শঙ্খচিল পর্ব-১

0
5012

” যন্ত্রণায় মরে গেলাম রে, আর বেশিক্ষণ এভাবে বসে থাকলে আমি বাঁচবো না রে…”

রিসিপশনে রুগীর ফর্ম ফিল আপ করছিলো মানহা, চিৎকার শুনে দৌড়ে দাদীর কাছে এলো, দাদীর হাত চেপে ধরে বললো, ” এক্ষুনি ডাক্তার চলে আসবে দাদী। একটু সয্য করো। ”

” কোমর ব্যাথা আর সয্য করতে পারছি না রে মানহা”

মানহা অসহায় দৃষ্টিতে দাদীর দিকে তাকালো। ঠিক তখনি পেছন থেকে গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসলো, ” কি হয়েছে এখানে?”

মানহা পেছনে তাকাতেই দেখতে পেলো, সাতাশ আটাশ বছরের একজন যুবক গাঁয়ে এপ্রোন জরানো আর গলায় থেটিস্কোপ, মানহা ক্ষানিকটা পর্য্যবেক্ষন করে বললো, ” আমার দাদী ওয়াশ রুম থেকে পিছলে পড়ে ব্যাথা পেয়েছেন..”
লোকটা মানহার কথার মাঝখানে একজন নার্স কে ডাক দিলো। নার্স কে উদ্দেশ্য করে বললো, ” ওনাকে জলদি ইমারজেন্সি ওটিতে নিয়ে যান।”

দাদী মানহার হাত টা চেপে ধরলো, মানহা দাদীর হাতে ভরসা দিয়ে বললো ” ভয় পেয়ো না দাদী। তুমি ঠিক হয়ে যাবে৷”

স্ট্রেচারে করে নার্স মানহার দাদীকে ইমারজেন্সি ওটিতে নিয়ে গেলো, পিছু পিছু ডাক্তার যুবক টাও দ্রুত হেটে চলে যাচ্ছে। মানহা কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো, এই মূহুর্তে দাদীর ট্রিটমেন্টটা বেশি জরুরি। দু ঘন্টা যাবৎ মানহা ইমারজেন্সির করিডোরের সামনে বসে আছে। দাদীর জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার।
বিকেল বেলা মানহা পই পই করে বারন করলো একা বাথরুমে যেতে না, তবুও দাদী মানহার কথা না শুনে একা একা বাথরুমে পা বাড়ালো। আর ঠিক অঘটন টা ঘটলো৷
মানহার ভীষণ কান্না পাচ্ছে এই কঠিন মূহুর্তে বাবাও কাছে নেই, অফিসের কাজে ঢাকার বাইরে তার ওপর তানহা ( মানহার ছোট বোন) ফোনটা রিসিভ করছে না।

মানহার চোখ জোড়া ঝাপসা হয়ে আসছে, চোখের কার্নিশ বেয়ে টুপ করে কয়েক ফোটা পানি গাল দিয়ে গড়িয়ে পরলো৷ ঠিক তখনি ওটির রুমের দরজা খুললো কেউ। দরজা খোলার শব্দে মানহা তাকাই সেই ডাক্তার যুবক কে দেখতে পেলো৷ বাম হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে, মানহা উঠে দাঁড়ালো। একজন নার্সের সঙ্গে কোন বিষয় নিয়ে কথা বলছে, ক্ষানিক বাদে নার্স চলে যেতেই ডাক্তার মানহার দিকে তাকালো, ” পেশেন্ট আপনার কি হন? ”

মানহা হন্ত দন্ত হয়ে বললো, ” আমার দাদী। উনি এখন কেমন আছেন? ”

” একটু ভালো। উনি এখন ঘুমোচ্ছেন। ”

মানহা সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, মনে মনে সৃষ্টি কর্তার কাছে শত বার ধন্যবাদ জানালো।
” দাদীর সাথে কি এখন একটু দেখা করা যাবে?”

মানহার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি সার্জারী মাস্ক খুলেতে খুলতে বললো ” কিছুক্ষণ পরে ওনাকে বেডে দেওয়া হবে, তখন না হয় একটু বেশি করে দেখা করবেন। ”
বলেই ক্ষানিকটা স্মিথ হেসে চলে গেলো, মানহা থমকে দাঁড়িয়ে, লোকটার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। নিখুঁত সুন্দর হাসি মানহা কখনো দেখেনি। উজ্জ্বল শ্যামলা, গাল ভর্তি চাপ দাড়ির মাঝে হাসির টোল টা বার বার মানহার মনে ফোঁড়ন কাটছে।
ক্ষানিক পরেই মানহার ধ্যান ভাংলো, এসব কি ভাবছে সে? ধুর ধুর। ব্যাপার টা মাথা থেকে সরানোর জন্য মানহা ফোনটা হাতে নিলো। বাবা কে ফোন দিয়ে, দাদীর অবস্থা জানালো। ডায়েল লিস্টে তানহার নাম টা দেখতেই মানহার মনে মনে রাগ হলো, কি এমন রাজ্যের ব্যাস্ততা যে সতেরো বার কল দেওয়ার পরও কলটা তুলছে না?

————————————————

চারিদিকে মাগরিবের আজান পড়ছে। সন্ধ্যা পড়েছে মাত্র, ঝিমানো নীল অন্ধকার চারিদিকে বিরাজ করছে, তানহা কলেজ বাস থেকে নামে, বাড়ির গলিতে ঢুকলো। সারা দিন কলেজের ক্লাস শেষে কোচিং করে, আসতে আসতে সন্ধ্যা পরে যায়। তানহার চোখে মুখে খুব একটা ক্লান্তি নেই, রোজকার অভ্যেস কে নিজের মতো করে আপন করে নিয়েছে সে।
হঠাৎ গুলির শব্দে তানহা থামকে দাঁড়ালো। চারিদিক টা ক্ষানিকটা পর্য্যবেক্ষন করে তানহা বুঝতে পারলো শব্দটা তাদের বিল্ডিংয়ের বাম পাশের গলি থেকেই আসেছে৷ বাম পাশের গলিতে নতুন বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে, সন্ধ্যা বেলা কেউ যায় না বললেই চলে।
তানহা গুটি গুটি পায়ে এগুতে শুরু করলো। পা দুটো অবশ হয়ে আসছে, কোন মতে বাম দিকের দিকে এগুলো, তানহা দূর থেকে উঁকি দিয়ে, দেখতে পেলো, কালো কুচকুচের গায়ের রংয়ের একজন লোক হাতে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে , অপর পাশের মাটিতে একজন লোক লুটিয়ে পড়ে আছে, পা দিয়ে দর দর করে রক্ত পড়ছে।
তানহা নিজেই নিজের মুখ চেপে দাঁড়িয়ে রইলো, বন্দুক হাতের লোকটা হঠাৎ গুলি করে মাটিতে লুটিয়ে পড়া লোকটাকে খুন করে ফেললো।
হাত দিয়ে ইশারা করতেই দুজন লোক এসে মৃত লোকটাকে টেনে নিয়ে গেলো। ঠিক তখনি তানহার ফোনটা বেজে উঠলো। কালো গায়ের লোকটা শব্দ অনুসরণ করে তানহার দিকে তাকালো। তানহার হাত পা কাঁপছে, ভয়ে চোখ দুটো টল মল করছে৷

লোকটা তানহার দিকে এগুতে শুরু করলো, তানহার ভীষণ ভয় করছে। পা দুটো অবশ হয়ে আসছে, দৌড় দিতে পারছে না। লোকটা তাকেও খুন করে ফেলবে না তো?
তাহলে এই নিস্তব্ধ গলিতে কেউ তাকে খুঁজেও পাবে না। লোকটা তানহার অনেক টা কাছাকাছি চলে এসেছে, ঠিক তখনি তানহার একবার নিজের পরিবারের মনে পড়তেই শক্তি সঞ্চয় করে তানহা প্রান পনে দৌড় দিলো।
লোকটা তানহার দৌড় দেখে বিশ্রী হাসি দিলো। লোকটা তানহার দিকে বন্দুক তাক করলো, কিন্তু কিছু করলো না,
” দৌড়া দৌড়া!” বলেই শব্দ করে হেসে উঠলো। লোকটার হাসি তানহার কানে বিন বিন করে বাজছে, তানহা দৌড়াতে দৌড়াতে তাদের বাসার বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকে গেলো।

তানহার হৃদপিণ্ড দপ দপ করছে, শিঁড়ি বেয়ে চার তলায় উঠতেই তানহা চমকে উঠলো, বাসায় তালা মারা, কোথায় গেলো, আপা, দাদী?
মাঘ মাসের শীতে ও তানহা ঘেমে একা কার। বাম হাতের তালু দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে ফোনটার দিকে তাকালো সতেরো টা মিসড কল, তানহা দ্রুত তার আপার ফোনে কল দিতেই, ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,
” কোথায় থাকিস তুই বল তো? জানিস এদিকে কি হয়েছে? দাদী বাথরুম থেকে পড়ে ব্যাথা পেয়েছে খুব। ”

” কি বলছো আপু। আর দাদী এখন কেমন আছে?”

” একটু ভালো আছে।”

” কি হলো? চুপ করে আছিস কেনো?”

“কিছু না আপু। পরে কথা বলছি। ” বলেই ফোনটা কেটে দিলো তানহা…

” তুমি থাকো আমি এক্ষুনি আসছিইই..!” বলেই তানহা থামকে গেলো।ঝিম ধরা সন্ধ্যায় নির্জন গলি দিয়ে বের হতে গেলে, যদি গুন্ডাদের পাল্লায় পড়ে, তানহা যেহেতু লোকটাকে মার্ডার করতে দেখেছে, নিশ্চিই লোকটার পরের টার্গেট তানহাই হবে। ভাবতেই তানহার গাঁ শিউরে উঠলো। তানহার ধ্যান ভাংগীয়ে ফোনের ওপাশ থেকে তার বোন বললো,

” কি হলো? চুপ করে আছিস কেনো?”

“কিছু না আপু। পরে কথা বলছি। ” বলেই ফোনটা কেটে দিলো তানহা…

গল্পঃ#শঙ্খচিল

#Ruhi_Jahan_Maya
চলবে………..

আসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? ফিরে এলাম রোমান্টিক থ্রিলার নতুন গল্প নিয়ে। কেমন লেগেছে, সবাই মতামত জানাবেন। রেস্পন্স পেলে পরবর্তী পর্ব দিবো৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here