শরতের বৃষ্টি পর্ব-৪৫

0
2125

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪৫

রাগ এবং অভিমান এই দুটোই হল এক বিশাল মানসিক অনুভূতি, যার সৃষ্টি হয় মানুষের মন নামক বিষয় বস্তু থেকে। আর এই রাগ এবং অভিমান আমরা আমাদের চারপাশের মানুষজনের সাথে করে থাকি। রাগ আর অভিমানের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। এক কথায় যদি রাগের উদাহরণ খুঁজতে চাই, তবে রাগের অর্থ হল একটি মানসিক মনোভাব, যা বিভিন্ন কারণে সৃষ্টি হয়। যেগুলি বেশিরভাগই নেতিবাচক দিক গুলিকে প্রদর্শীত করে। রাগ হলে মানুষ নেতিবাচক কাজে প্রলুব্ধ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। অতিরিক্ত রাগের কারণে এক সময় এমনও আসে, যে আমরা অনেক সময় মেজাজ হারিয়ে ফেলি। রাগ হলে একজন মানুষ অনেক কিছু করতে পারে যেমন: খুন,রাহাজানি ( নেতিবাচক) আর রাগ থেকে অনেকে ইতিবাচক কোন কিছু করার চেষ্টা করে। যেমন: অনেকে খারাপ ফলাফল করে এবং সবার ঠাট্রা ও বিদ্রপ এর শিকার হয়। তখন ওই ব্যক্তি রাগ ভেতরে পুষে রাখে এবং ভাল ফলাফল করে দেখিয়ে দেয়। রাগ আবার দুই ধরনের হয় প্রকাশিত রাগ এবং অপ্রকাশিত রাগ। যারা রাগ সহজেই প্রকাশ করে তারা সাধারণত ভাল মানুষ হয়ে থাকে, আবার কিছু মানুষ আছে যারা রাগ প্রকাশ না করে না কিন্তু গোপনে অনেক বড় ক্ষতি করার জন্য তৈরী থাকে। রাগ কাছে বা দুরের দুই ধরনের মানুষের সাথেই করা যায়।

সাজ্জাদ চুপ করে বেলকনিতে বসে আছে। মুখ বেশ গম্ভীর! ওর মনে হচ্ছে ও আখির উপর রেগে আছে কিন্তু রাগলেও ওর কোথাও না কোথায় কষ্ট হচ্ছে। আঁখি কে নিষেধ করার পরেও ও নিরবের সাথে কথা বলে? নিরবের সাথে ওর এত কি? নিরবের সাথে কথা বললেই ওর কি? ওর এত খারাপ লাগে কেনো? ওর ভিতরে অভিমান হলো কেনো? সাজ্জাদ কিছুই বুঝতে পারছে না। বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো। রেলিং ধরে ভাবলো ওরেই তো সব কিছু আঁখি তো ওর বৌ! পরক্ষনেই বৌ শব্দটা মুখে দু বার আউরালো। সত্যি কি ওর বৌ? বিয়েটা কি ও মানে? অগত্যা ওর মন বলে উঠলো বিয়েটা যেভাবেই হোক আখি তোরেই বৌ। তোর বৌ কেনো অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলবে? সাজ্জাদ বুঝতে পারছেনা ও জেলাস ফিল করছে নাতো? এটা কি জেলাস? ও কি আঁখি কে ভালোবাসে? ওর মস্তিষ্ক বলে উঠলো নাহ! ওকে ভালোবাসে না। কিন্তু ওর মন এটা মানতে নারাজ! মস্তিষ্ককে ধমকে উঠে বললো ভালোবাসা মানেই অভিমান।

আঁখি সাজ্জাদের পিছন পিছন রুমে এসে দেখলো ও রুমে নেই। কোথায় গেলো? অগত্যা আঁখি বেলকনিতে গেলো। দেখলো সাজ্জাদ চুপ করে রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে। আঁখি ওর নিরবতার কারন বুঝতে পারলো না। হঠাৎ সাজ্জাদ এমন হয়ে আছে কেনো সেটা জানতে খুব ইচ্ছা করছে আঁখির! অনুষ্ঠানের পরও তো মন ভালো ছিলো কিন্তু হঠাৎ কি হলো? আঁখি কোমরে হাত দিয়ে বললো।

“ওভাবে দৌড়ে ছাঁদে গিয়েছিলেন কাকে উদ্ধার করতে? তা উদ্ধার না করেই আবার হনহন করে চলে আসলেন কেনো? ব্যাপারটা কি হুম?”

আঁখির কন্ঠস্বর শুনে সাজ্জাদের ধ্যান ভাঙলো। ও কিছুই বললো না। স্হীর হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো৷ “কেমন ভাব নিলো? আমার কথার উত্তর দিচ্ছে না? এত বড় সাহস?” কথাগুলো ভেবেই আঁখি পরপর পলক ফেললো। অগত্যা কোমরে হাত গুঁজে সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“কি হলো? কথা বলছেন না কেনো? আমি বুঝি না মাঝে মাঝে আপনার কি হয় বলুন তো? এভাবে বোবা ভুতের মতো করে থাকেন কেনো?”

সাজ্জাদ নিঃশ্চুপ। আঁখি নাক ফুলিয়ে জোরে ফোস করে শ্বাস ছেড়ে রেগে বললো।

“কি হুম? জিজ্ঞাসা করতে এসেছি বলে ভাব নিচ্ছেন। আসছে আমার ভাবের রাজ! এত ভাব নেওয়ার কি আছে হুম? আমি নিজেও দেখছি ইদানিং আপনি বেশি ভাব নেন!”

আঁখির কথায় এবারও সাজ্জাদের হেলদোল হলো না। ওর ভিতর থেকে দীর্ঘশ্বাস আসছে ও ভেবেছিল আঁখি এসে ওর অভিমান ভাঙাবে কিন্তু এই মেয়েটা তো উল্টো পথে হাটছে। আসলেই আঁখি ভিন্ন জগতের প্রানী। ওর অভিমান মানেই তো বুঝেনি। ওর অভিমান হয়তো কখনও বুঝবে না। সাজ্জাদের মনের অভিমান আরও গাড় হলো। সাজ্জাদ কে ওভাবে চুপ থাকতে দেখে আঁখি সজাগ চোখে ওর দিকে তাকালো। দাঁত দিয়ে নখ কামড়ে সাজ্জাদের দিকে উঁকি ঝুঁকি দিলো। অগত্যা চোখ পিটপিট করে বিড় বিড় করে বললো। “এই লোকটাকে আবার বোবা ভুতে ধরে নি তো? হায় আল্লাহ! যদি আমার ঘাড় মটকে ধরে? এখনও নাতির বিয়ে খাওয়া হলো না!” কথাটা বলেই আঁখি ভয়ে ভয়ে সাজ্জাদের দিকে তাকালো। হঠাৎ কিছু মনে পরতেই দৌড়ে রুমে গেলো। সাজ্জাদ ওর লাফানোর শব্দ শুনে পিছনে ফিরলো। একপলক তাকিয়ে জোরে শ্বাস ফেলে আবার চুপ করে রইলো। ও জানে আঁখি আবার উল্টা পাল্টা কিছু করবে। এই মেয়ে তো ভীনগ্রহের প্রানী। আজ সাজ্জাদ কিছুতেই রুমে যাবে না। কার জন্য যাবে কেনো যাবে? বেলকনিতেই দাড়িয়ে থাকবে। ও জানে রুমে গেলেই আঁখি ওর অভিমান বুঝবে না শুধু ফাউল প্যাচাল শুনতে হবে। সাজ্জাদ অভিমান করে দাড়িয়েই রইলো।

আঁখি যা আনতে গিয়েছিল সে জিনিসটা নিয়ে আস্তে আস্তে ওর রুম থেকে বেলকনিতে আসলো। সাজ্জাদ যাতে বুঝতে না পারে সেজন্য পা টিপে টিপে ওর পিছনে দাড়ালো। অগত্যা ওর হাতের জুতোটা সাজ্জাদের নাকের সামনে ধরলো। সাজ্জাদ হঠাৎ মুখের সামনে জুতো দেখে চমকে গেলো। ছিটকে দূরে সরে গিয়ে অবাক হয়ে বললো।

“What this is!”

“This is shoe for you.”

আঁখি জুতোটা উঁচিয়ে মাথা দুলিয়ে হেসে কথাটা বললো।

“what the hell! পাগল হয়ে গেছো? কি করছো এসব?”

সাজ্জাদ আঁখির কথা বুঝতে না পেরে রেগে কপাল কুচকে কথাগুলো বললো। আঁখি ওর রাগকে ভয় পেলো না। জুতোটা আবারও উচু করে বললো।

“আপনাকে বোবা ভুতে ধরেছিলো তাই জুতা শোকাচ্ছি। দেখছেন এটা কত কার্যকারি? নাকের কাছে ধরতেই অটোমেটিক আপনার কথা বলা শুরু হয়ে গেলো? This is my Talent! এবার ধন্যবাদ দেন!”

সাজ্জাদ এবার প্রচন্ড রেগে গেলো। রেগে আঁখির কাছে এসে ওর বাহু খামচে ধরলো। হঠাৎ করে এমন করায় আঁখি ভয় পেয়ে গেলো। ওর হাত থেকে ফ্লোরে জুতোটা পরে গেলো। আঁখি কিছু বুঝতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে আছে। সাজ্জাদ আঁখির চোখের দিকে তাকিয়ে প্রচন্ড রেগে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“কি হ্যাঁ তুমি? তোমার এসব পাগলামি কবে বন্ধ করবে? তুমি এখনও ছোট? কিচ্ছু বোঝ না? এতটা অবুঝ তুমি? আমি জাস্ট নিতে পারছিনা এসব! এখন আমার সাথে এত ঢং করতে এসেছো কেনো? যাও নিরবের কাছে যাও! ওর সাথেই থেকো আমাকে জ্বালাবে না। জাস্ট ডিজগাস্টিং!”

কথাটা বলেই আঁখিকে ধাক্কা মেরে রুমে চলে গেলো। বেশি জোরে ধাক্কা মারেনি আঁখি শুধু হালকা পিছিয়ে গেলো। ও অনুভূতিহীন হয়ে সাজ্জাদের যাওয়ার পানে দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলে গেলো এসব? ওর মন মস্তিষ্ক শূন্য শূন্য লাগছে। তারমানে নিরবের সাথে কথা বলার জন্য সাজ্জাদ রেগে আছে? কিন্তু ও রাগবে কেনো? ও তো বেশি কিছু বলে নি। আঁখির মন কিছুই বুঝলো না। আসলেই কি ও অবুঝ? সাজ্জাদ ওকে সহ্য করতে পারেনা? ওর পাগলামি সাজ্জাদের ভালো লাগে না? ও এতটাই খারাপ? এসব ভেবেই আঁখির চোখে পানি চলে আসলো। আঁখি ভাবলেশহীন ভাবে ধপ করেফ্লোরে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ আনমনে কোদলো। পরক্ষনেই ওর মনে অভিমান জমালো। রেগে চোখের পানিটা মুছে মনে মনে ভেবে নিলো আর যাবে না সাজ্জাদের কাছে। ওকে যখন সহ্যই হয়না তো ও যাবে কেনো? সাজ্জাদের ছায়াও মারাবে না, দূরে দূরে থাকবে। আঁখি অভিমান করে সারারাত বেলকনিতে বসে রইলো। রুমে যাবে না। ও যাবে না সাজ্জাদের কাছে। আঁখি ভেবেছিলো সাজ্জাদ ওকে ডাকতে আসবে, সরি বলবে কিন্তু একবারও ডাকতে এলো না। আঁখির মনেও জমালো এক আকাশ অবুঝ অভিমান।

কবে ভাঙবে ওদের এই মান অভিমান? রাগের থেকে অভিমান আরও বেশি শক্তশালী। অভিমান রাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি অনুভুতি। কাছের লোকের উপরই কেবল অভিমান করা যায়। অভিমানের সাথে অধিকার নামক একটি ব্যাপার থাকে, অর্থাৎ যার উপর অধিকার আছে তার সাথেই শুধু অভিমান করা যায়। যার কাছ থেকে কিছু পাবার আশা আছে অথবা যাকে কিছু দেবার আশা আছে অভিমান তো তারই উপর করা যায়। অভিমান নিজের মানুষদের সাথে করা যায়, আর রাগ সকলের সাথেই করা যায়। রাগ মানুষকে ধংশ করে, রাগী মানুষের চেহারাতে দোজখ দেখা যাএ কিন্তু অভিমান হছে কেবল না পাওয়া প্রকাশের একটা হাতিয়ার, যাতে বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না। অভিমানে ভালোবাসা থাকে, আর রাগে ঘৃনা ও প্রতিশোধ প্রবনতা থাকে। অভিমানে শাসন থাকে, আর রাগে জিঘাংষা থাকে। অভিমানে নিরবতা ও কষ্টানুভতি থাকে আর রাগে গর্জন ও ভয়াবহতা থাকে। অভিমানে দুটি হৃদয় জড়িত থাকে, আর রাগে ততোধিক ব্যাক্তি জড়িত থাকে। অভিমানের সমাপ্তি হয় ভালোবাসার সুখানুভতি দিয়ে, আর রাগের সমাপ্তি ঘটে ধন, জন ও সম্মানের ক্ষতি দিয়ে।

ইনশাআল্লাহ চলবে…

(রি চেইক করিনি। ছোট হওয়ার জন্য সরি। আসলে আমি সময় পাইনা। সময়ের পিছনে এত দৌড়াই তাও পারিনা সময় আমার থেকেও দৌড়ে ফাস্ট। শুভ রাত্রি গাইস্)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here