লীলাবালি🌺 পর্ব-১৯

0
1728

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_১৯
আফনান লারা
.
জুথিদের কদিন ক্লাস হবেনা।অর্ণবদের পরীক্ষার কারণে।
জুথি তার বাসায় অবসর সময় কাটায় আর অর্ণব মেসে বইতে মুখ গুজে।পরীক্ষা এসে গেলে তার আর কোনোদিকে মনযোগ যায়না।শুধু বই আর বই।আর পড়াশুনা।খাওয়ার কথাও ভুলে যায় কখনও কখনও।
ফেসবুকে এক্টিভ ছিল কত ঘন্টা আগে!!!
জুথির মনে ছিল না ওর কথা।ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ অর্ণবের পুরনো একট ছবি এসে পড়লো সামনে।কে যেন কমেন্ট করেছে তাই পোস্টটা এসেছে।ছবিটা অর্ণব তার মা বাবাকে সামনে রেখে তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে তুলেছিল।প্রায় চার বছর আগের ছবি এটা।ওর মাকে আর বাবাকে দেখে নিলো জুথি।মাকে দেখে ঠাণ্ডা স্বভাবের মনে হলো।আর বাবাকে একটু রাগী।তবে ভাইয়ার কাছে উনার কথা শুনে মনে হলো উনার বাবা অনেক রাগী।
নেট থেকে চলে আসবার ঠিক সময়ে অর্ণবকে এক্টিভ দেখলো সে।তাও কিছু বললোনা না।নিজ থেকে মেসেজ দিলে যদি অন্য কিছু ভাবে?
আজকে ওনার সঙ্গে যে কফি সে খেয়েছিল তার একটা ছবি তুলেছিল।শুধু কফির মগের ছবি।মেসেঞ্জার ডে তে দিয়ে দিলো সেটা।অর্ণব সিন করেছে সবার আগে।
জুথি মিটমিট করে হাসছে তাও মেসেজ করছেনা।শেষে অর্ণবই জুথিকে মেসেজ দিয়ে বললো,’কফি কেমন ছিল বললেন না?’

জুথি উত্তরে লিখলো,’কফিটা কি আপনি বানিয়েছিলেন?’

-“আমি রান্নায় অপটু। কফি বানাতে পারিনা।কফির বিলটা আমি দিয়েছিলাম সে সূত্রে জিজ্ঞেস করা!’

জুথি হাসির ইমুজি দিয়ে বললো,’ভালোই।কফির সঙ্গে স্ন্যাকস্ থাকলে আরও ভাল্লাগতো।তবে আপনি চাইলে সেই ট্রিট আমি দিতে পারি’

অর্ণব লিখলো যা হবার পরীক্ষার পরে হবে।জুথি ও মেনে গেলো।
অর্ণবের পরীক্ষা চলাকালীন সে একদিনের জন্যও আর নেটে আসেনি। জুথি ফ্রেন্ডদের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে এসেছিল একদিন। সেখানে আদিলের সঙ্গে দেখা হলো ওর।অনেকদিন ধরে অর্ণবকে এক্টিভ দেখছেনা বলে কন্ট্যাক্ট করার ইচ্ছা হলো।আদিলকে সে জিজ্ঞেস করলো অর্ণব এখন কোথায়।
আদিল বলতে পারলোনা অর্ণবের কথা।শেষে জুথি অর্ণবের নাম্বার চাইলো কিন্তু অর্ণবের নতুন সিমের নাম্বার নাকি আদিলের কাছে নেই।
জুথি মন খারাপ করে চলে আসতে নিতেই আদিল ছুটে এসে জানালো আজ থেকে ২দিনের জন্য মাঠে বইমেলা হবে,অর্ণব সেখানে থাকতে পারে।জুথি থ্যাংকস জানিয়ে চলে আসলো বাসায়।কথা হলো এত মানুষের ভীড়ে সে কি করে খুঁজবে?
বিকালে শাড়ী পরে চুলে খোঁপা করে গায়ের শাল জড়িয়ে চললো সে মেলায়।সাথে দুটো ফ্রেন্ডকেও নিয়েছে।
বইমেলাতে এসে ওদের রেখে সে অর্ণবকে খুঁজতে লাগলো।অর্ণব একটা বইয়ে স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বই দেখছিল।জুথিও ঠিক সেই স্টলের সামনে এসেই কোমড়ে হাত রেখে এদিক ওদিক দেখছে।অর্ণব সাদা শাল পরেছিল।মাথা গুরাতেই জুথির সঙ্গে লেগে গেলো আলতো একটা ধাক্কা।জুথি খেয়ালই করেনি।অর্ণবও খেয়াল করেনি।
তার চোখ পুরো মেলার দিকে।অর্ণব জুথির পারফিউমের সুগন্ধটা চিনে ফেলতেই পাশে তাকালো।জুথিকে শাড়ীতে দেখে সে চোখ কপালে তুলে বললো,’আজ আপনার বিয়ে নাকি?’

জুথি কথাটা শুনে পেছনে তাকিয়ে অর্ণবকে দেখে বললো,’বিয়ে হবে কেন?আমার বিয়ে এত জলদি হচ্ছেনা। তা আমাকে চিনলেন তো?আপনার তো আমার চেহারা দেখলে আলাপ করতে ইচ্ছে হয়।নেটে আপনার খবরই থাকেনা।’

অর্ণব স্টলের কোণা থেকে বেরিয়ে জুথির সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে বললো,’আসলে আমার মেসের ওয়াইফাই কাজ করছেনা।তাই অফলাইন ছিলাম।বাসা থেকে বের হইনা।সারাদিন পড়া নিয়ে থাকি তো তাই আর এমবি কিনা হলোনা’

জুথি কপাল কুঁচকে বললো,’এখন তো বের হলেন’

-“হুম।যাবার সময় এমবি কার্ড কিনে নিতাম।তা এমন সাজের কারণ জানতে পারি?’

-“বইমেলাতে বেশিরভাগ মেয়েরা শাড়ী পরে আসে জানেন না??সুন্দর লাগে’

অর্ণব দাঁত কেলিয়ে বললো,’আপনাকে তো পেত্নির নানির মতন লাগে।’

জুথি রেগে অর্ণবের পিঠে কিল বসিয়ে দিয়ে পরে কি মনে করে মুখে হাত দিয়ে বললো,’সরি!’

-‘সমস্যা নেই।আমার সাথে আপনি ফ্রি হতে পেরেছেন এটাই বা কম কিসের?আমাকে যে ট্রিট দিবেন বলেছেন সেটার তারিখ কি আজ?নাকি আরেকদিন?’

-‘আপনার পরীক্ষা শেষ হয়নি তো, আপনি বললেননা শেষ হলে?এখন একা একটা নারী,তাও শাড়ী পরা।তার সঙ্গে রেস্টুরেন্টে সামনা সামনি বসলে আপনার মাথা থেকে পড়া চলে যাবেনা তো আবার?’

অর্ণব হাসলো।টিস্যু দিয়ে নাক মুছে বললো,’আমি এত সহজে প্রেমে পরিনা’

-“সর্দি??’

-“প্রচুর”

-‘গলা শুনে মনে হলোনা একবারও।’

-“আমার সর্দি হলে গলার আওয়াজে কোনো চেঞ্জ হয়না।ভেতরের শরীরের অবস্থা চেঞ্জ হয়।বাহিরে দিয়ে হাঁচি না দিলে টের পাওয়া মুশকিল’

কথা বলতে বলতে মেলার পেছনের রোড দিয়ে তারা একটা রেস্টুরেন্টে আসলো।নিরিবিলি দেখে একটা জায়গাতেও বসলো।দুজন দুপাশে।জুথি মেণুকার্ড দেখে পাস্তা অর্ডার করেছে।সাথে কফি অর্ডার করতে গিয়ে দেখলো চায়ের জায়গায় নানা ধরণের চা আছে।তুলসি চা,আদা চা।
জুথি তুলসি চায়ের অর্ডারটাও দিলো।
অর্ণব নড়ে বসে বললো,’প্লিজ।তুলসি চায়ের মতন জঘন্য চা খেতে আমায় জোর করবেননা।আমাকে এত বড় টর্চার করিয়েননা”

-‘সর্দির জন্য খেতে হয়।এই টুকু কষ্ট করলে রাতে ভাল ঘুমাতে পারবেন।দেখুন না,আপনি খাবেন বলে আমি সুস্থ মানুষ হবার পরেও আমার নিজের জন্যও তুলসি চা অর্ডার করেছি।’

অর্ণব কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।
জুথি ফোন বের করে রেস্টুরেন্টের ছবি তুলছে।অর্ণব ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো,’আমার তুলবেননা?নাকি আমি সহ পিকচার ডে দিলে আপনার ছেলে বন্ধু কমে যাবে?’

-“উল্টো কথা বললেন।আপনাকে নিয়ে পোস্ট করতে আমার দুবার ভাবতে হয়।ভয় হয়।আপনার যে পরিমাণ মেয়ে ভক্ত আছে।গুনে শেষ করা যাবেনা।আমি যদি একটা পোস্ট করি দিনে দশজন করে কমবে’

-“সেটা জানি।তবে পোস্ট করতে পারেন।আমার আপত্তি নেই।’

পাস্তা খাওয়ার সময় অর্ণবের পাঞ্জাবির বোতামের জায়গায় চিজ পড়েছিল।সে দেখেনি।জুথি টিস্যু দিয়ে মুছে দেবার পর কি ভেবে জিভে কামড় দিয়ে বললো,’সরি।একটু বেশি ফ্রি হয়ে যাচ্ছি।আমি আজ আসি’

জুথি উঠে যাওয়া ধরতেই অর্ণব ওর হাত ধরে ফেললো।ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’এটা অস্বাভাবিক কিছুনা।আমি মাইন্ড করিনি,অথবা আপনাকে খারাপও ভাবছিনা।এরকম হীনমন্যতায় ভুগবেননা’

জুথি পেছনে তাকাতেই অর্ণব হাত ছেড়ে দিলো।
নিচের দিকে তাকিয়ে সে আবার নিজের চেয়ারে বসলো চুপচাপ।নিচের দিকে তাকিয়েই খাবারটা শেষ করেছে।
শেষে আসলো তুলসি চায়ের পর্ব।অর্ণব নাক টিপে এক ঢোক গিলে চেঁচামেচি করলো। এরপর ঠাস করে টেবিলে মাথা রেখে বললো,’এমন চা যেন আর কোনোদিন আমাকে না খেতে হয়’

জুথি হাসছে শুধু।অর্ণব মাথা তুলছেনা টেবিল থেকে।বসে বসে সর্দিকে গালি দিচ্ছে।অনেক কষ্টে সে তুলসি চা শেষ করলো।
জুথি বিল দিতে যেতেই অর্ণব ছোঁ মেরে বিলের কাগজটা ওর থেকে কেড়ে নিয়ে বললো,’আমি বললাম খাওয়াতে তাই বলে খাওয়াইছেন।কিন্তু বিল যে আপনাকে দিতে হবে তা তো বলিনি?’

অর্ণব বিল পে করে হাঁটা ধরলো।জুথি সাথে আসতে আসতে বললো,’লেকের পাড়ে যাবেন?’

-‘যেতে পারি যদি আপনি শালটাকে মাথায় ঘোমটার মতন করে টেনে নেন’

-“কি জন্য?’

-“ওখানে আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের প্রায় সবাই আড্ডা দেয়।আমার সঙ্গে নরমালি কোনো মেয়ে দেখলে তারা এত সিন ক্রিয়েট করবেনা যতটা আপনাকে দেখলে করবে’

জুথি ওর কথামতন শাল দিয়ে মুখ ঢেকে অর্ণবের সঙ্গে চললো।অর্ণব সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছিল।জুথি ওর অগোচরে ওকেই দেখছে।সে রেস্টুরেন্টে যেভাবে হাত ধরেছিল, জুথির কেমন যে লেগেছিল তা যদি একবার ভাষায় প্রকাশ করতে পারতো।হঠাৎ একটা ছোট্ট ছেলে গোলাপের ঝুড়ি নিয়ে এগিয়ে এসে অর্ণবের পথ আটকে বললো,’আপুকে একটা কিনে দেন ভাইয়া’

জুথি মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে অর্ণবের দিকে চেয়ে আছে,সে কি করে তা দেখতে।অর্ণব ছেলেটার কথামতন একটা গোলাপ কিনে নিলো।ছেলেটা চলে যাবার পর গোলাপটা ওর দিকে ধরে বললো,”নিবেন তো নাকি আবার আদিলকে দিয়ে আপনার বইয়ের পাতার মাঝে রেখে আসতে হবে?’

জুথি গোলাপটা নিয়ে বললো,’নাহ।এখন আর রাগ নেই স্যার’

-‘আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো?’

-“জ্বী”

-“আর পাঁচটা মেয়ের মতন আপনিও কি অর্ণব স্যারের প্রেমে পড়ে গেছেন?’

-“আগে আপনি বলুন আপনার কি মনে হয়?’

-‘আমি বুঝতে পারছিনা বলেই তো জিজ্ঞেস করলাম।আর বাকিদের বেলায় বুঝে যেতাম কারণ তারা সরাসরি এসে প্রস্তাব দিতো।কিন্তু আপনার হাবভাবে তেমনটা মনে হয়েও হয়না।গোলমাল মনে হয় পুরোটা।তাই সোজা আপনার থেকেই জানতে চাইছি’

-“সবাই যাকে পছন্দ করে তাকে আমি পছন্দ করিনা, নরমালি এমনটাই হয়ে এসেছে।তবে আপনার বেলায় শুরুতে পছন্দ না করলেও আস্তে আস্তে আপনাকে ভালো মানুষ মনে হলো।আর ফিলিংস এত জলদি হবার জিনিস না আসলে।আর কিছু জানতে চান?’

-“আপনি যথেষ্ট ম্যাচিউর একটা মেয়ে।সেদিন রাগ করে বললাম শিক্ষার অভাব।আসলে এই কথাটা বলা আমার একদমই উচিত হয়নি।আপনি ভুলতে পারলেও আমি ভুলতে পারছিনা’

চলবে♥
জয়েন হোন আমাদের গ্রুপে
https://www.facebook.com/groups/260300312617922/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here