শরতের বৃষ্টি পর্ব-৩৪

0
2020

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৩৪

আঁখি শুয়ে শুয়ে কাঁদছে। কেনো জীবনটা ওর এমন হলো? খাওয়ার খোটা ওকেই শুনতে হলো? এর মাঝেই সাজ্জাদ রুমে ঢুকলো। ওর মেজাজ এমনিতেই খারাপ। কাল অনেক ভেবে ঠিক করেছে জব করবে। আজ সকাল দশটায় একটা ইন্টারভিউ ছিলো। ও সকালে উঠতে পারেনি দেরি হয়ে গিয়েছে তাই গিয়ে ইন্টারভিউটা দিতে মারেনি মিস করে ফেলেছে। তার মধ্যে এই রোদের মাঝে বাসায় এসেছে। মেজাজ এখন ওর পুরো কড়া। আঁখিকে দুপুর বেলা ওভাবে শুয়ে থাকতে দেখে প্রচন্ড রেগে গেলো। হাতের ফাইলটা রেগে সোফার উপর ফেলে বললো।

“এভাবে সারাদিন না শুয়ে কিছু করলেও তো পারো। আম্মু একা একা সব কাজ করছে। এভাবে শুয়ে থাকলে অচিরেই শরীর ফুলে কলাগাছ হবে। তাতে তোমারেই ক্ষতি।”

সাজ্জাদের কথা শুনে আঁখি চমকে গেলো। ও বুঝতে পারেনি সাজ্জাদ এখন আসবে। ওতো সন্ধ্যা ছাড়া বাসায় আসে না। সাজ্জাদের কথাগুলো শুনে আখির খুব খারাপ লাগলো। ও ওকে এভাবে বলবে সেটা কখনও ভাবেনি। সাজ্জাদও ওর বোনের মতোই। ও শুয়ে আছে সেটাই দেখলো। ওর শুয়ে থাকার কারন জিজ্ঞাসা করলো না। আঁখির আরও কান্না পেলো। চোখ গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোটা নোনা জল। ওর খুব শব্দ করে কান্না করতে ইচ্ছা করলো। মানুষের ননদ কথা শোনালেও জামাই ভালোভাবে কথা বলে। কিন্তু ওর বেলায় এটা কি হলো? ও এ কোথায় এলো? যেখানে সবাই কথা শুনায়। ভালো লাগার খারাপ লাগার কারন জিজ্ঞাসা করেনা। ওর জীবন কি এভাবেই অবহেলায় যাবে? ওকে কথা বলতে না দেখে সাজ্জাদ আরও রেগে গেলো। জোরে ধমক দিয়ে বললো।

“দুপুর বেলা শুয়ে থাকা কি ধরনের অভ্যাস? যাও গিয়ে আম্মুকে সাহায্য করো!”

আঁখি বুঝে গেছে ওর সাথে এমনেই হবে। সুখ, ভালোবাসা কিছুই সাজ্জাদের থেকে আশা করা যায়না। আশাই করবে কিভাবে? বিয়েটা তো ইচ্ছে করে হয়নি। এমনটা তো হওয়ারেই কথা! কেঁদে আর কি হবে। ভাগ্যে যা আছে তা তো হবেই। আঁখি সাজ্জাদের আড়ালো চোখের পানিটা মুছে নিলো। ও আড়াল করলেও সাজ্জাদ তা দেখে ফেলেছে। আঁখি উঠলেই সাজ্জাদ দেখলো ওর চোখ ফোলা ফোলা। তার মানে আঁখি অনেকক্ষণ কেঁদেছে। সাজ্জাদের ভিতরে কেমন করে উঠলো। কি হয়েছে? ও কাঁদছে কেনো? কেউ কি কিছু বলেছে? আঁখি কিছু না বলে উঠে সাজ্জাদ কে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলো। সাজ্জাদ ওর সামনে পথ আগলে দাড়ালো। আঁখি থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। সাজ্জাদ আঁখির দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বললো।

“কাঁদছো কেনো? কি হয়েছে?”

কথাটা শুনে আঁখির মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। এতক্ষন কষ্ট দিয়ে এখন মলম লাগাতে এসেছে। আঁখি বিরক্তি নিয়ে সাজ্জাদের দিকে তাকালো। সাজ্জাদ এখনও ওর উওরের আশায় চেয়ে আছে। এই লোকটাকে আঁখির একদম পছন্দ হচ্ছে না। ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সাজ্জাদ ওকে চুপ থাকতে দেখে আবারও জিজ্ঞাসা করলো।

“কি হলো? চুপ করে আছো কেনো? কিছু জিজ্ঞাসা করছি কানে যাচ্ছে না? কেউ কিছু বলেছে তোমায়?”

আঁখি এখন আরও বিরক্ত হলো। আঁখি সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো।

“ওয়াজে হুজুরে বলেছে কাঁদলে গুনাহ মাফ হয়। বেশি বেশি কাঁদা ভালো। তাই কাঁদছি কোনো সমস্যা? আপনার ইচ্ছে হলে আপনিও বসে বসে কাঁদতে পারেন।”

সাজ্জাদ ভ্রু কুচকে তাকালো। ও প্রথমে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পেরেছে আঁখি মজা করছে। সাজ্জাদ ভাবলো হয়তো আঁখির বাসার সবার কথা মনে পড়ছে তাই কাঁদছে। সাজ্জাদ কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আঁখি ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রেগে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। এখন ওর মনটা বেজায় খারাপ। ওর একা থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া ওর মায়ের কথা মনে পড়ছে। আঁখি দরজা খুলে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো। সাদিয়া আঁখিকে বের হতে দেখেছে। আঁখি কোথায় যাচ্ছে তা দেখতে ও নিজেও ওর পিছনে পিছনে গেলো। আঁখির চোখে শুধু নোনাজল ভীর করছে। ও ওগুলো মুছে দোতলা পেরিয়ে তিন তলায় পা রাখতেই থমকে গেলো। ওর বাবা আমিনুর রহমান দরজার সামনে দাড়ানো৷ তিনিও আঁখির দিকে তাকালেন। তিনি বুঝতে পারেননি যে আঁখি তাহলে হয়তো তাকাতেন না। আঁখি একটু ভয় পেলো। ভয় পেলেও খুব ভালো লাগছে যে দুদিন পর হলোও ওর বাবাকে দেখলো। এর মাঝেই মিসেস রোকেয়া রহমান দরজা খুললেন। আঁখি ওর মায়ের দিকে তাকালো। রোকেয়া রহমান মেয়েকে দেখেই মুচকি হাসলেন। খুশিতে চোখের জল চলে এলো। অনেক আশা নিয়ে স্বামীর মুখের দিকে তাকালেন। আমিনুর রহমান থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ তিনি কিছু না বলে ভিতরে গেলেন। গম্ভীর মুখে আঁখির দিকে তাকালেন। আখি আশার আলো নিয়ে ওর বাবার দিকে তাকালো। কিন্তু আমিনুর রহমান ওর মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলেন। আঁখির সব আশা ভেঙে গেলো। ওর চোখে জল এসে ভীর জমালো। হৃদয় ধিক্কার করে উঠলো ওর। একটা ভুলের জন্য ওকে কতটা অবহেলিত হতে হচ্ছে। আজ বাবার কাছে কতটা ঘৃনার যে মুখের উপর দরজা আটকে দিলো। আঁখি চোখের জলটা মুছে ছাদে চলে গেলো।

নিরবের মনটা খুবেই খারাপ। দুপুরের কড়া রোদের মধ্যে ছাঁদে বসে আছে। সাদিয়াকে ওই হিজাবটা পড়তে দেখেই ওর কষ্ট লেগেছে। যার জন্য শখ করে কিনলো তাকেই পড়া অবস্থায় দেখতে পারলো না। খুব আফসোস হচ্ছে নিরবের। আঁখি কে তো পেলই না। ওকে একটা গিফট দিলো তাও আঁখি সাদিয়াকে দিয়ে দিলো? কেনো এমন করলো আঁখি? আঁখির উপর খুবেই রাগ হচ্ছে ওর৷ আঁখি চোখের জল নিয়েই তাড়াহুড়ো করে ছাদে গেলো নিরিবিলি কান্না করতে। নিরব ওখানেই ছিলো কারো হুড়মুড়ি করে ছাদে আসার শব্দ পেয়ে পিছনে ফিরলো। আঁখি কে কাদতে দেখেই ওর ভিতরে আঁতকে উঠলো। হৃদয়ে কোথাও হাহাকার করে উঠলো। মনের মধ্যে জেগে উঠলো তাহলে কি আঁখি ভালো নেই? সাজ্জাদ কি ওকে কষ্ট দেয়? নিরব তাড়াতাড়ি করে আখির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।

“আঁখি! কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেনো? কে কি বলেছে বলো? সাজ্জাদ কিছু বলেছে?”

আঁখি নিরবের কথা শুনে চমকে উঠলো। ও এতটাই কষ্টের মধ্যে ছিলো যে ছাদে কে আছে না আছে তা খেয়াল করেনি৷ নিরবকে দেখে পুরো থতমত খেয়ে গেলো। এবার কি উওর দিবে ওকে? কিভাবে বলবে সাদিয়া ওর সাৎে বাজে ব্যবহার করেছে, সাজ্জাদও ঠিক ব্যবহার করেনি। তারপর ওর বাবা! ওর বাবাতো ঠিক করে ওর দিকে তাকায়ও নি। ওর মুখের উপর দরজা আটকে চলে গেলো। নিরব ওকে চুপ থাকতে দেখে হায় হুতাশ করে আবারও জিজ্ঞাসা করলো।

“চুপ করে আছো কেনো? আমাকে বলো? আমি তোমার সাথে আছি। তোমার কিছু হলে আমি দেখবো। বলো?”

আঁখি জোরপূর্বক মলিন হাসলো। চোখের পানিটা মুছে ফেললো। থেমে থেমে আস্তে করে বললো।

“কিছু না ভাইয়া! আসলে মা বাবা আতিক ওদের কথা মনে পড়ছে এতকাল একসাথে ছিলাম!”

“ওহ! সমস্যা কি? বাসায় গিয়ে দেখেআসো এর জন্য কাদা লাগে? তোমার কত সৌভাগ্য যে উপর তলা আর নিচ তলায় বিয়ে হয়েছে অনেকের তো অনেক দূরে বিয়ে হয়। যাও গিয়ে দেখা করো!”

আঁখি কথাটা শুনে মলিন চোখে তাকালো। কি করে নিরবকে বলবে ওর বাবা ওকে বাসায় ঢুকতে দেয়না। নিরব অনেক বিচক্ষণ মানুষ। আঁখি কে চুপ থাকতে বিষয়টা বুঝে ফেললো। ও ঠোঁট প্রসারিত করে বললো।

“এমন কাজ করতে নেই যার জন্য আপন মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা মুখ ফিরিয়ে নিলে কোথাও ঠাই নেই।”

আঁখি জোরপূর্বক হাসলো। নিরব আর ওই বিষয়ে কথা বললো না। ওসব নিয়ে কথা বললে আঁখি লজ্জা পাবে আবার ওর নিজেরও খারাপ লাগবে। ও আঁখির দিকে তাকিয়ে বললো।

“তুমি যখন হিজাবটা পড়বে না তো নিলে কেনো? তোমার নিতে ইচ্ছা হয়নি তা বললেই পারতে। আমায় খুশি করতে হিজাব নিয়ে তা অন্যকে দেওয়ার মানে কি? তুমি না পড়লে আলমারিতে ফেলে রাখতে তবুও সাদিয়াকে দিলে কেনো? এটা এক ধরনের নিরব অপমান জানো? আমার সত্যি খুবেই খারাপ লেগেছে।”

“আসলে আমি দিতে চাইনি। সাদিয়া হিজাবটা হাতে দেখে নিয়ে নিয়েছে। ওর নাকি ভালো লেগেছে। আমি না করতে পারিনি। আমায় মাফ করবেন!”

আমতা আমতা করে কথাটা বললো আঁখি। নিরব এবার ভুলটা বুঝতে পারলো। ও তো বুঝেছিলো আঁখি নিজেই দিয়ে দিয়েছে। ও আর কিছুই বললো না। ওর মনেনএকটা প্রশান্তি লাগলো। সাদিয়া দুজনকে দরজার আড়াল থেকে দেখে রেগে একাকার হয়ে গেলো। রাগে ফোসফাস করে বাসার দিকে চললো। নিরব মুচকি হেসে বললো।

“আমি যদি তোমায় শেষ স্মৃতি মনে করে কিছু একটা দেই নিবে? মন থেকে বলবে ওকে?”

আঁখি এবার ঝামেলায় পড়লো। আগের জিনিসটা রাখতে পারেনি বলে নিরব কষ্ট পেয়েছে এখন না করলে কষ্ট পাবে। ও তো প্রেম করছে না। গিফট তো কত মানুষেই দিতে পারে। আঁখি এতে ভুল কিছু দেখছে না। আঁখি সম্মতির হাসি দিয়ে নিজ গন্তব্যে পা বাড়ালো। নিরব যেনো এক আকাশ খুশি হলো। ওর মনের কষ্ট কিছুটা হলেও কমলো।

সাদিয়া রেগে বাসায় প্রবেশ করলো। মিসেস শাহনাজ বিষয়টা লক্ষ্য করলেন। তিনি সাদিয়ার আচারন আজ ঠিক বুঝতে পারছেন না। ও এমন করছে কেনো। তিনি অতটা গুরুত্ব না দিয়ে হাতের কাজ করতে লাগলেন। সাদিয়া রেগে ওর ভাইয়ের রুমে গেলো। সাজ্জাদ গোসল করে এসে ড্রেসিংটেবিলের সামনে চুল ঠিক করছিলো। সাদিয়াকে দেখেই মুচকি হেসে বললো।

“কিরে হঠাৎ রুমে এলি? কোনো দরকার আছে?”

সাদিয়া রেগে ছিলো। সাজ্জাদের কথায় থমথমে গলায় বললো।

“ভাইয়া! তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”

“হুম বল!”

ইনশাআল্লাহ চলবে…..

(রি-চেইক করিনি তাই ভুলত্রুটি হতে পারে। ছোট হওয়ার জন্য সরি৷ শুভ রাত্রি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here