#শেষটা_সুন্দর
#পর্ব_২৩
#নুসরাত_তাবাস্সুম_মিথিলা
আমার চোখ থেকে তখনো টপ টপ করে জল পড়ছিল । ওর কথা শেষ হতেই আমি অবাক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম অথচ তার কোনো ভাবাবেগই নেই । দুহাতে চোখের জল মুছতে লাগলাম । আমি চিন্তায় চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম । এখন ওর শেষের কথাটা শুনে আমি হাসবো না কাঁদবো না কি করব বুঝতে পারছিলাম না । ওকে ছুলেই আমার যেন কিছু একটা হয়ে যায় আর প্রচণ্ড লজ্জা লাগে । তবুও মনে সাহস সঞ্চার করে অসাধ্য সাধন করেই ফেললাম । জাপটে ধরলাম রেহানকে । বাইক চলতে শুরু করলো । আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল প্রিয় মানুষটার সাথে গভীর রাতে ঘুরে বেড়াবো । শুধু আমি আর সে । ভাবতেও ভালো লাগছে যে রেহান নিজের অজান্তেই আমার বহুদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করছে ঠিক যেমনটা আমি চাইতাম । ১০ মিনিট পর রেহান বাইক থামালো । ও আমায় বাইক থেকে নামতে বলল। আমরা বাইক থেকে নামলাম । জায়গাটা দেখে মনে হচ্ছে এটা কোনো কটেজের এরিয়া । আশেপাশে অনেকগুলো সুন্দর ঘর দেখা যাচ্ছে । একটা ঝিলের মতো দেখা যাচ্ছে । আমরা এগিয়ে গিয়ে সেই ঝিলের ধারে দাঁড়ালাম । খুব ভালো লাগছে আমার কাছে এই গভীর রাতের নির্জনতায় পূর্ণ নিবিবিলি পরিবেশটা । হালকা বাতাসে গাছের পাতাগুলো নড়ছে , চাঁদের আবছা আলো , আকাশে জ্বলতে থাকা তারার মিটিমিটি মিষ্টি আলো আর পাশে থাকা আমার প্রিয় মানুষটা । মানুষটা কি সত্যিই আমার ? হ্যাঁ , সে শুধুই আমার । এই আবছায়া আলোতে রেহানকে বড্ড মোহনীয় লাগছে , নেশা হয়ে যাচ্ছে আমার , আমি ওর আসক্তিতে আসক্ত হয়ে পড়ছি । নাহ আর নিজেকে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না , পরে যা হয় বা হবে দেখা যাবে । যেই ভাবা সেই কাজ । আমার গালে লেগে থাকা কিছুটা হলুদ ডান হাতে মেখে বা হাত দিয়ে রেহানের শার্টের কলার টেনে ধরে ওকে এক ঝটকায় আমার কাছে নিয়ে এলাম । ঘটনার আকস্মিকতায় ও টাল সামলাতে না পেরে আমার খুব কাছে চলে এসেছে । অনেকটা কাছে এসেছে ও , এতটাই কাছে যে ওর বুকের ধুকপুকানির আওয়াজ আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি আর ওর তপ্ত শ্বাস আমার মুখে এসে আছড়ে পড়ছে । আমি মুগ্ধ নয়নে আমার প্রেমিক পুরুষকে দেখছি । এতো মায়া কি কোনো মানুষের মাঝে থাকতে পারে ? যতই ওর থেকে দূরে থাকি না কেন , ও ঠিকই ওর চম্বুকীয় মায়ার টানে আমায় ওর কাছে নিয়ে আসবে । যার আকর্ষণ কখনোই কমবে না । এবার ভাবনায় দাড়ি বসিয়ে আমার ডান হাত দিয়ে আলতো করে ওর বা গালে হলুদ ছোয়ালাম । এতো কিছু ঘটে যাবার পরও রেহান আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে । হঠাৎ মনে হলো কি করছি আমি ? ওকে তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দিয়ে ঠিক হয়ে দাড়ালাম । এতোক্ষনে রেহান মুখ খুলল । ও বলল ,
” মুগ্ধ তুমিতো দেখি আমার চেয়েও অনেক বেশি রোমান্টিক । ”
লজ্জায় আমি রেহানের দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারছি নাহ । কি হয়ে ছিল আমার ? কি করতে যাচ্ছিলাম আমি ? ভাবতেই শরীরজুড়ে শিহরণ বয়ে চললো । এবার রেহান আমার কাছে এলো তারপর আমার কোমড়ে ওর হাত রেখে ওর একদম কাছে নিয়ে গেল । ওর হাত দ্বারা আমার থুতনি উচু করে ধরে বলল ,
” ভালোবাসি গো প্রিয়তমা । বড্ড বেশি ভালোবাসি । সবসময় প্রতিটি মুহূর্তে তোমার মুখের ওই মিষ্টি হাসির কারণ হতে চাই গো প্রিয়া । ”
এটুকু বলেই ও থামল । আমি রেহানের বুকে মুখ গুজে এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশে ওর কথার মায়াজালে সম্মোহিত হচ্ছিলাম । ওর হৃদস্পন্দন গুলোও যেন ওর ভালোবাসার সাক্ষী দিচ্ছে । ওর প্রতিটা কথায় শরীরজুড়ে প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছিল । ইশ ! সময়টা যদি থমকে যেত ? আচ্ছা এতোসব সুখ সত্যিই কি আমার জন্য ? ভুলবশত আমার কাছে চলে আসেনি তো ? সইবে তো আমার কপালে ? হঠাৎ আমার সমস্ত ভাবনায় ছেদ ঘটলো , কপালে ওষ্ঠযুগলের উষ্ণ স্পর্শ অনুভূত হলো ।
আবারও সমস্ত শরীরজুড়ে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেল । এবার রেহান আমায় ছেড়ে দিয়ে আমার হাত ধরে ঝিলের দিকে এগিয়ে গেল । ঝিলজুড়ে কচুরিপানার ফুল । কি সুন্দর লাগছে ! ঝিলের ধার দিয়ে আমার হাতে হাত রেখে হাটছে ও । হৃদয়জুড়ে হাজারো সুখপাখি ডানা ঝাপটে উড়ে বেড়াচ্ছে । এ এক অন্যরকম সুখানুভূতি , অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছে । আকাশের চাঁদটাও যেন আমাদেরকে সঙ্গ দিয়ে চলেছে । রেহান থামলো আমার কোমড় আলতো করে ধরে আমায় আবারও ওর কাছে নিয়ে গেল । ওর এমন কান্ড দেখে খানিকটা লজ্জা পেলাম । রেহান আমাকে অস্বস্তিতে পড়তে দেখে বলল ,
রিল্যাক্স ! আমি তোমাকে খেয়ে ফেলবো না।
তবুও যেনো লজ্জা আর অস্বস্তি কাটছেই না আমার। আমি ছুটে ওর থেকে সরে যেতেই হাত ধরে ঘুরিয়ে ও আমার কোমড় আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল ,
‘এতো লজ্জা পাও তুমি?’
আমি কিছু বললাম না।নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম । রেহান আস্তে আস্তে আমার লজ্জায় কাঁপতে থাকা ঠোঁটের দিকে এগুতেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম । রেহান হেসে ফেললো । শাহাদাত আঙুলটা আমার ঠোঁটে ছুঁইয়ে বলল ,
‘থাক এটা ফুলশয্যার রাতের জন্য তোলা রইলো।’
আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম । ও সামনে থাকা সাইকেল দেখিয়ে ওটাতে উঠতে বলল ।
ও উঠে বসার পর আমি ওর পেছনে উঠে বসলাম আর ওকে জাপটে ধরলাম । যতই দেখছি ঠিক ততটাই মুগ্ধ হচ্ছি ।
#চলবে
#NUSRAT_TABASSUM_METHILA
[রি চেইক হয়নি। আজকের লিখাটি বড্ডো অগোছালো । তার জন্য দুঃখিত । ভুলত্রুটি মাফ করবেন ]