#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১৯
ছাদে পা রাখতেই মেজাজ রেগে আগুন হয়ে গেলো। কপাল কুচকে বিরক্ত নিয়ে সামনে তাকিয়ে রইলো। চায়ের দোকানে বসে চা খেতে খেতে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ সাদিয়া ফোন করে বললো জরুরী ছাদে আসতে। সাজ্জাদ ভেবেছে কোনো জরুরী কিছু তাই তাড়াতাড়ি এসেছে। এখানে এসে এমন কিছু দেখবে সেটা কুনাক্ষরেও ওর মস্তিষ্কে স্হান পায়নি। ওরা চার জন বসে মুড়ি খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব কিন্তু এই নিরব এখানে কি করছে? এতগুলো মেয়েদের মাঝে এই ছেলেটা কি করছে? পাশে তাকাতেই দেখলো আঁখি ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। সাজ্জাদ রেগে চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। রনি ওকে ঠেলে সামনে এসে বললো।
“হাই গাইস্?”
ওর কথা শুনে সবাই তাকালো। দেখলো রনি মুখে হাসি ঝুলিয়ে দাড়িয়ে আছে। পাশে অর্নব আশিক ও আছে। সাজ্জাদ আসার সময় ওদেরকেও সাথে করে নিয়ে এসেছে। আঁখির চোখ আগেই সাজ্জদের উপর পরলো। ওকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে আঁখি মনে মনে ভাবলো এভাবে দাড়িয়ে আছে কেনো লোকটা? কিছু কি হয়েছে? পরক্ষনেই ভাবলে সাজ্জাদের কিছু হলে ওর কি? আঁখি মাথা থেকে ঝেড়ে কথা বলায় মন দিলো। অনর্ব এসেই আনিকাকে দেখায় মন দিয়েছে। ও বুঝেনি সাজ্জাদের সাথে এসে এতবড় একটা সারপ্রাইজ পাবে। আনিকা সামনে অর্নবের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার ওর চোখ নিচু করে ফেললো। অর্নবের চোখের দিকে তাকাতে চায়না ও। এই ছেলেটার চোখের দিকে তাকালে ও মায়ায় পড়ে যায়। ও বুঝেনা এই ছেলেটা কেনো ওর দিকে এত তাকিয়ে থাকে। এত করে না করার পরেও কেনো ওর পিছেই পড়ে আছে। সাদিয়া ওর ভইকে দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।
“আরে ভাইয়া আয় বস বস! এই আড্ডার জন্যই তোকে কল করেছি।”
সাজ্জাদ চোখ ফিরিয়ে সাদিয়ার দিকে তাকালো। এখন ওকে ধরে আছার দিতে ইচ্ছা করছে। এখানে এসব হচ্ছে জানলে ও আসতোই না। রনি সাজ্জাদের বসার অপেক্ষা না করেই ও সবার মাঝে বসে পড়লো। কোনো দ্বিধা না করে গামলা থেকে মুড়ি নিয়ে খেতে লাগলো। হাসি মুখে মুড়ি খেতে খেতে ওর বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বললো।
“মুড়ি খেতে দারুন হয়েছে। এই তোরাও আয় খেতে বস!”
ওর কথা শুনে সাজ্জাদ কপাল কুচকে ওর দিকে তাকালো। অর্নব আর আশিক চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো। নিরব মুড়ি খেতে খেতে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো।
“সাজ্জাদ বসো! খেতে বেশ মজা হয়েছে। খেয়ে দেখো!”
সাজ্জাদ নিরবের কথা শুনে চুপচাপ এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসে পড়লো। ওখানে বসে সামনে তাকাতেই আখির দিকে চোখ পড়লো। আখি মোটেও ওর দিকে তাকাচ্ছে না। নিজের মতো সবার সাথে কথা বলতে বলতে খাচ্ছে। ওকে একেবারেই পাত্তা দিচ্ছেনা। ওর পাশে নিরবের সাথে কথা বলছে কিন্তু ওর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেনা। সাজ্জাদ রেগে বসে রইলো। ওর দেখা দেখি অর্নব আর আশিকও বসে পড়লো। রনি গপগপ করে মুড়ি খেতে খেতে বললো।
“মুড়ি বানানো তো খুব মজা হয়েছে। কে বানিয়েছে?”
“আঁখি আপু বানাইছে।”
সাজ্জাদ মুড়িতে হাত দিতে যাবে তার আগেই সাদিয়ার কতা শুনে হাত ফিরিয়ে নিলো। এই বেয়াদ্দব মেয়ের মুড়ি মাখানো খাওয়াও যাবে না। সাজ্জাদ চুপচাপ বসে রইলো। অর্নব আশিক মুড়ি খেয়ে বললো।
“সাজ্জাদ খেয়ে দেখ মজা হয়েছে।”
“আঁখি সুন্দর করে নাচতে জানে আবার মুড়িও বানাতে পারে। তোমার নাচ দেখে আমি তো পুরো ফিদা আঁখি! সত্যি তুমি অসাধারণ নাচো। মুড়িটাও দারুন বানিয়েছো!”
রনির কথা শুনে নিরব আখির দিকে তাকিয়ে বললো।
“তুমি নাচতেও জানো? আমাকে তো বলোনি! একদিন নেচে দেখাবে কিন্তু!”
কথাটা বলে নিরব আঁখি দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সাজ্জাদ অনেকক্ষণ ধরে ব্যাপারটা ক্ষেয়াল করেছে। অর্নবও আনিকার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দিকে তাকিয়ে আছে বিধায় আনিকা একটু চুপ করে আছে। সাজ্জাদ রেগে নিরবের দিকে তাকালো আবার আঁখির দিকে তাকালো। নিরব এখনও তাকিয়ে আছে। সাজ্জাদ রেগে অর্নবের দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো।
“শালা চোখ ঠিক কর! চোখ দিয়েই গিলে খাবি? এত মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকা লাগে? অসভ্য কোথাকার!”
ওর কথা শুনে অর্নব থতমত খেয়ে গেলো। আমতা আমতা করে চোখ ফিরিয়ে নিলো। আশিক, রনি ঠোঁট চেঁপে হাসছে। নিরবও চোখ ফিরিয়ে নিয়ে হালকা ঢোক গিললো। ওর মনে হচ্ছে ওকে বলেছে। নিপা ওর ভাইয়ের মনের বিষয়টা বুঝে গেছে। আসার পর থেকেই নিরবের বিষয়টা ও খেয়াল করেছে। ওর কথা শুনে আঁখি সাজ্জাদের দিকে তাকালো। সাজ্জাদ সবার দিকে তাকিয়ে মুড়ি নিলো। এমন ভাব করলো যেনো কিছুই বলেনি। আঁখি বিষয়টা বুঝতে পেরেছে। সাজ্জাদ এক মুঠ মুখে দিয়েই থু থু করে ফেলে দিলো। বমি করার মতো করে বললো।
“ছি ছি এটা কে মুড়ি মাখানো বলে? ওয়াক! থু! আমার বমি আসছে। এগুলো খাওয়া যায়?”
সাজ্জাদের কথা শুনে সবাই অবাক হলো। কি বলে? এত মজা মুড়ি বানানো ওর ভালো লাগছে না। আঁখি রেগে ওর দিকে তাকালো। ও সাপের মতো ফোসফোস করতে লাগলো। এত বড় অপমান করলো ওকে? কিছুতেই এই অপমান সহ্য করা যাবেনা। কখনো নাহ! আঁখি রাগে দাড়িয়ে গেলো। সাজ্জাদের দিকে এগিয়ে রেগে বললো।
“এই যে মি. সাজগাজ! খেতে ইচ্ছা না করলে চুপচাপ বসে থাকবেন। এভাবে মিথ্যা বলছেন কেনো? জীবনেও মুড়ি মাখানো খাননি তাই তো মজা বুঝেন না। হুহ!”
আঁখির কথা শুনে সাজ্জাদ ভীষন রেগে গেলো। সবার সামনে ওর নামের বারোটা বাজিয়ে দিলো? সাজ্জাদ কড়া চোখে ওর দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেঁপে ওর কাছে এগিয়ে এসে আঙ্গুল উচিয়ে বললো।
“এই চক্ষু! নাম টা ঠিক করে বলো?”
“ঠিক করেই বলেছি! আগে আমার নাম সুন্দর করে বলুন! আমার নাম আঁখি! আতিয়া আঁখি! আপনার নামতো সাজগাজ, তো আমি কি বলবো?”
সাজ্জাদ রেগে আঁখির একদম মুখোমুখি চলে এলো। ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে আস্তে করে বললো।
“সাট আপ! আর একবারও উল্টা পাল্টা নাম বললে খবর আছে। ধরে এই ছাঁদ থেকে ফেলে দিবো।”
সাজ্জাদের আস্তে ধমকে একটু ভয় পেলো আঁখি। সাজ্জাদ চোখ লাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আঁখি ওর চোখ দু’টো দেখে আরও ভায় পেলো। হালকা ঢোক গিলে একটু পিছিয়ে গেলো। এখন ওর সাথে ঠকে গেলে সবার সামনে ওর ইজ্জতের কাবাব হয়ে যাবে। কিছুতেই ঠকা যাবেনা। আঁখি ঠোঁট দিয়ে জিহ্বাটা ভিজিয়ে বললো।
“আমাকে একেবারে ভয় দেখাবেন না। আগে আমার নামটা ঠিক করে বলেন মি. সাজগাজ!”
আঁখির এই কথায় সাজ্জাদ হাজার গুন রেগে গেলো। না বলার পড়েও বেশি করে বলছে। এই মেয়ে ওর ধারনার থেকেও ঘাড় ত্যাড়া। সবার সামনে আঁখির অপমান গুলো যেনো সাজ্জাদ আর নিতে পারছেনা। সবার সামনে ওর নাম একেবারেই পালটে দিলো? সবাই চুপচাপ ওদের ঝগড়া দেখছে। ওদের মাঝে যাওয়া মানেই নিজেদের বিপদে ফেলা। আনিকা আর সাজ্জাদের বন্ধুরা চুপচাপ খেতে লাগলো। এরকম ঝগড়া ওরা প্রতিদিন দেখে। ওদের কাছে এটা কমন ব্যাপার। কিন্তু নিপা আর সাদিয়া একটু অবাক হলেও ওদের মাঝে গেলো না। নিরব একেবারে হতবাগ! ওরা এভাবে ঝগড়া করছে কেনো? আর সবাই ওদের ঝগড়া না থামিয়ে খাচ্ছে কেনো? সাজ্জাদ আঁখি কে ধমকাচ্ছে এটা নিরবের একটুও ভালো লাগছেনা। আঁখিকে ওর পছন্দ বিধায় ও আঁখির দোষ দেখতে পাচ্ছে না৷ নিরব রেগে বসা থেকে উঠে গেলো। সাজ্জাদের কাছে গিয়ে জোর গলায় বললো।
“এটা কি ধরনের অভদ্রতা সাজ্জাদ? এমন করছো কেনো? মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না? ওয়ার্নিং দিচ্ছি মেয়েদের সাথে ভদ্র ব্যবহার করো!”
সাজ্জাদ নিরবের কথা শুনে থমকে ওর দিকে তাকালো। ওকে ভদ্রতা শিখাচ্ছে এই ছেলে? সবার সামনে ওর সাথে জোর গলায় কথা বলছে তাও ওই আঁখির জন্য? সাজ্জাদ জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে আঁখির দিকে তাকালো। নিরবকে কথা বলতে দেখে আঁখিও অবাক হলো। ও চমকে নিরবের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদিয়া, আনিকা, নিপা আর সাজ্জাদের বন্ধুরা খাওয়া রেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই এলাকায় ওর মুখের উপর যে ছেলে কথা বলে তাকে মেরে হাত পা ভেঙে দেয়। সবাইকে দমিয়ে রাখে কেউ কিচু বললে তারও খবর হয়ে যায়। ওর বাবাও ওকে অতটা কিছু বলে না। তাহলে ক্ষেপে যায়, অন্যকেউ হলে তো মারধর করে হাত পা ভাঙে। এবার নিরবেরও কি সেই অবস্থা হবে? রনি মুড়ি মুখে দিয়ে থমকে হা করে তাকিয়ে রইলো।
নিরবের কথা সাজ্জাদের খুব আত্নসম্মানে লাগলো। আত্মসম্মান হলো আমাদের নিজের উপলব্ধি। অতএব, আমাদের নিজের নিজের প্রতি ভালবাসা, মূল্য, যত্ন এবং সম্মান করার ক্ষমতা এটি। এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়কে আমরা কতটা মূল্যবান বলে বিবেচনা করি সেটা নির্ধারণ করে থাকে এবং এটি আমাদের পরিচয়ের ভিত্তি সমর্থন করে। এটি আমাদের সমর্থনের মূল উৎস। নিজেকে এবং অন্যদের বোঝার অন্যতম চাবিকাঠি হচ্ছে আত্মসম্মান। আসলে, আত্ম-সম্মান দৃড় এবং স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের ভিত্তি। ত্রুটি এবং শক্তি উভয় নিয়েই যখন আপনি নিজেকে একজন সম্পূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে দাবি করেন, তখন অন্যরা আপনাকে কীভাবে বোঝে তা পরিবর্তিত হয়। এজন্য আপনার সমস্ত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার আত্মসম্মান নিয়ে অনুশীলন করা উচিত! আপনার অংশীদার, বন্ধুবান্ধব, পিতা-মাতা এবং প্রত্যেকের সাথে আপনার নিজের আত্নসম্মান তুলে ধরা উচিৎ। কারন এটি না থাকলে আপনার যোগ্যতা থাকা সত্বেও কোন মূল্য নেই। সাজ্জাদ যেমনি হোক ওর কাছে আত্নসম্মান সবার আগে। ও এবার কিছুই বললোনা। রেগে একবার আঁখির দিকে তাকিয়ে হনহন করে ছাদ থেকে চলে গেলো। সবাই বুঝলো ও ভীষণ রেগে গেছে। ওকে যেতে দেখে ওর বন্ধুরাও ওর পিছে পিছে গেলো। সাদিয়া দৌড়ে ওর ভাইয়ের পিছে যেতে যেতে বললো।
“ভাইয়া দাড়া! কোথায় যাচ্ছিস্?”
আঁখি চুপচাপ সাজ্জাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। ও কি বেশি করে ফেলেছে? ওর জন্য সাজ্জাদের কথা শুনতে হলো। নিরবের উপর ওর ভীষন রাগ হলো। পরক্ষনেই ভাবলো সাজ্জাদ কতা শুনেছে তাতে ওর কি? কিন্তু মনের ভিতরে একটু খারাপ লাগা থেকেই গেলো। একে একে সবাই চলে গেলো। আঁখি এখনও চুপ করে দাড়িয়ে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতে পারলো না। আঁখি কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিরবও ছাদে থেকে গেলো। আঁখির কাছে এসে ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙিতে বললো।
” সাজ্জাদের কথাগুলো তোমার খারাপ লাগছে আমি জানি। তবে তুমি চিন্তা করো না। আমি এখন থেকে এখানেই আছি ওকে সামলে নিবো।”
কথাটা বলে নিরব একটু থামলো। নিরবের কথায় আঁখির হেলদোল হলো না। ও চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। নিরব মুচকি হেসে বললো।
“আমি ২১ফেব্রুয়ারীর দিনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি একেবারের জন্য এখানে চলে আসবো। সবার থেকে দূরে ভালো লাগেনা। এপ্লিকেশন করেছি তা মঞ্জুর হয়েছে আমাকে এই থানায় বদলি করা হয়েছে। মা বাবা আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে আমি আজ আমার পছন্দের মেয়ের কথা তাদের বলবো।”
নিরব উৎফুল্ল হয়ে কথাগুলো বলছে। আঁখি চোখ ফিরিয়ে নিরবের দিকে তাকালো। ওর ছোট্ট মস্তিষ্ক বুঝতে পারছেনা নিরব এই কথাগুলো ওকে কেনো বলছে। আঁখি ওর দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসলো। নিরব আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
“জানো ওকে আমি প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি। চোখ বন্ধ করলে ওকে ছাড়া আমি আর কিছু দেখিনা। আমার সবটা জুড়েই ও আছে। ওইযে আকাশের চাঁদটা দেখছো? ওর হাসি ওটার থেকেও হাজার গুন বেশি সুন্দর।”
নিরবের কথায় আঁখি একটু আশ্চর্য হলো। কিন্তু কিছু না বলে মুচকি হেসে বললো।
“আমি আসছি!”
কথাটা বলে আঁখি একমূহুর্ত অপেক্ষা করলো না। বড় বড় পা ফেলে ছাদ থেকে চলে গেলো। নিরব আগের ভঙিতেই আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো। “যাদুকারীনী! তুমি যতই আমায় এড়িয়ে যাও আমি ততই তোমার গভীরে যাবো। তুমি চাও বা না চাও!”
——————————
ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে মিসেস শাহনাজ। বিষন্ন হয়ে আছে তার মুখ। সাদিয়াও গালে হাত দিয়ে বসে আছে। আশরাফ খান কিছুক্ষণ আড় চোখে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন।
“তোমার ছেলে ছোট না যে হারিয়ে যাবে। আর ও এমন কেউ না যে ওকে কিডনাপ করে নিয়ে যাবে। এত সাহস এই এলাকার কারো হবেনা। এই এলাকায় একমাত্র ডন তো তোমার গুনধর ছেলে।”
স্বামীর কথা শুনে মিসেস শাহনাজ বিরক্ত নিয়ে তার দিকে তাকালেন। রেগেমেগে জোরে চিল্লিয়ে বললেন।
“ছেলে কি আমার একার? তোমার না? জানো রাস্তা ঘাটে কত শত্রু আছে? তোমার তো চিন্তা নাই চুপচাপ বসে আছো। আমি মা, আমার তে চিন্তা হয়।”
“আমি চুপচাপ বসে আছি তুমি কি লাফাচ্ছো? তুমিও তো চুপচাপ বসে আছো।”
মুচকি হেসে রসিকতা করে কথাটা বললেন আশরাফ খান। মিসেস শাহনাজ চোখ গরম করে তার দিকে তাকালেন। সাদিয়া গালে হাত দিয়ে দুজনের তামাশা দেখছে। আশরাফ খান কিছুই বললেন না। কিছু না বোঝার ভান করে চুপচাপ সোফায় বসে রইলো।
সাজ্জাদ রেগে বাইরে চলে গিয়েছে। কোথায় গেছে কেউ জানেনা। অর্নব, রনি আর আশিকও ওর পিছনে গিয়েছিলো। কিন্তু ও সবাইকে ধমক দিয়ে একা কোথায় যেনো চলে গিয়েছে। রাত ১১টা বাজতে চলছে এখনও ফিরছেনা। কল ও রিসিভ করছেনা। সাদিয়া সাজ্জাদের বন্ধুদের ফোন করতেই ওরা বললো সাজ্জাদ ওদের সাথে নাই। মিসেস শাহনাজ তখন থেকেই ছেলের চিন্তায় অস্থির। ছেলে হলো তার জানপ্রান। তবে আশরাফ খান চিন্তা করছেন না তিনি জানেন সাজ্জাদ ঠিক আছে আর ১২টার আগেই বাসায় ফিরবে। ঘড়ির কাটা ১২টা ছুঁই ছুঁই। মিসেস শাহনাজ এবার বেশ অস্থির হয়ে গেলেন। কেঁদে দেওয়ার অবস্থা তার। হতাশ কন্ঠে স্বামীর কাছে এসে বললেন।
“শুনছো? তুমি পুলিশে ফোন করো। ১২টা বাজতে চললো ছেলেটা এখনও বাড়ি ফিরছে না কেনো?”
কথাটা বলতে বলতে কেঁদেই দিলেন মিসেস শাহনাজ। সাদিয়া ওর মাকে ধরে সোফায় বসালো। আশরাফ খান স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন।
“তুমি চিন্তা করো না ও এসে পড়বে! আমি বাইরে গিয়ে দেখছি..”
কথাটা পুরোপুরি শেষ করতে পারেন নি আশরাফ খান। তার আগেই কলিংবেলের আওয়াজ এলো। মিসেস শাহনাজ আওয়াজ শুনেই তাড়াতাড়ি উঠতে গেলেন। সাদিয়া তকে বসিয়ে দিয়ে বললো।
“আম্মু তুমি বসো আমি দরজা খুলছি!”
কথাটা বলেই সাদিয়া দরজা খুলতে গেলো। দরজা খুলতেই সাজ্জাদ এক কাঁধে জ্যাকেট ঝুলিয়ে নির্বিঘ্নে বাসায় প্রবেশ করলো। ও এমন ভাব করছে যেনো কিছুই হয়নি। ওকে আসতে দেখেই ওর মা হুড়িমুড়ি করে ওর কাছে আসলেন। ওকে ধরে হতাশ জড়িত কন্ঠে বললেন।
“কোথায় ছিলি বাবা? এত দেরি করলি কেনো? আমাদের চিন্তা হয়না? একবার কল তো করতে পারতি!”
সাদিয়া ছাদের বিষয়ে ওর মাকে কিছুই বলেনি। ও পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। সাজ্জাদ কাঁধ থেকে জ্যাকেটটা নামিয়ে ওর মার দিকে তাকিয়ে বললো।
“আম্মু! আমি কি ছোট যে আমাকে নিয়ে এখনও চিন্তা হয়?”
“ওটা তুই বুঝবিনা। তোর সন্তান হলে বুঝতি।”
গাল ফুলিয়ে কথাটা বললেন মিসেস শাহনাজ। সাজ্জাদ মুচকি হেসে পিছন থেকে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
“সরি আম্মু! আর হবে না!”
মিসেস শাহনাজ ওকে অভিমান করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে লাগলেন। সাজ্জাদ মুচকি হেসে আরও জোরে জড়িয়ে ধরলো। আশরাফ খান মুচকি হেসে মা ছেলের ভালোবাসা দেখছেন। তিনি শাসনের স্বরে সাজ্জাদ কে উদ্দেশ্য করে বললেন।
“এটা বাড়ি! এখানে নিয়ম আছে এত রাত করে বাসায় ফিরা চলবেনা। কোনো ভদ্র বাড়ির ছেলে এত রাত করে বাসায় ফিরেনা।”
কথাটা শুনে সাজ্জাদ বিরক্ত চোখে তার দিকে তাকালো। এই লোকটাই সব সময় ওর সুখের পথে বাগড়া দেয়। মিসেস শাহনাজ স্বামীকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আশরাফ খান বলে উঠলেন।
“কাল দুপুরে বাসায় থেকো। আমার বন্ধু কাল দুপুরে বাসায় আসবে। ওর মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।”
কথাটা বলে তিনি রুমে চলে গেলেন। মিসেস শাহনাজ কথাটায় খুবেই খুশি হয়েছেন। ঘরে বৌ আসলে অবশ্যই তার ছেলে ঘরে থাকবে। সাদিয়া একটু অবাক হলো। সাজ্জাদ মারাত্মক রকমের অবাক হলো। ওর হাতের বাধন আলগা হয়ে এলো। ওর মাকে ছেড়ে ভাবলেশহীন ভাবে দাড়িয়ে রইলো। কি বলে গেলো ওর বাবা?
ইনশাআল্লাহ চলবে……
(রি চেইক করিনি। ভুলত্রুটি মাফ করবেন। নিরবের সাথে আঁখি আর সাজ্জাদের সাথে ওর বাবার বন্ধুর মেয়ের বিয়ে দিলে কেমন হয় গাইস্? কি বলো তোমরা? বিয়েটা দিয়ে দেই?)