শরতের বৃষ্টি পর্ব-২৩

0
2283

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–২৩

গভীর রাত। হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেলো আঁখির। এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসছেনা। কেনো ঘুম আসছেনা সেটাই অনেকক্সন ধরে ভাবলো। কিন্তু ভাবনার ফল শুন্য। জানালা দিয়ে চাদের আলো রুমেনপ্রবেশ করছে। সারা রুম আলোয় মাতামাতি। আঁখি একবার ভাবলো বেলকনিতে যাবে। পরক্ষনেই ভাবলো এত রাতে যাওয়াটা ঠিক হবে না তাঔই চুপটি করে শুয়ে রইলো। অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে থাকতে থাকতে বিরক্তের চরম পর্যায় পরে গেছে ওর মেজাজ। আখি বিছানা ছেরে উঠে পড়লো। ভাবলো বেলকনিতে গিয়ে একবার ঘুরে আসবে। এতে মন টাও ফ্রেশ হবে ঘুমটাও ভালো হবে। আঁখি মাথাটা ঠান্ডা করতে উঠে বেলকনিতে চলে গেলো। বেলকনির দরজা খুলতেই একটা ঠান্ডা হাওয়া ওর গায়ে এসে লাগলো। যদিও শীত কাল শেষ হয়েছে তবুও শীতের একরটু আবাস রয়ে গেছে। আঁখি বেলকনিতে চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করলো। খুব ভালো লাগছে এই ফ্রেশ হাওয়া। রাতের আকাশটাও দারুন ভাবে চমকাচ্ছে। চাঁদের আলোয় চারদিক পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। আঁখি উঠে রেলিং ধরে দাড়িয়ে রাতের পরিবেশ দেখছে। গাছগুলো কেমন নেতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চারদিক নীরব কোনো সাড়াশব্দ নেই। সবাই ঘুমিয়ে আছে। আঁখি নিচের দিকে সাজ্জাদের বাগানের দিকে তাকাতেই ওর কথা মনে হলো। সাজ্জাদের কথা মনে হতেই মনে পড়লো আজ একবারও ওর সাথে দেখা হয়নি। আচ্ছা সাজ্জাদ কি জানে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে? পরক্ষনেই ভাবলো সাজ্জাদ জানলেই কি না জানলেই কি? এটাই তো ভালো হয়েছে যে সাজ্জাদ এখন ওকে কিছু বললেই নিরবকে দিয়ে জেলে পুরে দিবে। আঁখি দারুন আইডিয়া পেলো। সাজ্জাদ কে জেলে কল্পনা করেই আঁখি খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।

আঁখি রাতের পরিবেশ দেখায় ব্যস্ত এর মাঝেই হঠাৎ করেই আঁখি হালকা শব্দ পেলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলো না। রাত অনেক তাই আঁখি ভাবলো এখন ঘরে যাওয়াটাই বেটার। পিছনে ঘুরতে নিবে তখনেই নিচে একটা মানুষের ছায়ার মতো দেখতে পেলো। আঁখি প্রথমে ভয় পেলো। পরক্ষনেই খেয়াল করে দেখলো একটা লোক মেইন গেটের কাছে যাচ্ছে। আঁখি প্রথমে ভাবলো চোর। তাই ওর মা বাবাকে ডাকবে ভাবলো। পরক্ষনেই একটু খেয়াল করতেই বুঝলো ওটা আর কেউ না সাজ্জাদ। গেঞ্জি পরড়ে তার উপর জ্যাকেট বা অন্য কিছু পড়া ওরেই স্টাইল। আঁখি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। এত রাতে ও বাইরে কি করছে? আঁখি সজাগ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সাজ্জাদ আস্তে করে এদিক ওদিক তাকিয়ে গ্যারেজেের দিকে গেলো। সাজ্জাদ কি করতে চাইছে আঁখি সেটাই বুঝতে পারছেনা। ও কি প্রতিদিন রাতে এমন ঘুরে? সাজ্জাদ গ্যারেজ থেকে ওর বাবার জিপ গাড়িটা বের করার চেষ্টা করছে। যেনো শব্দ না হয় সেভাবে সাজ্জাদ কাজ করছে। আঁখির এবার আরও সন্দেহ হলো। সাজ্জাদ আবার অবৈধ কারবারে জরিত নাতো? ওতো কাজ করে না সারাদিন আড্ডা দেয় তারমানে এই রাতে ওসব করে বেড়ায়? ওকে তো হাতে নাতে ধরতে হবে। আঁখি চুপি চুপি ঘর থেকে বের হলো। তাড়াতাড়ি করে সিড়ি বেয়ে নেমে নিচে যেতেই দেখলো সাজ্জাদের গাড়ি গেটের কাছে চলে গেছে। এবার কি করবে? একটু পড়েই সাজ্জাদ গাড়ি থেকে নেমে মেইন গেটের তালা খুলতে গেলো। কিন্তু পকেটে হাত দিয়েই চুপ করে রইলো। আখি বুঝে গেছে তারমানে সাজ্জাদ গেটের চাবি রেখে এসেছে?সাজ্জাদ পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করে পিছনে ফিরে আসলো। আঁখি এবার কি করবে? যদি ওকে দেখে ফেলে? আঁখি নখ কামরে তাড়াতাড়ি সিঁড়ির নিচে লুকিয়ে পড়লো। সাজ্জাদ যেতেই আঁখি তাড়াতাড়ি করে ওর গাড়ির কাছে গেলো। দরজা খুলে গাড়ির পিছনে ঢুকে পরলো। আজ সাজ্জাদ কে হাতে নাতে ধরতেই হবে৷ ও এত রাতে কোথায় যায় কি করে তা দেখতে হবে।” বার বার ঘুঘু খেয়ে যাও ধান! হাতে তো ককনও পড়োনি, আজ বুঝবে মজা! এই আঁখি আপনার ১২টা বাজিয়েই ছাড়বে মি. সাজগাজ!” ঠোঁট চেপে
এটা বলেই আঁখি মাথা নোয়ায়ে বসে পড়লো। সাজ্জাদ একটু পড়ে এসেই গেইট খুললো। আঁখি লুকিয়ে লুকিয়ে সব দেখছে। সাজ্জাদ গেইট খুলে এসে গাড়িতে বসে অজানা গন্তব্যে চললো। গাড়ি চলছে আপন গতিতে কোথায় যাচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছেনা। একটু গিয়ে সাজ্জাদ গাড়ি থামালো। আঁখি হালকা দেখলো একটা ছেলে হাত নাড়াচ্ছে। ছেলেটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে এসেছে। আখি মনে মনে ভাবলো “তারমানে সাজ্জাদ একা নয় ওর সাথে আরও লোক জড়িত? আর কত লোক জড়িত কে জানে? আজ সবাইকেই ধরতে হবে। কিন্তু লোকটা কে?” ওর ভাবনার মাঝেই ও পরিচিত গলার আওয়াজ পেলো। রনি সামনে বসতে বসতে সাজ্জাদ কে বললো।

“ধুর শালা! এত দেরি করলি কেনো? দুই ঘন্টার মতো দাড়িয়ে আছি এখানে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তো পা পুরো অবশ হয়ে গেছে। মশার কামর তো ফ্রিতে পেয়েছি।সাজগাজ করছিলি নাকি?” এটুকু বলে সাজ্জাদ কে একটু শুকে আবার বললো। “হ্যাঁ ক্রীম মাখছোছ। ঠিক ধরেছি। এজন্যই তো আঁখি তোকে সাজগাজ বলে সাধে কি আর বলে? এবার বুঝেছি কেনো বলে!”

সাজ্জাদ গাড়ি চালাতে চালাতে রাগি চোখে রনির দিকে তাকালো। রনি ওকে পাত্তা না দিয়ে বললো।

“তুই যাই বলোছ! সাজগাজ নামটা কিন্তু আঁখি ঠিকই দিছে। সাজজাদ আর সাজগাজ অনেকটাই সেম!”

রনির কথা শুনে আঁখির খুব হাসি আসছে। আঁখি দু হাতে মুখ চেপে কোনো মতে বসে রইলো। মেইন রোডে একটু যেতেই ল্যামপোষ্টের আলোয় আঁখি দুটো ছেলেকে দাড়ানো দেখলো হাত নাড়ছে তারমানে এরাও জড়িত। একটু কাছে যেতেই দেখলো ছেলে দুটি আর কেউ না অর্নব আর আশিক। তারমানে ওরা সব বন্ধুরাই এ কাজে জড়িত? সারাদিন ঘুরে আর রাতে কাজ করে? গাড়ি থামতেই আঁখি মস্তিষ্ক সজাগ হয়ে উঠলো। এরা বসবে কই? পিছনের দরজা খুললেই ওকে দেখে ফেলবে। আঁখি এবার কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না। চোখ বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলো। অর্নব এসে গাড়ি খুলতেই আঁখি চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভাব করে সীটে শুয়ে পড়লো। অর্নব গাড়ি খুলো হালকা আলোয় গাড়ির ভিতরে একটা মেয়েকে দেখে চমকে গেলো। জোরে চিল্লানি দিয়ে পিছিয়ে গেলো। আশিক দরজা খুলতে লাগছিলো কিন্তু ওর চিল্লানিতে ও পিছিয়ে গেলো। অর্নবের চিল্লানিতে আঁখি ভয় পেলেও শক্ত করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। রনি ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠে বুকে থু থু দিয়ে বললো।

“ধুর!! আস্তে ভাই! ভয় পাইছি।”

সাজ্জাদ রেগে অর্নবকে ধমক দিয়ে বললো।

“চুপ কর হারামী! ষাড়ের মতো চেচাঁমেচি করছিস কেনো? আমরা লুকিয়ে যাচ্ছি লোকে জেগে যাবে।”

অর্নব সামনের জানালা দিয়ে ভিতরে উকি দিলো। ভ্রু কুচকে সাজ্জাদ কে উদ্দেশ্য করে বললো।

“আমাদের সাথে যে একটা মেয়ে যাবে এমন কথা তো ছিলো না। এখন মেয়ে আসলো কোথা থেকে? মেয়েটা কে এনেছে? তুই নাকি রনি?”

মেয়ের কথা শুনে সবাই চমকে উঠলো। অর্নবের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সবাই তাকিয়ে আছে। আঁখি ভাবছে এরা কোথায় যাওয়ার কথা বলছে? ও আবার ভুল যায়গায় ফেসে গেলো নাতো? আঁখি মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছে। এবার মি. সাজগাজ তো ওকে রোস্ট করে খাবে। সাজ্জাদ অর্নবকে ঝারি মেরে বললো।

“ফালতু কথা বলবি তো থাপ্পড় খাবি। আনিকাকে নিয়ে সারাদিন ভাবতে ভাবতে সব জায়গায় শুধু মেয়ে দেখোছ। থাপরে আনিকা ভুত মাথা থেকে নামিয়ে দিবো। যা! গিয়ে চুপচাপ বস! এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে।”

সবাই সাজ্জাদের কথায় সায় দিলো। অর্নব এবার প্রচন্ড রেগে গেলো। রেগে জোরে চিল্লিয়ে বললো।

“আমায় নিয়ে হেলা ফেলা? কথায় আছে যারে করবা হেলা ফেলা সেই হবে গলার মালা। বিশ্বাস তো করলিনা এবার লাইট অন করে পিছনে তাকিয়ে দেখ!”

সাজ্জাদ লাইট অন করে পিছনে তাকাতেই চমকে গেলো। রনি তো হালকা চিল্লিয়ে উঠলো। আঁখি তবুও ঘুমের ভান করে শুনে আছে। উঠলেই যদি মার খাওয়া লাগে? সেই ভয়ে চুপ করে আছে, সময় সুযোগ পেলেই উঠে দৌড় দিবে। ওরা সবাই তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। ওড়না আর চুল এলোমেলো হয়ে মুখের উপর পরে আছে। সাজ্জাদ বুঝতে পারলোনা এটা কে হতে পারে। সবাই একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। সাজ্জাদ আস্তে করে ডাকলো।

“এই মেয়ে! এই যে শুনছেন? উঠুন! কে আপনি?”

সাজ্জাদ অনেক ডাকার পরেও উঠলো না। আঁখি মনে মনে খুব হাসছে। ঠোঁট চেপে হেসে মনে মনে বললো। ” ঘুমন্ত মানুষকে জাগানো যায়, যে জেগে আছে তাকে কি করে জাগাবে?” সাজ্জাদ আর উপায় না পেয়ে আস্তে করে আঁখির ওড়না আর চুল সরাতে লাগলো। আঁখির খুব সুড়সুড়ি লাগছে। আবার সাজ্জাদ টাচ করছে বলে কেমন যেনো লাগছে তবুও ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলো। সাজ্জাদ মুখের উপর থেকে ওড়না সরাতেই চমকে উঠলো। ছিটকে হাত সরিয়ে ফেললো। মেয়ে দেখে যতটা না চমকেছে আঁখি কে দেখে হাজার গুন চমকাচ্ছে। এই মেয়ে ওর গাড়িতে আসলো কি করে সেটাই বুঝতে পারছে না সাজ্জাদ। সবাই সাজ্জাদের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাজ্জাদ সবার দিকে তাকিয়ে হালকা ঢোক গিললো। জোর পূর্বক হেসে আমতা আমতা করে বললো।

“আরে! তোরা আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছোছ কেনো? আমি কি একে এনেছি নাকি?”

রনি সাজ্জাদের পিঠে কিল মেরে বললো।

“শালা ডুবে ডুবে জল খাও আর এখন ধরা পরে চোরের মতো করছো? ভালোই তো চলছে!”

সাজ্জাদের এবার খুব রাগ হলো। আঁখি কে জোরে ধমক দিতেই আঁখি পিটপিট করে এক চোখ খুললো। ওকে চোখ খুলতে দেখে সবাই উৎসাহ নিয়ে তাকালো। সাজ্জাদ ওর দিকে গরম চোখে চেয়ে আছে। আঁখি এবার দু’চোখ খুলে সবার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসলো। রনি ওকে হাসতে দেখে নিজেও হেসে বললো।

“দাঁতের দোকান বন্ধ করে এবার বলোতো সাজ্জাদ তোমায় এখানে কি করে এনেছে?”

রনির কথায় আঁখি মুখ বন্ধ করে দিলো। সাজ্জাদ চমকে রনির দিকে তাকালো। শেষমেশ ওর বন্ধু ওকে কিডনাপার ভাবআে? আঁখি এবার চুপ করে রইলো। কি বলবে ভেবেই পাচ্ছেনা। পরক্ষনেই ভাবলো সবাই সাজ্জাদ কে সন্দেহ করছে। তো ওকেই ফাসানো যাক! নিজে বাঁচলে জামাইর নাম। কথাটা ভেবেই আঁখি মুখ কালো করে বললো।

“আমি ঘুমিয়ে ছিলাম জানিনা এখানে কি করে আসছি! মি. সাজগাজ কে জিজ্ঞাসা করুন! তার গাড়িতে আমি কি করে এলাম।”

সবাই এবার গাঢ় সন্দেহের চোখে সাজ্জাদের দিকে তাকালো। সাজ্জাদ আজ চমকের উপর চমকে যাচ্ছে। ওর যতদূর মনে আছে ও তো আঁখি কে আনে নি তবে কি করে এলো? নিশ্চয়ই আঁখি মিথ্যা বলছে। ও নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল করেছে। যেখানে আঁখি আছে সেখানে তো গন্ডগোল হবেই। সাজ্জাদ এবার আখিকে ধমক দিয়ে বললো।

“থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিবো বেয়াদ্দব মেয়ে। সত্যি করে বলো এখানে কি করে এলে? ঘুমের মাঝে আবার হাটার অভ্যাস নাই তো?”

আঁখি ওর ধমকে একটুও ভয় পেলো না। উল্টো রেগে বললো।

“আমার দাঁত আপনার দাঁতের মতো নরম নয় মি. সাজগাজ! যে থাপ্পড়েই পরে যাবে।”

“ফালতু কথা না বলে আগে বলো তুমি এখানে কি করে এসেছো? এত রাতে এই গাড়তে এলে কি করে?”

“আপনি এনেছেন নাহয় আসবো কেনো?”

দুজনে তুমুল ঝগড়া বাজিয়ে ফেলেছে। রনি আশিক আর অর্নব একবার আঁখির দিকে তাকায় তো একবার সাজ্জাদের দিকে তাকায়। কারো থেকে কেউ কম নয়। দুজনে সমান হারে ঝগড়া করছে। ওরা শুধু অবাক হয়ে দেখছে। সাজ্জাদ যে এত ঝগড়া করতে জানে তা ওদের অজানা। আঁখি কে তো পুরো দজ্জাল মনে হচ্ছে। ওরা গালে হাত দিয়ে অসহায় হয়ে ওদের ঝগড়া ইনজয় করছে। আঁখি এবার জোরে চিল্লিয়ে বললো।

“আপনাকে পুলিশে দিবো আমি। এত রাতে কথায় যাচ্ছে হুম? কোনো অবৈধ কারবার আছে আমি বুঝে গেছি।”

কথাটা বলা শেষ না হতেই আশিক অর্নব ওদের ব্যাগ ফেলে দিলো দৌড়। রনি গাড়ি থেকে বের হতে হতে বললো।

“বইন তোর পুলিশ ডাকতে হবেনা পুলিশ আসছে।”

রনি দৌড় দিতে নিবে তার আগেই পুলিশ ওকে ধরে ফেললো। সাজ্জাদ পুলিশ দেখে চমকে গেলো। আখি তো ভয়ে সিঁটিয়ে গেছে। কাচুমাচু হয়ে সীটে বসে রইলো। পুলিশ অর্নব আর আশিককে ধরতে পারেনি। ওরা বাইরে ছিলো তাই আগেই দৌড়ে পালাইছে। দুজন পুলিশ এসেছে। একজন রনিকে ধরে রেখেছে। আরেকজন পুলিশ সাজ্জাদের কাছে এসে বললো।

“এখানে কি হচ্ছে! এতগুলো ছেলে একটা মেয়ে কে নিয়ে? জোর করে এনেছো নাকি মেয়েটাকে?” অগত্যা আঁখির দিকে তাকিয়ে বললো। ” এই মেয়ে তোমাকে জোর করে এনেছে?”

আঁখি মাথা নাড়ালো। তারমানে ওকে জোর করে আনেনি। সাজ্জাদ আর রনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। যদি বলতো জোর করে এনেছে তো খবর সারা। পুলিশ আঁখি কে আবারও জিজ্ঞাসা করলো।

“তাহলে স্ব ইচ্ছায় পালিয়ে এসেছো? গাড়ি থেকে বের হও দুজনে!”

আঁখি আর সাজ্জাদ চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। পুলিশটি একেই কথা আবারও জিজ্ঞাসা করলো। আঁখি তাড়াতাড়ি করে বললো।

“নাহ বাড়িতে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমি পালিয়ে আসিনি।”

পুলিশটি ওকে ধমক দিয়ে বললো। ” বিয়ে ঠিক হয়েছে বলেই তো পালিয়ে এসেছো। আবার অস্বীকার করছো? ডান্ডার বারি দিয়ে সব বের করে ফেলবো!”

আঁখি এবার চুপসে গেলো। ভালো করতে গিয়ে কারাপ করেনফেলেছে। কেনো যে সাজ্জাদ কে ধরতে এসেছে। নাহলে এত বিপদ হতোই না। যেখানে সাজ্জাদ সেখানেই বিপদ। আঁখি রেগে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সাজ্জাদও চোখ গরম করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। পুলিশটি আবারও বললো।

“রং তামাশা করা হচ্ছে? কার সাৎে পালিয়েছো বলো? বিয়ে দিয়ে দেই!”

বিয়ের কথা শুনেই তিনজনে চমকে গেলো। আঁখির চেহারা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো। পুলিশ রনির দিকে ইশারা করতেই রনি অসহায় ভাবে বললো।

“বিশ্বাস করেন ভাই! মাথা ছুঁয়ে বলছি, এই ঝগরাইত্যা মাইয়া আমার সাথে পালায় নায়। ও সাজ্জাদের সাথে পালাইছে। ”

আঁখি চমকে ওর দিকে তাকালো। ওকে ঝগড়াইত্যা বলছে? সাজ্জাদ দাঁতে দাঁত চেপে রনির দিকে তাকালো। রনিন অসহায় মুখ করে রইলো। পুলিশ ওদের ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললো।

“চল! বিয়ে দিয়ে দিবো আজ! আমরা পূণ্যের কাজ করবো। নোংরামি আর চলবে না।”

আঁখি চমকে তাকালো। সাজ্জাদও অবাক! কি বলে কি ওরা? বিয়ে দিবে মানে? সাজ্জাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো।

“পূন্যের নয় পাপ কাজ করতে যাচ্ছেন। ছাড়ুন আমাদের!”

সাজ্জাদ পুলিশকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কথাই শুনলোনা। আঁখি কেঁদে কেঁদে বলছে তবুও তারা শুনছে না। ওর বাবা কথা দিয়েছে নিরবকে। তার মান সম্মান শেষ হয়ে যাবে। আঁখি সত্যি কেঁদে দিয়েছে। তবুও পুলিশ দুজন ওদের নিয়ে যেতে লাগলো। ওরা সুযোগ পেয়েছে এখন পূন্য করে তবেই ছাড়বে ওদের।

ইনশাআল্লাহ চলবে….

(এডিট ছাড়া পর্ব। এবার বলো গাইস্ চক্ষু আর সাজগাজের কি বিয়ে হয়ে যাবে? নাকি কেউ আটকাবে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here