#লীলাবালি🌺
#পর্ব_২০
আফনান লারা
.
নিজের উদ্যোগে কুসুম একা একা বিছানা থেকে বাড়ির উঠোনের শেষ প্রান্ত অবধি আসতে পেরেছে।মা বাবা ফলপাকড় সব আশেপাশের মানুষদের দিয়ে এসেছে।ঐ লোকগুলোর দেওয়া কিছুই তারা মুখে তুলবেননা।কলি কমলা খাওয়ার জন্য অনেক জেদ ধরেছিল।শেষে মায়ের ধমকে আর কিছু বলার সাহস পায়নি।
কুসুম মা বাবাকে না জানিয়ে ব্যাথা যুক্ত পা নিয়ে খুড়িয়ে খুড়িয়ে নদীর পারে চলে এসেছিল।এখানে না আসলে ওর শান্তি লাগেনা।
তবে বটতলায় যায়নি পোকাটার ভয়ে।নদীর কিণারায় বসে পানি দেখছিল আর তার সাথে নীল আকাশ।আকাশের দিকে তাকালে মন ভাল হয়।আকাশ হলো মন ভালো করবার ঔষুধ।
কুসুম নদীর পানিতে চোখ রেখে পানিতে আকাশ দেখছিল সেসময়ে তার পাশে প্রতিচ্ছবি দেখলো একটা মেয়ের।চমকে পেছনে তাকালো সে।
মেয়েটার গায়ের পোশাক দেখে কুসুম চমকালো।মেয়েটা যেন কুসুমকেই নকল করতে চেয়েছে।সে কুসুমের ওমন করে তাকিয়ে থাকা দেখে বললো,’হেহে!আমিও তোমার মতন হতে চেয়েছিলাম কিন্তু গায়ের রঙ মিললোনা তবে বাকি সব মিললো’
কুসুম হাসলো।মেয়েটা কুসুমের পাশে বসে বললো,’তোমার পায়ের ব্যাথা ভাল হইছে?’
-“তুমি জানলে কি করে?’
-“জানি জানি।আমি সব জানি’
কুসুম মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করায় সে বলেছিল তার নাম কূর্নি।
এরকম উদ্ভট নাম এর আগে সে শোনেনি।তাই কৌতূহল নিয়ে মেয়েটার বাড়ি কোথায় সেটা জিজ্ঞেস করলো কারণ ওকে দেখে এলাকার মনে হলোনা।মেয়েটা হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে বললো,’যাবে আমাদের বাড়ি?’
-“তোমাদের বাড়ি কোথায় সেটা তো বললেনা’
-“এই তো সামনেই।জঙ্গল আছেনা?ওখানেই’
কুসুম চোখ বড় করে বললো,’শুনলাম ওখানে দস্যু থাকে।অনেক আগে শুনেছিলাম। আমি একদম ছোট থাকতে’
মেয়েটা নিশ্চয়তা দিয়ে বললো ওখানে এখন আর দস্যু থাকেনা।সুন্দর নিরিবিলি গ্রাম তৈরি হয়েছে।কুসুম মন খারাপ করে বললো,’যদিও ওখানে যাবার আমার অনেক ইচ্ছে ছিল কিন্তু আমার পায়ে অনেক ব্যাথা।হাঁটতে পারবোনা’
-‘আরেহ আমি আছিনা?চলো আমার সাথে।এই তো কাছেই।কতই বা সময় লাগবে?’
—–
অর্ণবের পরীক্ষা শেষ।কেটে গেছে একটা মাস।
ঈদের বাকি ছিল মাত্র একটা দিন।
সেই দিনই ব্যাগ গুছিয়ে সে তৈরি কুমিল্লা যাবে বলে।একসাথে যাওয়া নিয়ে জুথি অনেকবার ফোন করেছে সাথে সেও।
এ কয়েকটা দিন মেয়েটার সাথে ভালোই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়ে গেছে।ফোন নাম্বার নেওয়া হয়েছে।অফলাইন থাকলেও কল করে তাদের কথা হতো টুকিটাকি ।এখন একজন আরেকজনের বেশ ভাল বন্ধু।
জুথিকে ফোনে না পেয়ে অর্ণব ব্যাগ হাতে ওদের বাসার দিকে চললো।এসে জানতে পারলো ম্যাডাম সেই এক ঘন্টা আগে গোসলে গেছেন এখনও ফেরেননি।ওর সামনে সোফায় ফরহাদ বসে আছে।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা।হাতে এক বাটি আপেল কাটা।ফরহাদ চশমা ঠিক করে বাটিটা এগিয়ে ধরে বললো,’আপেল খাবে?’
-“নাহ।তুমি খাও’
-‘খাও।কেউ কিছু দিলে সেটা খেতে হয়’
-‘এই কথা তোমায় কে শিখিয়েছে?’
-‘ভাল কথা কেউ শেখাতে হয়না।মন থেকে বানিয়ে বানিয়ে বলতে হয়’
অর্ণব কপালে হাত দিয়ে বললো,’এটা ভাল কথানা।বাহিরের কেউ কিছু দিলে কখনওই সেটা খাবেনা।মনে থাকবে?’
-“আমি তোমাকে খাওয়াতে চাই কারণ তোমায় আমার একটা কাজ করতে হবে’
-“কি কাজ?’
-‘বাবাকে বলবে আমাকেও যেন কুমিল্লা যাবার পারমিশন দেয়’
বাবা ভেতরের রুম থেকে এসে বললেন,’তা হচ্ছেনা।আমি বাহিরে গেলে তুই দাদা দাদিকে দেখে রাখবি।ঘরে একজন সবসময় থাকা জরুরি।বুয়ার উপর নির্ভর করে আমি তাদের রাখতে পারবোনা।জুথি তোর আর কতক্ষণ লাগবে?অর্ণব বসে আছে সেই কখন থেকে।
জুথি আসছি বলে একটা নতুন থ্রি পিস পরে জলদি করে ওয়াশরুম থেকে বের হলো চুলে তোয়ালে পেঁচিয়ে।
জনাব করিম অর্ণবকে বললেন,’চেয়েছিলাম ঈদটা এখানেই করুক।কিন্তু তুমি তো ঈদের আগেই চলে যাবে তাই জুথিকে আজই পাঠাতে হচ্ছে।তোমায় বেশিদূর যেতে হবেনা।ওকে কুমিল্লায় নেমে একটা রিকশা ধরিয়ে দিলেই হবে’
-‘আচ্ছা সমস্যা নেই।আমি পৌঁছে দেবো’
জুথি ব্যাগটা হাতে বেরিয়ে দাদা দাদিকে সালাম করে বাবাকে বিদায় দিয়ে অর্ণবের সাথে বের হয়ে গেছে।দুপুরবেলা তখন।যেতে যেতে দু ঘন্টা লেগে যাবে।
——
-‘কুসুম বোন দাঁড়াও।কোথায় যাচ্ছো তুমি?’
কলির আওয়াজ পেয়ে কুসুম থেমে গেলো।কূর্নি নামের মেয়েটার সঙ্গে জঙ্গলের দিকে যাচ্ছিলো সে।কলি ছুটে এসে কুসুমের হাতটা কূর্নির হাত থেকে ছাড়িয়ে বললো,’কে তুমি?আমার বোনকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?’
কূর্নি কিছু বলছেনা।মা বাবা ও চলে এসেছেন ততক্ষণে।কূর্নিকে তারা জেরা করলো কেন সে কুসুমকে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো।
কুসুম তাদের থামিয়ে বললো,’আরে ওখানে তো নাকি দস্যু থাকেনা এখন আর।আমার খুব ইচ্ছে ওদিকে একবার যাবার।’
বাবা কুসুমকে ধমক দিলেন।কূর্ণি মুখটা ফ্যাকাসে করে চলে গেছে এক ছুটে।মা বাবা কুসুমকে ধরে ঘরে নিয়ে আসলেন।ওকে তারা এখনও বললেন না সত্যিটা।
কুসুমকে বিছানায় বসিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেও পরে মাথায় চাপলো মেয়েটাকে নিশ্চয় আমির তিয়াজির লোকেরা পাঠিয়েছিল কুসুমকে নিতে।এত বড় স্পর্ধা দেখিয়েছে।না জানি এরপরে তারা কি করে বসবে!
মা, বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন,’কুসুমের পা তো ভালো হয়নি।ভারত আজকে যাবার কথা ছিল।কি করবে এখন?’
-“আমি কিছু জানিনা।আজকে মেয়েটাকে পাঠিয়ে দিতে পারলে এই দিন দেখতে হতোনা।না জানি সামনে কোন বিপদ আছে’
-“ওর পায়ের বিষটাই এত জঘন্য দিয়েছে যে মেয়েটা আমার এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়নি’
——
বাসে দুটো সিট নিয়ে তারা দুজন বসেছে।জুথি জানালা খুলে দিয়েছে চুলটা শুকাতে।অর্ণব সরে বসে বললো,’এমন বাতাসে কেউ বাসের জানালা খোলে?গা কাঁপছে আমার।বন্ধ করেন’
-“না করবোনা।আমার চুল শুকাতে হবে’
-‘ঠাণ্ডা লেগে যাবে আমার’
-“জানালার পাশে আমি বসেছি।আমার ঠাণ্ডা লাগার কথা’
অর্ণব মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকলো রাগ করে।জুথি জানালা বন্ধ করে মুচকি হেসে বললো,”বন্ধ করলাম।এবার তাকান আমার দিকে।’
অর্ণব মনে হলো ঘুমে।জুথি অবাক হয়ে গেলো।এত কম সময়ে কেউ ঘুমিয়ে পড়তে পারে?মাথা উঁচু করে দেখতে চাইলো সত্যি ঘুমে নাকি নাটক করছে।ঠিক তখনই বাস ব্রেক কষতেই জুথি পড়ে যাওয়া ধরলো পিছলে।অর্ণব শক্ত করে ধরে বললো,’করছেন টা কি?’
-“আপনি ঘুমাননি?’
-“এখন কি ঘুমানোর সময়?বিকাল হতে চললো।আমি পাশ ফিরে গান শুনছিলাম।বাংলা পুরোনো গান।আপনি কি করছিলেন?’
-‘কিছুনা।ধন্যবাদ আমাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য’
-“বাস বলে পেরেছি।খালি রাস্তায় হলে পারতাম না।আপনার যে বডি।মুটকি একটা!🙄’
জুথি রেগে গিয়ে বললো,’আমি মুটকি?এটাকে বলে পারফেক্ট বডি।’
অর্ণব হাসতে হাসতে দেখলো মায়ের ফোন এসেছে।রিসিভ করে হ্যালো বলতেই মায়ের গলা শুনে অন্যরকম লাগলো আজ।
-‘মা?কাঁদছো তুমি?কি হয়েছে?আমি তো আসতেছি বাড়িতে।বাসে এখন।কুমিল্লার কাছাকাছিও এসে গেছি’
-“কাঁদছি অন্য কারণে।কুসুম তো আজ চলে যাবে রে বাবা!!আমরা মেয়েটাকে হারিয়ে ফেললাম!’
অর্ণব জুথির দিকে তাকালো।জুথি জানালার সাথে লেগে ছবি তুলছে বাইরের।
অর্ণব জিজ্ঞেস করলো কই যাবে সে।মা জানালেন আজ কুসুমের ভারতে চলে যাবার দিন।
এর উত্তরে কিছুই বললোনা।শুধু বললো,’ভাগ্যে যে নেই সে তো যাবেই।যদি আমি তার ভাগ্যে থেকে থাকতাম তবে আজ সে ভারত চলে যেতো না।বুঝেছো তো?ওর সাথে আমার জোড়া লাগেইনি।লেগেছে আরেকজনের সঙ্গে।’
কথাটা বলে অর্ণব জুথির সাদা ওড়নাটার সুতো নিজের ঘড়ি থেকে ছুটিয়ে নিলো।
চলবে♥
মেঘ বলেছে বৃষ্টি নামবে অর্ডার লিংক
https://www.facebook.com/Bookshelfsc/