শরতের বৃষ্টি পর্ব-২২

0
1984

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–২২

বিকালবেলা। আঁখিদের পরিবারের সবাই ড্রইংরুমে বসে চা খাচ্ছিলো। আতিক চা খেতে খেতে আঁখির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো।

“হ্যাঁ রে তোর মতো কালি, খাটো মেয়েকে নিরব ভাইয়া কি করে পছন্দ করলো? কোনো তাবিজ টাবিজ করছোছ নাকি?”

আঁখি চা খাওয়ায় মগ্ন ছিলো হঠাৎ এমন কথা অবাক হলো। অবাকের চেয়ে বিরক্ত বেশি হলো। কপাল কুচকে বিরক্ত নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রাইলো। মিসেস রোকেয়া রহমান ও আমিনুর রহমান ওর কথা শুনে ঠোঁট চেপে হাসলেন। জানে দুজনে এখন ঝগড়া করবে। আঁখি ওর মা বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলো তারা হাসছে। আঁখির চরম রকমের রাগ হলো। রেগে চিল্লিয়ে আতিককে বললো।

“এই তুই আমায় কালি বলোছ কোন হিসেবে হুম? আমি তোর থেকে ফর্সা আছি বুঝছোছ? কালি তো তুই!”

আতিক আঁখির দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বললো।

“আমি ছেলে হিসেবে ঠিক আছি তা সবাই বলে কিন্তু তুই মেয়ে হিসেবে বেজায় কালো। আহারে আফসোস তোর জন্য! কি আর করবি বিয়েতো হয়েই যাচ্ছে এখন আর কালো ফর্সায় আসে কি! তোর তো ভাগ্য একেবারে কচ্ছপের মতো। কচ্ছপ যেমন আস্তে আস্তে জিতে গেলো তুও কালি হয়ে নিরব ভাইয়ার মতো পুলিশ আবার স্মার্ট হাসব্যন্ড পেয়ে গেলি।”

আঁখি এবার আগুন বরাবর রেগে গেলো। ওর ছোট হয়ে ওকে অপমান করা হচ্ছে? তাও এই ধরনের অপমান? সামান্য কচ্ছপের সাথে তুলনা করলো? আঁখি আতিকের দিকে এগিয়ে বললো।

“থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদ্দব ছ্যামড়া। যতবড় মুখ নয় ততবড় কথা। এই তুই আমার সম্পর্কে যা বলছিস তা বলার যোগ্যতা তোর আছে? আর একটা কথা বললে দেখিস কি করি!”

কথাটা শুনে আতিক ওর বাবা মার দিকে তাকালো। মিসেস রোকেয়া রহমান ও আমিনুর রহমান চুপচাপ ওদের ঝগড়া দেখছিলো। আতিক মুখটা কালো করে বললো।

“আম্মু আব্বু! তোমরা দেখছো ও আমায় মারতে চাইছে? এই ঝগড়ান্নির বিয়ে যখন দিচ্ছ তখন এত কাছে বিয়ে ঠিক করলা কেনো? দূরে কোথাও বিয়ে দিয়ে দিতা। যেনো ১২বছরেও আসতে না পারে। ওর বিয়ের কথা শুনে খুশি হয়েছিলাম যে এবার সব কিছু আমার কিন্তু নিচ তলায় বিয়ে ঠিক করলা কেনো? ও তো নিচতলা থেকে এসেও প্রতিদিন আমার সাথে ঝগড়া করবে। আমার সব খাবারে আগের মতোই ভাগ বসাবে।”

আঁখি রেগে উঠে আতিকের চুলগুলো টেনে ধরলো। জোরে জোরে চুল টানতে বললো।

“ফাজিল কোথাকার! আমি তোর খাবারে ভাগ বসাই নাকি তুই আমার খাবারে ভাগ বসাছ হুম?”

আঁখির চুল টানায় আতিক ব্যাথা পাচ্ছে। নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো।

“উঃ আপু! ব্যথা পাচ্ছি। ছাড়! ছাড়!”

আতিকের কথায় আঁখি ছাড়াতো দূরে আরও জোরে টেনে ধরে বললো।

“ছাড়বো কেনো হুম? ছোট বেলা থেকে আমার পিছনে পরে আছোছ আবার আমায় বলোছ?”

আমিনুর রহমান বুঝলেন এবার বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। তাই আঁখি কে উদ্দেশ্য করে বললো।

“আঁখি! এবার ছাড়ো! বেশি হয়ে যাচ্ছ।”

আঁখির কথাটা একেবারেই পছন্দ হয়নি। তবুও ছেড়ে দিলো। কখনও ওর বাবার কথার অবাধ্য হয়না। আঁখি রেগে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।

“সব সময় আমাকেই বলো। ওর দোষেই দেখোনা।”

কথাটা বলেই আঁখি রেগে বাসা থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো। পিছন থেকে আমিনুর রহমান ডাকলেন তবুও ফিরলো না। ও খুবেই রাগ করেছে। আতিক এত কিছু বললো তাহলে ওকে মানা কেনো? আতিক কি করে যেনো ওর বোন আঁখির বিয়ের কথাটা জেনেছে। আঁখির বিয়ের কথা শুনেই আঁখি কে শুধু এটা বলে বলে পচাচ্ছে। মিসেস রোকেয়া রহমান আতিককে ধমক দিয়ে বললেন।

ওকে এভাবে না রাগালেও পারতি। আমি বুঝি না কেনো যে ও পিছনে পরে থাকোছ! দুদিন পর চলে যাবো তখন বুঝবি একা থাকতে কত ভালো লাগে?”

কথাটা শুনেই আতিকের মুখ ভার হয়ে গেলো। ওর বোনটা চলে যাবে? তাহলে ও একা এই বাড়িতে কি করে থাকবে কার সাথে এমন ঝগড়া করবে? কার সাথে মশকরা করবে? ভালো না লাগলে কার কাছে দৌড়ে যাবে? আতিক মুখভার করে উঠে চলে গেলো। মিসেস রোকেয়া রহমান বুঝতে পারলেন না ওর আবার কি হলো। ভ্রু কুচে তাকিয়ে রইলেন। আমিনুর রহমান ঠিকই বুঝেছেন ব্যাপারটা। যতই ঝগড়া করুক বোনের বিদায়ে ভাইয়ের অনেক কষ্ট হয়।

————————-

আঁখি চরম রকমের বিরক্ত হয়ে ছাদে হাঁটাহাটি করছে। বিয়ে নিয়ে সবার খুব আগ্রহ কিন্তু আঁখির কেমন যেনো মন টানছে না। ওর এই বিয়েতে ও অমতও না আবার আগ্রহীও না। আঁখি বিয়ে নিয়ে অতটা মাথা ব্যথা নেই। আঁখি ছাঁদের রেলিং ধরে দূরে দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলো। মনটা ভীষনই খারাপ। যদিও তিনতলা থেকে নিচলায় যাচ্ছে তবুও বাবার বাড়ির মতো স্বাধীন কি থাকবে? এটা ওটা নিয়ে ভয়ে থাকতেই হবে। সকালে নাস্তা বানাতে সাহায্য করতে হবে ঠিক টাইমে ঘুমাতে হবে। শ্বাশুড়ি কিছু করলে সাহায্য করতে হবে নাহলে বলবে কিছুই জানে না। ওর আম্মুর কোনো কাজেরর খবরেই তো ওর কাছে থাকতো না। বাড়ির বৌদের একটু কাজ করতেই হয়। একদম ভালোলাগেনা আঁখির। ছেলে হলেই ভালো হতো অন্তত অন্যের বাড়ি যাওয়া লাগতো না। নিজের বাড়িতেই স্বাধীন ভাবে ভাকতো পারতো। শ্বশুর শ্বাশুড়ি যতই ভালো হোক শ্বশুরবাড়ি মানেই একটা আতঙ্ক যা প্রতিকা মেয়ে জীবনে একবার হলেও বুঝতে পারে। আঁখি দূরের লাল হয়ে যাওয়া সূর্যের দিকে তাকিয়ে এটা ওটা ভাবছে।

নিরব ছাদে পা রাখতেই থমকে গেলো। ও বুঝতে পারেনি ছাঁদে এসে এতবড় সারপ্রাইজ পাবে। গোধুলী বেলার এই অপরূপ মুহুর্ত যদি প্রিয় মানুষের সাথে কাটানো যায় তবে এর চেয়ে ভাললাগার কাজ আর কি হতে পারে? নিরব মুচকি হেসে আঁখির দিকে আগাতে লাগলো। ওর কাছে যেতেই দেখলো আঁখি একদৃষ্টিতে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরব ওকে বিরক্ত করলোনা। আঁখির অর্ধ মাথায় দেওয়া ওরনাটার জন্য ওর পুরো চেহারা দেখা যাচ্ছেনা। তার উপরে কানের পাশে গুঁজে রাখা কিছুচুল আঁখির চেহারায় এসে পড়েছে। এতে আঁখির চেহারা আরও লুকিয়ে গেছে। গোধুলির আলো এসে আঁখির দিকে পড়েচে তাতে ওর চুলগুলো লালচে লাগছে নিরবের খুব ভালো লাগছে। গোধুলি বেলায় আঁখি চেহারার সৌন্দর্য দেখার জন্য নিরব অস্থির হয়ে উঠলো। ভাবলো হাত দিয়ে ওর চুলগুলো সরিয়ে দিবে। হাত ওর কাছে নিয়েও ফিরিয়ে আনলো। পরক্ষনেই ভাবলো আঁখিতো ওর বউ হতে যাচ্ছে তো সমস্যা কি? আঁখি ভাবনায় মগ্ন এর মাঝেই নিরব ওর চুলগুলো সরাতে গেলো। নিরবের হাত গালে হালকা লাগতেই ও ছিটকে সরে গেলো। ও অন্য ভাবনয় ছিলো হঠাৎ কারো হাত লাগতেই ভয় পেছেছে। আঁখি সামনে তাকিয়ে নিরবকে দেখে একটু আমতা আমতা করলো। নিরব ওর গায়ে হাত দিতে চাইছে এটা ভেবেই আঁখির কেমন যেনো লাগছে। বিয়ে হয়নি তার আগেই গায়ে হাত দিতে চাইছে? নিরব কি জানেনা বিয়ের আগে এসব ঠিক না? আঁখি নিরবের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে বললো।

“আপনি! আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!”

আঁখি কথা বলার সময় ওর চুলো কানের পিছনে গুঁজে নিলো। গোধুলির রঙে ওর চেহারা রঙ্গিন হয়ে উঠলো। লাল আভা আঁখির পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়লো। ফর্সা চেহারায় আভা যেনো নিরবের চোখে দরুন ভাবে প্রতিফলিত হতে লাগলো। আঁখি এক হাত বুকে দিয়ে অন্য হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে। নিরবের কাছে আঁখি কে অসম্ভবের চেয়েও সুন্দর লাগছে। নিরব মুচকি হেসে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। ওকে তাকাতে দেখে আঁখি দমে গেলো। নিরবের মন ঘোরাতে বললো।

“আপনি এই সময়ে এখানে? আমি তো চমকে গিয়েছিলাম!”

আখিরকথা শুনে নিরবের ধ্যান ভাঙলো। ঠোঁট প্রশারিত করে হেসে ওর দিকে হালকা এগিয়ে বললো।

“এমনি হাঁটাহাটি করতে আসলাম। তবে এসে যে তোমায় দেখবো সেটা বুঝতে পারিনি। এখন মনে হচ্ছে এসেই ভালোই হয়েছে। গোধুলির এই প্রাকৃতিক পরিবেশে আরও একটি প্রাকৃতিক রূপসীর সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছাদে না আসলে সত্যিই অনেক কিছু মিস করে ফেলতাম।”

নিরবের কথা শুনে আঁখি একটু অস্বস্তি অনুভব করলো। হালকা কেশে জোর পূর্বক হাসলো। ওর পুরো ডিকশনারি খুঁজেও বলার মতো কিছুই খুঁজে পেলো না। আঁখি এজন্যই এই নিরবকে দেখতে পারে না। বেটা আস্ত একটা ফালতু! বয়স নাকি আটাশ কিন্তু ষোল বছরের ছেলেদের মতো কথা বলে। বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে। আঁখি কে চুপ থাকতে দেখে নিরব ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।

“তুমি প্রায় সময় মাথায় ওড়না দেও! আসলেই মাথায় ওড়না দিলে খুব সুন্দর লাগে তোমায়। শাড়িতে আরও সুন্দর লাগে যাকে বলে অতুলনীয়। যার কোনো বর্ননা হয় না। প্রথম দিন তোমায় শাড়ি পড়া দেখে তো আমি পুরোই উলট পালট হয়ে গিয়েছিলা। তুমি আসলেই অনেক সুন্দর। ”

নিরবের কথা আর আঁখির শুনতে ইচ্ছা করছে না। আঁখি দাঁতে দাঁত চেপে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর মনে চাচ্ছে নিরবকে ছাদ থেকে ফেলে দিতে। নিরব আঁখির দিকে তাকিয়ে উৎসুক হয়ে বললো।

“কাল বিকালে আমার সাথে ঘুরতে যাবে? শাড়ি পড়ে ঘুরতে যাবো দুজনে ওকে?”

নিরবের কথায় আঁখি বেশ বিরক্ত হলো। ওর দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক হেসে বললো।

“দেখুন বিয়ের আগে এসব ঠিক না। সরি! আমি পারবোনা।”

“আরে আমাদের বিয়ে তো ঠিক! পরিবারকে কি না জানিয়ে যাবো? বাসায় বলেই যাবো। দুূিনের মধ্যে বিয়ের ডেট ফিক্স করে ফেলবে। সমস্যা কোথায় বলোতো?”

আঁখি জোর পূর্বক হেসে বললো।

“বিয়ের আগে আমার এসব পছন্দ না।”

সাজ্জাদ বাইক নিয়ে বাড়ি আসছিলো কিন্তু ছাঁদে আঁখি আর নিরব কে দেখে বাইক নিয়ে দাড়িয়ে পরলো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখলো ওরা হেসে হেসে কথা বলছে। সাজ্জাদের রেগে চোখ লাল করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর কেনো যেনো খুব রাগ হচ্ছে। হাত মুঠ করে বাইকের উপর ঘুষি মেরে বললো। ” ইস! দুদিনে কি প্রেম জমে গেলো। আর আমার সাথেই শত্রুতা। ফালতু মাইয়া!” পরক্ষনেই ভাবলো দুজনে প্রেম করুক বা ছাঁদ থেকে লাফ দিক তাতে ওর কি? এসব ভেবেই সাজ্জাদ রেগে ভিতর চলে গেলো। আঁখির নিরবের সাথে একটু কথা বলে বাসায় চলে আসলো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে প্রায়।

ইনশাআল্লাহ চলবে……

(রি- চেইক করিনি। ভুলত্রুটি বুঝে নিবেন প্লিজ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here