#শর্বরী
অলিন্দ্রিয়া রুহি
(২)
কুসুমের মাথার কাছে মরিয়ম বেগম বসে রয়েছেন। এখন গ্রীষ্মকাল কিন্তু কুসুমের শরীর অত্যধিক ঠান্ডা হয়ে আছে। হাত-পা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। চেহারা মলিন, মিতু ঘাবড়ে গেল। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে শ্বাশুড়ি কে বলে উঠল,
“আম্মা, ওর শরীর তো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কিছু করা দরকার।”
“এখনো সকাল হইনাই বড় বউ মা। কী করমু? কিচ্ছু বুঝতেছি না। তোমার বাপরে ডাকো বউ মা। আমার অনেক ভয় লাগতেছে।”
মিতু ছুটে গেল শ্বশুর কে ডেকে আনার জন্য।
বাইরে সবেমাত্র ভোরের ফুঁটতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণ আগেই আযানের মধুর ধ্বনিতে চারপাশ ভেসে যাচ্ছিলো। হাবিব শিকদার নামায পড়ে উঠেছেন,ওমনি মিতু গিয়ে তার ঘরে হানা দিলো। কম্পিত কণ্ঠে কুসুমের শরীর খারাপের কথা বলল। এও বলল, কুসুম এখন গর্ভবতী। তাকে দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত নইলে তার বা বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। সব শুনে হাবিব শিকদার মৃদু শ্বাস ফেলে বিড়বিড়িয়ে বললেন,
“ওর হাতে শিমুলরে ছাইড়া দিলেই ও ভালো হইয়া যাইবো বউ মা।”
মিতু প্রত্যুত্তর করল না। হাবিব শিকদারের হঠাৎ মনে পড়ে যাওয়ায় মিতুকে প্রশ্ন করলেন,
“তমল বলল তুমি নাকি আগে থাকতেই কিছু আন্দাজ করছিলা।”
মিতু ঘাড় কাত করে সায় জানালো।
“আমাদের বললা না কেন তখনি? তাইলে পানি এতদূর গড়াইতো না।”
“আমি কীভাবে বুঝবো যে এদের ভেতর আসলেই কিছু চলতেছে? বড় ভাসুর ছোট ভাইয়ের বউয়ের দিকে কোন নজরে তাকায়, তা তো আর আমি জানি না আব্বা।”
“আচ্ছা তুমি ঘরে যাও। আর চিন্তা কইরো না। মেজ বউ ঠিক হইয়া যাইবো। আমি জানি।”
মিতু ঘাড় হেলিয়ে চলে যাওয়ার জন্য দুই কদম গেলেও আবার থমকে দাঁড়াল। শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো,
“ওদের কী ব্যবস্থা করবেন আব্বা? সব কী এইটুকুতেই শেষ?”
“না বউ মা। তুমি চেনো আমারে। আমি আজীবন সত্যের পথে থাকছি। এখন শেষ বয়সে এসেও সত্যের পথেই থাকতে চাই। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি অবশ্য আছে। কিন্তু সেটাতে তোমাদের সবারও মতামত প্রয়োজন। আগে নয়ন ফিরুক। ওকে ফোন করে সব বলছি আমি। আগামীকাল দুপুরের আগেই ও চলে আসবে জানাইছে। ও আসুক, তারপর সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসব। তার আগে কুসুমের সুস্থ হওয়া প্রয়োজন। মেজ বউই এই সিদ্ধান্ত নিক, আমি চাই এটা। কারণ যা হয়েছে তাতে আমাদের ক্ষতি কম, ওর ক্ষতি সব চাইতে বেশি। নেহাল ওর নিজের স্বামী ছিল!”
মিতু দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই সংসারটাকে সে খুবই ভালোবাসে, যত্ন করে। শিমুল আসার আগ অবধি সবকিছু কত সুন্দর ছিল! সে আর কুসুম- ঘরের মেয়ের মতোই থেকেছে এখানে। দু’জনে মিলেমিশে কাজ করেছে। কাজের সময়গুলো গল্প আর খুনসুটিতেই কেটে গেছে। মাথার উপর মায়ের সমতূল্য শ্বাশুড়ি, বাবার সমতূল্য শ্বশুর তো সর্বদাই ছিল। এই দু’জনের ভয়ে কখনো বাড়ির বউদের সাথে অনাচার,অবিচার করতে পারেনি বাড়ির ছেলেরা। বাড়ির বউয়ের গায়ে হাত তোলা তো দূর,একটা উঁচু ধমক পর্যন্ত কখনো দেয়নি কেউ। যে যা ভুল করেছে, আম্মা শিখিয়ে পড়িয়ে নিয়েছে। এত সুন্দর সংসারটায় কার নজর লাগল! মিতুর মন সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়, শিমুলের.. শিমুলের নজরে পুরো বাড়ি উলোটপালোট হয়ে গেল। তছনছ হয়ে গেল সংসার…
মিতুর বুক ফুঁড়ে ক্ষণে ক্ষণে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। নেহালকে তার রুমে আঁটক করে রাখা হয়েছে। সেই রুমের পাহারায় রাখা হয়েছে তমলকে, যেন কোনোভাবেই সে পালাতে না পারে। হাবিব শিকদার হুকুম দিয়েছেন, আগে বিচার হবে তারপর যা হওয়ার হবে….
শিমুলকে রাখা হয়েছে তার রুমে। সে ঘরটাও বাহির থেকে তালা দেওয়া। তার বাবা-মাকে ফোন করা হয়নি, তবে হবে। আগে সকালটা পরিপূর্ণভাবে ফুঁটে উঠুক। মিতুর এত গায়ে জ্বালা করল যে সে শিমুলের ঘরে গিয়ে ঢুকল। শিমুল বিধস্ত অবস্থায় খাটে বসেছিল, মিতুকে দেখামাত্র সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। মিতু কটমটিয়ে শিমুলের দিকে চেয়ে রইলো। তার ইচ্ছে করছে ঝাটা দিয়ে ঝেড়ে এটাকে এক্ষুনি এই বাড়ি ছাড়া করতে। শিমুল ভীত গলায় বলল,
“ভা..ভাবী..”
তৎক্ষনাৎ মিতু ফুঁসে উঠল, যেভাবে গরম তাওয়ার উপর পানি পড়লে ফুঁসে ওঠে।
“খবরদার, তোমার ওই নোংরা মুখে আমাকে ডাকবে না একদম।”
শিমুল চুপসে গেল। তার প্রচন্ড ভয় লাগছে। কুসুমের হাতে যে মাইরটা সে খেয়েছে,তা সহ্য করার মতো না। তবুও কী করে যে সহ্য করে আছে,তাও এক বিস্ময়। সেই সঙ্গে রাগও নেহাত কম লাগছে না। একে তো ওই কুসুমের জন্য আজ নেহালের স্ত্রী হতে পারেনি সে। উল্টো তাকেই দোষী করা হচ্ছে! এরা কীভাবে জানবে, নেহালের কারণে কতকিছু সয়েছে শিমুল! মায়ের জুতোর বারি থেকে শুরু করে বাবার থাপ্পড়,বড় ভাইয়ের দাবড়ানিও কম খায়নি মোটেও। তারপরও শেষতক নেহালকে পাওয়া হলো না। মিতুর এগিয়ে আসা শিমুলের ভাবনার গতিপথ টেনে ধরল। হকচকিয়ে দুই কদম পিছিয়ে গেল শিমুল। মিতু কাছাকাছি দাঁড়িয়ে হিসহিসিয়ে বলল,
“সকালটা হোক একবার। তোমার ব্যবস্থা হবে।”
“নেহাল আপনাদের ঘরের সন্তান বলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে। আর সব দোষ আমার উপর চাপানো হচ্ছে? এ কেমন ন্যায়?”
পাল্টা জবাবে বলল শিমুল। মিতু একদণ্ডও চুপ করে রইলো না। সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলো,
“তারও ব্যবস্থা করা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তোমরা দু’জনেই সমান অপরাধী। এতে যদি কুসুমকে স্বামী হারা হতে হয়, তাহলে হবে। তবুও নেহালের শাস্তি এতটুকু কমবে না।”
কথাগুলো শেষ করে একমুহূর্তও দাঁড়াল না মিতু। গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। ক্রুর হাসি ফুঁটে উঠল শিমুলের ওষ্ঠদ্বয়ে। নেহাল আর কুসুমের বিচ্ছেদ হলে মন্দ হবে না ব্যাপারটা!
.
.
পূর্ণিমা সন্ধ্যায়, তোমার রজনীগন্ধায়
রূপসাগরের পাড়ের পানে উদাসী মন ধায়
তোমার প্রজাপতির পাখা
আমার আকাশ চাওয়া মুগ্ধ
চোখের রঙিন স্বপন মাখা
তোমার প্রজাপতির পাখা
আমার আকাশ চাওয়া মুগ্ধ
চোখের রঙিন স্বপন মাখা
তোমার চাঁদের আলোয়
মিলায় আমার দুঃখ-সুখের
সকল অবসান
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
আমার আপনহারা প্রাণ
আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
কুসুমের কণ্ঠে গাওয়া সুরগুলো কানে বাজছে নেহালের। মেয়েটা বড্ড গানপ্রিয়। কবিতাও আওড়ায় মাঝে মাঝে। বিয়ের প্রথম রাত্রিতেই এই গানটি নেহালের উদ্দেশ্যে গেয়ে শুনিয়েছিল কুসুম। সেই থেকে নেহাল মানতে বাধ্য, কুসুমের গলা ভারী চমৎকার। রিনরিনে কণ্ঠে যখন সুর ভাজে, কী দারুণ শোনায়! দেখতেও ভালো লাগে। আজ হঠাৎ সেসব কথা মনে পড়ছে কেন? নেহাল অনুতপ্ত। শিমুলের উদ্দেশ্য বুঝতে পারেনি সে। মোহের টানে পড়ে কুসুমের মতো সরল-সহজ মেয়েটাকে এভাবে ধোঁকা দিয়ে ফেলবে, কখনো চিন্তাও করেনি নেহাল। শিমুলের সঙ্গে তার সম্পর্ক স্কুল জীবন থেকেই ছিল। একই পাড়ায় বসবাস করত তারা। স্কুলের ফাঁকে ফাঁকে খেলার মাঠে ছেলে-মেয়ে উভয় মিলে খেলত যখন, তখন চোখের ইশারায় দু’জনের মন দেওয়া নেওয়া হয়েছিল। নেহাল যেবছর স্কুল শেষ করল, শিমুল তখন মাত্র ক্লাস সিক্সে। ওইটুকুনই মেয়ের উপর নেহালের সে কী গভীর অনুভূতি! বর্তমান কালের ভাষায় ক্রাশ বললেই বোধহয় ভালো হয়। শিমুল যখন তার ডাগর ডাগর চোখ মেলে চাইতো, নেহাল তখন খেই হারিয়ে ফেলত সবকিছুর। নেহালের মাস্টার্স শেষ হলে পরিবার থেকে বিয়ের জন্য মেয়ে খোঁজা শুরু হলো। যখন শিমুলের কথা পরিবারকে জানাবে বলে ভাবল নেহাল, তখনি একটা ঘটনা ঘটে গেল। বন্ধুর মাধ্যমে উড়ো খবর এলো, শিমুল নেহালের পাশাপাশি অন্য আরেকটি ছেলের সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করেছে। কিছু ছবি,একত্রে ফুচকা খাওয়ার ভিডিও- এগুলোও এসে পৌঁছুলো নেহালের হাতে। তারপরের ঘটনাটা একদম সংক্ষিপ্ত। শিমুলকে কিছু না জানিয়েই কুসুমকে বিয়ে করে ফেলল নেহাল। শিমুল যখন জানলো, তখন বিয়ের দু’দিন পার হয়ে গেছে। কলেজে পড়াকালীন শিমুলের পরিবার এই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল বলে শিমুল বিয়ের সময়ে কিছুই টের পায়নি। লোকমুখে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরবর্তীতে নেহালের বিয়ের ব্যাপারে জেনেছিল। কেঁদেছিল শিমুল। কিছু একটা বলতে গিয়েও বলেনি শেষে। নিরবে বিদায় নিয়েছিল নেহালের কাছ থেকে। নেহাল বুঝে গিয়েছিল, এই নিরব প্রস্থান ওই ছেলের জন্য। যদি সত্যি ভালোবাসতো, তাহলে কেন কোনো হাঙ্গামা করল না? এত সহজেই ভালোবাসার দাবী ছেড়ে দিতে পারে আদৌও কোনো মেয়ে? আঘাত পেয়েছিল নেহাল। কিন্তু মুগ্ধকারী কুসুমের মায়াজালে ফাঁসতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। কুসুমকে নিয়ে ভালোই তো ছিল সে। হঠাৎ এতগুলো দিন পর কেন শিমুল এই বাড়িরই বউ হয়ে এলো! আর এরকম একটা ঘটনা ঘটালো?
নেহাল মাথা নাড়ে। তারও কী দোষ কম নাকি? একটা মেয়ে কয়েকটা হুমকি-ধমকি দিল, আর সেও সুরসুর করে শিমুলের কথা মেনে নিলো! কী আজব! শিমুল আর তার সম্পর্কের সময়ে কাছে আসা হয়েছে ঠিক, কিন্তু কখনো কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। তবুও শিমুলের দাবী তার কাছে এমন সব ছবি আছে,যা দেখলে কুসুম সহ পরিবারের সকলেই বিস্মিত হয়ে যাবে। কিছু ছবি নেহালকেও দেখিয়েছে। যা দেখে নেহালের চক্ষু চড়কগাছ। গত বছর আগের ছবি সেসব! কতটা ক্লোজ ছিল দু’জনে… এগুলো দেখলে কুসুমের খারাপ লাগবে। খুব কষ্ট পাবে মনে মনে। তাই নেহাল বারংবার শিমুলকে বুঝিয়ে গেছে যেন এগুলো ডিলিট করে দেওয়া হয়। কী লাভ নেহালের সোনার সংসারটা পুড়িয়ে। উত্তরে শিমুল হেসেছে। উত্তর দেয়নি। তবে শর্ত দিয়েছিল, পরাপর চার রাত শিমুলের ঘরে আসতে হবে লুকিয়ে লুকিয়ে। বলেই বা চোখ টিপেছিল শিমুল। আগের চাইতেও সুন্দরী হয়ে ওঠা শিমুলের ওই আকর্ষণীয় মনোভাব দেখেও ফিরিয়ে দিতে পারেনি নেহাল। সেও গিয়েছে। কিন্তু কোনো ক্লোজ সম্পর্ক গঠন করেনি। একত্রে বসে পুরোনো স্মর্তি রোমন্থন করেছে। শিমুলকে বুঝিয়েছে, যা হওয়ার হয়েছে। আগের কথা ভেবে লাভ নেই। দু’জনেই যাতে নতুন সংসারে মন দেয়।
নেহাল দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার মাথায় সবটা জট পাঁকিয়ে গেছে। সে নিজেই শিউর না, ঠিক কীসের টানে শিমুলের ডাকে সাড়া দিয়েছে। আর কেনই বা বিবেক, বুদ্ধি হারিয়ে এরকমটা করল সে। করল তো করল, কার সাথে করল! নিজের আপন ছোটো ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে! এই মুখ জনসম্মুখে কীভাবে দেখাবে নেহাল! নেহাল দু’হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে উঠল। শয়তান মাথায় চড়ে বসলে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে মানুষ। এটার বাস্তব প্রমাণ আজ মিললো। নেহাল কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। উপরন্তু কুসুম গর্ভবতী! নিশ্চয়ই তাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে জানায়নি বেচারী। অথচ বেচারীই কী সারপ্রাইজ টা পেয়ে গেল! নেহালের দম বন্ধ হয়ে আসে। হাঁসফাঁস লাগে। কার নজর লেগে গেল তার সোনার সংসারটায়! নেহাল দাঁত কটমট করে উচ্চারণ করল, “শিমুল!”
.
.
মাথার উপর চান্দি ফাঁটা রোদ। এত উত্তপ্ত! এত গরম! মানুষ দরদর করে ঘামছে। সূর্য মামার তেজ তবুও কমছে না। আজকাল এতটা নির্দয় কী করে হচ্ছে সূর্য মামা? এসব সাতপাঁচ ভাবনা চলছিল ছোট্ট টুকুর মাথায়। বাড়িতে আজ হৈচৈ নেই। সবকিছু ঠান্ডা, শান্ত। মেজ মা কে নিয়ে সবাই বৈঠক করছে। উনি কিছুই খাচ্ছেন না সকাল থেকে। কিন্তু কী এমন হলো যে উনি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন? ছোট্ট টুকুর মাথায় প্রশ্নের জবাব নেই। পুতুল খেলা বাদ দিয়ে সে কতক্ষণ ভাবল। ভেবে ভেবেও কোনো কূল কিনারা না পাওয়ায় আবার পুতুল নিয়ে বসল সে। বাহির থেকে দরজা আঁটকে দিয়ে গেছে মিতু,যাতে টুকু কোথাও বেরোতে না পারে। নইলে এক দৌড়ে তানিয়ার বাসায় চলে যাওয়া যেতো। তবে গিয়ে সময়টা কাটতো যদি! টুকু ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। বাসার পরিস্থিতি আবার আগের মতো হয়ে যাক, তার নিষ্পাপ মন প্রার্থনা করে নিরবে….
হাবিব শিকদারের মুখোমুখি বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে রয়েছে কুসুম। তার চোখের তারা ফ্যাকাশে। চেহারায় কষ্টের ছাপ। এতটুকুতেই হাল ছেড়ে দিয়েছে দেখে হাবিব শিকদার চিন্তায় পড়ে গেলেন। তিনি যেই পরিকল্পনা করেছেন, তা আমল করতে হলে সবচেয়ে বেশি শক্ত থাকতে হবে কুসুমকে। কুসুমই যদি হাল ছেড়ে দেয়, তাহলে কেমন করে হবে? ঘরের সবাইকে কয়েক মিনিটের জন্য বাহিরে যেতে বললেন তিনি। সবাই চলে গেলে কুসুমকে ধীর গলায় ডেকে উঠলেন তিনি,
“মেজ বউ মা।”
কুসুম দুর্বল গলায় জবাব দিলো,
“জি বাবা।”
“যে তোমাকে এতবড় আঘাতটা দিলো, তারে তুমি পাল্টা আঘাত দিতে চাও না?”
কুসুম ক্ষণকাল চুপ থেকে মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর করল,
“চাই।”
“আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে মেজ বউ মা। কিন্তু তাতে তোমারে শক্ত থাকতে হবে। পারবা তুমি শক্ত থাকতে?”
“কী বুদ্ধি আব্বা?”
হাবিব শিকদার বড় একটি দম ফেলে বললেন,
“তোমার স্বামীর অধিকার ছাইড়া দিতে হইবো। যেই পাপ ও করছে,সেই পাপের বোঝাই ওর ঘাড়ে চাপাবো। ওই বোঝা নিয়েই জীবন কাটাতে হবে ওর। এটাই ওর শাস্তি। যদি ওর শাস্তি শেষ হয়,ও আপনাতেই সব ছেড়ে তোমার কাছে ফিরা আসবো। আর যদি পাপের উপর আবারও পাপ করে বসে ও, তাহলে ভাইবা নিও, আমার পোলা তোমার জন্যে সঠিক না মা। খালি কিছু সময়ের জন্য নেহালের উপর থেকে সমস্ত দাবী উঠাইয়া নিতে হইবো তোমার। ওরে ছাইড়া দিতে হইবো। পাখি যদি তোমার হয়,যতই উড়ুক, তোমার খাঁচায় আইবোই আইবো।”
কুসুমের দম ঘন হয়ে এলো। কপালে ভাঁজ পড়ল বেশ কয়েকটি। চোখজোড়া ছলছল করছে। হাবিব শিকদার এগিয়ে গিয়ে কুসুমের মাথায় স্নেহের হাত রাখলেন।
“তুমি আমার মাইয়া, আর আমার মাইয়া হইয়াই থাকবা সারাজীবন।”
কুসুমের বাম চোখ বেয়ে এক ফোঁটা জল হাতের তালুর উপর টুপ করে গড়িয়ে পড়ল। লম্বা দম টেনে ফুসফুস ভর্তি করল কুসুম। তারপর শান্ত, ধীর গলায় বলল সে,
“আমি আপনার ছেলের উপর থেকে সমস্ত দাবী উঠিয়ে নিলাম আব্বা। উনার শাস্তি উনাকে পেতেই হবে।”
(চলবে)
[সবাই লাইক,কমেন্ট করে পাশে থাকবেন আশা করছি। আমার গল্পের গ্রুপ লিংক- https://www.facebook.com/groups/2544482755570697/
কেউ জয়েন হতে চাইলে হতে পারেন।]