শুভ্র নীলের প্রেমপ্রহর ২ পর্ব-১৫

0
1818

#শুভ্র_নীলের_প্রেমপ্রহর_২
লেখক-এ রহমান
পর্ব ১৫

সুখ অতি আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। অকল্পনীয় কোন সুখ যখন হুট করে এসে ধরা দেয় তখন মানুষ অনুভুতিশুন্য হয়ে যায়। ইভানের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনই হয়েছে। কাল রাতের ঈশার কথাটা এখন অব্দি তার বিশ্বাস হচ্ছে না। রিপোর্টটা হাতে নিয়েও মনে হয়েছে এটা স্বপ্ন। চোখ খুললেই শেষ হয়ে যাবে। কারন এমন স্বপ্ন অনেকবার দেখেছে সে। ঘুম ভেঙ্গে হতাশায় কত রাত নির্ঘুম পার করেছে। সেসব কথা কেউ জানে না। এমনকি ঈশাও না। ভেতর থেকে প্রশান্তির একটা শ্বাস ছাড়তেই চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়লো এক ফোঁটা পানি। দ্রুতই সেটা মুছে ফেললো ইভান। পেছন ফিরে একবার ঈশার দিকে তাকাল। গুটিসুটি মেরে কম্বলে নিজেকে আবৃত করে ঘুমাচ্ছে। আধ খোলা চূলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে বালিশে। জানালার কাচ ভেদ করে আলোটা মুখে পড়ায় বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পড়েছে। ইভান একটু সামনে এসে দাঁড়ালো। আড়াল করে ধরল। ভালো করে নিজের চোখ মুছে নিলো। কোনভাবে এই চোখের পানি যদি ঈশা দেখত তাহলে কাল রাতের মতো ঠিক আবারো হেসে অস্থির হয়ে পড়ত। ঈশার কথা শুনেই ইভান রাতে কেদে ফেলেছিল। অনেক সময় ধরে কেঁদেছে। জীবনে অনেক ঝড় ঝাপটা গেছে কিন্তু সে কখনো কাদেনি। দাঁতে দাঁত চেপে সমস্ত কষ্ট সহ্য করেছে কিন্তু কখনো হার মানেনি। কাল রাতের অনুভূতিটা এতটাই সূক্ষ্ম ছিল যে সোজা গিয়ে বুকের ভেতরে আঘাত করেছিলো। অসহ্যকর একটা সুখময় ব্যাথা। ইভান সন্তানের আশা ছেড়েই দিয়েছিলো। তার কাছে ঈশাই সব। এতদিন পর আবার ঈশাকে পেয়ে সে নিজেকে সুখী ভাবতে শুরু করেছিলো। নিজের সব কষ্ট ভুলে গিয়ে জীবনটাকে উপভোগ করতে শুরু করেছিলো। কিন্তু ঠিক সেই সময় সৃষ্টিকর্তা তাকে অনাকাঙ্ক্ষিত উপহারটা দিলো। চোখ বন্ধ করে ফেললো সে। ঠিক সেই সময় হালকা কুয়াশার আবরন ভেদ করে এক ফালি মিষ্টি রোদ ঝুপ করে পৃথিবীর বুকে পা রাখল। সোনালী রোদ্দুরের মিষ্টতায় সতেজ হয়ে উঠলো মূর্ছা যাওয়া প্রকৃতি। জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি স্থির করলো সে।
–আবার কাদছ নাকি?

গভীর ভাবনায় ডুবে থাকা ইভান আচমকা শব্দ শুনে ঘুরে তাকাল। ঈশাকে এভাবে মুখে হাত দিয়ে হাসতে দেখে বেশ অপ্রস্তুত হল। লজ্জাও পেলো কিছুটা। আচমকা এমন খুশীর খবর শুনে কাল রাতে নাহয় কেদেছিল মন ভরে। সেটা নিয়ে তাই বলে এখন হাসবে? এটা কেমন আচরন। সরু চোখে তাকিয়ে বলল
–হাসছ কেন?

ঈশা কোনরকমে হাসি থামিয়ে বলল
–এমনি।

ইভান বিরক্ত হল। সেখান থেকে চলে গেলো ওয়াশ রুমের দিকে। ঈশা তখনই বলে উঠলো
–তুমি ঘুমাওনি সারারাত?

ইভান থেমে গেলো। পেছনে না তাকিয়েই বলল
–নাহ!

ঈশা আর কোন কথা বলল না। ইভান ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এলো। ঈশা বিছানায় গোল হয়ে বসে কিছু একটা ভাবছে। ইভান হাতমুখ মুছে কাছে এসে বসল। বলল
–কি ভাবছ?

ঈশা একটু চিন্তিত ভঙ্গীতে বলল
–আচ্ছা সবাইকে কথাটা কিভাবে বলবে? আমার তো ভাবতেই কেমন অসস্তি হচ্ছে।

ইভান ভ্রু কুচকে তাকাল। কথাটা মাথায় ঢুকতেই ঠোঁট চেপে হেসে বলল
–আমি কি জানি?

ঈশা যেন আকাশ থেকে পড়লো। বলল
–তুমি কি জানো মানে? আমি ভাবছি সবাইকে কিভাবে জানাবো আর তুমি বলছ তুমি জানো না? অদ্ভুত মানুষ।

ইভান হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল
–আমি তো আর প্রেগন্যান্ট না তাই আমার জানার কথাও না। তুমি কিভাবে সবাইকে জানাবে সেটা তোমার ব্যাপার। আমি এসব নিয়ে কি বলবো বল।

ঈশা ভীষণ রেগে গেলো। এক হাতে ইভানের মুখ ঘুরিয়ে বলল
–আমি প্রেগন্যান্ট কিন্তু বাচ্চার বাবা তুমি। তাই তোমাকেও এসবের দায়ভার নিতে হবে। এভাবে গা ছাড়া ভাব নিয়ে কথা বলবে না একদম।

ইভান একটু ভেবে বলল
–সবাইকে তো আলাদা করে বলা সম্ভব না। এক কাজ করি। একটা সমাবেশের আয়োজন করি। ওখানেই এনাউন্স করে দেয়া যাবে। তাহলেই আর এসব নিয়ে টেনশন করতে হবে না।

ঈশা রেগে গেলো। এরকম সিরিয়াস একটা বিষয় নিয়ে ইভানের হেয়ালি কথা মোটেই ভালো লাগলো না তার। পাশ থেকে বালিশ তুলে ইভান কে মারল। ইভান হেসে ফেললো শব্দ করে। ঈশা আরও বেশী রেগে গেলো। মুখ লাল হয়ে গেলো তার। ইভান শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ঈশাকে। ঈশা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দমে গেলো। ইভান আবারো হেসে বলল
–তুমি এতো বোকা কেন? তোমার কি মনে হয় ইলহাম ভাইয়া এখনো কাউকে বলেনি? এসব ছোট বিষয় নিয়ে এতো ভাবার কিছুই নেই। আর আমি তো বলেছি আমি জতদিন বেঁচে আছি সব ভাবনা আমার। তোমাকে কোন কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না। তুমি শুধু ভালো থাকো।

ঈশা ইভানের বুকে মাথা রেখে বলল
–জানি। আর জানি বলেই তো নিশ্চিন্তে থাকি।

————-
কিছুটা বেলা হতেই সারা বাড়িতে হইচই শুরু হয়ে গেলো। সবাই চলে এসেছে। খুশীর আমেজ চলছে বাড়ি জুড়ে। কি এক জরুরী কাজে ইভান বাইরে গেছে। ঈশাকে বলে গেছে খুব একটা সময় লাগবে না। তাড়াতাড়ি চলে আসবে। আর সে যাওয়ার পরেই বাড়ি ভর্তি হয়ে গেছে। সবার আসার কথা সে জানে না। এমনিতেই ইভানের জন্মদিনের জন্য সারপ্রাইজ দিতে সবার আসার কথা ছিল। তার উপর কাল রাতেই ইলহাম ইলুকে ফোনেই সব জানিয়ে দিয়েছিলো। ইলু কথাটা কোনভাবেই নিজের মধ্যে রাখতে পারেনি। সাথে সাথেই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। সবাই খুব খুশী। তাদের কথার তোড়ে ঈশা ভীষণ অপ্রস্তুত হচ্ছে। লজ্জায় তার মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। মাথা নিচু করে সোফায় বসে আছে। ঈশার মা রান্না ঘরে। তিনি আজ সবাইকে রান্না করে খাওয়াবেন। ইভানের মা ঈশার পাশে বসে আছেন। তাকেও আজ বেশ হাসিখুশি লাগছে। এতো কিছুর মাঝে সায়ান অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলো
–ইভান কখন আসবে? আজও অফিসে যেতে হল? এটা কেমন কথা?

ঈশা নিচের দিকে তাকিয়ে মিনমিনে কণ্ঠে বলল
–একটু জরুরী কাজ আছে তাই যেতে হল। তাড়াতাড়ি চলে আসবে।

ইলু সায়ান কে বলল
–তুমি একটা ফোন করত ভাইয়াকে। তাড়াতাড়ি আসতে বল। তাহলেই কাজ একটু তাড়াতাড়ি শেষ করবে।

সায়ান ফোন বের করে ইভানের নাম্বারে ডায়াল করলো। কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর ইভান ফোনটা ধরল। আশে পাশে অনেক শব্দ। ইভান বলল
–এতদিন পর মনে পড়লো আমার কথা। কি খবর তোর?

সায়ান কঠিন সরে বলল
–আমার খবর তোকে এখন নিতে হবে না। আমি তোর বাসায় বসে আছি খবর নিতে। কোথায় তুই?

ইভান একটু ভ্রু কুচকাল। বলল
–আমার বাসায় তুই?

সায়ান হাসল। দুষ্টুমির সরে বলল
–শুধু আমি না বন্ধু সবাই আছে। শুধু তোর অপেক্ষা। তাড়াতাড়ি আয়।

ইভান মৃদু হাসল। বলল
–আমি একটু ব্যস্ত। একটা জরুরী কাজ আছে। শেষ করেই আসছি। খুব বেশী দেরি হবে না।

কথা শেষ করে ইভান ফোন পকেটে রেখে এগিয়ে গেলো। ইলহামের চেম্বারের সামনে দাড়িয়ে ভাবল ঢুকবে কিনা। হাতের ঘড়িটা দেখে নিলো। এই সময়েই তো ইলহাম তাকে আসতে বলেছিল চেম্বারে দেখা করতে। তাই আর সময় না নিয়েই দরজা খুলে ঢুকে পড়লো। ইলহাম নিজের কাজে খুব ব্যস্ত। খেয়াল করেনি। ইভান বলল
–ভাইয়া আসবো?

ইলহাম চোখ তুলে তাকাল। উতফুল্য কণ্ঠে বলল
–আরে ইভান আয়। বস।

ইভান চেয়ারে বসে পড়তেই ইলহাম বলল
–শুভ জন্মদিন।

ইভান হাসল। বলল
–ধন্যবাদ। আজকে সবাই বাসায়। তুমি যাবে আমার সাথে? অনেকদিন সবাই একসাথে সময় কাটানো হয়না।

ইলহাম একটু ভাবল। কিছুটা সময় নিয়ে ভেবে বলল
–তাহলে আজ দুপুরের লাঞ্চটা সবার সাথেই করি। ব্যস্ততার কারনে পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারিনা। আজ মিস করবো না। কাজ বাদ।

দুজনেই হেসে ফেললো। হাসি থামিয়ে বেশ গম্ভীর হয়ে গেলো ইলহাম। বলল
–তোর সাথে খুব জরুরী কিছু কথা ছিল।

ইভান ভ্রু কুচকে ফেললো। ভেতরে একটা অজানা ভয় চেপে বসল। ঈশাকে নিয়ে আবার নতুন কোন ঝামেলা নয়তো? এই খুশীর খবর টা শোনার পর থেকেই ঈশার মাঝে একটা অন্যরকম পরিবর্তন লখ্য করেছে সে। এতো খুশী এর আগে কখনো দেখেনি। আবার নতুন করে কোন ঝামেলা হলে ইভান কিভাবে ঈশাকে সামলাবে? ইভান বিচলিত হয়ে বলল
–ঈশাকে নিয়ে নতুন কোন কমপ্লিকেশন নয়তো ভাইয়া? সব ঠিক আছে তো? ঈশা কি সুস্থ আছে? আমাকে একদম সত্যিটা বল ভাইয়া।

চলবে……
(রিচেক করা হয়নি ভুলভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here