শরতের বৃষ্টি পর্ব-৩০

0
2109

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৩০

আবেগধর্মী ভালোবাসায় কষ্ট থাকবেই, কম বা বেশি। কোনো একজন বিদগ্ধ লেখক বলেছিলেন, “ভালোবাসা হচ্ছে সিগারেটের ধোঁয়ার মত। যার পরিণাম পোড়া ছাই। ধোঁয়াটা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু আগুনের জ্বলুনিটা দেখতে পাচ্ছি না”। এই কথার মানে কী দাঁড়ায় এই যে, ভালোবাসার ফল শূন্য? নাহ, অবশ্যই তা নয়। কত ভালোবাসার গল্প আছে ওগুলো কি তবে মিথ্যা? পৃথিবীতে ভালোবাসা আছে, থাকবে। স্বপ্ন, আশা, প্রত্যাশা সব থাকবে জীবনে। এসব মানবীয় বৈশিষ্ট্য। শুধুমাত্র আমাদেরকে আমাদের জ্ঞান, বিচার-বিবেচনা, বিবেক-বুদ্ধি, মেধা সঠিক জায়গায় সঠিক সময়ে সঠিক পরিবেশে কাজে লাগানো খুব জরুরি। রেগে যাওয়াটা সঠিক কাজ নায়। নিরব রেগে বাসায় প্রবেশ করলো। সামনে যা পাচ্ছে সেটাই লাত্থি মেরে ফেলে দিচ্ছে। চোখমুখ ফোলা, চেহারা লাল হয়ে আছে। আশিকুর রহমান বাসায় নেই। মিসেস নুরজাহান বেগম ছেলের এমন কান্ডে হতবাগ। তার ছেলেতো বেজায় ঠান্ডা মেজাজের মানুষ। কখনও রাগ করেনা আজ হঠাৎ কি হলো সেটাই বুঝতে পারছেন না। বাসায় হইচই শুনে নিপা দৌড়ে রুম থেকে বের হলো। ওর ভাইকে ওমন করতে দেখে নিজের ভাইয়ের কাছে যেতে যেতে বললো।

“কি হয়েছে ভাইয়া? এমন করছিস কেনো?”

নিরব কারো উওর দিলোনা। পাগলের মতো নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা আটকে দিলো। বাইরে থেকে তারা দুজনেই দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু ওর খবর নেই। মিসেস নুরজাহান বেগম দৌড়ে গিয়ে নিজের স্বামীকে কল করলেন। নিরব আঁখির ছবি বের করে অশ্রুশিক্ত নয়নে তার দিকে তাকিয়ে বললো।

“সব শেষ আমার। আমার জীবনের সব আশা সব স্বপ্ন শেষ। তুমি সব শেষ করে দিলে। তুমি যতটাই যাদুকারীনী ততটাই ডাইনী। মানুষের ভিতরে ঢুকে হৃদয় ছিড়ে বের হও!”

নিরব এমন অনেক কিছু আওড়াতে আওড়াতে শুয়ে পড়লো।

মানব জীবনের আশা কখনও শেষ হয়? না, শেষ হয় না। আশাহীন জীবন মরুভূমির মত। বরং কোনো কারণে কোনো একটা আশা সত্যি না হলে, পূরণ না হলে আমরা হয়ত কিছুদিন ভেঙ্গে পড়ি, হতাশায় ভুগি। হতাশা কাটিয়ে উঠি কিন্তু আশা করা ছেড়ে দিই না। আমরা আবারও আরেকটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। আমাদের মনে আরও আশা জাগতে শুরু করে। মানুষ স্বপ্ন ছাড়া, আশা ছাড়া বাঁচতে পারে না। পাগলেরও স্বপ্ন থাকে তবে এলোমেলো। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের স্বপ্ন থাকে গোছানো। আমাদের সবার জীবনেই অনেক অনেক স্বপ্ন থাকে, মনে অনেক আশা থাকে। সব স্বপ্ন সত্যি হয় না। তখন আমরা মন খারাপ করি। দুর্বল চিত্তের মানুষ হয়ত মনে মনে ভাবে- ‘আর দেখবো না স্বপ্ন। আশা করবো না আর’। স্বপ্ন দেখা কমতে থাকে হয়ত। একেবারে শেষ হয় না কিন্তু। স্বপ্ন দেখা শেষ হবার নয়। আশা শেষ হয় কি কখনও? কষ্টে ভেঙ্গেচুরে যাওয়া মানুষটিও ভাবে যে, তার কোনো আশা নেই। সত্যটা হলো- কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের কাছে পৌঁছোবার মনের কোনো এক কোণায় একটুখানি আশা তার থেকেই যায়। একজন কঠিন রোগে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী যার দুনিয়াতে সময় প্রায় শেষ, হয়ত একমাস বাঁচবে এরকম, সেই মানুষটির চোখেও আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়। কেন শেষ হয়েও শেষ হয় না আশা? কারণ মানুষ জীবনকে ভালোবাসে। যিনি ফুলের বা সবজি বাগান করেন তিনি ভালোবেসেই করেন। ভালোবাসেন বলেই বাগানের ফুলগাছগুলোর যত্ন করেন এই আশা নিয়ে যে, তার বাগান ফুলের হাসিতে ভরে উঠবে।
স্বপ্নকে সত্যি করতে চাইলে স্বপ্ন পূরণে যত্নবান হতে হয়। নিজের যোগ্যতা, সামর্থ্য ও পারিপার্শ্বিকতা ইত্যাদির সঙ্গে সমন্বয় থাকতে হয়। আমি নিশ্চয়ই এই আশা করবো না যে আমি চাঁদে যাবো বা জেকে রাওলিং এর মত বিখ্যাত লেখিকা হয়ে যাবো। এটা অবাস্তব। মাধ্যম পর্যায়ের আশা পূরণে সহজ হয়। উচ্চাশা হতাশার কারণ হয়। আশা ভঙ্গের যন্ত্রণা পোহাতে হয় তখন। তাই ব্যক্তির যোগ্যতানুযায়ী স্বপ্ন দেখা উত্তম। যোগ্যতার সঙ্গে প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল, প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম। পৃথিবীতে এমন অনেক সফল মানুষ রয়েছেন, এমন অনেক নজির ভুরি ভুরি যারা মাটি থেকে আকাশ ছুঁয়েছেন।

——————————

“এই চক্ষু! এটা ছাড়ো! আগে আমি যাবো।”

“এই মি. সাজগাজ আগে মানটা ঠিক করে বলুন! আমি আগে ধরেছি আমি আগে যাবো এটাই ফাইনাল।”

ওয়াশরুমের দরজা ধরে দুজনেই তুমুল হারে ঝগড়া করছে। সাজ্জাদ গোসল করতে যাবে শুনেই আখি দৌড়ে এসেছে। কিন্তু আসলে হবে কি সাজ্জাদও এসেছে। আঁখি আর শেষ রক্ষা করতে পারলো না। ওর সাথে সাথে ওয়াশ রুমের দরজা সাজ্জাদ ও ধরেছে এবার শিরু হয়েছে দুজনে রায়াড! ওদের মাঝে সব সময়েই এময় ভয়ংকর তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হয় এতে ভয় পাওয়ার কিছু না। সাজ্জাদ আঁখির থেকে দরজা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো।

“বললেই হলো? তুমি আগে ধরেছো তার প্রমান আছে? প্রমান দেখাও!”

আঁখি অবাক হয়ে দরজার হাতল ছেড়ে দরজার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাড়ালো। কপাল কুচকে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“প্রমান কিসের হুম? কথায় কথায় প্রমান খোজের কেনো? আমি এখন প্রমান কোথায় পাবো? আমি আগে ধরেছি এটা আমরা দুজনেই দেখেছি। একদম চিটিং করতে আসবেন না, তবে পুলিশে মামলা দিবো!”

“এই মেয়ে এত কথা বলো কেনো? তুমি আগে ধরেছো এটা আমি মানবো না বুঝেছো? কথায় আছে জোর যার মুল্লুক তার। আমি নিজের জোর দিয়ে আগে ঢুকবো। তুমি পারলে নিজের জোর খাটাও!”

সাজ্জাদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথাটা বললো। আঁখি অবাক হয়ে হা করে তাকালো। কি বলে? জোর খাটালে তো ও পারবে না! কিন্তু ওকে পারতেই হবে দরকার পড়লে সবাইকে জরো করবে তবুও ওকে জিততেই হবে। আঁখি জোরে চিল্লিয়ে বললো।

“ইশ! বললেই হলো? আসছে জোর যার মুল্লুক তার! আমার কি গলায় জোর কম আছে? বেশি কথা বাড়ালে চিল্লিয়ে বিল্ডিংয়ের সবাইকে জরো করবো। লোকদের বলবো আপনি বৌ নির্যাতন করেন।”

সাজ্জাদ এবার আকাশ সম অবাক হয়ে আঁখির দিকে তাকালো। রেগে ওর দিকে এগিয়ে বললো।

“এই মেয়ে! মিথ্যা বলছো কেনো? আমি তোমায় কোথায় নির্যাতন করেছি? আগে জানতাম তুমি ঝগড়াঝাটি করায় ফাস্ট। এখন তো দেখি তুমি মিথ্যা বলায়ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করোছো। এত মিথ্যুক কেনো তুমি?”

সাজ্জাদ কথা শুনে আঁখি মুখে হাত দিয়ে অবাক হওয়ার ভাব করে বললো।

“আমি কোথায় মিথ্যা বললাম? মিথ্যা কথা বলতাছেন তো আপনি। এই যে আমায় গোসল করতে যেতে দিচ্ছেন না এটা কি নির্যাতন না? এটা কি মধ্যে পড়ে না? আমি আগে ধরেছি তা না মেনে আপনিই তো চিটিং করতাছেন আবার আমায় বলছেন? এজন্যই তো আম্মু বলে, চোরের মার বড় গলা। এখন তো দেখছি চোরের বড় গলা!”

আঁখির কথায় সাজ্জাদ খুব বিরক্ত হলো। এইদিকে ওর বন্ধুরা বসে আছে। তাড়াতাড়ি গোসল করে ওদের সাথে একটু আড্ডা দিবে তাও পারছেনা। সাজ্জাদ রেগে হাত দিয়ে আঁখি কে সরাতে সরাতে বললো।

“এই সরো তো! পেচাল পরো না। আমার কাজ আছে। সময় নষ্ট করো নাতো। সাইট! ”

আঁখি ও নাছোড়বান্দা! ও নিজেও কোমড়ে হাত দিয়ে দরজা আগলে দাড়ালো। সাজ্জাদ ওকে জোর করে সারাতে যেতেই আঁখি দিলো জোরে চিল্লান। দ্বিতীয় বার চিল্লান দিতেই সাজ্জাদ মুখ চেঁপে ধরলো। ওর চিল্লানোর আওয়াজ শুনে সাদিয়া আর ওর মা রান্না ঘর থেকে দৌড়ে এলো। ওদের পিছনে পিছনে সাজ্জাদের বন্ধুরাও এলো। মিসেস শাহনাজ রান্নাঘরে গরমে ছিলেন। একেবারে ঘামিয়ে গেছেন। হাতে খুন্তি নিয়ে রুমের কাছে গিয়েই তাড়াহুড়ো করে বললেন।

“কি হয়েছে রে? আখি চিল্লিয়ে উঠলে কেনো?”

আঁখি সবাইকে দেখে একটু থতমত খেয়ে গেলো। সাজ্জাদ সবাইকে দেখে ওর মুখ ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ ভদ্র হয়ে দাড়ালো। আঁখি জোরপূর্বক হেসে বললো।

“আন্টি! আমি আগে ওয়াশরুমের দরজা ধরেছি। কিন্তু আপনার ছেলে এখন আমায় আগে গোসল করতে যাবো আমায় যেতে দিচ্ছেনা! আমার সাথে চিট করছে।”

মিসেস শাহনাজ সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললেন।

“কিরে সাজ্জাদ? তুই ওকে যেতে দিচ্ছিস না কেনো?”

সাজ্জাদ এবার বিপাকে পরলো। কি উওর দিবে? পরক্ষনেই ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।

“আম্মু! ওর গোসল করতে দেরি হবে। মেয়েরা তো সব কাজেই লেট করে তাই বলছিলাম আমি আগে যাই!”

কথাটা বলে সামনে তাকাতেই দেখলো ওর মা আর বোন রেগে তাকিয়ে আছে। সাজ্জাদ বুঝতে পারলো ভুল জায়গায় ভুল কিছু বলে ফেলেছে। তাই সাজ্জাদ জিহ্বায় কামড় দিয়ে সাজ্জাদ ওর মায়ের কাছে এসে বললো।

“আমি তা বলতে চাইনি আম্মু! আমি বলেছি মেয়েদের তো গোসল করতে দেরি হয়। তাই আমিই আগে যাই!”

সাজ্জাদ ওর মায়ের কাছে এসেছে এই সুযোগে আঁখি সাজ্জাদ কে মুখ বাকিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। সাজ্জাদ দৌড়ে যেতে যেতে আঁখি দরজা আটকেও ফেলছে। সাজ্জাদ জোরে দরজা ধাক্কা দিতেই আঁখি ভিতর থেকে চিল্লিয়ে বললো।

“বলছেন না মেয়েরা দেরি করে? এবার আমি ইচ্ছে করে দেরি করবো। দু ঘন্টার আগে বের হচ্ছি না।”

সাজ্জাদ এবার রেগে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।

“সব তোমার জন্য! যাও রান্না করতে!”

মিসেস শাহনাজ হাসতে হাসতে চলে গেলেন। সাদিয়াও সাজ্জাদকে মুভ ভেংচিয়ে চলে গেলো। রনি হাসতে হাসতে খাটে বসে বললো।

“গোসল করা নিয়েও ঝগড়া? এই তোরা একসাথে থাকবি কিভাবে?”

রনির কথায় আশিকও গালে হাত দিয়ে ভাবুক হয়ে বসলো। সাজ্জাদ রেগে এগিয়ে এসে রনির কাছে বসলো। রনির গালে থাপ্পড় দিতে দিতে বললো।

“শালা তোর জন্য সব জ্বালা। ঘুরতে যাওয়ারও প্লান তোর ছিলো। সারাজীবনেও তুই মাফ পাবিনা। তোর কপালে বউ নেই। ”

রনি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।

“মাফ না করলে না কর। তাতে আমার কিছুই না। কিন্তু এই বদদোয়া উঠিয়ে নে ভাই। আমার খুব বিয়ে করার শখ বুঝলি?”

সাজ্জাদ রনির কথায় কিছুই বললো না। রাগি চোখে তাকিয়ে থাকলো।

—————————–

আনিকা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে এর আগেই অর্নব ওর সামনে গিয়ে পথ আটকে দাড়ালো। ওকে দাড়াতে দেখে আনিকা ভয় পেয়ে দাড়িয়ে গেলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো কেউ দেখছে কিনা? আনিকা একটু পিছনে সরে গিয়ে অর্নবকে বললো।

“এভাবে পথ আটকে দাড়ালেন কেনো? সামনে থেকে সরে দাড়ান! এটা রাস্তা না!”

অর্নব মুচকি হেসে বললো।

“আমি জানি এটা রাস্তা না। তবে যাওয়ার আগে আমার কিছু প্রশ্নের উওর দিয়ে যাও!”

আনিকা ওকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললো।

“আপনার প্রশ্নের উওর দিতে আমি বাধ্য নই!”

আনিকার কথাকে অর্নব পাত্তা দিলোনা। আবারও আনিকার সামনে গিয়ে বললো।

“তুমি এখন আমাকে দেখলে এত পালাই পালাই করো কেনো? আগে তো এমন করতে না। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সত্যিটা বলো তো! আমায় আবার ভালোটালো বেসে ফেলছো নাকি?”

অর্নব শেষের কথাটা আনিকার কাছে এসে আস্তে করে বললো। আনিকা ওর কথায় থতমত খেয়ে গেলো। ওকে থতমত খেতে দেখে অর্নব মুচকি হাসলো। আনিকা আমতা আমতা করে বললো।

“কখনও না। আমি এসব ভালোবাসায় বিশ্বাস করিনা। প্রণয় থেকে যে ভালোবাসা সেটা আবেগধর্মী। এই ভালোবাসার কারণেই দুটি মানুষ বিয়ে করে এক হয়। একে অপরকে প্রচণ্ড ভালোবাসে বলে মনে হয়। এক সময় সেই প্রচণ্ড ভালোবাসা ফিকে হয়ে যায়। হারিয়ে যায়। কেন ভালোবাসা হারিয়ে যায়? বলেন?”

অর্নব ওর কথায় মুচকি হেসে বললো।

“প্রত্যাশা আর ভালোবাসা একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই ভালোবাসা শব্দটার অর্থ অনেক ব্যাপক। এর সংজ্ঞা আছে শত শত। আমি ওসবে যাবো না। কারণ ভালোবাসার কোনো ডেফিনেশনই আমার মাথায় ধরে না। যেখানে ভালোবাসা সেখানে প্রত্যাশা। আর প্রত্যাশা কোথায় করা হয় যেখানে ভালোবাসা আছে। ভালোবাসা তো অনেক ধরনের। বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসা, পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা আরও কত শত ভালোবাসার রকম আছে। ভালোবাসায় থাকে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, সম্মান, আস্থা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, অনুভব। ভালোবাসা হারায় না। কখনই হারায় না। সময়ের ব্যবধানে ধুলো পড়তে পড়তে ভালোবাসা চাপা পড়ে থাকে। মনের মধ্যে, বুকের মধ্যে ভালোবাসা ঠিকই থাকে। যদি সত্যিই হারিয়ে যেত তবে চারপাশে এত ভালোবাসার গল্প শোনা যেত না। যারা বলে ভালোবাসা শেষ হয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে, তারা ভালোবাসতে পারেনি। তারা ভালোবাসা পায়নি। আমরা বলে থাকি একসময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, ভাই-বোনের মধ্যে, আরও নানান সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা থাকে না। থাকে কিন্তু আমরা উপলব্ধি করতে পারি না। কখন থাকে না বা শেষ হয়ে যায় বলে মনে হয়? পরস্পরের প্রতি প্রত্যাশা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় যখন। প্রত্যাশা বাড়তে বাড়তে এক সময় লোভ, স্বার্থপরতা, আত্নকেন্দ্রিকতা চলে আসে। প্রত্যাশা পূরণ না হলে সন্দেহ আর অবিশ্বাস চলে আসে মনে। আর এই সন্দেহকে বাড়তে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয় মোটেই। বিশ্বাস করতে থাকা উচিত। বিশ্বাস করে কেউ কোনোদিন ঠকে না। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় ঠকে যাচ্ছি। কিন্তু একটা সময় সঙ্গী বা সঙ্গিনীর উপলব্ধি হবেই। যাচাই না করে কারো প্রতি অবিশ্বাস আনা উচিত নয়। সন্দেহ যেখানে আসবে সম্পর্কে ফাটল ধরবেই। তাই সন্দেহকে যে কোনো ভাবেই দুর করা উচিত। তাই সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করা। ইতিবাচক চিন্তাভাবনা জীবনকে সহজ করে দেয়। জীবনে জটিলতা সৃষ্টি হয় না। আস্থা রাখা প্রিয়জনের প্রতি। সন্দেহ আর অবিশ্বাসের কারণেই পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য ভুলে যাই আমরা।”

এটুক বলে অর্নব একটু থামলো। আনিকা মুগ্ধ হয়ে ওর কথা শুনছে। অর্নব এত কিছু ভাবে ভালোআবাসা নিয়ে ও জানতোই না। অর্নব জিব দিয়ে ঠোঁটটা ভিজিয়ে আবারও বলতে শুরু করলো।

“আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে সময় দেয়া। গাছে পানি দিলে যেমন গাছ বেঁচে থাকে, তেমনি সম্পর্কেও সময় দেয়া বিশেষ জরুরি। আমরা হয়তবা কর্মক্ষেত্রের কাজের চাপে, রিলেটিভদের প্রতি দায়িত্ব পালনে, বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে যেয়ে আমাদের নিকটজনকে সময় সেভাবে দিতে পারি না। যখন আমরা এসব মেইনটেন করতে পারি না প্রোপারলি তখনই আমাদের মনে অসন্তুষ্টি আসে। মনে হয় ভালোবাসা নেই আর। কিন্তু আমাদের অপরের অপারগতাও মনে রাখা খুব জরুরি। আশাগুলোকে বড়, প্রত্যাশাগুলোকে ছোট বা শূন্য করতে পারলে পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য ধরে রাখতে পারলে যে কোনো সম্পর্কে ভালোবাসা বহমান থাকবেই।যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রেই হোক সেটা স্বামী-স্ত্রী বা অন্য যে কোনো। নিজের দোষ আগে দেখা একটা বিশেষ গুন। পাশের মানুষটির গুন খোঁজা, এটা উত্তম বৈশিষ্ট্য। অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করা, অল্প ভালোবাসাকে বিরাট করে দেখা, অল্পে সন্তুষ্ট থাকা, কৃতজ্ঞ থাকা, শোকর করা, ধৈর্য ধরা এবং মোস্ট ইম্পরট্যান্ট হচ্ছে ক্ষমা করতে পারা। এসব যদি জীবনে আনতে পারা যায় তবেই সম্পর্ক সবসময়ই সুন্দর থাকবে। ভালোবাসা থাকবে। হয়ত একই গতিতে যাবে না কিন্তু জীবন ও সম্পর্ক থেকে ভালোবাসা ফুরিয়ে যাবে না।”

অর্নব এবার পুরোপুরি থামলো। অর্নবের কথায় আনিকা ওর প্রেমে পড়ে গেলো। তবুও নিজেকে সামলে বললো।

“আমি বেকার আড্ডাবাজ ছেলেদের পছন্দ করিনা।”

অর্নব ওর কথায় মুচকি হেসে বললো।

“সে কথা আগে বললেই হতো। তুমি চাইলে কাল থেকে অফিসে জয়েন করবো। নো প্রবলেম!”

আনিকা মুখবাকিয়ে যেতে যেতে বললো।

“আমি কাউকে অফিসে জয়েন করতে বলিনি!”

অড়নব ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তার মানে আনিকা ওকে হালকা হালকা পছন্দ করে? এজন্যই ওকে দেখলে লজ্জা পায়? অর্নব খুশি মনে বন্ধুদের কাছে চললো।

ইনশাআল্লাহ চলবে…..

(রি-চেইক করিনি ভুলত্রুটি মাফ করবেন। আজ অনেক বড় করে দিয়েছি কমেন্ট না করলে গুলি করবো। হুহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here