শেষটা সুন্দর’ পর্ব-২২

0
426

#শেষটা_সুন্দর
#পর্ব_২২
#নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা

এক সাথে পর পর এতগুলো শকিং নিউজ শুনে আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি । ও আমার ইচ্ছেনুযায়ীই তো সবটা বলেছে । তবে কেন এমন অনুভব হচ্ছে ? কেন গলায় সব কথাগুলো দলা পাকিয়ে আসছে ? কেন ? আমিতো রেহানকে বলতে চাই –

হ্যাঁ , তুমি বিয়ের প্রস্তাবটা পাঠাও । শরীর জুড়ে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে চলেছে । কিছুতেই মুখ থেকে একটা শব্দও বের করতে পারলাম না । রেহান আমার দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বলল ,

রিলাক্স মুগ্ধ । তোমার তাড়াহুড়ো করতে হবে না । যতটুকু প্রয়োজন সময় নাও । তবে আমি না শুনতে চাই না ।

ঢক ঢক করে এক নিশ্বাসে সম্পূর্ণ পানিটুকু শেষ করে মনে সাহস সঞ্চার করে সব লাজলজ্জা ভুলে বলেই ফেললাম ,

রেহান আমার বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাও ।
মুগ্ধ সত্যিই বলছো? আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না ।রেডি থেকো কালই আসছি । এক সপ্তাহের মাঝে তোমায় বউ করে নিয়ে ঘরে উঠব ।

আমি লজ্জায় চোখ তুলতে পারছিলাম না । পরদিন সত্যি সত্যিই রেহান ওর পরিবার নিয়ে আমার বাড়িতে আসে এবং বিয়ের প্রস্তাব রাখে । আমার পরিবার ওকে খুব পছন্দ করে এবং আমার মতামত জানতে চায় । আমি সম্মতি জানিয়ে দেই । রেহানের আম্মু আমায় ওইদিনই চুড়ি পরিয়ে দিয়ে যান । আর বলেন , এংগেজমেন্টটা আজকেই সেরে ফেলতে পারলে ভালো হয় । আমার পরিবার শুরুতে আপত্তি করলেও পরবর্তীতে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন । খুব অনাড়ম্বরভাবেই আমাদের এংগেজমেন্টটা সম্পন্ন হয় । এরপর রেহানের কথানুযায়ী ৫ দিন পর থেকে আমাদের বিয়ের আয়োজন শুরু হবে । খুব একটা জাকজমকপূর্ণ ভাবে নয় সম্পূর্ণ ঘরোয়াভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । আমার ও রেহানের কিছু আত্মীয় এবং বন্ধু-বান্ধবকে দাওয়াত করা হবে । কেননা হাতে সময় খুবই কম তাই বেশি ঝামেলা করতে কেউ চাইছে না । তাই কেউ আর দ্বিমত পোষণ করেনি । কতটা অল্প সময়ের মাঝে সবটা হয়ে গেল , বুঝতেই পারলাম না ।

৫ দিন পর ,

আজ আমার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান । আগামীকাল বিয়ে ও পরশু বউভাত । ভাবতেও অবাক লাগছে মিস হিসেবে আমার জীবনের শেষ দিনটি আজ ।কাল থেকেই আমি মিসেস রেহান চৌধুরী । ভাবতেই শরীরজুড়ে শিহরণ বয়ে চলেছে । হলুদের জন্য আমার সাজ কমপ্লিট । কাচা হলুদ আর হালকা টিয়ে রঙের মিশ্রণের অসম্ভব সুন্দর একটা শাড়ি সাথে ফুলের গহনা , ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চোখে কাজল । এইতো আমার সিম্পল সাজ । এর মাঝেই রেহান কল করেছে এবং কয়েকটা পিক চেয়েছে । আমি বললাম ,

কাল আসছি তো তখন মন ভরে দেখো। ও জবাবে বলেছে ,

আজকেরটা আজকে আর কালকেরটা কালকে দেখা যাবে ।
কি আর করা জনাবের কথানুযায়ী ও আজ্ঞানুযায়ী তাই করলাম । পিক পাঠানোর বেশ কিছুক্ষণ পর রেহান একটা অডিও-ক্লিপ সেন্ট করলো । আমি সেটা প্লে করে দিলাম ,

” এটা কি করেছিস পাগলি ? তোকে এতো সাজতে কে বলেছিল ? এখন যদি কেউ তোকে নিয়ে পালিয়ে যায় তবে আমার #শেষটা_সুন্দর করবে কে ? বলতে পারিস ? কিংবা ধরেনে যদি আমি নিজের ওপর থেকে সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি , পারবি তো সামলাতে ? ভালোবাসি মায়াবতী । তোকে বড্ড বেশি ভালোবাসি । আর যে অপেক্ষা করতে পারছিনা , এই অপেক্ষার খরতাপ যে আর সইতে পারছিনা । তোকে দেখেতো আমার চক্ষুদ্বয় স্থির হয়ে গেছে , কিছুতেই তোর থেকে নজর সরাতে পারছিনা । চল না এক্ষুনি , এই মুহূর্তে বিয়েটা সেরে ফেলি । ”

অডিও-ক্লিপটা এই পর্যন্ত ছিলো । আমি যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম । ও যেন ওর প্রতিটি কথার দ্বারা আমার মনের ভেতরটাকে স্পর্শ করে নাড়িয়ে দিয়েছে । এ এক অদ্ভূত অনুভব , যা পুরো শরীরজুড়ে অন্যরকম ছোঁয়া দিয়ে যায় । আর কিচ্ছুটি ভাবতে পারছিনা , বেশ বুঝতে পারছি আমার নাক-কান গরম হয়ে উঠেছে লজ্জায় । এবার ফোন বেজে উঠলো । আমি কম্পিত হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম ,

চলো না মুগ্ধ , আজই বিয়েটা করে ফেলি । আমি মৃদু হেসে বললাম ,

আর কিছুক্ষণ পরতো আসছোই বিয়ে করতে ।

দেখতে দেখতে হলুদের প্রোগ্রাম শেষ হয়ে গিয়েছে । কাল এ বাড়িতে মেয়ে হিসেবে আমার শেষ দিন এরপর আমি অন্য বাড়ির বউ । খুব কষ্ট লাগছে । বলে রাখা ভালো , আমার বিয়ের সম্পূর্ণ আয়োজনটাই খালামনির বাসায় হচ্ছে কারণ রেহানের বাসা থেকে খালামনির বাসায় যাতায়াতে সময় কম লাগে । আর আমার বাড়ি রাজশাহীতে , এছাড়া এতোদূর থেকে যাতায়াত করাটা বেশ কষ্টসাধ্য । আমার আব্বু-আম্মুও আমার সাথেই ঢাকায় ছিলেন তাই তাদেরও কোনো অসুবিধে হয়নি । রেহানদের ফ্ল্যাট গতমাসে কমপ্লিট হয়েছে । ওরা ফ্ল্যাটে উঠেছে আজ ১৩ দিন হলো । ও আমাদের রুমটা সাজানোর জন্য সব ফার্নিচার কেনার আগে আমার সাথে আলোচনা করে নিয়েছে । আমাদের দুজনের পছন্দেই রুম সাজানো হচ্ছে । এই উছিলায় রোজ রেহান আমার সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে কাটিয়ে দিয়েছে । ব্যাপারটা যে আমার ভালো লাগেনি তা কিন্তু নয় । আর আমার ইউএসএ যাওয়া নিয়ে রেহানের বিন্দু পরিমাণ দ্বিমত নেই তবে আমিই এখন আর যেতে চাইছি না । অনেক করেছি পড়াশোনা আর ডিগ্রির প্রয়োজন নেই আপাতত । দেশেই কোনো একটা ভালো জব পেয়ে যাব বলে আশা করি । আমার সকল ভাবনার মাঝে জল ঢেলে দিয়ে চলে এসেছে আমার কাজিনরা । আমাকে পচানো ছাড়া এদের আর কোনো মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আমার মনে হয় না । বিয়েবাড়িতে এতো কাজ থাকতেও এরা আর কাজ খুজে পায় না । ইতরশ্রেণির মানুষ গুলো সব । বিরক্তি নিয়েই বললাম ,

কি চাই ? সবগুলো বলে উঠলো ,
কিরে তুই মুগ্ধতা ! তোর কাছে আসার জন্য আবার কারণ দর্শাতে হবে ? নির্ঘাত তুই এখন হবু দুলাভাইয়ের সাথে প্রেম করবি । তাইতো আমরা থাকলে তোর সমস্যা । কি দিন এলো রে ! বিয়ের আগেই হবু বরকে চোখে হারাচ্ছে ।

আমি ওদের কথাগুলো শুনে বহু কষ্টে হাসি আটকে রেখে কপট রাগ দেখিয়ে বললাম ,

আজেবাজে বকা শেষ ? আমার ঘুম পাচ্ছে , যাবি তোরা এখান থেকে ?
যাক বাবা ! আমরা বাজে বকি নাকি তুই মুগ্ধতা । তা আসলেই ঘুম ঘুম পাচ্ছে তোর ? নাকি কাল সারারাত জেগে থাকবার প্রস্তুতি ?

মিথিলা বলে উঠলো । একথাটা শোনার সাথে সাথেই সবগুলো রুম কাপিয়ে হাসতে শুরু করে দিলো । আমি পারিতো সবকটাকে জুতাপেটা করে রুম থেকে বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম । তা দেখে ফাজিলগুলো হাসতে হাসতেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল । তারপর আমি দরজা আটকে শুয়ে পড়লাম । আনুমানিক প্রায় রাত ১টার দিকে ফোনটা ভাইব্রেট করতে শুরু করলো । লাফিয়ে উঠে ফোন রিসিভ করলাম ,

মুগ্ধ , ঘুমাচ্ছ ?

কথাটা শুনে রাগ যেন আমার সপ্তম আকাশ স্পর্শ করলো । বুঝতে বাকি রইল না কলটা যে আমার জনাব করেছেন । একপ্রকার চেচিয়ে বললাম ,
না তো । তুমি জানোনা আমি মশা মারছি । রাতে সবাই ঘুমিয়ে থাকে আর আমি তাদের পাহারা দেই , মশা মারি ।

আহা মুগ্ধ চটছো কেন ?
………….
কথা বলছো না যে ? রাগ করলে নাকি ?
এই রেহান সমস্যা কি তোমার ? এতোরাতে কল করেছো কেন ?
তোমায় মিস করছিলাম গো ।
এই তোমার ঢংয়ের কথা বাদ দাও তো , এখন ঘুমাও আর ফোন রাখো । আবার সকাল সকাল উঠতে হবে ।
একটু ছাদে আসবে , মুগ্ধ ?

এইকথা শোনামাত্র আমার চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেল । বলে কি এই ছেলে ? তারমানে ও কি কোনোভাবে ছাদে ? নাহ আর ভাবতে পারছিনা । আবার রেহানের কথায় ধ্যান ভাঙলো ।

কি হলো মুগ্ধ আসবে না ? ঘোর ভেঙে গেলে বলে উঠলাম ,
এ.. এত..তো র র..রাতে ছাদে কেন ? আর তুমি কোথায় , রেহান ?
মুগ্ধ তোমার এই ঘুমু ঘুমু ভয়েসটা না খুব মিষ্টি । এতোক্ষন যখন ঝগড়া করছিলে তখন তো মনে হয়েছিল খেয়ে ফেলি এই ভয়েসটা । একটা বার ছাদে এসো না প্লিজ ।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে চোরের মতো চুপিসারে রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে গেলাম । কেউ দেখলে সর্বনাশ , বিশেষ করে মিথিলা । মান ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে ছাড়বে । ছাদে গিয়ে দেখলাম জনাব আমার ছাদের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রলিং করছেন । আমার ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা আর উনাকে দেখ । খানিকটা দূরত্ব রেখেই দাঁড়ালাম আমি । বললাম ,

রেহান এসবের মানে কি ? এতোরাতে তুমি এ বাসায় কেন ?

আসার পর থেকেই লক্ষ্য করছি ও একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । ওর চাহনিতে কেমন যেন নেশা দেখতে পাচ্ছি , ঘোর লেগে যাচ্ছে আমারও । ও আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে আমার দিকে এগোতে লাগল । ও দু পা এগোয় আর আমি দু পা পেছোই । এক পর্যায়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেল আমার , আর পেছনে যাবার জায়গা নেই ।
ফলাফলস্বরূপ রেহান আর আমার মাঝের দূরত্ব নেই বললেই চলে । ওর নিঃশ্বাসের উত্তাপ এসে আমার চোখে-মুখে পড়ছে । হৃদপেশিতে অস্বাভাবিক হারে হৃদস্পন্দন শুরু হয়েছে । নিজেকে এলোমেলো লাগছে আমার । হঠাৎ রেহান আমার কোমড় শক্ত করে ধরে ওর কাছে নিয়ে দাঁড় করালো আমায় । তারপর ওর বা হাত আমার ডান গালে ছোয়ালো । একটু স্লাইড করে ওর হাতটা সরিয়ে নিলো আর ওর মুখটা আমার দিকে এগোতে লাগল । আমি ঘটনার আকস্মিকতায় চোখ বন্ধ করে নিলাম । হঠাৎ গালে খোচা খোচা কিছু অনুভব করলাম । আসলে রেহান ওর গালটা আমার গালের সাথে ঘষছে । আমি কেপে উঠলাম ওর খোচা খোচা দাঁড়ির স্পর্শে । আমার মাঝে কথা বলার সামান্য শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই । তারপর রেহান আমার থেকে সরে দাঁড়ালো । আমি জোরে জোরে শ্বাস নিতে শুরু করলাম । এতোক্ষন যেন আমার দম আটকে ছিল ।
রেহান বলতে শুরু করল ,

” খুব শখ ছিল আমার হবু বউকে নিজ হাতে হলুদ ছোয়াব । তাইতো সেই শখ পূরণ করতে চলে এসেছি মায়াবতী । ” এটুকু বলে ও আবারো আমার গালে হাত রেখে সামান্য ঝুঁকে বলল ,

আজকের এইটুকু সময়ের জন্য আমার প্রেমিকা হবে ? বেশি সময় না জাস্ট একটা ঘণ্টা সময় দাও । রাত ৩টার আগে তোমায় বাড়ি পৌঁছে দেব ।
কেন জানি রেহানকে না করতে ইচ্ছে করছিলো না তাই মাথা নাড়িয়ে ওকে সম্মতি জানালাম ।

চাঁদের আবছা আলোতে সবটা পরিষ্কার দেখা না গেলেও অনুমান করা যাচ্ছিলো । হঠাৎই আমার হাতটা আমার গালে চলে গেল ঠিক যেখানটায় রেহান স্পর্শ করেছিল । ও আমায় বেশ খানিকটা হলুদ মাখিয়েছে । আমার খুব ইচ্ছে করছিল আমার এই হাতে লেগে যাওয়া হলুদ ওকে মাখিয়ে দেই । কিন্তু এই ঘটনা শুধু ভাবনা অবধি সীমাবদ্ধ ছিল লজ্জায় বাস্তবে রূপ দিতে পারিনি । খেয়াল করলাম রেহান হাটতে শুরু করেছে তাই কোনো কথা না বাড়িয়ে ওর পেছন পেছন হাটতে আরম্ভ করলাম । আমরা বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছি । দেখলাম ওর বাইক রাস্তায় পার্ক করা । ও আমায় বাইকে উঠে বসতে বলল । ওর কথামতো বাইকে উঠে বসলাম এবং ওর কাধে আমার একটা হাত আলতো করে রাখলাম । রেহান বলল ,

আমায় বিশ্বাস করতে পারছো না , মুগ্ধ ? তোমায় জোর করবনা, চাইলে তুমি ফিরে যেতে পারো । আমি কিছুই মনে করবনা ।
ওর এসব কথা শুনে আকস্মিকতার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছি । আমি বলে উঠলাম ,

আমি তো তোমায় এসব বলিনি । আমার কোনো ব্যবহার দ্বারা আমি কি তোমায় কষ্ট দিয়েছি বা আঘাত করেছি ।

আমার কথাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে আসছে , চোখে জল টলমল করছিল । অনেক কষ্টে নিজের কান্না দমন করে রেখেছি । ও বলল ,

হ্যাঁ , তুমি আমায় দুটোই দিয়েছো কষ্ট আর আঘাত । এই তোমার চোখে জল কেন ? একেতো অন্যায় করেছো এখন আবার কাঁদছো ? আচ্ছা বলবে তুমি কেন আমায় শক্ত করে ধরে বসছো না ? তুমি এভাবে বসলে আমি কি স্পিড তুলতে পারব ?

#চলবে

#NUSRAT_TABASSUM_METHILA

[রি চেইক হয়নি। আজকের লিখাটি বড্ডো অগোছালো । তার জন্য দুঃখিত । ভুলত্রুটি মাফ করবেন । ২ দিন গল্প না দেওয়ার জন্য দুঃখিত ।হ্যাপি রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here