#শেষটা_সুন্দর
#পর্ব_১৫
#নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা
হঠাৎ কাউকে তালি বাজাতে শুনলাম এবং সাথে এও শুনলাম সে বলছে যে – বাহ্ । এটা শোনার পর রেহান আমার থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো এবং আমিও । তাকিয়ে দেখি কথাটা আর কেউ নয় মিনহাজ বলছে ।
মুগ্ধতার সাথে কথা বলছিলাম । তখনি কারো কটাক্ষ শুনতে পেলাম । সেই ব্যাক্তিটি মিনহাজ ছিল । ও এরপর আমার কাছে এসে বলতে লাগলো , ভালোবাসা শিখাস , তুই ওকে । ভালোবাসা শিখাস তাই না ? ওই তোরা দেখ , এই শালা মুগ্ধতারে ভালোবাসা শিখায় । আমি বললাম , দেখুন আপনি আমাকে তুই-তোকারি করবেন না । মিনহাজসহ ওর দলের ছেলেরা আমায় ধাক্কা দিল এবং বললো , কি করবি তুই ? তোরে তুই তোকারি করমু নাতো আপনি আপনি করমু ? এক পর্যায়ে ওরা আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করতে শুরু করলো এবং গায়ে হাত তুললো ।আমার কোনো কথাই শুনলো না । আমায় মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দিলো । মুগ্ধতা ওদের আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু ওরা কেউ মুগ্ধের কথা শুনেনি । আমার ঠোটসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান কেটে গিয়ে সেখান থেকে রক্ত ঝরছিল । এরপর এক পর্যায়ে আমার ফ্রেন্ডরা আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে । আমাকে ওরা বেধড়ক পিটিয়েছে । আমি হাটতে পারছিলাম না । যেহেতু ওরা বেশ প্রভাবশালী এবং রাজনীতির সাথে জড়িত তাই ওদেরকে কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি । আমাকে নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হবার পর আমার আর কিছু মনে নেই ।
মিনহাজের এমন ভয়ানক রূপ আমি আগে দেখিনি । ও রেহানকে কি নির্মমভাবে মারছিলো । ওর মতো নিষ্ঠুর আর নির্দয় মানুষ আমি আমার জীবনে দুটো দেখিনি । ওরা সবাই মিলে আমার সামনে রেহানকে মারতে মারতে রক্তাত্ত করে ফেলেছিলো । আমি মিনহাজের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি রেহানকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য । কিন্তু ও এতটা নির্দয় আমার কোনো কথা শুনেনি । আমি কাদতে কাদতে রেহানের বন্ধুদের কাছে গিয়েছিলাম , তারপর ওরা এসে রেহানকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলো । আমিও যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু মিনহাজ আমাকে আটকে রেখেছিলো তাই আমি যেতে পারিনি । আর রেহানের ফ্রেন্ডরাও আমাকে জানায়নি ওকে কোন হসপিটালে এডমিট করা হয়েছিল ? এই ঘটনার ৩দিন পার হয়ে গেছে । রেহান কেমন আছে ? কোথায় আছে ? আমি কিছুই জানি না । ওর ফোন বন্ধ রয়েছে এই ঘটনার পর থেকে । আমি কাউকে মুখ ফুটে জিজ্ঞাসাও করতে পারিনি রেহানের কথা। রেহানতো ক্যাম্পাসে আসাও ছেড়ে দিয়েছে । আমি চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছি । কেন জানি মনে হচ্ছে রেহানের সাথে যা ঘটেছে তার জন্য কোনো না কোনোভাবে আমি দায়ী ।
জ্ঞান ফিরে আসার পর নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করেছিলাম । কিছু ট্রিটমেন্টের পর , আমাকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছিল । পরদিন বাড়িতে এসে আমি অনেক ভাবলাম , নিজেকে অনেক বোঝালাম । মুগ্ধতাকে আমার যে করেই হোক ভুলতেই হবে । ও আমার কখনো হবে না , কখনো না । ভেবেছি মেডিকেলে ভর্তি হয়ে যাবো কারণ আমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছি আর এখন ভর্তি হওয়ার সময় আছে । আর মুগ্ধতার থেকে দূরে থাকার একমাত্র উপায় হলো মেডিকেলে ভর্তি হওয়া । তাছাড়া আমার আম্মুর অনেক দিনের স্বপ্ন আমাকে ডাক্তার হিসেবে দেখার তাই ছেলে হিসেবে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করা আমার কর্তব্য । এই কথাটা কাউকেই জানাবো না ভাবছি এমনকি রোহানকেও না । আর খালামনিকে বলেছি যে , আমি বাসায় ফিরে যাচ্ছি । মেডিকেলে চান্স পেয়েছি । কেউ জানতে চাইলে বলবে তুমি জানো না । খালামনি অনেক করে জিজ্ঞাসা করেছিল , হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের কারণ কি ? আর আমাকে কে এভাবে মেরেছে ? আরো একবার যেন আমি সবটা ভেবে দেখি । আমি বলেছিলাম যে , আম্মুর স্বপ্নটা পূরণ করতে চাই । আর আমাকে ছিনতাইকারী ধরেছিলো , তুমি প্লিজ আম্মুকে কিছু বলো না । উনি জানলে অনেক টেনশন করবে । আমি সবটা ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি । একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই রাজশাহী থেকে চলে আসি ঢাকায় আমার বাসায় । এই বাসার ঠিকানা যেহেতু রোহান জানে তাই আমি বাসাও চেঞ্জ করার ডিসিশন নিয়ে নেই । যেই ভাবা সেই কাজ । সিমটা ভেঙে ফেলেছি আর নতুন সিম নিয়েছি ।এই নাম্বারটা শুধু খালামনির কাছে আছে আর কারো কাছে নেই । ঢাকায় এসেছি ১ দিন হলো । আম্মু এমন হঠাৎ ডিসিশনে অবাক হলেও অনেক খুশি হয়েছেন । অতীতকে ভুলে আমিও চাই সবটা নতুন করে শুরু করতে । এই তিনদিনেই আমার জীবনে তোলপাড় ঘটে সবটা বদলে গিয়েছে । জানি রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকার কেটে নতুন সকাল আমার জীবনে নতুন সপ্ন নিয়ে আসবেই ।
#চলবে
#NUSRAT_TABASSUM_METHILA
[রি চেইক হয়নি।ভুলত্রুটি মাফ করবেন ]