#_লাল_নীল_সংসার_
#_মারিয়া_রশিদ_
#_পর্ব_২১_
সাঝ আর আদনান একটা সোফায় বসে আছে। শিশির আর আহিয়া রহমান একটা সোফায় বসে আছে। আজিজ রহমান আর একটা সোফায় বসে আছে। মিসেস. কেয়া আর কোলি ( মিসেস. কেয়ার বোন ) দুইটা চেয়ারে বসে শিশিরদের বাসার সবার সাথে গল্প করছে। স্পন্দন পুরো ঘর জুড়ে হেটে বেড়াচ্ছে।
শিশিরদের সামনে অনেক নাস্তাও রাখা হয়েছে। সবাই হালকা খাচ্ছে,, সাথে গল্প করছে। কিন্তু,, শিশিরের মন যে ছটফট করছে। ছোয়াকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে। আহিয়া রহমান খেয়াল করেন,, শিশির কেমন যেন অস্থির হয়ে আছে,, আর বার বার ভেতরের দিকে তাকাচ্ছে।
আহিয়া রহমান ছেলের এমন কান্ডে মুচকি হাসি দেন। ছেলেটাহ দেখছি,, ছোয়ার জন্য একদম পাগল হয়ে গেছেন। সত্যি! ভাগ্যিস ছোয়ার সাথে শিশিরের বিয়ে হচ্ছে,, নাহলে যে ছেলে মেয়েটার জন্য এতো উতলা,, সে তাকে ছাড়া সারাজীবন বাচবে কিভাবে? যদিও এখনো আহিয়া রহমানের মনে বালু কিচকিচের মতো করে উঠে, কিন্তু তিনি পাত্তা দেন নাহ। আহিয়া রহমানের বিশ্বাস,, যা হবে ভালোই হবে। আহিয়া রহমান মিসেস. কেয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” আপা! এইবার ছোয়া মাকে নিয়ে আসেন। এখানে কাজ সম্পন্ন করে,, আমাদের আবার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে,, বুঝেনই তো কতো কাজ পড়ে আছে।”
মিসেস. কেয়া মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” অবশ্যই! স্পন্দন!”
স্পন্দন দৌড়ে মায়ের কাছে চলে আসে। মিসেস. কেয়া স্পন্দনে দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” যাও,, রিংকিকে বলো,, বুবুন কে নিয়ে আসতে।”
–” আচ্ছা! আম্মা!”
স্পন্দন দৌড়ে ছোয়ার রুমের দিকে চলে যায়। কিছু সময় পর রিংকি ছোয়াকে নিয়ে আসে। শিশির এখনও ছোয়ার দিকে তাকায় নি। আহিয়া রহমান শিশিরের পাশ থেকে উঠে ছোয়ার দিকে এগিয়ে যায়। মাকে এরকম ভাবে উঠে যেতে দেখে,, সেইদিকে তাকায় শিশির।
শিশির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ছোয়ার দিকে৷ ছোয়ার এতো রুপ শিশিরকে যেন আরও পাগল করে তুলছে। আসলেই,, ছোয়া মারাত্মক রুপবতী নাকি,, শিশিরের কাছে এমন লাগে? ভালোবাসার মামুষকে নাকি সব সময় অতিরিক্ত সুন্দর লাগে,, সেইজন্যই কি শিশিরের কাছে ছোয়াকে এতো রুপবতী লাগে?
আহিয়া রহমান ছোয়া কে শিশিরের পাশে বসায়৷ শিশির এখনো ছোয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। শিশির যে তার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে বুঝতে পারে ছোয়া,, আর লজ্জাও পাচ্ছে। শিশিরকে এরকম হাবলার মতো তাকিয়ে থাকতে দেখে সবাই মুখ চেপে হাসছে। এতে ছোয়া যেন আরও লজ্জায় পড়ে যাচ্ছে।
আদনান মুচকি হেসে গলা খাকরি দিতেই শিশিরের ধ্যান ভাঙে। শিশির তাড়াতাড়ি ছোয়ার থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। শিশির আশেপাশে সবার দিকে তাকিয়ে দেখে,, সবাই তার কান্ডে হাসছে। শিশিরও কিছুটাহ লজ্জা পায়। ছোয়ার তো মন চাচ্ছে লজ্জায় মাটি ফাক করে নিচে চলে যেতে। সাঝ এগিয়ে এসে ছোয়ার পাশে বসে ছোয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” মাশাআল্লাহ! আমার ভাবিকে তো খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।”
সাঝের মুখে ভাবি ডাক শুনে ছোয়ার শিরদাঁড়া দিয়ে এক কম্পন বয়ে যায়। ছোয়া কখনো ভাবেই নি,, এমন একটা সংসার আবার তার হতে পারে। আনন্দ বয়ে যাচ্ছে ছোয়ার বুকের ভেতর। আজিজ রহমান বলে ওঠে,
–” আচ্ছা! সব কথা পরে হবে,, আগে আসল কাজ টাহ হয়ে যাক।”
মিসেস. কেয়া হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” ঠিক বলেছেন ভাইজান! শুভ কাজে দেরি করতে নেই।”
আহিয়া রহমান একটা আংটি শিশিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” শিশির এইটা ছোয়াকে পরিয়ে দে।”
শিশির সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে আংটি টাহ হাতে নেয়। মিসেস. কেয়া ছোয়ার কাছে এসে ছোয়ার হাত টাহ এগিয়ে দেয়। শিশির ছোয়ার হাত ধরতেই কিছুটাহ কেঁপে উঠে ছোয়া। শিশির ছোয়ার কেঁপে উঠা অনুভব করে। ওষ্ঠে হালকা হাসি ফুটে উঠে তার। আস্তে আস্তে ছোয়ার অনামিকা আঙুলে আংটি টাহ পরিয়ে দেয় শিশির।
এক রাশ ভালো লাগা,, লজ্জা,, দায়িত্ব,, অনুভুতি,, মুগ্ধতা,, যেন ছোয়াকে ঘিরে ধরে। চোখ গুলো ছলছল করে উঠে। নিজের অতীতের পর কখনো কল্পনাও করেনি এমন দিনের। ছোয়া হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আংটি টাহ তার আঙুলে জ্বলজ্বল করছে। এই আংটি দিয়ে শিশির তাকে বাগদত্তা রুপে গ্রহন করলো।
যার কাছের থেকে দুরে সরার জন্য ছোয়া কত চেষ্টা করেছিলো,, আর আজ সেই ছেলেটা তাকে আংটি পরিয়ে নিজের বাগদত্তা রুপে গ্রহন করলো। ছোয়াকে যেন একরাশ আবেশ ঘিরে ধরেছে। মিসেস. কেয়া ছোয়ার হাতে একটা আংটি দিয়ে শিশিরকে পরিয়ে দিতে বলে। ছোয়া শিশিরকে কাঁপা হাতে আংটি পরিয়ে দেয়। আহিয়া রহমান বলে ওঠে,
–” আলহামদুলিল্লাহ!”
এরপর সবাই নানান রকম গল্প করতে থাকে। রিংকির সাথে সাঝের ভালো ভাব জমে গেছে। সবাই সবার মতো ব্যস্ত হয়ে আছে। চুপচাপ আছে শুধু শিশির আর ছোয়া। এই দুইজন কোনো কথাই বলছে নাহ। কিন্তু,, কোনা চোখে একে অপরকে দেখছে। ছোয়ার প্রচন্ড ভালো লাগছে,, শিশিরের সাথে এমন দৃষ্টি নিয়ে খেলতে,, অবশ্য ছোয়া লজ্জাও পাচ্ছে। শিশিরেরও ভালো লাগছে ছোয়ার এমন লাজ রাঙা রুপ দেখতে।
★
চোখের পলকে কেটে গেলো একটি সপ্তাহ।
শিশির আর ছোয়ার পরিবারের সবাই খুব ব্যস্ত ওদের বিয়ে নিয়ে। যতোই ঘরোয়া করে হোক নাহ কেন,, কাজ তো থাকে অনেক।
……………..সাঝ এর মেডিকেলে ক্লাস শুরু হয়ে গেছে। শিশিরের কড়া আদেশ,, এই বিয়ের অযুহাতে ক্লাস মিস দেওয়া যাবে নাহ। শুধু গায়ে হলুদের দিন নাহ গেলে হবে আর বিয়ে তো শুক্রবার,, ক্লাস থাকবে নাহ। তাই,, সাঝ সব ক্লাস এটেন্ড করছে।
……………..আদনান ভার্সিটিতে এখন একটু কম যাচ্ছে। কয়েক মাস পর ফাইনাল এক্সাম তাই যতটুকু নাহ গেলেই হয় নাহ,, সেইটুকুই যাচ্ছে। টিউশনিও করাতে যেতে হয়। আদনান আজ কাল একটু চিন্তিত থাকে স্নেহাকে নিয়ে। কারন স্নেহা হঠাৎ হঠাৎ কিছু একটা ভাবে। অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে,, কিন্তু স্নেহা সেরকম কিছু বলে নি।
…………….শিশির ছোয়া এই কয়দিন সেরকম কোনো কথা বলে নি। শুধু শিশির একদিন ফোন দিয়ে বলেছিলো,, বিয়েতে ছোয়া কি পরতে চায়,, শাড়ি নাকি লেহেঙ্গা আর কি কালারের। এই কয়েকদিনে এর বেশি কথা তাদের হয় নি। শিশির ছোয়াকে সময় দিতে চাচ্ছে। কারন,, সে চায় ছোয়া যেন নিজেকে যথেষ্ট সময় দেয়। কারন,, বিয়ের পর এই সময় টাহ আর ছোয়া পাবে নাহ। তাই এখন দিচ্ছে শিশির।
…………..আজ শিশির আর ছোয়ার গায়ে হলুদের দিন। ছোট্ট করে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। দুইজনের গায়ে হলুদ একসাথে করা হবে একটা ছোট্ট সেন্টারে। কারন,, উভয় পাশেই কম মানুষ দাওয়াত দেওয়া হয়েছে,, তাই এক সাথে করলে,, মানুষজন একসাথে বেশি হবে। মজাটাহও বেশি হবে। তাই সবাই এরকম সিদ্ধান্ত নিলো।
শিশিরের চাচা-চাচী এসেছে। যদিও তাদের খুব একটা ইচ্ছে ছিলো নাহ আসার,, তাও আসতে হয়। শিশির,, আদনান কেউই তাদের আসা নিয়ে খুশি প্রকাশ করে নি। উল্টো আরও এক প্রকার বিরক্তই হয়েছে। শিশিরের এক খালা আর দুই মামা আর তাদের ছেলে মেয়েরা এসেছে। এই নিয়েই শিশিরের বাড়ি ভরপুর।
আদনান মাঝের রুমে আসছে। এমন সময় তার চাচার গলার আওয়াজ শুনে থেমে যায়। আফজাল রহমান বলে ওঠে,
–” তোর বাড়িতে থাকার মতো কোনো জায়গা নেই,, আর তুই এতো মানুষ দাওয়াত দিছিস। যাওবা দিছিস তা তোর ব্যাপার,, আমাকে কেন কইলি? এখানে থাকার এতো সমস্যা,, একটু আলাদা জায়গা পাচ্ছি নাহ। অসহ্য!”
আজিজ রহমান বিনীত সুরে বলে ওঠে,
–” ভাইজান! আমাদের চারটে শোয়ার ঘর,, আগে তো দুটো ছিলো। এখন আরও বাইড়া গেছে। আস্তেধীরে সব হইবো। আমার মাইয়া ডাক্তারিতে চান্স পাইছে,, শিশিরের প্রোমোশন হইছে,, আদনানের পর পড়ালেখা শেষ হইয়া গেলে,, তারপর চাকরি বাকরি করবে,, তখন আরও বড় ফ্লাট নিবো। তখন আর কোনো অসুবিধা হবে নাহ। তুমি দেইখো।”
আফজাল রহমান কিছুটাহ ব্যাঙ্গ করে বলে ওঠে,
–” আরে থাম! থাম! তোর এইসব আবেগী কথা রাখ। মাইয়া ডাক্তারীতে চান্স পাইছে,, দেইখা এতো খুশি হওনের কিছু নাই। দুইদিন পর যখন মাইয়া পেখম মেলবো তখন বুঝবি।”
আজিজ রহমান কিছু বলার আগেই আদনান ভেতরে চলে আসে। এতাে সময় সে চুপ করে থাকলেও,, বোনের কথা শুনে আর চুপ করে থাকতে পারে নি। আদনান আফজাল রহমানের দিকে তাকিয়ে রাগী চাপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” সাবধান কাকা! যাহ,, বলবেন সব মেনে নিবো কিন্তু,, আমার বোনের সম্পর্কে একটা বাজে কথা বললে,, আমি কিন্তু তার শেষ দেখে যাবো।”
আফজাল রহমান রেগে বলে ওঠে,
–” কি করবি কি তুই? মারবি নাকি আমাকে?”
আদনান চাপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” মাফ করবেন কাকা! কিন্তু,, আপনি আপনার ছেলেকে যে শিক্ষা দিয়েছেন,, এই শিক্ষা আমার বাবা- মা আবার আমাদের দেয় নি।”
আফজাল রহমান চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” এই ছোকড়া কি কইতে চাস তুই?”
আজিজ রহমাম আদনান কে চুপ করার জন্য ইশারা দিলে আদনান বলে ওঠে,
–” আব্বু! দয়া করে আজ আমাকে থামাবেন নাহ। বলতে দিন! হ্যা! কাকা! আমি কি বলতে চাইছি,, শুনেন তাহলে,, আমার আব্বু – মা এই শিক্ষা দিয়েছে,, যে বড়দের গায়ে হাত তোলা দুরের কথা উচু গলায় কথা বলাও যাবে নাহ। কিন্তু,, আজ তাদের সেই শিক্ষা থেকে একটু সরে আসছি,, নাহলে এইটাও অন্যায় হয়ে যাবে। আমি আপনার উপর চেচিয়ে কথা বলছি নাহ,, তাও আমার আব্বু ইশারা করছে চুপ করে থাকার জন্য। কিন্তু,, কাকা আমার আজও মনে আছে,, আপনার গুনধর পুত্রের কাহিনি। যে আমার আব্বু কে মারতে চেয়েছিলো।”
এরকম চেচামেচি শুনে শিশির আর আহিয়া রহমানও চলে আসে। বাকি সবাই ছাদে থাকায় কিছু শুনতে পাচ্ছে নাহ। আদনানকে এইভাবে কথা বলতে দেখে শিশির এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে?”
আদনান শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে শুনবি ভাইয়া? আমাদের বাড়িতে প্রেসিডেন্ট এসেছে। তাদের থাকার জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা কেন করিস নি তোরা?”
শিশির একপলক আজিজ রহমানের দিকে তাকিয়ে দেখে তিনি হতাশ ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে। আবার আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আদনান শান্ত হ।”
আদনান একটু চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” কিসের শান্ত হবো ভাইয়া? আমি বার বার নিষেধ করেছিলাম,, এই লোকগুলোকে দাওয়াত দেওয়ার কোনো দরকার নেই। ভুলে গেছিস ভাইয়া,, এই লোকগুলোর করা সব কর্মকান্ড? তুই ভুলে যেতে পারিস ভাইয়া,, কিন্তু আমি ভুলি নি। কারন আমি তোর মতো এতো ভালো নাহ। এরা কেন আসে জানিস? এরা আসে আমাদের অপমান করতে। কিসের অহংকার করে এরা? এরা যে সম্পত্তির অহংকার করে,, ওরা বোধহয় ভুলে যায়,, বেইমানি করে আমার বাবার সব সম্পত্তি গ্রাস করেছে। ওরা ভুলে যায় ভাইয়া। ওরা ভুলে যায়। আর তোরাও ভুলে যাস। কিন্তু,, আমার সমস্যা কি জানিস? আমি এইগুলো ভুলতে পারি নাহ। পারি নাহ ভুলতে। পারি নাহ!”
কথাগুলো বলে আদনান চলে যায়। ঘরে পিনপিন নিরবতা। আফজাল রহমান থম ধরে বসে আছে। মারাত্মক অপমান বোধ করছেন তিনি। শিশির একটা নিশ্বাস নিয়ে বলে ওঠে,
–” আদনানের হয়ে আমি ক্ষমা চাচ্ছি, কাকা! আসলে,, ছেলে টাহ আজ বোধ হয় নিজেকে আর সামলাতে পারে নি। আমি সঠিক জানি নাহ,, এখানে কি হয়েছিলো। কিন্তু,, আমি অনুমান করতে পারি। এইটা একটা অনুষ্ঠান বাড়ি,, আর আমাদের সামর্থও এতো বেশি নাহ। তাই,, আপনাকে পার্সোনালএকটা রুম দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে নি। তার জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখীত। কিন্তু,, আদনান কেন এতো রাগ করলো আমি জানি নাহ। আসলে,, আদনান একটু চঞ্চল মস্তিষ্কের। কিন্তু,, ভদ্র। হয়তো আপনিই কোনো অন্যায় সঙ্গত কথা বলেছেন,, যা আদনানের একদমই পছন্দ হয় নি। তাই এরকম বলে গেছে। কিছু মনে করবেন নাহ, কাকা! এইটা একটা অনুষ্ঠান বাড়ি,, সবার বন্ধু মহল,, আত্নীয় মানুষেরা আছে। কোনো সিনক্রিয়েট দয়া করবেন নাহ। এতে,, আমাদের রহমান বংশেরই সম্মানহানি হবে। আর সবার আনন্দ টাহও নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বলছি,, এমন কিছু করবেন নাহ,, যার মানে টাহ এমন হয়,, এক বালতি দুধে এক ফোঁটা চোনার মতো।”
কথাগুলো বলে শিশির চলে যায়। আজিজ রহমানও মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়। আহিয়া রহমান এক পলক আফজাল রহমানের দিকে তাকিয়ে আবার চলে যায়। আফজাল রহমান জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে বাথরুমে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে আসে। তারপর বিছানায় একটু শরীর এলিয়ে দেয়।
★
চারিদিকে ফুল,, টুরি বাল্ব,, আলোক সজ্জায় সজ্জিত। সেন্টার টাহ খুব বেশি বড় নাহ,, মধ্যম আকৃতির। পারিবারিক ভাবে বিয়ে হলেও,, সেন্টারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে,, কেননা তাদের নিজেদের বাসা বা বাড়িতে সব মানুষের আয়োজন করাও কষ্টকর।
কারন লোক কম হলেও কম নাহ,, শিশিরের পরিবার,, আজিজ রহমানের কিছু ঘনিষ্ঠ আত্নীয়,, আহিয়া রহমানে বাপের বাড়ির লোকজন,, শিশিরের অফিস কলিগ সাথে কিছু বন্ধু,, আদনানের বন্ধু মহল,, সাঝেরও বেশ কয়েকজন বন্ধু এসেছে। ছোয়াদেরও বেশ কিছু নিকট আত্মীয় সাথে বন্ধু মহল। তাই একটা ছোট্ট সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে সবার।
সেন্টারের একপাশে সুন্দর করে একটা স্টেজ করা হয়েছে। যেখানে এখন শিশির বসে আছে,, এখানেই ওদের হলুদ অনুষ্ঠান হবে। ছোয়া পার্লারে,, এখনও আসে নি। ছোয়ার সাথে রিংকি আর সাঝ আছে। শিশির একটা হলুদ পাঞ্জাবি পরে আছে। বেশ ভালোই লাগছে শিশিরকে। সবাই নিজেদের মাঝে হাসি ঠাট্টায় মশগুল।
আদনান স্নেহাকে ফোন দিচ্ছে। স্নেহা বলছে চলে এসেছে প্রায়। আদনান ওর বন্ধুদের কাছ থেকে একটু সরে এসে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে স্নেহার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিছু সময় পর একটা রিকশা এসে একটু দুরে থামে। আদনান ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করে। একটা মেয়ে রিকশা থেকে নেমেছে,, কিন্তু চেহারা স্পষ্ট নাহ। মেয়েটাহ এগিয়ে আসতেই আদনানের হৃৎস্পন্দন যেন থেমে যায়।
কারন,, মেয়েটাহ যে স্নেহা। আদনান মুগ্ধ হয়ে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। স্নেহা একটা হলুদ শাড়ি পরা,, আচল ছড়িয়ে রেখেছে হাতের উপর,, হালকা সাজ,, আর হালকা গহনাতে অপরুপ দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। আদনানের এমন তাকানোতে কিছুটা লজ্জা পায় স্নেহা। স্নেহা এগিয়ে এসে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” চল!”
স্নেহার কথায় ধ্যান ভাঙে আদনানের। তারপর বলে ওঠে,
–” রিকশাতে এলি যে,, গাড়ি আনিস নি?”
স্নেহা হালকা হেসে বলে ওঠে,
–” নাহ! আমার ভালো লাগে নাহ।”
–” কিন্তু রাতের বেলা গাড়ি নিয়ে এলেই পারতি।”
–” বাদ দে! চল ভেতরে যায়।”
–” চল!”
আদনান স্নেহাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। স্নেহা সবার সাথে বেশ ভালো ভাবেই মিশে যায়। বন্ধুরা সবাই মিলে আড্ডা দিতে থাকে। কিছু সময় পর ছোয়া,, রিংকি,, সাঝ চলে আসে। সবাই কনে দেখতে ব্যস্ত হয়ে যায়।
শিশির সামনে তাকাতেই দেখে ছোয়া রিংকির হাত ধরে এগিয়ে আসছে। ছোয়াকে যেন ফুল রাজ্যের রাজকন্যা লাগছে শিশিরের কাছে। গাঢ় হলুদ রং এর শাড়ির সাথে কাঁচা ফুলের গহনা,, ভারি সাজে এক অনন্য রুপ ফুটে উঠেছে মেয়েটার। শিশির যেন চোখই সরাতে পারছে নাহ ছোয়ার উপর থেকে। ছোয়া একপলক শিশিরের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে নেয়।
ছোয়াকে শিশিরের পাশে বসানো হয়। আদনানের বন্ধুরা ফটোশুট করতে থাকে। সবাই নিজ নিজ ফোনে ফটো তুলতে থাকে। আদনান একটা ক্যামেরা ভাড়া করে নিয়ে এসেছে,, সেইটা দিয়ে ফটো তুলছে আদনান। একে একে সবাই হলুদ দিয়ে যাচ্ছে ওদের।
ছোয়ার যে এতো আনন্দ লাগছে বলার মতো নাহ। এতো সুখ যে তার কপালে আসবে,, কখনো ভাবে নি। ছোয়ার আজ বড্ড তার বাবার কথা মনে পড়ছে। আর তার বাবা থাকলে কতই নাহ খুশি হতো। ছোয়ার চোখ ছলছল করে উঠে।
শিশির ছোয়াকে আড় চোখে দেখে যাচ্ছে। কিন্তু,, কোনো কথা বলতে পারছে নাহ। মেয়েটাহ কি জানে,, তাকে স্বর্গরানির মতো লাগছে? মেয়েটাহ কি জানে,, তার জন্য আস্তে আস্তে মাতাল হয়ে যাচ্ছে সে? মেয়েটাহ কি জানে,, তাকে এখন প্রচন্ড ভালোবেসে কাছে টেনে নিতে চাচ্ছে তার মন? নাহ কিছুই জানে নাহ মেয়েটাহ। কিন্তু,, শিশির জানে। আর মাত্র একটা দিনের অপেক্ষা,, তারপর তার ভালোবাসা তার কাছে।
#_চলবে………….🌹
{{ হ্যাপি রিডিং!! ❣️ }}