিভিয়া হাতটা নিজের মাথায় রেখে বলল,

— পুল্ দ্যা হেইয়ার! ইট’ হার্ট’স মি এ লট সিলভার।

সিলিভিয়া থেমে গেলো।তেহভীনের মাথা ব্যাথার কথা শুনে আর বের হতে পারলো না। আলতো করে তেহভীনের চুল টানতে লাগলো।তেহভীন আরাম পেয়ে চোখ বুঁজে ফেললো তৎক্ষনাৎ। মাথাটা সত্যিই তার ব্যথা করছে। মানুষের স্বভাবচরিত্র কতোটা খারাপ সেটা মানুষের মাঝে না থাকলে বুঝা দুষ্কর। কে, কখন, কি উদ্দেশ্যে আশেপাশে অবস্থান করে সেটা উপরওয়ালা ভালো জানেন।

৮২.

পয়েন্ট রেয়েশ ন্যাশনাল সিশোরে তিনদিন ক্যাম্পিংয়ের পর অন্য একটা জায়গায় এসেছে আজ তেহভীন আর সিলিভিয়া।
একটা অদ্ভুত ওয়েদার আজ। সোনালি মিষ্টি রোদ সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এই বৃষ্টি গায়ে মাখাতে ভীষণ ভালো লাগে।সিলিভিয়ার ভীষণ ভালো লাগে এমন বৃষ্টি।তাই তেহভীন বার বার সিলিভিয়ার হাত ধরে রাখছে,আর সিলিভিয়া হাত ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে।

— সিলভার ওয়েট,প্লিজ থামো। তোমার ঠাণ্ডা লাগবে এভাবে ভিজলে।প্লিম কাম!

সিলিভিয়া শুনলো না। যেতে যেতে ট্রি’সাইড এড়িয়া তে ঢুকে পড়লো। তেহভীন চিন্তিত মুখে আকাশের দিকে দৃষ্টি ছুঁড়লো। এখানে আসার আগে কয়েকটি পারমিট আবেদনের মাধ্যমে বায়ূ-মানের অবস্থা পরীক্ষা করে তারপর এসেছে এখানে। কিন্তু অনেকটা পথ চলে আসার পর বুঝলো আজকের আবহাওয়া একটু অন্যরকম।এই অঞ্চল একটু বেশি ভয়ানক। যখন-তখন অগ্নুৎপাত হতে পারে মৌসুমের পতনে। কারণ এই পার্কটি বেশ বড় লম্বা গাছগাছালিতে ভরপুর। একগাছের অন্য গাছের সাথে বেশ গভীর আলিঙ্গন। পার্কটির নাম ‘রেডউড ন্যাশনাল পার্ক’। পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা গাছের আবাসস্থল এই জায়গাটি।,নীরব,নিস্তব্ধ, পরিবেশে পাখিদের কলকাকলি শুনা যাচ্ছে। গাছবাগানের প্রবেশ করার পর সিলিভিয়ার সাড়াশব্দ না পেয়ে তেহভীন ঘাবড়ে যায়। কোথায় গিয়েছে সেটাও বা কি করে বুঝবে?
আর কিছুদূর গেলে তাদের বুকিং করা কটেজটা পেয়ে যাবে।কিন্তু সিলিবভিয়া উধাও। তেহভীন আশেপাশে অস্থির হয়ে খুঁজতে লাগলো সিলিভিয়াকে। বারাবার ভেতরে ভেতরে প্রিয়মানুষটিকে হারানোর ভয়টা খামচে ধরতে লাগলো তাকে।কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে সব ওলট-পালট হয়ে গেলো যেনো। তেহভীনের কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে মাটিতে রেখে দিলো,সর্বশক্তি দিয়ে চেঁচিয়ে ডেকে উঠলো,

— সিলভার!!

(চলবে)

  • রোজা রেখেছিলাম,তাই লেখা মন বসাতে পারিনি।
    রি-চ্যাক দেওয়া হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here