লাল নীল সংসার পর্ব -১৭

#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_১৭_

শিশিরের আজ অফ ডে। নিজের রুমে কিছু সময় পায়চারি করে ড্রইংরুমে আসে। আহিয়া রহমান সোফায় বসে বসে কিছু একটা সেলাই করছে। সাঝে মেডিকেলের পরীক্ষা আগামীকাল। সাঝ নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে পড়ছে,, যেন পড়ায় কোনো সমস্যা নাহ হয়। আদনান টিউশনি করতে গেছে। আজিজ রহমান ঘুমাচ্ছেন।

শিশির এসে আহিয়া রহমানে পাশের সোফায় বসে টিভি অন করে। পাঁচ মিনিট পর বন্ধ করে দেয় টিভি। তারপর আহিয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে মায়ের মুড বোঝার চেষ্টা করছে শিশির। কিছু সময় চুপ থেকে শিশির বলে ওঠে,
–” মা!”

আহিয়া রহমান সেলাই করতে করতে বলে ওঠে,
–” হুম!”

শিশির একটু নড়েচড়ে বলে ওঠে,
–” তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

–” বল!”

শিশির আহিয়া রহমানের হাত থেকে সেলাইয়ের জিনিস নিয়ে পাশে রেখে বলে ওঠে,
–” তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আর তুমি সেলাই করছো?”

আহিয়া রহমান শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা! বল!”

শিশির আমতা আমতা করতে করতে বলে ওঠে,
–” মা! তুমি তো আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য একদম উঠে পড়ে লাগছিলা। আর আমি না না করে গেছি। কিন্তু,, এখন বলছি,, আমি বিয়ের জন্য তৈরি।”

আহিয়া রহমান কিছুটা অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকায়। মায়ের এমন করে তাকানোতে শিশির কিছুটাহ লজ্জা পেলেও মুখে লজ্জার রেশ আসতে দেয় নাহ। আহিয়া রহমান আনন্দিত গলায় বলে ওঠে,
–” সত্যি? তাহলে তোর বাবা বন্ধুর….”

আহিয়া রহমান আর কিছু বলার আগেই শিশির বলে ওঠে,
–” নাহ মা! বাবার বন্ধুর মেয়েকে নাহ। অন্য মেয়ে।”

আহিয়া রহমান সামান্য ভ্রু কুচকে বলে ওঠে,
–” অন্য মেয়ে মানে?”

শিশির মাথা নিচু করে বলে ওঠে,
–” মা! আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি।”

আহিয়া রহমান একভাবে তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে। শিশির মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে ফেলে। আহিয়া রহমান কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলে ওঠে,
–” কে সে?”

শিশির আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” ছোয়া!”

আহিয়া রহমান অবাক হয়ে বলে ওঠে,
–” ছোয়া? কিন্তু, কিভাবে কি?”

শিশির ছোয়ার সাথে কিভাবে দেখা হয়েছে ,, শুধু ছোয়ার অতীত বাদে বাকি সব বলে। আহিয়া রহমান সব শুনে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” আমার কোনো সমস্য নেই। মেয়েটাহ কে আমার বেশ লেগেছে। তোর কাছে ঠিকানা যখন আছে তাহলে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায়,, কি বলিস?”

শিশির একটু আস্তে করে বলে ওঠে,
–” মা! ছোয়াদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার আগে তোমাকে কিছু জানতে হবে। নাহলে,, পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে,, ছোয়ার প্রতি তোমার মনোভাব ঘুরে যেতে পারে। তাই আমি আগে থেকে সব ক্লিয়ার করতে চাই।”

আহিয়া রহমান কিছুটাহ ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে,
–” কি কথা?”

শিশির সব বলে,, ছোয়ার অতীতের ঘটনা সব কিছু। আহিয়া রহমান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে। শিশির একটু ভয় পেয়ে যায় মায়ের এমন ভাবে তাকানোতে। তাহলে কি তার মা মেনে নিবে নাহ? ভয় লাগছে শিশিরের। মায়ের অবাধ্য হয়ে শিশির কখনোই কিছু করবে নাহ৷ শিশির আহিয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মা! তুমি কি ভাবছো আমি জানি নাহ,, কিন্তু এইটা তো কুসংস্কার বলো,, এতে ছোয়ার তো কোনো দোষ নেই।”

আহিয়া রহমান শিশিরের দিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বলে ওঠে,
–” কিন্তু, শিশির! আমি তো মা,, তোর যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। তাহলে,, আমি যে তা মানতে পারবো নাহ বাপ।”

–” মা! তুমিও এই কুসংস্কারে বিশ্বাস করছো? প্লিজ মা! তুমি অন্তত এইটা বিশ্বাস করো নাহ। এইসব শুধু শুধু,, মানুষের মন গড়া। কোনো মেয়েই বিষকন্যা হতে পারে নাহ। বিষকন্যা বলে আসলে কিছুই হয় নাহ। এইটা শুধু মাত্র একটা এক্সিডেন্ট ছিলো,, কিন্তু কৌতুহল প্রিয় মানুষ বিষয়েটিকে অন্যরুপ দিয়েছে। একটু বোঝার চেষ্টা করো মা!”

আহিয়া রহমান চুপ করে আছে। শিশির কিছু সময় চুপ করে থেকে আহিয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মা! আমি চাইলেই তোমাকে ছোয়ার অতীত টাহ নাহ জানাতে পারতাম। কিন্তু,, পরবর্তীতে কোনো ভাবে তুমি ব্যাপার গুলো জানতে তাহলে,, ছোয়ার প্রতি তোমার ব্যবহার অন্যরকম হতে পারতো। যার জন্য আমাদের এই সুখের সংসারে হয়তো,, অশান্তির সৃষ্টি হতো। যাহ,, আমি কখনো কল্পনাতেও আনি নাহ। মা! একটা কথা ভাবোতো,, আজ যদি ছোয়ার জায়গায় আমাদের সাঝ হতো,, তাহলে তুমি কি করতে? পারতে,, সাঝকে বিষকন্যা বলে মেনে নিতে?”

শিশিরের কথায় চমকে উঠে আহিয়া রহমান। শিশির আবার বলে ওঠে,
–” ছোয়ার জীবনের একটা বাজে সময় ছিলো তখন। মেয়েটা তখন ছোট ছিলো,, আর সেই সময় থেকে সেই কুসংস্কার নিজের মাথায় নিয়ে ঘুরছে। এইটাই কি ছোয়ার প্রাপ্য? সে কি একটা সুখের সংসার আশা করতে পারে নাহ? তার জীবন কি সেই ঘটনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ? মা! যখন তুমি ছোয়ার কথা প্রথমে শুনলে,, তুমি খুশি হয়েছিলে। কিন্তু,, যখন তার অতীত টাহ জানলে তখন ভয় পেতে শুরু করলে। যদি তোমার সন্তানের কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। এই ভয় শুরু হলো তোমার। তাহলে,, ছোয়াও তো একজন মায়ের সন্তান। আর ছোয়ার জীবনের এইসব কুসংস্কার একপ্রকার ক্ষতি করেই যাচ্ছে। ছোয়ার স্বাভাবিক জীবনে চলার পথে বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে।”

আহিয়া রহমান চুপ করে শিশিরের কথা শুনছে। শিশির একটু হেসে বলে ওঠে,
–” জানো মা! হাস্যকর কথাটাহ আসলে কি? তুমি যার জন্য নিজের সন্তানের ক্ষতি হওয়ার ভয় পাচ্ছো,, তোমার সন্তান সেই মেয়েটার কাছে নিজের সুখ খুজে নিয়েছে। মা! তুমি যদি ছোয়াকে পছন্দ নাহ করো,, তাহলে আমি কখনো ছোয়াকে বিয়ে করবো নাহ। কারন,, আমি চাই না ছোয়া এই বাড়িতে এসে,, তোমার অবহেলা পাক। যদি ছোয়া এই বাড়িতে বউ হয়ে আসে,, তাহলে ছোয়াকে তোমার সাঝের মতো ভালোবাসতে হবে। হয়তো একশোতে একশো হবে নাহ কিন্তু নিরানব্বই দিতে হবে মা। কারন,, তোমার ছেলে কিন্তু ঐ মেয়েটাহ কে ভালোবেসে এই বাড়ি বউ বানিয়ে আনছে। জানো মা,, তুমি যে ভয় টাহ তোমার ছেলে কে নিয়ে পাচ্ছো,, একদম একই ভয় ছোয়াও তোমার ছেলে কে নিয়ে পাচ্ছে। ছোয়া কিন্তু আমাকে বিয়ে করতে রাজি নাহ,, কেন জানো? কারন,, ওর জন্য আমার যেন কোনো ক্ষতি নাহ হয়। কিন্তু,, মা! এইটা সম্পূর্ণ কুসংস্কার। ছোয়ার অতীত টাহ একটা এক্সিডেন্ট ছিলো,, আর যার সাফার করছে ঐ নিষ্পাপ মেয়েটাহ।”

শিশির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে,
–” মা! তুমি ছোয়াকে বউ করে নাহ আনতে চাইলেও আমার কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু,, আমি ছোয়া ছাড়া অন্য কাউকে নিজের বউ করে আনতে পারবো নাহ। তাই আমাকে তুমি বিয়ের কথা বলতে পারবে নাহ। মা! আমি কিন্তু তোমাকে একদম প্রেশার দিচ্ছি নাহ। আমি বিয়ে করবো নাহ কারন,, যে মেয়েটাহ কে তোমরা আমার বউ করে নিয়ে আসবে,, তাকে আমি তার প্রাপ্য দিতে পারবো নাহ। কারন,, তোমার ছেলের মন কোনো ব্লাকবোর্ড নাহ,, যে একজনকে নাহ পেলে মুছে অন্য একজনের নাম লিখবে। আর যদি ছোয়াকে বউ করে আনতে চাও,, তাহলে মন থেকে আনতে হবে। আমাকে একটু বাইরে যেতে হবে মা! আসছি।”

কথাগুলো বলে শিশির নিজের রুমে চলে যায় রেডি হওয়ার জন্য। আহিয়া রহমান শিশিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর পাশের থেকে সেলাই টাহ হাতে নেয়। কিন্তু,, মন চাচ্ছে নাহ। সেলাইয়ের সরঞ্জাম পাশে রেখে নিজের রুমে চলে যান আহিয়া রহমান।


চারিদিকে আলোঝলমলে রংদার,, উৎসব উৎসব সিচুয়েশন। হালকা মিউজিকে চারিদিকে ভরে আছে। কাচের গ্লাস,, কাটাচামচের আওয়াজ গুলোও যেন এক প্রকার বাজনার আকার ধারন করেছে। খাবারের মিষ্টি সুভাস চারিদিকে ছড়িয়ে আছে।

আদনান চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে বড় করে শ্বাস নেয়। ইয়াশের বার্থডে পার্টি এইটা। একদমই আসতে চায় নি,, আদনান। কিন্তু,, স্নেহার জন্য নাহ এসে পারলো নাহ। মেয়েটাহ মারাত্মক ভাবে চেপে ধরেছিলো তাকে। কোনো “না” তেই কাজ হয় নি। আসতেই হলো।

ইয়াশের বার্থডে পার্টিতে আদনান এসেছে প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেছে। এখনও পর্যন্ত ইয়াশ বা স্নেহা কাউকেই দেখে নি সে। বিরক্ত লাগছে আদনানের। ভাগ্যিস! বাকি সব বন্ধুবান্ধবরা চলে এসেছে। নাহলে কি যে বিপদে পড়তো আদনান।

হঠাৎ চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যায়৷ সবাই কিছুটাহ চমকে উঠে। তারপর একপাশে তৈরি করা একটা ছোট্ট রাস্তা জুড়ে টুরি বাল্ব জ্বলে উঠে। রাস্তা টাহ এতো সময় অন্ধকার করে রাখার জন্য,, ভালো ভাবে কেউ খেয়াল করে নি। কিন্তু,, এখন খেয়ালে আসছে,, অনেক সুন্দর করে সাজানো রাস্তাটাহ।

সবার দৃষ্টি সাজানো রাস্তাটির দিকে। রাস্তাটির অপরপ্রান্তে দুইটা পর্দা টানিয়ে রাখা। পর্দা দুইটি দুইদিকে সরে গেলে সবাই আরও উৎসুক চোখে সেইদিকে তাকায়। আদনান একভাবে তাকিয়ে আছে পর্দার ঐদিকে। পর্দার পেছন থেকে বেরিয়ে আসে একটা ছেলো অবয়ব। যার উপর এসে পড়ে একটা নীল লাইট। তখনই সবাই পরিষ্কার ভাবে দেখতে পায় ইয়াশকে। ইয়াশকে ঠিক যেন একজন হিরোর মতো লাগছে। একদম হিরো লুক ইয়াশের। হোয়াইট শার্ট,, ব্লাক ব্লেজার,, ব্লাক ডেনিম প্যান্ট,, ব্লাক শু,, ব্লাক ব্রান্ডেড ওয়াচ,, চুল গুলো স্পাইক করা,, সব মিলিয়ে কোনো হিরো থেকে কম লাগছে নাহ ইয়াশকে।

আদনান ইয়াশের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। তার হিংসা লাগছে নাহ ইয়াশকে। বরং ভালোই লাগছে। আসলেই ছেলেটাহ সুর্দশন। ইয়াশ পর্দার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই কেউ একজন একটা কোমল হাত ইয়াশের হাতের উপর রাখে। আদনান কিছুটাহ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ইয়াশের দিকে।

ইয়াশের হাত ধরে বেরিয়ে আসা মেয়েটির দিক থেকে চোখ সরাতে পারে নাহ আদনান। যেন অধিক মুগ্ধতা তাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এ যে তার বার্বিডল! তার বার্বিডল এতো রূপসী? আদনানের চোখে এক রাশ মুগ্ধতা এসে ভর করেছে। স্নেহা একটা হোয়াইট বার্বি গাউন পরেছে,, চোখে মোটা করে কাজল,, ঠোটে হালকা লাল লিপস্টিক,, চুল গুলো উচু করে খোপা করে একপাশে তিনটা সাদা গোলাপ লাগানো,, এক অন্যরকম,, স্নিগ্ধ,, পবিত্র সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।

স্নেহা এগিয়ে এসে মুচকি হেসে ইয়াশের দিকে তাকায়। ইয়াশও মুচকি হেসে স্নেহার কোমর ধরে নিজের দিকে এগিয়ে এনে এক হাতে জড়িয়ে সামনের দিকে তাকায়। আগুন জ্বলে উঠে আদনানের শরীরে। মস্তিষ্ক যেন আগুনের লাভার মতো করতে থাকে। এক অসহ্য বিরক্তি ছেয়ে যাচ্ছে তাকে। চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে স্নেহা আর ইয়াশের দিকে। ইয়াশ স্নেহার হাত ধরে স্পিকারের সামনে এসে বলে ওঠে,
–” হ্যালো,, এভ্রিয়ন! গুড ইভিনিং! সবাইকে দেখে বেশ আনন্দিত! আমি কখনো নিজের বার্থডে এতো হাইলি সেলিব্রেট করি নাহ। বাংলাদেশে আমি খুব একটা বার্থডেতে আসিও নাহ। কানাডায় থাকা হয়। কিন্তু,, এইবার স্নেহা মাই বিউটি আমাকে আসতে বলেছে এবং সে নিজেই আমার বার্থডের সব কিছু এ্যারেন্জ করেছে। আর আমিও মুগ্ধ হয়ে গেছি তার প্রতিটা এ্যারেন্জমেন্টে। থ্যাংকস টু স্নেহা,, মাই বিউটি!”

স্নেহা হালকা হাসে। ইয়াশ স্নেহাকে হালকা জড়িয়ে ধরে। আদনান দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করে যাচ্ছে। ইয়াশ আবার বলে ওঠে,
–” সো এভ্রিয়ন! লেটস ইন্জয় দিস পার্টি!”

ইয়াশ স্নেহার হাত ধরে স্পিকারের সামনে থেকে সরে আসে। সবাই আবার নিজেদের মতো ব্যস্ত হয়ে যায়। আদনান নিজেকে সামলিয়ে রাখছে। স্নেহা ইয়াশকে সাথে করে নিয়ে বন্ধুদের কাছে আসে। আদনানের দিকে তাকিয়ে স্নেহা বলে ওঠে,
–” কতো সময় হলো,, এসেছিস?”

আদনান একবার স্নেহা আর ইয়াশের হাত ধরার দিকে তাকিয়ে তারপর স্নেহার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
–” বিশ মিনিটের মতো।”

–” ওহ!”

তারপর সব বন্ধুরা স্নেহার সাথে কথা বলতে শুরু করে। কিন্তু,, আদনান চুপ করে থাকে। আদনানের সব কিছুই অসহ্য লাগতেছে। সব থেকে রাগ হচ্ছে,, ইয়াশ স্নেহার হাত ধরে রেখেছে। আদনান হঠাৎ করেই ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ইয়াশ! আপনাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি?”

ইয়াশ হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” ইয়াহ! অফকোর্স। হোয়াই নট?”

আদনান স্নেহার দিকে একপলক তাকিয়ে আবার ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আপনার বাবা মা কোথায়? কই তাদের তো দেখছি নাহ। বাবা মা ছাড়া বার্থডে সেলিব্রেট করছেন?”

ইয়াশ স্বাভাবিক ভাবেই বলে ওঠে,
–” আসলে,, আমার পেরেন্টস কানাডায়। ওনারা আসেন নি। প্রতি বছর ওনাদের সাথেই কাটায়,, কিন্তু এইবার স্নেহা যখন বললো,, তখন আর নাহ করতে পারি নি। কিন্তু,, মম,, ড্যাডের সাথে আমার অলটাইম কথা হয়।”

আদনান সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে মুচকি হাসি দেয়। কিছু সময় পর কেক আনা হয়। স্নেহা আর ইয়াশ কেকের সামনে দাড়ায়। সবাই ওদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আদনান আসতে চাচ্ছিলো নাহ কিন্তু,, রিয়াদ জোর করে নিয়ে এসেছে কেকের কাছে। ইয়াশ স্নেহার হাত নিয়ে ছুরির উপর রেখে,, নিজের হাত স্নেহার উপর রেখে কেক কাটে। আদনান পুরো সময় টাহ অন্য দিকে তাকিয়ে ছিলো,, সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে সহ্য সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে।

ইয়াশ এক পিস কেক তুলে স্নেহাকে খাইয়ে দেয়। স্নেহাও এক পিস কেক তুলে ইয়াশকে খাইয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” হ্যাপি বার্থডে! মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দি ডে!”

ইয়াশ মুচকি হাসে। চারপাশে আবার সবাই ব্যাস্ত। স্নেহা নিজের গাউনে একটু সমস্যা হওয়ায় ওয়াশরুমে গিয়ে ঠিক করে আসে। তারপর করিডোর দিয়ে পার্টিতে আসতেই হঠাৎ আদনান সামনে এসে দাড়ায়। কিছুটাহ চমকে উঠে স্নেহা। তাও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে ওঠে,
–” তুই এখানে?”

আদনান কোনো কথা নাহ বলে স্নেহার দিকে এগিয়ে আসে। স্নেহা কিছুটাহ অবাক হয়ে যায়,, আদনানের এইভাবে এগিয়ে আসাতে। আদনান স্নেহার হাতে এক পিস কেক ধরিয়ে দেয়। স্নেহা এতো সময় খেয়াল করে আদনান হাতে করে এক পিস কেক নিয়ে এসেছে। আদনান স্নেহার হাত থেকে কেকটুকু খেয়ে নেয়। স্নেহা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে। আদনান স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।”

স্নেহা কিছু বলার আগেই আদনান স্নেহার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। স্নেহা কিছুটাহ কেঁপে উঠে। আদনানের প্রতিটাহ কাজে স্নেহা অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আদনান স্নেহার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আজ তোকে পুরো বার্বিডলের মতো লাগছে। অনের সুন্দর দেখা যাচ্ছে,, ককটেল সুন্দরী! গেলাম এখন,, আল্লাহ হাফিজ!”

কথাটাহ বলে আদনান একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়। স্নেহা অবাক হয়ে আদনানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। নিজের অজান্তেই ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠে স্নেহার।


আজিজ রহমান রুমে আসতেই দেখেন আহিয়া রহমান বিছানায় বসে অন্যমনস্ক হয়ে আছে। কিছু টাহ ভ্রু কুচকিয়ে তাকান আজিজ রহমান। আহিয়া রহমান এতো কি ভাবছে? আজিজ রহমান আহিয়া রহমানের পাশে বসে বলে ওঠে,
–” আহিয়া!”

আজিজ রহমানের ডাকে কিছুটাহ চমকে উঠে আহিয়া রহমান। আহিয়া রহমান আজিজ রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আমাকে ডাকছো?”

আজিজ রহমান ভ্রু কুচকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি ভাবতাছো তুমি? এতো অন্যমনস্ক হয়ে আছো ক্যা?”

আহিয়া রহমান একটু নড়েচড়ে বলে ওঠে,
–” শিশিরের বাপ! তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

–” কি কথা?”

–” শিশির বিয়ে করতে রাজি হয়ছে।”

আজিজ রহমান আনন্দিত হয়ে বলে ওঠে,
–” সত্যি? শিশির রাজি হইছে। তাইলে….”

আজিজ রহমান কথা শেষ করতে পারেন নাহ। তার আগেই আহিয়া রহমান বলে ওঠে,
–” আগে আমার কথা শুনো। তোমার পোলা বিয়ে করবো,, কিন্তু তার নিজের পছন্দের একটা মাইয়া আছে।”

আজিজ রহমান কিছুটাহ গম্ভীর হয়ে বলে ওঠে,
–” নিজের পছন্দ? মাইয়াটা কে?”

–” আমাগো সাঝরে যে মাইয়াডা সাহায্য করছিলো সে। ছোয়া নাম মাইয়াটার।”

আজিজ রহমান মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” ওহ! ঐ মাইয়াটা। তা এতো চিন্তার কি আছে? মাইয়াটারে আমার ভালোই লাগছে। শিক্ষিত,, রুপবতী,, মনে তো হয় অনেক গুনও আছে। আর আমাদের শিশিরের সাথে মানাবেও বেশ।”

আহিয়া রহমান থমথমে গলায় বলে ওঠে,
–” আমিও তোমার মতো অনেক খুশি হইছিলাম। কারন,, মাইয়াটাকে আমারও পছন্দ হইছে। কিন্তু!!”

আজিজ রহমান ভ্রু কুচকে বলে ওঠে,
–” কিসের কিন্তু?”

আহিয়া রহমান একপলক আজিজ রহমানের দিকে তাকায়। আহিয়া রহমান আস্তে আস্তে সব বলে আজিজ রহমানকে। আজিজ রহমান কিছু সময় চুপ করে থেকে আহিয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আহিয়া! তুমি একটা কুসংস্কার নিয়ে বসে আছো। এইসব গ্রামের মূর্খ মানুষদের মানায়। তোমাকে নাহ। আজ কতো গুলো বছর হয়ে গেছে তুমি শহরে আসছো,, কত কিছুর সম্মুখীন হয়েছো,, কত পথ পেরিয়ে এসেছো,, আমাদের যুগ অনুযায়ী এসএসসি পাশ করেছিলে,, তোমার মুখে কি এই কথা গুলো মানায়? ভুলে যেও নাহ গ্রামের মানুষ তোমাকেও কুসংস্কারে ডুবিয়ে দিয়েছিলো।”

আহিয়া রহমান আজিজ রহমানের দিকে তাকায়। আজিজ রহমান আহিয়া রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মনে পড়ে আহিয়া? তোমার সাথে আমার বিয়ের দুইবছর পরও কোনো সন্তানের জননী হতে পারছিলে নাহ। তখন গ্রামের মানুষ তোমাকে বন্ধ্যা বলেছিলো,, তারপর যখন আমাদের বড় সন্তান তোমার গর্ভে এলো,, তার চার মাস পর গর্ভপাত হয়ে আমাদের প্রথম সন্তান মারা গেলো। মানুষ তোমাকে অলক্ষুণে বলেছিলো। তুমি কোনোদিন মা ডাক শুনতে পাবে নাহ,, জন্ম দিতে পারবে নাহ কোনো সন্তানের। কিন্তু,, তারপরই আমাদের শিশিরের জন্ম,, একটা সুস্থ সন্তানের জন্ম হলো। আদনানের জন্ম হলো,, সাঝের জন্ম হলো,, কিন্তু মানুষ তো কতো কি বলেছিলো। তাতে কি হয়েছে? এইগুলো সবই ভাগ্য। কোনো ঘটনা দ্বারা কারোর ভবিষ্যৎ নির্নয় হয় নাহ। তুমি শিশিরের মা। শিশিরের উপর তোমার অধিকার সব চেয়ে বেশি। তাই তোমার সিদ্ধান্ত অনেক বড় কিছু বয়ে আনবে। নিজে নিজে ভাবো আহিয়া,, কিন্তু তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকলো,, শিশির কিন্তু এই পরিবারের জন্য অনেক করেছে,, তাই যাহ সিদ্ধান্ত নিবে অনেক ভেবে চিন্তে নিও। ছেলেটার হাসি,, সুখ কেড়ে নিও নাহ। তাহলে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠবে। তাতে আমরা কেউ ভালো থাকবো নাহ। ভেবে দেখো।”

আজিজ রহমান কথা গুলো বলে রুম থেকে চলে যান। আহিয়া রহমান আজিজ রহমানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে।।।।

#_চলবে………..🌹

{{ ভুল,, ত্রুটি সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করি!! 😇 }}

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here