লাভ রেইন পর্ব-৩২

0
1889

#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ৩২

৮৩.
সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে রেডউড ফরেস্টের ভেতরে। দুর্গম পথ পেড়িয়ে ভেতরে চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের দেখা মিললো।এতোটা পথ আসার সময় সিলিভিয়ার মনে হচ্ছিলো সে লালগালিচার উপরে হেঁটে হেঁটে আসছিলো।পরে বুঝতে পাড়লো মাটির রঙ-ওই লাল বর্ণের। এই গভীর জঙ্গলের গাছগুলো দেখতে হালকা লালচ-বাদামি দেখাচ্ছে। তার কারণ গাছগুলো অনেক পুরোনো। যাওয়ার পথে ছোট ছোট ছাউনির ঘর দেখতে পেলো সিলিভিয়া। কিন্তু সেদিন কোন ধ্যান নেই তার। তার নজর কেঁড়েছে অপরুপ দেখতে একটা ছোটখাটো হালকা গোলাপিবর্ণের খরগোশ। এতক্ষণ দৃঢ়পায়ে, নিঃশব্দে এসেছিলো খরগোশটিকে ধরতে।কিন্তু তেহভীনের চিৎকারে খরগোশটি কান খাঁড়া করে শুনলো,এরপর লাফ মেরে গাছের আঁড়ালে লুকিয়ে গেলো। রাগের কারণে সিলিভিয়া টু শব্দও করলো না। কিন্তু তেহভীন না থেমে বার বার ডেকে যাচ্ছে সিলিভিয়াকে। একটু পর খরগোশটি আঁড়াল থেকে বেরিয়ে পাশে একটা গর্তে নেমে গেলো। সিলিভিয়া মোহগ্রস্ত হয়ে সেদিকে পা বাড়ালো,কিন্তু সফল হলো না।তেহভীনে দ্রুতপায়ে এগিয়ে এসে খপ করে সিলিভিয়ার হাতটা ধরে ফেললো শক্তভাবে। সিলিভিয়া ফিরে তাকালো, তেহভীন ক্রোধ মেশানো তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,

— আ’র ইউ ক্রেজি সিলভার?
তুমি হামবোল্ট পয়েন্টের কাছাকাছি চলে এসেছো? আর কয়েক গজ এগুলেই তো আমি তোমাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলতাম।

সিলিভিয়া বিস্মিত কন্ঠে বলল,

— স্ট্রেঞ্জ! আমি হারিয়ে যাবো কেন?

— উফ! তুমি হারিয়ে যাবে না, হারিয়ে যেতে বাধ্য হবে। প্লিজ চলো এখান থেকে।।

সিলিভিয়া নড়লো না,আঙুল দিয়ে গর্তের মধ্যে দেখিয়ে দিয়ে বলল,

— সি, ভেরী বিউটিফুল বানি তেহভীন।

তেহভীন সিলিভিয়াকে টেনে এনে নিজের সাথে চেপে ধরলো।এরপর দৃষ্টি ছুঁড়লো গর্তের দিকে।গোলাপিবর্ণের খরগোশ দেখে সে স্মিতহাস্য কন্ঠে বলল,

— সিলভার, এটাকে কালার লাগিয়ে
পিংক করা হয়েছে। এটা ওর ন্যাচরাল কালার নয়।

সিলিভিয়া অবাক হয়ে বলল,

— কালার? কিন্তু সাদা খরগোশও তো দেখতে
সুন্দর। এভাবে কালার করার রেজন কি?

— এখানে আরো অনেক কালারফুল
বানি দেখতে পাবে তুমি।এগুলো এখানকার উড’স ম্যানদের পালিতো বানি। আলাদাভাবে চিহ্নিত করার জন্য কালার করা হয়েছে।

সিলিভিয়া তেহভীনের মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পূনরায় গর্তে তাকালো। ইচ্ছে করছে হাতে তুলে নিতে খরগোশটিকে। তেহভীন সিলিভিয়ার মুখে নেমে আসা অন্ধকার দেখে বলল,

— ডোন্ট ওয়ারি,যাওয়ার সময়
আমি তোমার জন্য এখান থেকে একটা কিনে নিবো।
তারপরও মুখটাকে এমন করে রেখো না।

নিরিবিলি পরিবেশটা ভীষণ ভালো লাগছে সিলিভিয়ার। এই জায়গায় থেকে গেলেই তো হচ্ছে। ঠোঁটদ্বয় ফাঁকা করলো কিছু বলার অভিপ্রায়ে,তার আগে তেহভীন বলল,

— সিলভার,এখান থেকে আর কয়েক কদম এগোলেই হামবোল্ট পয়েন্ট।সেখান থেকে ফিফটি ইয়ার্ডস এগুলেই বিপদ। এখনো পর্যন্ত মোট টুয়েন্টি পিউপল ওখানে দেখতে গিয়ে আজ অবধি আর ফিরে আসতে পারেন নি। তারা সকলে ওখানে নিজেদের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। জায়গাটা দেখতে যতোটা সুন্দর, ততটা ভয়ংকরও। প্লিজ কা’ম!

সিলিভিয়ার মন যেতে সায় দিচ্ছিলো এই সুন্দর জায়গাটা।কেমন মোহে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে চোখের পলকেই।তেহভীন সিলিভিয়াকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

— আমরা যেখানে থাকবো,সে জায়গাটা
আরো বেশি সুন্দর।

সিলিভিয়া যেতে যেতে পেছনে তাঁকালো। উড-ট্রি গুলো বিশাল আকৃতি নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। লাল মাটির গালিচায়,সবুজ গাছগাছালির, গভীর এক জঙ্গলে রূপান্তরিত হয়েছে।এমন মোহনীয় সুন্দর একটা জায়গা কিভাবে ভয়ংকর হয়?সিলিভিয়ার ইচ্ছে করছিলো হাত ছাড়িয়ে নিয়ে জঙ্গলের ভেতরে দূর দিতে।কিন্তু তা করলো না সে, অদ্ভুত এক নিগূঢ়তার আভাস পেলো গহীন বনটিতে। সিলিভিয়া দৃষ্টি ঘুরিয়ে সামনের দিকে ছুঁড়লো।

৮৪.

লালকাঠের তৈরি ছোটখাটো কটেজটাকে হালকাভাবে ফেয়ারি লাইট দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।সুন্দর পরিবেশে,সুন্দর একটা কটেজ। সন্ধ্যার পর থেকে খুব সুন্দর একটা দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হবে ভাবলো সিলিভিয়া। দুই কামরা বিশিষ্ট কাঠের তৈরি কটেজ। গেস্টহাউজও বলা হয় এটাকে। খাবার আয়োজনের জন্য একজন আমেরিকান শেফ রয়েছে। আর সার্ভিস দেওয়ার জন্য একজন মহিলা রয়েছেন।মূলত তারা দুজনেই স্বামী-স্ত্রী।
তেহভীন কটেজের বাইরে একটা কাঠের চেয়ারে বসে আছে। সিলিভিয়া তেহভীনের দিকে একনজর চেয়ে কটেজের পেছনের সাইডে যাওয়ার জন্য পদযুগল বাড়ালো। তখনি ঝট করে তেহভীন পেছনে ফিরে সিলিভিয়াকে ডাক দিলো।

— সিলভার কোথায় যাচ্ছো ওদিকে?

সিলিভিয়া হালকা হেসে এগিয়ে
আসতে আসতে বলল,

— এমনিই,পেছনের দিকে একটা গাছ দেখেছি।
গাছের পাতা পার্পেল কালারের।দেখতে খুব সুন্দর লাগছিলো।

তেহভীন জবাব না দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে সামনে দৃষ্টি ছুঁড়লো। হাতে ইশারা দিয়ে সিলিভিয়াকে পাশের চেয়ারটাতে বসতে বলল। সিলিভিয়া বসলো। তন্মধ্যে একটা কল এসে ঢোকলো তেহভীনের ফোনের। সিলিভিয়া উৎসুক দৃষ্টি মেলে তাকালো। কেউ একজন কথা বলছে,পরিচিত একটা কন্ঠস্বর, কিন্তু কে?

তেহভীন স্ক্রিনে দৃষ্টি রেখে বলল,

— কেমন আছো রাডিফ?

অপরপাশের রাদিফ উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল,

— অনেক অনেক ভালো ব্রো। ফাইনালি তুমি
তোমার কথা রেখেছো। পারফিউমটা আমি পেয়ে গেছি। আমার ফ্রেন্ডরা তো আমার শার্টের সাথে নাক লাগিয়ে লাগিয় শুঁকছে শুধু। আ’ম সো হ্যাপি ব্রো।

রাদিফের দীপ্তিময় চেহারা,আর প্রমোদ দৃষ্টি দেখে তেহভীন হাসলো। তেহভীনের হাসি দেখে রাদিফ হঠাৎ বলে উঠলো,

—- ব্রো, তুমি এমনি এমনি আমাকে এই গিফটা করেছো? নাকি এর পেছনে স্পেশাল কোন কারণ আছে? আমার কেন যেনো মনে হচ্ছে…

— তোমার মন ঠিক বলছে রাডিফ। অবশই স্পেশাল কোন কারণ আছে। সময় হলে তোমাকে বলবো। এখন একটা সারপ্রাইজ দেখাবো তোমাকে।দেখবে?

—- কি সারপ্রাইজ ব্রো,দেখাও তো।

তেহভীন ফোনটা ঘুরিয়ে সিলিভিয়ার উপর তাক করলো।আচমকা সিলিভিয়া ভড়কে গেলো তেহভীনের কাণ্ডে। ফোনের স্ক্রিনে শ্যামবর্ণের একটা কিশোরের মুখ দেখে হঠাৎ ভালো লাগলো সিলিভিয়ার। হাজার হাজার মাইল দূরত্বে থাকা রাদিফকে আজকে অনেক দিন পর দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। রাদিফের দৃষ্টিতে তখন একরাশ স্তব্ধতা। অকস্মাৎ, সে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

—- সিলি আপু? তুমি? আল্লাহ আমি সত্যিই
তোমাকে দেখছি? তুমি আর ব্রো একসাথে কিভাবে?
কেমন আছো আপু?

সিলিভিয়া রাদিফের এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না।তেহভীন ফোন নিজের দিকে ফিরিয়ে বলল,

— রাডিফ আমরা একসাথে কেনো সেটা আজকে
সাসপেন্স রাখলাম।সময় আসুক তখন বলবো। ভালো থেকো রাখছি। বাই…

রাদিফ উৎকন্ঠিত হয়ে অনেক কিছু বলতে চাইলো।কিন্তু ফোন কেটে যাওয়ায় তা সফল হলো না। আর অদ্ভুত ভাবে তেহভীনের ফোনে ফোন দেওয়া যায় না।

তেহভীন ফোনটা পকেটে রেখে দিয়ে সিলিভিয়ার দিকে ফিরে বসে বলল,

— তুমি হঠাৎ চেঞ্জ হয়ে গিয়েছো মনে হচ্ছে?
কি ব্যাপার?

সিলিভিয়া নিভৃতে পলক ঝাপটালো। এরপর মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োজ করে নিজে পরিবর্তন হওয়া আচরণ গুলোকে ফিডব্যাক হিসেবে দেখার চেষ্টা করলো। কিন্তু নিজের পরিবর্তন হওয়ার ব্যাপার গুলো চোখের আয়ত্তে এলো না। হ্যাঁ,আজকের সুন্দর মনোরম,নির্জন পরিবেশ দেখে সে প্রচণ্ড উৎফুল্ল হয়ে গিয়েছিলো ক্ষণিকের জন্য শুধু।

সিলিভিয়া মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— কেমন চেঞ্জ হয়েছি?

—- ডোন্ট’ নোউ,বাট ইউ লুকিং গ্লোরিয়াস!

সিলিভিয়া ঠোঁট চেপে হাসলো,বলল,

— আমার পাশে একজন সুদর্শন’সুশ্রী পুরুষ বসে আছে।আমাকে গ্লোরিয়াস তো লাগবেই।

— আর ইউ ফ্লর্টিং উইথ মি, সিলভার?

সিলিভিয়া মাথা নুইয়ে রাখলো। ঠোঁটে কোণে কিঞ্চিৎ হাসি। সিলিভিয়ার সহাস্য বদন দেখে তেহভীনও গাঢ়ভাবে হাসল। তারপর সিলিভিয়া দৃঢ়ভাবে মাথা নেড়ে সায় দিলো।

— করো ফ্লর্ট,প্রবলেম নেই। তুমি একজন
গুডম্যানের সাথে ফ্লর্ট করছো। সে অত্যন্ত ভালো মানুষ তাই এখনো রেসপন্স করেনি।

সিলিভিয়া ভারী অবাক হওয়ার বান করো বলল,

— তুমি গুডম্যান?কিভাবে? প্রুভ করো।

তেহভীন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো,

— প্রুভ তুমি নিজেই!

তেহভীন দাঁড়ালো না।সিলিভিয়াকে বসিয়ে রেখে কোথায় যেনো চলে গেলো। যাওয়ার সময় সিলিভিয়াকে ঠাঁই বসে থাকতে বললো সে।হঠাৎ একটা ক্ষীণ হাওয়া এসে সিলিভিয়ার শরীর স্পর্শ করলো। বাতাসের সাথে সুন্দর একটা ঘ্রাণ এসে নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করলো।সিলিভিয়া বুঝতে পারলো এটা তার কাছের,পরিচিত, প্রিয় মানুষটির শরীরের ঘ্রাণ। মোহনীয়তায় ভরপুর পরিবেশ। শীত শীত আমেজ। প্রগাঢ় ভালোবাসার অনুভূতি। সব মিলে বেশ লাগছে সিলিভিয়ার মুহূর্তটা৷

(চলবে)

মন চাই আমার বেবিটাকে আপনাদের দিয়ে দিই। আপনার তাকে রাখবেন আর আমি টাইমলি গল্প পোস্ট করবো।😒

রি-চ্যাক দেওয়া হয়নি।ভুল থাকলে পরে সংশোধন করে নিবো। সবাই একটু রেসপন্স করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here