শরতের বৃষ্টি পর্ব-৫

0
3122

#শরতের_বৃষ্টি
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৫

আঁখি মেজাজ খারাপ করে একা বাড়ির দিকে যাচ্ছে। কি কপাল ওর সেটা ভেবেই বেকুল ও। একটা মাত্র ভাই তাও ওর শত্রুর দলে। এই ভাই থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। ওর ভাই আগে থেকেই সাজ্জাদের পাগল। সব কিছুতেই সাজ্জাদ। চুল কাটতে গেলেও সাজ্জাদ ভাইয়ার স্টাইলে কাটবো। শার্ট কিনতে গেলেও সাজ্জাদ ভাইয়ার মতো কিনবো। আঁখি তো খুব ভয়ে আছে না জানি বড় হয়ে ওর ভাই সাজ্জাদের মতো আড্ডা বাজ হয়। আঁখি ওকে অনেক বকে কিন্তু ফিরাতে পারেনা। বরং ওর বিরুদ্ধ হয়ে সাজ্জাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলে। এজন্যই আঁখি বেশির ভাগ সময় সাজ্জাদের সাথে পেরে উঠে না। কথায় আছে ঘরের শত্রু বিভীষন। আঁখি যেতে যেতে গেইট দিয়ে ঢুকতেই সাজ্জাদের ফুল গাছ চোখে পরলো। আঁখি রেগে গাছের কাছে গেলো। গাছের দিকে তাকিয়ে বললো।

“তুই আমার প্রিয় গাছ ছিলি কিন্তু এখন তুই প্রিয় না। তুই হলি সাজগাজের গাছ। তোকে আজ শেষ করেই ছাড়বো।”

কথাটা বলেই আঁখি পাশে বালতি থেকে গাছে পানি ছিটালো। পরক্ষনেই মাটি পুরো গাছে দিয়ে দিলো। মাটির জন্য গাছটা দেখাই যাচ্ছে না। আঁখি এবার ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বাড়ির দিকে চলে গেলো। মাগরিবের আযান দিতে এখনও অনেক সময় বাকি তাই আখি ছাদে উঠে গেলো। পাঁচতলা সিড়ি বেয়ে ছাঁদে উঠাটা আসলেই কষ্টকর। আঁখি ছাঁদে উঠেই জোরে একটা শ্বাস ফেললো। ছাদের দরজার কাছে যেতেই দেখলো৷ সাজ্জাদের বোন সাদিয়া কথা বলছে। কার সাথে কথা বলছে তা দেখার জন্য উকি দিতেই দেখলো ওর ক্লাসমেট নাদিয়া। আঁখি রেগে ছাঁদে গেলো। চোখ গরম করে নাদিয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। নাদিয়া ওর তাকানো দেখে ঢোক গিলে বললো।

“আমি কি করছি বইন? এভাবে তাকিয়ে আছিস্ কেনো?”

আঁখি কিছুই বলছেনা রেগে তাকিয়ে আছে। সাদিয়া হালকা হেসে বললো।

“কি হয়েছে আপু রেগে আছো কেনো?”

“রেগে আছো কেনো তা অবার জিজ্ঞাসা করছো? তোমার ভাই যতদিন আছে ততদিন আমি শান্তিতে থাকতে পারবো বলে মনে করো? নিজে তো শত্রু হইছেই সেই সাথে আমার ভাইটাকেও আমার শত্রু বানিয়ে দিয়েছে।”

আঁখি রেগে এক শ্বাসে কথাগুলো বললো। সাদিয়া জোর পূর্বক হেসে বললো।

“কুল আপু। ভাইয়ার উপর রাগ তুমি নাদিয়া আপুর উপর দেখাচ্ছ কেনো?”

“আমি তোমার ভাইয়ার রাগ ওর উপর দেখাচ্ছি না। ওর রাগ ওর উপরেই দেখাচ্ছি।”

নাদিয়া হালকা ঢোক গিলে বললো।

“আমি কি করছি দোস্ত? আমিতো সাজ্জাদ ভাইয়াকে কিছু বলিনি বা তার পক্ষ নেইনি।”

আঁখি রেগে নাদিয়াকে একটা কিল মেরে বললো।

“তুই আজ আমায় রেখে চলে গেলি কোন সাহসে? আজ তুই থাকলে আমায় এভাবে বেইজ্জতি করতে পারতো?”

আখির কথা শুনে সাদিয়া ঠোঁট চেঁপে হাসলো। নাদিয়া নিজের হাসি কোনো মতে আটকে বললো।

“বেইজ্জতি করছে মানে? সেন্টারফ্রুট মারছে ওটা?”

শেষ পর্যন্ত আর শেষ রক্ষা হলোনা। নাদিয়া নিজের হাসি আটকে রাখতে পারলোনা হেসেই ফেললো। আঁখি আবার ওর পিঠে কিল বসিয়ে দিয়ে বললো।

“আমার মান সম্মান সব শেষ আর তুই দাঁত কেলিয়ে হাসছিস? এই তুই আমার বন্ধু তো?”

কথাটা শুনে নাদিয় ঠোঁট উল্টালো। সাদিয়া মনে মনে ভাবলো। কেনো যে দূজন দূজনের পিছনে লেগে থাকে। মিল হয়ে গেলেই তো হয়। সাদিয়া ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।

“আপু আমি যাই! তোমরা থাকো। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে প্রায়।”

কথাটা বলেই সাদিয়া ছাদের উপর ওদের কিছু ড্রেস শুকাতে দিয়েছিলো সেগুলো নিয়ে চলে গেলো। আখি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিলো। নাদিয়া ওর দিকে তাকিয়ে বললো।

“কিরে হাসছিস্ কেনো? আবার কি ঝামেলা পাকাইছোছ?”

আঁখি নিজের হাসি বন্ধ করে নাদিয়ার দিকে তাকালো। ভ্রু কুচকে বললো।

“কেনো রে! আমি কি শুধু ঝামেলা পাকাই?”

“তো? নাহলে সাজ্জাদ ভাইয়া ওভাবে সেন্টার ফ্রুট মারবে কেনো তোর গায়ে? কি করেছিস তুই? ঝামেলা না করলে আগ বাড়িয়ে সাজ্জাদ ভাইয়া কখনই তোর পিছনে লাগে না আমি জানি।”

আঁখি রেগে নাদিয়ার চুলগুলো টেনে বললো।

“শালা সাজগাজের চামচা। ভাইয়া ফুটাছ না? কিসের ভাইয়া হুম কিসের ভাইয়া? তোর ভাইয়া হয়? আমার শত্রু তোরও শত্রু। কেমন বান্ধবী তুই আমার? আমার বান্ধবী হয়ে আমার শত্রুর পক্ষ নেছ! সবাই আমার শত্রু। কারও সাথেই কথা নাই। কথাটা বলেই আঁখি রেগে সিড়ি বেয়ে নিচে চলে গেলো। নাদিয়া ওর পিছনে যেতে যেতে ওকে ডাকলো কিন্তু আঁখি শুনলো না। নাদিয়া জানে কাল সকালেই আবার ঠিক হয়ে যাবে। নাদিয়া আর তিনতলায় নামলো না। চরতলায় ওদের ফ্লাটেই থেকে গেলো।

————————–

সন্ধ্যা ৭টা। মিসেস শাহনাজ রান্নাঘরে নাস্তা বানাচ্ছেন।কলিংবেল বাজতেই তিনি বুঝে গেলেন কে আসছে। একপ্রকার তাড়াহুড়ো করে দরজা খুললেন। দরজা খুলতেই সাজ্জাদ বাইকের চাবি হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে শিস বাজিয়ে ভিতরে চললো। মিসেস শাহনাজ ওর সামনে গিয়ে দাড়ালো। সাজ্জাদ ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে ঘার দুলিয়ে বললো।

“কি হয়েছে মম? হঠাৎ এভাবে সামনে দাড়ালে যে?”

মিসেস শাহনাজ রেগে বললো।

“কি করেছিস আজ? আঁখির গায়ে সেন্টারফ্রুট মারলি কেনো? সারাদিন কি করোছ বলতো? ওর পিছনে না লাগলে হয় না? এই বয়সে মানুষ চাকরি করে বিয়ে করে আর তুই সারাদিন আড্ডা দিয়ে বেড়াছ।”

সাজ্জাদ বিরক্তি নিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।

“আম্মু প্লিজ আর জ্ঞান দিওনা। আমায় দিয়ে চাকরি বিয়ে শাদি হবে না। আর শোনো? আমি ওই চক্ষুর পিছনে পরে থাকিনা। ওই বেয়াদ্দব মেয়েই আমার পিছনে লেগে থাকে। এত বড় সাহস আবার তোমার কাছে বিচার দিয়েছে?”

“শুধু আমার কাছে না। তোর বাবার কাছেও বলে গেছে। তোর বাবা যাওয়ার সময় অনেক রাগারাগি করে গিয়েছে এসেও কি করবে দেখিস।”

আখি ওর বাবাকে বলেছে শুনে সাজ্জাদ রেগে এদিক ওদিক তাকালো। রাগে ফোসফাস করতে করতে বললো।

“কি মনে করে ওই চক্ষু? আমি বাবাকে ভয় পাই? দেখো আমার গায়ে ধুলো মেরেছে আমি কি সাধে ওকে বকি?”

মিসেস শাহনাজ রেগে বললেন।

“নিশ্চয়ই কিছু করেছিলি না হয় আঁখি তোর গায়ে ধুলো মারবে কেনো? বুঝিনা তোদের কি শত্রুতা। সারাদিন একজন আরেক জনের পিছনে লেগে থাকিস্! একজন হাসলেও আরেকজনের শরীরে জ্বর আসে মনে হয়।”

কথাটা বলে রেগে রান্না ঘরে চলে গেলেন মিসেস শাহনাজ। সাজ্জাদ রেগে নিজের রুমে চলে গেলো। গায়ে ধুলো লেগে আছে ওগুলো পরিস্কার করতে হবে তাই গোসল করতে গেলো। গোসল করে গেঞ্জি পড়তে গেলেই দেখলো সারা গেঞ্জিতে সেন্টারফ্রুট লাগানো। সাজ্জাদ এক নিমিষেই বুঝে গেলো এটা কে করতে পারে। কিন্তু ওর রুমে কি করে এলো? নাকি সাদিয়া এগুলো ছাদে শুকাতে দিয়েছিলো? সাজ্জাদ রেগে চিল্লিয়ে সাদিয়াকে ডাকলো। সাদিয়া ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি ওর ভায়ের রুমে গেলো। মিসেস শাহনাজ ও চলে এলেন। সাজ্জাদ রেগে বললো।

“আমার অনুমতি ছাড়া আমার গেঞ্জি ছাঁদে শুকাতে দিয়েছিলি কেনো বল?”

সাজ্জাদের রাগ দেখে সাদিয়া চুপ করে রইলো। ও বুঝতে পারছেনা কি হয়েছে। এখানে ভুলটা কোথায়। ভালোর জন্য ছাঁদে নিলো কিন্তু খারাপ হয়ে গেলো। মিসেস শাহনাজ রেগে বললেন।

“কি হয়েছে তোর? চেচাঁমেচি করা অভ্যাস হয়ে গেছে না? ও ড্রেস শুকাতে নিয়েছিলো এখানে ভুলটা কিসের? না শুকালেও তো ওকে বকোছ। বলোছ ছাঁদে শুকাতে দিলে কি হয়? আজ দিয়েছে তাই দোষ হয়েছে? ও কি করবে বলতো? শুকাতে দিলেও দোষ, না দিলেও দোষ।”

সাজ্জাদ নিজের গেঞ্জিটা দেখিয়ে বললো।

“দেখো ওই চক্ষু কি করেছে। আমার পুরো গেঞ্জিটাই নষ্ট করে দিয়েছে।”

মিসেস শাহনাজ রেগে চলে গেলেন। সাদিয়া যেতে যেতে বললো।

“নিজে আগে দিয়েছে অন্য কেউ দিলেই দোষ? একদম ঠিক করেছে আঁখি আপু।”

সাজ্জাদের কানে কথাটা পৌঁছাতেই বললো।

“এই দাড়া! কি বললি তুই?”

সাদিয়া আর পিছনেই ফিরলো না। সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। সাজ্জাদ রেগে মোবাইল নিয়ে বসলো। রাত বাড়তেই আশরাফ খান বাড়িতে ফিরলেন। তিনি রেগেই আছে বাড়ি ফিরেই মিসেস শাহনাজকে বললেন।

“১০মিনিটের মধ্যে তোমার ছেলেকে ড্রইংরুমে উপস্থিত দেখতে চাই আমি।”

কথাটা বলেই আশরাফ খান ফ্রেশ হতে চলে গেলেন। মিসেস শাহনাজ ভয়ে ভয়ে সাজ্জাদের রুমের দিকে গেলো।

ইনশাআল্লাহ চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here