শুকতারা পর্ব-১৩

0
1291

#শুকতারা (পর্ব-১৩)
#হালিমা রহমান

দুপুরে খাওয়ার পরে এক-দেড় ঘন্টা ঘুমানো সাহিদা বেগমের প্রতিদিনের অভ্যাস। ফজরের সময় উঠতে হয়।নামাজ পড়ে আর ঘুমাননা তিনি।একটানা দুপুর পর্যন্ত এটা-ওটা করতেই থাকেন। কাজের মাঝে বিশ্রামের সময় পেলেও বসেন না। দুপুরে খাওয়ার পর একেবারে ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে নেন। না ঘুমালে শরীরটা চলে না।কোমড় ব্যাথা,পা ব্যাথা,মাথা ব্যাথা, একটার পর একটা সন্ধ্যার দিকেই হানা দেয়।
তবে আজকের চিত্রটা ব্যতিক্রম। দুপুরের খাবারের পর বিশ্রামের সময় মিললো না আজ।সকাল থেকে পুরো ঘরটাকে ঝাড়া-মোছা করেছেন,চুলা লেপেছেন,ঘরের আশেপাশে সুন্দর করে ঝাট দিয়েছেন,টিনের এদিক-ওদিক মাকড়সা জাল বুনেছিলো, লম্বা ঝাড়ু দিয়ে ওগুলো ঝেড়েছেন। এর মাঝে রান্নাঘরে রান্না-বান্নার কাজ তো ছিলই। গোসলের পর নামাজ শেষে তড়িঘড়ি করে মুখে দুটো গুজে দিয়ে আবার রান্নাঘরে ছুটেছেন।কত পদের নাস্তা বানানো বাকি! পিঠা-পায়েস দিয়ে আপ্যায়ন না করলে নাম বাঁচবে কী করে?
মমিন শেখও আজ বাড়িতে।দশ বছর আগের কাঠের ওয়ারড্রবটা এতোদিন মাঝের ঘরের এক কোনে অযত্নে পড়েছিল। কাঠের উপরে ধুলো-ময়লা জমে রঙ চটে গিয়েছিল।সেটাই আজ সকাল থেকে ঝেড়ে-ঝুড়ে পরিষ্কার করলেন।বার্নিশ করানোর ইচ্ছা ছিল কিন্তু সময়ের অভাবে করা হলো না।ঘরের ফ্যানগুলোর উপরে এক আঙুল ধুলো জমেছে।শীতের দিনে ফ্যানে ধুলো জমে বেশি।শুকনো কাপড় দিয়ে তিন রুমের ফ্যানগুলোকে মুছলেন।ঘরের পিছনে সুপারির বাগানে অনেক আগাছা জন্মেছে।ঘরের পাশেই আস্তানা গেড়েছে স্বর্ণলতার দল। সবুজ সবুজ লতাকে পুরোপুরি উপড়ে ফেললেন।টিনের ঘরের পাশেই শোভা বাড়াচ্ছে মোরগঝুটি ফুল।মমিন শেখ বহুদিন পরে অকারণেই গাছের গোড়ায় পানি দিলেন।পানি খেয়ে গাছটা হৃষ্টপুষ্ট হোক,মোরগের ঝুটির মতো থোকা থোকা ফুলে ভরে যাক গাছটা।
বহুদিন পরে আজ খুব শান্তি লাগছে মমিন শেখের।একরকম বন্য আনন্দ ছড়িয়ে গেছে সারা শরীর জুড়ে। নিজের ক্ষেতে যখন বাম্পার ফলন হয়,মাটিগুলো যখন আদুরে ফসলের মোড়কে জড়িয়ে যায়,বাতাস বইলে যখন পুরো মাঠে সন্তানসম ফসলেরা ঝুমঝুম করে হাসে; তখন যেমন আনন্দ হয়, আজ ঠিক তেমন আনন্দ হচ্ছে। আজ তার মেয়ের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দিন।মমিন শেখ খুশি না হলে আর কে খুশি হবে? আজ তার ঈদের দিন।
ছোট মেয়েটার জন্য এতোদিন চিন্তায় মরে যাচ্ছিলেন মমিন শেখ।মেয়েটা অবুঝ,গোঁয়ার,কাঠখোট্টা, বেয়াদব।রূপ বলতে তার কিছু নেই।এর উপর ভূমির কলঙ্ক।এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। কত মোনাজাতে সূচির জন্য দোয়া করেছেন মমিন শেখ! একটাই মেয়ে তার,একটাই সম্বল।আজকাল ভালো মানুষ আছে নাকি পৃথিবীতে? মেয়েকে ভালো পাত্রের হাতে তুলে দেওয়া কত কঠিন কাজ! তাছাড়া তাদের মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের যন্ত্রণা আরো বেশি।লোক-লজ্জার ভয় তাদের অঙ্গে-অঙ্গে জড়ানো। সূচির এবছর আঠারো হলো,ডিসেম্বর মাসটা ঘুরে এপ্রিল আসতেই উনিশে পা দেবে। উনিশ-বিশের মাঝে মেয়ে বিয়ে দিতে না পারলে গ্রামে আর মুখ দেখানো যাবে? চায়ের দোকানে বসে অকর্মণ্য লোকের দল গলায় চা ঢেলে দিয়ে আফসোস করবেঃ” আহারে মমিন! তোর কপালটাই খারাপ।বড় মাইয়াটা মুখে কালি মাখায়া গেল,ছোটটার এখনো বিয়াই হয় না।কি যে হইব তোর!”
ইশ! গা জ্বালানো কথা।এসব কথা যাতে শুনতে না হয়, তাই এতোদিন কত দোয়া করলো মমিন শেখ।স্ত্রীসহ কতকিছু মানত করলো।হেমন্তের শুরুতে বাজারের বড় মাদ্রাসায় যখন মাহফিল হলো,তখন ঢাকার বড় একজন আলেম এসেছিলেন ওয়াজ করতে। এতবড় আলেম এর আগে আর আসেনি।বাজার কমিটি মাহফিলের আয়োজন করেছিল।দিন-রাত গ্রামবাসীরা বাজার কমিটির অফিসে এটা-ওটা পোঁছে দেয় হুজুরের আপ্যায়নের জন্য।মমিন শেখও দিয়েছিলেন।খোপের লাল রাতা মোরগটা দিয়েছিলেন হুজুরের খেদমতে।বয়ানের শেষে লোকজনকে ঠেলে-ঠুলে হুজুরের সামনে যেয়ে, বিনয়ী ভঙ্গিতে সালাম দিয়ে নরম গলায় অনুরোধ করেছিলেন,” আসসালামু আলাইকুম, হুজুর।আমার একটা মাইয়া আছে ।বিয়া-শাদির ঘর আসে না।মাইয়াটার লেগা আপনে একটু দোয়া কইরেন।”
হুজুর চলেই যাচ্ছিলেন প্রায়,বিনয়ে নুইয়ে যাওয়া মমিন শেখের অনুরোধে দাঁড়িয়ে গেলেন।ভলেন্টিয়ার ছোকরাগুলো হুজুরকে ঘিরেই দাঁড়িয়ে ছিল।তারা বিরক্ত গলায় হুংকার দিলোঃ” কাকা,সরেন তো।হুজুরে খাইতে যাইব।আপনের আর্জি মেম্বারের বাড়িতে জানায়েন।আগামী এক ঘন্টা হুজুর ওইখানে থাকব।”
সেকেন্ডের মধ্যেই মমিন শেখ বড় লজ্জায় পড়ে গেলেন।বোকা দৃষ্টি ফেলে চট করে পিছনে সরে যাওয়ার পায়তারা করতেই হুজুর তার কাঁধে হাত দিয়ে থামিয়ে দেন।বড়ই ভালো মানুষ তিনি।সাদা পাগড়ি বাঁধা মাথা নেড়ে বলেনঃ” যাবেন না ভাইসাব। মেয়ে কী করে আপনার?”

” ইন্টারে পড়ে।সামনে পরীক্ষা।”

” মাশাল্লাহ।আল্লাহ তার জ্ঞান-বুদ্ধি বাড়িয়ে দেক,নেক হায়াৎ দান করুক,দীনের উপর বহাল রাখুক,হেদায়াত দেক,পর্দা করার তৌফিক দান করুক।এর চাইতে ভালো দোয়া আমার আর জানা নেই। আপনার মেয়ের জন্য আমি অনেক ভালো দোয়া করে দিলাম, ভাইসাব।আমি আল্লাহর পাপী বান্দা।আমার দোয়া কবুল হবে নাকি হবে না, তা জানা নেই।কিন্তু আপনার দোয়া ইনশাআল্লাহ কবুল হবে।আপনি বাবা,বাবা-মায়ের দোয়া আল্লাহ ফেলে দেন না।খাস নিয়তে মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করুন। আল্লাহ পরম দয়ালু। নিশ্চয়ই আপনার দোয়া ফেলবেন না।”

তারপর থেকে কত দোয়া করতেন মমিন শেখ। আগে ফজরের নামাজটা ছুটে যেতো ঘুমের ঘোরে।এখন আর হয় না।তীব্র শীতেও পুকুরের বরফ শীতল পানিতে ওজু করে, ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে বড় রাস্তার পাঞ্জেগানা মসজিদে যেয়ে নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে ঠান্ডা ফ্লোরে বসে দীর্ঘ মোনাজাতে মাধুরী মিশিয়ে আর্জি জানান দয়াময়ের দরবারে। ” আমার মাইয়াটার জন্য একটা ভদ্র ছেলে মিলায়া দাও, খোদা।একটা বনেদী ঘর,একটা কর্মঠ ছেলে।আর কিছু চাই না,খোদা।তোমার দরবারে এই গরীবের একটাই চাওয়া।”
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের শেষে এই এক কথা বলতে বলতে মুখস্থ হয়ে গেছে এখন।সূচিকে দেখলেও এখন বন্যার পানির মতো হড়বড় করে এই কথাগুলো অস্ফুটে বেড়িয়ে আসে মুখ দিয়ে,” আমার মাইয়াটারে একটা ভদ্র ছেলে মিলায়া দাও, খোদা।এই গরীবের একটাই চাওয়া।”

আল্লাহ ফিরিয়ে দেননি মমিন শেখকে।তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।উনিশের ঘরে পা দেওয়ার আগেই মেয়ের গতি হচ্ছে। লক্ষ বার শোকর আদায় করেও মন ভরে না।কৃতজ্ঞতায় সেজদায় লুটিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। একটানা পনেরো মিনিট সেজদায় পড়ে থাকার পরেও মনে একটা খচখচানি কাজ করে।বারবার একটা কথাই মাথায় আসে,তিনি মূর্খ মানুষ।জ্ঞান কম,প্রকাশভঙ্গি সুন্দর না।ঠিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হচ্ছে তো?
ঘর-দুয়ারের চকচকে ভাব দেখে উল্লাস করতে ইচ্ছা করে মমিন শেখের।আজ আর গোসলের আগে বউকে গরম পানির জন্য তাগাদা দিলেন না।মহিলার দুটো হাত,দুটো চুলা।হরেক রকম রান্নায় ব্যস্ত হাত দুটো।তাই গোসলের আগে ভালোমতো পুরো শরীরে খাঁটি সরিষার তেল মেখে নেন।বুকে, হাতে,পায়ে,পিঠে সব জায়গায়। খাঁটি সরিষার তেল,ঝাঁজে চোখে জল আসে। ঘসে ঘসে শরীরে তেল মাখেন তিনি।আনন্দে আত্মহারা হয়ে ভাঙা ঘাটের শেষপ্রান্ত থেকে ঝট করে ঝাঁপ দেন নিষ্প্রাণ পুকুরে।আজ খুশির দিন,বড়ই আনন্দের দিন।

_________________________

মনির কলাপাতা রঙের শাড়িটা সুন্দর।রঙটা খুব উগ্র নয়। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়, মনে খুব সুন্দর একটা স্নিগ্ধ ভাব এনে দেয় শাড়িটা। মনির স্বামী সৌদি থাকে।আসার সময় শাড়িটা এনেছিলো যত্ন করে।বিদেশের শাড়ি না,দেশেরই শাড়ি।এয়ারপোর্ট থেকে আসার পথে শখ করে মার্কেট থেকে দুই হাজার টাকা দিয়ে কিনে এনেছিল শাড়িটা। বড় সাধের জিনিস।স্বামীর সামনে দু-একবার পরে সেজেগুজে ঘন্টাখানেক হাঁটাহাঁটির পরেই সযত্নে আলমারিতে তুলে রেখেছিল। আজ বিকালের শুরুতেই স্বচ্ছ পলিথিনে মোড়ানো শাড়িটা সূচিদের ঘরে নিয়ে এলো।বাচ্চাদের মতো যত্ন করে খাটের উপর রেখে বললোঃ” এইটা পর সূচি।তোরে ভাল্লাগব।”

সূচি আদুরে ভঙ্গিতে শাড়িটার গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। সোনা রঙা আঁচল।মনে হচ্ছে গ্রীষ্মের সোনালি দুপুরকে কেউ সুতোয় বেঁধে রেখেছে।জমিনটাও সুন্দর। মসৃণ কাপড়ের উপরে কালো-খয়েরী সুতো দিয়ে বুনোফুল আঁকা।মনে হয় যেন কলাপাতায় এক আঁচল আদুরে বুনোফুল রেখে দিয়েছে কেউ।সূচির বেশ ভালো লাগে।শাড়িতে হাত বুলিয়ে বলেঃ ” শাড়িটা অনেক সুন্দর, ভাবি।কিন্তু আমার তো ব্লাউজ নাই।তোমার ব্লাউজ আমার হবে?”

” না,ঢিলা হইব।”

” তবে?”

পাশেই চম্পা বসেছিল।সে কিছুটা ভেবে বললোঃ” আমার অনেক আগের একটা সোনালী কালার ব্লাউজ আছে।আমি তো আগে সূচির মতোই শুকনা-শাকনা আছিলাম।সূচি ওইটা মনে হয় তোর হইব।ওইটা পর।”

সাহিদা বেগম ঘরে ঢুকে চম্পার কথা শুনলেন।এক নজর শাড়িটা দেখে চম্পাকে বললেনঃ” দরকার নাই,চম্পা।এই শাড়িটা ওরে দিয়ো না।পরে ছিঁড়া-টিড়া ফেলব।ওরে দিয়া বিশ্বাস নাই।মনি তোমার শাড়ি ঘরে নিয়া যাও।আমার আলমারিতে শাড়ি আছে, ওইগুলাই পরবনি।”

সূচি দুঃখী দুঃখী মুখ করে মনির দিকে তাকায়।মায়ের তুলে রাখা শাড়ি মানেই তো সেই প্রাচীনকালের জড়ি সুতোর কাজ করা শাড়ি।এর না আছে সৌন্দর্য, না আছে রঙ,না আছে আঁচল।নকশাগুলোও যেন কেমন। কেমন ঘর-বাড়ি আঁকা,বড় বড় জঙলী ফুল,জড়ানো লতা-পাতা।এমন শাড়ি পরে সূচি ফয়সালদের সামনে যাবে? অসম্ভব।

” সমস্যা নাই, কাকি।আংটি পরাইতে আর কতক্ষণ লাগব? আপনের শাড়ি তো অনেক আগের শাড়ি।অন্যসময় পরবনি ওইগুলা।আজকে এইটাই পরুক।একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান।ছেলের বাড়ির কত মেহমান থাকব।সবকিছুর একটা নিয়ম আছে তো।চম্পা ভাবি, তুমি ব্লাউজটা দাও।চারটা বাইজা গেছে।আযানের পরেই আইসা পড়ব মেহমান।সময় আর বেশি নাই।”

মনি ভাবির কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সূচি।এই ভাবি মহল তার বিপদের বন্ধু,ছায়াসঙ্গী।এরা থাকতে কোনো শখ-আহ্লাদ অপূরণীয় থাকতেই পারে না।
তবে মাকে আজকাল খুব ভিন্ন লাগে।একটু অন্যরকম।মা বলতে চেনা-জানা যেই রূপটা চোখে ভাসে, তার চাইতে একটু আলাদা।দু’দিন যাবৎ লক্ষ করছে সূচি।আগের মতো কথা বলে না,ধমক দেয় না,শাসন করে না।খুব দরকার না হলে কথাও বলে না।ভূমিদের বাড়ি থেকে আসার পর থেকেই এই অবস্থা ঘরের।বাড়ি ফেরার পর প্রথমে খুব একটা চোখে না পড়লেও রাতের মাঝেই মায়ের নির্লিপ্ততা খুব চোখে লেগেছে ।খুঁচিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে,কোথাও একটা গন্ডগোল আছে।কিন্তু কোথায়? এই দু’দিন সূচি কিছুই করেনি।একটা অন্যায়ও না।তবুও মা এমন করছে কেন? কেমন দূরে দূরে থাকে, কথা বলে না,ধমক দেয় না,রাগ করে না,টেনে চুল বেঁধে দেয়,বারবার গোসলের তাগাদা দেয় না,খাওয়ার সময় প্লেটে জোর করে তরকারি তুলে দেয় না।মাকে দেখলে মনে হয় যেন মা আগাগোড়া বদলে গেছে।সূচির দিকে ভালোভাবে তাকায় না পর্যন্ত।কী করেছে সূচি? ভাবতে ভাবতে কপালের চামড়ায় চার-পাঁচটা ভাঁজ পড়লো তবু দোষ খুঁজে পায় না মেয়েটা।মায়ের নির্লিপ্ততাই খুব ভাবাচ্ছে।কেমন অস্বস্তির মাঝে ফেলে দিচ্ছে।মায়ের এই রূপ সূচি কখনো দেখেনি।

” সূচি, মুখ উঁচা কর।সাজায়া দেই।”

রত্নার কথায় ভাবনার সুতোরা পটপট করে ছিঁড়ে গেল।সূচি সচেতন হয়।রত্না এসেছে সাজাতে।সাজগোজের সরঞ্জাম সূচির নেই।বহু আগের একটা কাজল, এবারের মেলা থেকে কিনে আনা হালকা গোলাপি রঙা দুটো লিপস্টিক, গরমের দিনে শরীরে দেওয়ার জন্য প্লাস্টিকের বোতলের এক বোতল তিব্বত পাউডার ও অর্ধেক শেষ হওয়া একটা ফেয়ার এন্ড লাভলী ক্রিম— সূচির এতটুকুই সম্বল। এ দিয়ে অনুষ্ঠানের জন্য সাজা যায় না।তাই তো রত্না ছুটে এসেছে।এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন,ঘরোয়া বিউটিশিয়ানের কাজটা রত্না নিজেই করবে।সূচি মুখ উঁচু করে। একটু তেলতেলে ত্বক।রত্না সন্তুষ্ট হয়।একটুখানি পাউডার দু-আঙুলে নিয়ে আলতোভাবে মাখে বান্ধবীর নরম দুটো গালে।

_________________________________

রতন পাটোয়ারী বেশ রসিয়ে কথা বলতে জানেন।যেকোনো উত্তাল কথার মাঝে তার দু-একটা বানী আগুনের মাঝে পানির কাজ করে। লোকে বলে কথায় চিড়া ভিজে না।কিন্তু রতন শেখ শুধু চিড়া ভিজানো নয় চিড়াকে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।চামড়ার মুখ দিয়ে কত উত্তাল পরিস্থিতি তিনি ঠিক করেছেন তা গুনে শেষ করা যায় না।
রতন পাটোয়ারী রসালো কথায় ফুলে-ফেঁপে উঠছেন রোমেলা বানু।তারা পারিবারিক বন্ধু।রতন পাটোয়ারী সেই কাজী আকরামের আমলের গল্প করছেন।কাজী আকরাম খুব চালাক ছিলেন,পড়াশোনায় ভালো ছিলেন শুধু পড়ায় কোনো মন ছিল না তাই জজ-ব্যারিস্টার হতে পারেনি।তার শোর্য-বীর্য আগের আমলের রাজা-বাদশাহদের চেয়ে কম ছিল না। এসব গল্প করে মমিন শেখকে বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন,মেয়েকে রাজপ্রাসাদে দিচ্ছে মমিন শেখ।কাজী বাড়ি বউ নয় তাদের রাজ্যের রানী নিচ্ছে। অবশ্য গল্প নয়, নিছক চাটুকারিতা। তাতেই গর্বে বুকটা ফুলে উঠছে রোমেলা বানুর। এ তার বড় পাওয়া।

ফয়সালের মামা রমিজ শিকদার রতন পাটোয়ারীকে থামিয়ে দিয়ে বললেনঃ” ভাই সাহেব, আমাদের গল্প তো অনেক হলো।এবার আপনাদের রাজকন্যাকে ডাকুন।বুবুর মুখে খুব সুনাম শুনেছি।একটু দেখি।শুভ কাজে দেরি করতে হয় না।”

মমিন শেখ চট করে উঠে দাঁড়ান। বিনয়ী ভঙ্গিতে বলেনঃ ” আপনেরা বসেন, আমি সূচিরে আনতাছি।”

মমিন শেখ দ্রুত পায়ে ভিতরে চলে গেলেন।কাজী বাড়ি থেকে পাঁচজন এসেছে।রোমেলা বানু,হুমায়রা,ফয়সাল,রমিজ শিকদার ও ফয়সালের খালু বাশার হক।অন্তু আসার কথা ছিল।কিন্তু স্কুলে খুব চাপ এখন।টেনের মডেল টেস্ট পরীক্ষা চলছে।কিছুতেই ছুটি মিললো না।তাই আসতে পারেনি।অবশ্য রোমেলা বেগমও খুব জোর করেননি।ছোট ভাইয়ের বিয়ের কাজে অবিবাহিত বড় ভাই তদারকি করছে।গ্রামের রক্ষণশীল সমাজে দৃশ্যটি বড়ই দৃষ্টিকটু।
রোমেলা বানুর পাশের চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে ফয়সাল।সাদা-কালো পাঞ্জাবীতে ফয়সালকে পুরো নতুন জামাইয়ের মতো লাগছে।রোমেলা বানুর চোখ জুড়িয়ে যায়।তিনি ডানহাত দিয়ে আলতো স্পর্শ করেন ছেলের হাতে।মাথা নিচু করে ফয়সালের কানের কাছে ফিসফিস করে বলেনঃ” কোনো সমস্যা হইতাছে, আব্বা?”

” না,আম্মা।”

” আসার আগে তোমার ঘরের খাটের নিচে একটা ব্যাগ দেখছিলাম।তোমার অনেকগুলা শার্ট-প্যান্ট ভরা আছিলো। কী দরকারে ব্যাগ গোছাইছিলা?”

ফয়সালের গলা শুকিয়ে আসে ধরা পড়ার ভয়ে।বুক ধরফর করে।আম্মা কি সব জেনে গেল? বুকের ভেতর ধরাস ধরাস শব্দ হচ্ছে।ফয়সাল জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বলেঃ” কাপড়গুলো ইস্ত্রির দোকানে দেওয়ার দরকার ছিল আম্মা।তাই ব্যাগে ভরে রেখেছিলাম।”

” ওহ,আচ্ছা।”

ফয়সাল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। যাক বাঁচা গেল।মা বুঝতে পারেনি।

মিনিট দশেক পরে সূচি এলো।কলাপাতা রঙের শাড়িতে মোড়ানো শরীরটাকে গুটিয়ে বাবার পিছনে টুকটুক করে হেঁটে এলো।এলো লজ্জাবতী লতার মতো লজ্জায় মাথা নুইয়ে। মাথায় একহাত ঘোমটা। ঘোমটার বাইরে শ্যাম্পু করা দু-একটা চুল অবাধ্যের মতো সবাইকে দেখছে।দু’হাতে লাল-খয়েরী কাঁচের চুড়ি, বড় বড় চোখ দুটোর সীমান্তে ঘন অন্ধকারের মতো কালো কাজল।বাঁশপাতার মতো সরু ঠোঁট দুটোতে হালকা গোলাপী রঙ জড়ানো।জীবনে প্রথম বারের মতো এতো সেজেগুজে, এতো আড়ম্বরের চাদরে মুড়িয়ে অবশেষে সূচি এলো।ওই তো কালো কাঠের চেয়ারে বসা সূচির বহু আকাঙ্ক্ষিত পুরুষ,বহুদিনের স্বপ্ন,হাজার আবেগ,লক্ষ কল্পনা।সূচির প্রথম,দ্বিতীয়, তৃতীয়,সর্বশেষ প্রেম।কাজী ফয়সাল।সূচি চোখ নামিয়ে নেয়।ফয়সালও একপলক তাকিয়েছিল।টেবিলের ওপ্রান্তে মুখোমুখি চেয়ারে বসতেই ফয়সাল মুখ ফিরিয়ে নেয়।মাথা নামিয়ে বিরবির করেঃ” কালো ভূত।”

সূচির চেয়ারের কাছেই মাঝের ঘরের দরজা।পর্দার ওপাশে দাঁড়ানো পাঁচ-ছয়জন।চম্পা,জয়া,মনি,রত্না,সাহিদা বেগম, সবাই পর্দার আড়াল থেকে দেখছে।সূচির কানে জয়ার ফিসফিসানি ভেসে আসে।ফিসফিস করে বলছে,” সালাম দে,সূচি।তাড়াতাড়ি সালাম দে।”

সূচি জ্বিভে কামড় দেয়।টেনশনে সালামটাই বাদ পড়ে গেল।চেয়ারে বসে মৃদু স্বরে সালাম দেয় সবাইকে,”আসসালামু আলাইকুম। ”

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম।ভালো আছো মা?”— রমিজ শিকদারই প্রথমে মুখ খুললেন।

” জ্বি,আলহামদুলিল্লাহ। ”

” নাম কী তোমার?”

” সূচনা আক্তার সূচি।”

” বাহ,বেশ সুন্দর নাম।তুমি নাকি পরীক্ষা দিয়েছো এবার?”

” জ্বি।”

” রেজাল্ট কবে দিবে,জানো কিছু?”

সূচি কলের পুতুলের মতো মাথা নাড়ে।শাড়ির আঁচলে হাত কচলায়।ভিতর থেকে নার্ভাসনেস ঠ্যালা-ধাক্কা দিয়ে বাইরে আসছে।সূচির পা কাঁপে থরথর।টেনশনের সময় এই পা দুটো খুব বেইমানি করে।কিছুতেই স্থির থাকে না।

এরপরের পালা বাশার হকের।তিনি প্রশ্ন করেনঃ” তুমি রান্নাবান্না, ঘরের কাজ জানো?”

সূচি উত্তর দেওয়ার আগেই হো হো করে হেসে উঠলেন রমিজ শিকদার। বোন জামাইয়ের কনুইয়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললেনঃ” এখন আর এগুলো জিজ্ঞেস করার চল নেই দুলাভাই।বাবার বাড়িতে রেঁধে-বেড়ে খাওয়ার সময় কোথায় মেয়েদের? তাছাড়া,কোন বাবা-মা এখন মেয়েকে রান্নাঘরে যেতে দেয়? আমার মেয়েকেও আমি যেতে দেই না।রান্নাবান্না বলতে শুধু ভাত,আলু আর দুটো ডাল সিদ্ধ করতে জানে।সূচিকেও বুবু, শিখিয়ে নেবে নিজের মতো করে।তাই নারে বুবু?”

রোমেলা বানু মাথা নাড়েন।নরম গলায় বলেনঃ” আমি শিখাইতে পারুম।তবু আগে থেকা শিক্ষা থাকলে ভালো হয় একটু।”

” তুমি চা বানাতে জানো তো মা?”

রমিজ শিকদারকে খুব ভালো লাগলো সূচির।একটু যেন সাহসও পেল।ঘোমটার আড়ালে মাথা তুলে বললোঃ” জ্বি।চা আমি খুব ভালোই বানাই।আপনার হাতের চা’টাও আমিই বানিয়েছি।মজা হয়েছে?”

সূচি বরাবর মিশুক।সূচির প্রশ্ন শুনে হেসে ফেললো হুমায়রা।পর্দার আড়াল থেকে মায়ের গলা কানে এলো সূচির।বিরক্তি নিয়ে বলছেনঃ” বেশি কথা কয় মাইয়াটা।বেলেহাজ ভাববো না এখন।”

কিছুই মনে করলেন না রমিজ শিকদার। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেনঃ” হ্যাঁ, বেশ ভালো হয়েছে চা।তবে আমার জন্য একটু বেশি মিষ্টি হয়েছে।আমি এক চামচ চিনি খাই।তোমার পরীক্ষা কেমন হলো?”

” আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।”

” তোমরা যেন কয় বোন?”

” দুই বোন।”— ভূমির প্রসঙ্গ আসার আগেই মুখ খুললেন রোমেলা বানু।গলা পরিষ্কার করে বললেনঃ” আমার একটা কথা আছিলো, মমিন ভাই।”

” কী ভাবি?”

রোমেলা বানু সচেতন চোখে সূচির দিকে তাকান।ইতস্ততভাবে প্রশ্ন করেনঃ” সূচির সামনেই বলব?”

মমিন শেখের আত্মা কাঁপে? এই সময়ে কী বলবে?সূচিকে কি ভালো লাগছে না? ছেলে বিয়ে করাবেন না? তিনি বোকার মতো মাথা নেড়ে বলেনঃ ” আচ্ছা,বলেন।”

বক্তৃতা দেওয়ার মতো প্রস্তুতি নেন রোমেলা বানু।ঘরের সব চোখগুলো তার দিকে চেয়ে আছে।পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলা মহলের মনোযোগ এদিকে।মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন।সবার চোখ-কান সচেতন। কয়েক সেকেন্ড নিরব থাকার পর রোমেলা বানু বললেনঃ” আমার ইচ্ছা বিয়াটা আজকেই হোক।ঘরোয়া পরিবেশে বিয়াটা সাইরা রাখমু।তারপর একটা ডেট ঠিক কইরা, সবাইরে দাওয়াত দিয়া বউ ঘরে তুলুম।আজকে শুধু আঙটি না,বিয়াটাও হোক।আপনাদের কী মত?”

সবাই অবাক।সূচি থেকে শুরু করে রত্না পর্যন্ত সবাই।এমনটা কেউ আশা করেনি।রমিজ শিকদার কপাল কুঁচকে বোনকে প্রশ্ন করে ঃ” ভেবে বলছো,বুবু?”

” হ,আর ভাবাভাবির কিছু নাই।”.

রতন পাটোয়ারী হাত কঁচলে বলেনঃ” ভাবি, তাড়াতাড়ি হইতাছে না সব?”

” না,ভাই।তাড়াতাড়ি হইতাছে না, ঠিকটাই হইতাছে।আপনেগোরে বুঝায়া কই।দেখেন,ভূমি বিয়ার আগের দিন পলায়া গেছিলো।ঠিক কইতাছি না?”

মমিন শেখ মাথা নাড়েন।হ্যাঁ, সত্যি বিয়ের আগের দিনই পালিয়ে গিয়েছিলো ভূমি।

” আমি কইতাছি না সূচিও এমন কাজ করব।তবুও ভাই,আমি মনে শান্তি পাইতাছি না।ভূমিও সবার চোখে ভালো আছিলো।কেউ কি ভাবছিলো ওয় এমন কাজ করব? কার মনে কী,তা তো কওন যায় না।তাই বলতাছিলাম আজকেই বিয়াটা পড়ায়া দেন।তারপর নাহয় সব অনুষ্ঠান হইব।আমি আপনেগোরে এইটুকু আশ্বাস দিতে পারি,মেয়ে তুইলা নেওয়ার আগে আমার ছেলে এই বাড়িতে আইসা থাকব না।সবকিছু আনুষ্ঠানিকভাবেই হইব,শুধু একটু নিরাপত্তার জন্য বিয়াটা আজকে হোক।কী বলেন মমিন ভাই?”

মমিন শেখের মাথায় কথাটা গেঁথে যায়।সত্যিই তো, ভূমি যে এমন কাজ করবে তা কেউ আন্দাজও করতে পারেনি।সূচি যে করবে না তার নিশ্চয়তা কী? আগের গরু যেভাবে যায়,পিছেরটাও সেভাবেই যায়— এই মতাদর্শেই তো বিশ্বাসী মমিন শেখ।কিন্তু, কিন্তু এখন কী করে বিয়ের ব্যবস্থা হবে? কাজী? মমিন শেখ বলেনঃ” ভাবি আপনার কথাই মানলাম।কিন্তু কাজীর ব্যবস্থা?”

” ফয়য়ালের কোনো বন্ধুরে খবর দিয়া আনাইতাছি।আপনে রাজি কি না ওইটা বলেন।”

স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করার প্রয়োজনবোধ করলেন না মমিন শেখ।মাথা নেড়ে বলেনঃ” আলহামদুলিল্লাহ, আমরা রাজি।”

” সূচি তাইলে ঘরে যাক। দুই ঘন্টার মইধ্যে সব হইব ইনশাআল্লাহ। ”

সূচি কাঁপে থরথর করে।উঠার শক্তি পায় না।ঠিক শুনলো তো? আজকেই বিয়ে? সত্যি? ওই পাঁচ হাত দূরের মানুষটাকে পাওয়ার দিন আজকে? ফয়সালের সাথেই বিয়ে হবে তবে?আজ সূচির শূন্য ঝুলি পূর্ণ হওয়ার দিবস।সূচির চোখ ফেটে জল আসে।এ জল আনন্দের,বহু দিনের স্বপ্নকে মুঠোয় ধরার আনন্দ।অবশেষে আল্লাহ মুখ তুলে চাইলেন।ফয়সালের ওই কোঁকড়া চুলে হাত বুলিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন সূচির বহুদিনের।নোনাজলে কাজলের সীমানা ভেঙে যায়।লেপ্টে যায় সূচির কাজল।গালের উপরের ফেসপাউডার মুছে যায়।আজ সূচির বিয়ে।সূচি উঠতে পারে না।বাবার হাত টেনে চুপিচুপি বলেঃ” আমাকে একটু ঘরে দিয়ে আসবে,আব্বা?”

মমিন শেখ মেয়ের কাঁধ জড়িয়ে ধরেন সযত্নে।সূচির এলোমেলো পায়ের সাথে পা মিলিয়ে মাঝের ঘরে পৌঁছে যান।সাহিদা বেগমকে তড়িঘড়ি করে আদেশ দেনঃ” তাড়াতাড়ি পোলাও, মাংস রান্দো।মেহমানরে না খাওয়ায়া দেওন যাইব না।”

ফয়সাল বিধ্বস্ত। বাজ পড়া মানুষের মতো একভাবে বসে আছে।অচঞ্চল দৃষ্টি সামনের দিকে।মা এমন কেন করলো? বাড়া ভাতে ছাই দিলো কেন?”

” ফয়সাল,আমার লগে একটু বাইরে আয় তো।”— ফয়সালের হাত টেনে ধরে উঠে দাঁড়ান রোমেলা বানু।রমিজ শিকদার পাশ থেকে প্রশ্ন করেনঃ” কোনো সমস্যা বুবু? আমি তোমার কিছুই বুঝতে পারছি না।”

” বাড়িতে যায়া বলুমনি।কি রে ফয়সাল,উঠ।বাইরে আয় একটু।”

মাতালের মতো টলতে টলতে উঠে দাঁড়ায় ফয়সাল।মায়ের সাথে পা বাড়ায় বাইরে।কানের কাছে লক্ষ ঝিঁঝি পোকা ঝিঁ ঝিঁ করছে।ফয়সাল কিছু শুনতে পারছে না।দরজা পেরিয়ে সিঁড়িতে আসতেই রোমেলা বানু ছেলের হাত ছেড়ে দেন।কঠিন গলায় বলেনঃ” তোরে আমি জন্ম দিছি ফয়সাল।তোর মুখ দেখলেও বুঝতে পারি তোর মনে কী চলতাছে।তুই কী ভাবছিলি? তুই পলানের লেগা ব্যাগ গোছাবি,আমি ব্যাগ দেখমু আর কিছুই বুঝুমনা? চুলগুলা বাতাসে পাঁকে নাই।তোর সাথে বুঝা-পড়া বাসায় হইব।চুপচাপ বিয়া করবি।আর নাহয় এখনি বল,তোরে ত্যাজ্য কইরা দেই।কি রে দিমু?”

বোম ফাটলেও বোধহয় আশেপাশে এতো আন্দোলন হয় না।ফয়সালের চারপাশ ঘুরছে।মাথা ঘুরছে,চোখে ঘোলা দেখছে।চোখ জ্বলছেও খুব।একটু কাঁদতে পারলে ভাল হতো।এখানে কাঁদার মতো নিরিবিলি জায়গার বড্ড অভাব।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here