#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে :লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২৫
অফিস থেকে বাড়িতে ফিরেছে হৈমন্তী। সারাদিন একটুও বিশ্রামের সুযোগ হয়নি। মেয়েটাকে বাড়িতে রেখে যেতে মন সাড়া দেয়না তবুও কিছু করার নেই। ওকে সঙ্গে নিলে রোদ গরমে বাইরে বাইরে ঘুরাঘুরি করলে অসুস্থ হয়ে যাবে। তাছাড়া হঠাৎ এখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও বেশ ঝামেলা হচ্ছে। রাতে কাশি হচ্ছে। হৈমন্তী শুক্রবারে মেয়েকে নিয়ে ভালো একটা ডাক্তারের কাছে যাবে বলে ঠিক করেছে। ক্লান্ত হয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে কাজের মেয়েকে ডাক দিয়ে বলল,
> রমেলা আপা জান্নাতকে আনো। খাবার দিয়েছো ওকে?
রমেলা ধীরপায়ে কাচুমাচু হয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। আমেনা বেগম মেয়ের গলা শুনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন কড়া করে কিছু কথা শুনিয়ে দেওয়ার জন্য। কিছুক্ষণ আগে অরিনকে বাড়িতে দিয়ে অফিসে গেছে আরাফাত। চয়নিকা নিজের রুমে আছে। দুদিন মায়ের বাড়িতে ছিল। মন খারাপ ছিল তবে এখন বেশ ভালো। আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তবে নিজের ভাইয়ের উপরে ওর ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। রমেলাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হৈমন্তী ভ্রু কুচকে বলল,
> কথা বলছো না কেনো?যাও ওকে নিয়ে আসো যাও।
রমেলা ভয়ে ভয়ে বলল,
> আফা আপনে যখন ওরে আমার কাছে রাইখা গেলেন তখনই আম্মা আমারে কইলো উনার লাইগা সুপ করে আনতে। আমি তাড়াতাড়ি করি চলে গিয়েছি জান্নাত আম্মা ছুরি নিয়ে খেলা করতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেছে। আম্মা কইছিলেন দেখবো কিন্তু দেখিনি আমারে দোষ দিবেন না।
হৈমন্তী ছটফট করে উঠলো। মেয়ের হাত কেটে গেছে শুনেই বুকের মধ্যে ধপ করে উঠেছে। না জানি তার কতটা কষ্ট হয়েছে। ও দ্রুত উঠে ঘরের দিকে যেতে গেলো কিন্তু পা চলল না। রমেলা বলে উঠলো,
>ছোট আম্মাই তো বাড়িত নেই।
হৈমন্তীর বুকের মধ্যে হাতুড়ি পিটাচ্ছে। বড় কোনো দুর্ঘটনা হয়েছে কিনা বুঝতে পারছে না। হাতটা বেশি কেটেছে নাকি যে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। মনেমনে ভাবলো আর কখনও ওকে চোখের অদেখা করবে না। কথাগুলো ভেবে দ্রুত কন্ঠে বলল,
> হেয়ালি না করে সোজাসুজি বলো জান্নাত কোথায়? ওর কিছু হলে কিন্তু খবর আছে। কাউকে ছাড়বো না আমি। আম্মা কিভাবে পারলো আমার মেয়ের হাতে ছুরি দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে। পাষাণ হৃদয় তাঁর। সেকি করে বুঝবে আমার কষ্ট। তাড়াতাড়ি বলো জান্নাত কোথায়?
হৈমন্তী কেঁদে ফেলল। এটাই যে ওর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। যাকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছে। হৈমন্তীর কান্না দেখে রমেলা ঘাবড়ে গেলো। হঠাৎ পাশ থেকে আমেনা বেগম ঝঙ্কার দিয়ে বলে উঠলো,
> সে তাঁর বাপের সঙ্গেই আছে। কান্নাকাটি করে গঙ্গা যমুনা বানিয়ে দেওয়ার কিছু হয়নি। তোমাকে মেয়ে ভাবতেও আমার লজ্জা লাগছে। পেটে থাকতেই যদি তোমাকে মেরে ফেলতাম তাহলে এই দিনটা আমাকে দেখতে হতো না। তোমার জন্য ওই ছেলেটা আমাকে এতগুলো কথা শুনিয়ে দিয়ে গেলো। কতবড় সাহস হলে সে আমাকে বলে আমি নাকি সংসার থেকে শুরু করে দেশ পযর্ন্ত কাঁপিয়ে দিতে পারি সেই ক্ষমতা আমার আছে। তাঁর মেয়ের কিছু হলে আমার তিড়িং বিড়িং ঝগড়া করা বের করে দিবে হুমকি দিয়েছে। আরও কতগুলো আজেবাজে কথা বলে গিয়েছে। বড়দের সম্মান করতে জানেনা বেহায়া ছেলে।
আমেনা বেগম একদমে কথাগুলো বলে থামলো।হৈমন্তী বুঝতে পারলো না কথাগুলো কে বলেছে। ও জিঞ্জাসু দৃষ্টিতে রমেলার দিকে তাকাতেই রমেলা প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত বলে দিলো। হৈমন্তী স্বস্তির পেলো এটা ভেবে যে জান্নাত আবিরের কাছে আছে। আমেনা বেগমের কথাগুলো শুনে ওর খারাপ লাগছে না বরং মজা লাগলো। আবির উত্তম মাধ্যম দিয়ে গেছে বেচারা সেটা হজম করতে পারছে না বলে রাগে ফুসছে। হৈচৈ দেখে চয়নিকা আর অরিন নিচে নেমে এসেছে। ওরা শুনেছে কথাগুলো। তবে একটা বিষয়ে ওদের ভাবাচ্ছে। আবির কেনো মেয়েটাকে নিজের মেয়ে বলছে। তাছাড়া মেয়েটা ওর কাছে কেমন শান্ত হয়ে থাকে। চয়নিকা সুযোগ পেয়ে বলল,
> হৈমি তুমি জান্নাতকে বাড়িতে একা রেখে গিয়েছো আমাকে বলবে না? তোমার সহস দেখে হতবাক। দুদিন আগেও মেয়েটা বাইরে চলে গিয়েছিল আবির নিয়ে গিয়ে বিকালে দিয়ে গেছে। আচ্ছা আবিরের সঙ্গে তোমার কি যোগাযোগ আছে?
হৈমন্তী ঢোক গিলে বলল,
> যোগাযোগ নেই ভাবি। সেদিন দেখা হলো আমাকে চিনতে পযর্ন্ত পারলো না তাহলে কিসের কি?
চয়নিকা বিষয়টা চিন্তা করলো। আমেনা বেগম এখনো বকবক করছে। হৈমন্তী এবার ভ্রু কুচকে বলল,
> আম্মা তুমি আমাকে দেখতে পারো না ঠিক আছে তাই বলে ছোট মেয়েটার ক্ষতি করতে চাইবেন? উনি না আসলে কি হতো বলোতো?
> আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি। ওই ছেলের সঙ্গে তোর কিসের সম্পর্ক? জান্নাতের বাপ ও তাইনা? ছিঃ আমি সত্যি অনুমান করেছি। ভেবেছিলাম ফরহাদের সঙ্গে সব মিটমাট করে তোর নিজের ঘরে ফিরিয়ে দিবো। তার আগেই তুই এইসব করেছিস?
হৈমন্তীর মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কথা হচ্ছে আবিরকে নিয়ে সেখানে ফরহাদকে টানাটানির করার কি দরকার। শয়তানের নাম নিয়ে ডাকাডাকি করে তাকে হাজির করার মানে হয়। হৈমন্তী দাঁতে দাঁত রেখে ফিসফিস করে বলল,
> এটা আমার আর মিস্টার আবিরের মেয়ে শুনেছো? এখন তোমার যা মন চাই করো।
হৈমন্তী গটগট করে হেটে চলে আসলো। অরিন ওর পেছনে পেছনে আসলো। ওর চোখেমুখে জিঞ্জাসু চিহ্ন। তবে চয়নিকা একটুও শাশুড়ির কথাবার্তা বিশ্বাস করেনা। ওর মতে এই ভদ্রমহিলা তিল থেকে তাল বানাতে উস্তাদ। তাছাড়া বাচ্চাটা বেশ কিউট যেকেউ পছন্দ করবে। মেয়েটার উপরে আবিরের মায়া জন্মানোটা স্বাভাবিক বিষয়। ও আর মাথা ঘামালো না। রনিকে নিয়ে চলে গেলো। আমেনা বেগম ফুঁলছে। ফরহাদ মাঝে মাঝেই উনাকে ফোন করে খোঁজখবর নেই। কি সুন্দর করে আম্মা ডাকে জান প্রাণ ঠান্ডা হয়ে যায়। আর এদিকে এই ছেলেটা ঠোঁট কাটা স্বাভাবের। লজ্জা শরমের বালাই নেই।
☆☆
থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে হৈমন্তী। অরিন ওর পাশে বসে ফিসফিস করে বলল,
> ভাইয়া হয়তো তোমার মেয়ে বলে জান্নাতকে নিজের মেয়ে বলেছে। জানোই তো কেমন পাগলামি করে প্লিজ কিছু মনে করোনা। আম্মাকে কতগুলো বাজে কথা শুনিয়ে দিলো। আম্মা খুব চটে গেছেন।
হৈমন্তী রেগে থাকতে পারলো না শব্দ করে হেসে ফেলল। মনে মনে ভাবলো এসব আবিরের পক্ষেই সম্ভব। অরিন কৌতূহলী হয়ে জিঙ্গাসা করলো,
> তুমি রেগে নেই?
> রাগবো কেনো? মিস্টার আবির আর যায় করুক আমার ক্ষতি করবেন না। আমি উনাকে বিশ্বাস করি। তাছাড়া রোহান ভাইয়ার বিষয়টা নিয়ে উনার উপরে রেগে থাকা যায়না। একটা মেয়েকে কিভাবে রক্ষা করলো ভাবো?
অরিন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। শাশুড়ির সঙ্গে নিজের ভাই বেয়াদবি করেছে বিষয়টা সবাই ভালো চোখে দেখবে না। শাশুড়ির সামনে যেতে ওর ভয় লাগে। দম আটকে আসার মতো অবস্থা। হৈমন্তী ডাকে ওর ধ্যান ভাঙলো,
> উনাকে একটু ফোন দিয়ে বলবে মেয়েটাকে দিয়ে যেতে?
অরিন প্রশ্ন না করে আবিরকে ফোন করলো। প্রথমবারের পরে ফোন রিসিভ হলো। অরিনের হ্যালো বলার আগেই আবির দাঁত বের করে হেসে বলে উঠলো,
> ওদিকের কি অবস্থা সব ঠিক আছে? শাশুড়ি সাহেবা ভালো আছেন?
অরিন কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
> ভাইয়া তুমি দিনদিন বেহায়া হয়ে যাচ্ছো। লজ্জা শরমের বালাই নেই। তুমি একটা ইয়ে।
আবির শব্দ করে হেসে বলল,
> ভদ্রমহিলা আমাকে এইসব বলেছে তাইনা? উনার সঙ্গে আমার বেশ জমবে। শশুর বাড়িতে এবার দেখি ঘনঘন আসতে হবে।
অরিন ভ্রু কুচকে বলল,
>এমন ভাব করছ মনে হচ্ছে এটা আমার না তোমার শশুর বাড়ি। শুনো আমার শাশুড়ি তোর উপরে ভীষণ বিরক্ত। তুমি জান্নাত মাম্মাকে দিয়ে যাও। হৈমি অপেক্ষা করছে।
> ওকে বল মেয়েকে আজ পাচ্ছে না। দিনরাত কাজ করছে,কাজ করতেই বল। মেয়েকে নিয়ে ভাবতে হবে না। আর ফোন করবি না। সময় হলে আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবো।
আবির শেষের কথা গুলো বেশ কড়াভাবে বলে রেখে দিলো। অরিন হতাশ চোখে হৈমন্তীর দিকে তাকিয়ে বলল,
> কি হবে?
হৈমন্তী কিছু ভেবে নিয়ে বলল,
> কষ্ট করে আজকের রাতটা পার করে ফেলবো চিন্তা করোনা। উনার কাছেই থাক না আজকের দিনটা।
অরিন উত্তর করলো না রুমে ফিরে আসলো। আরাফাত সারাদিন বাড়িতে আসেনি অরিন বুঝে নিয়েছে লোকটা হয়তো ওকে এড়িয়ে চলছে কিন্তু কেনো? লজ্জা পাচ্ছে নাকি কাজের চাপে এমন করছে বুঝতে পারছে না। এতগুলো দিন পার হয়েছে ওদের সম্পর্ক একটুও এগোতে পারেনি। তবে সামান্য হলেও বন্ধুত্বটা হয়েছে। লোকটাকে ভরসা করা যায়। সব সময় মুখ দেখেই বুঝতে ফেলে কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে। প্রিয়জন বুঝি এমনিই হয়।
☆
গোসল করে রেডি হলো হৈমন্তী। সন্ধ্যা সাতটায় একটা মিটিং আছে। কয়েকধাপে কাজকর্ম চলছে। সবাইকে এক সঙ্গে মিটিংয়ে ডাকা হয়েছে। দীর্ঘ প্রজেক্ট শেষ করতে অনেকটা সময় লাগবে। হৈমন্তী দীর্ঘশ্বাস ফেলে কালো রঙের ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে একটা কালো হিজাব পরে নিলো। বেরিয়ে যাওয়ার আগে আয়নায় ভালো করে একবার নিজেকে দেখে নিলো। মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে। জীবনে প্রথমবার মেয়েটার মুখ না দেখে বাইরে যাচ্ছে। আগে তো সব সময় সঙ্গে রাখতো। এখানে এসেই যত ঝামেলা। হৈমন্তী ঠিক করেছে আগামীকাল থেকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করবে যা হয় হবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ও বেরিয়ে গেলো। রাজীব বসে ছিল ওকে বাইরে যেতে দেখে উঠে আসলো। হৈমন্তী মলিন হেসে বলল,
> এইটুকু রাস্তা আমি যেতে পারবো। তুমি চিন্তা করোনা। বাড়িতে থাকো আর আম্মাকে সামলাও আমার উপরে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
> আম্মা দিনদিন এমন হয়ে যাচ্ছে কেনো আল্লাহ্ ভালো জানে। বয়স হচ্ছে বুদ্ধি কমছে। সব সময় খিটখিটে মেজাজে থাকে।
হৈমন্তী মলিন হাসলো। কি উত্তর দিবে নিজের মায়ের সম্পর্কে বুঝতে পারলো না। মাকে নিয়ে খারাপ কথা বলতে বা শুনতে একটুও মন সাড়া দিচ্ছে না। উনি যেমন আছে থাক। হৈমন্তী কথা এড়িয়ে গিয়ে বাসা থেকে বের হলো। সন্ধ্যার নামাজ পড়ে বের হয়েছে। সাতটায় মিটিংয়ের টাইম ঠিক হলেও আটটা বেজে যাবে ওর জানা আছে। হৈমন্তী বাড়ির গাড়িতেই একটা রেস্টুরেন্টর সামনে এসে নামলো। ড্রাইভারকে বলে দিলো চলে যেতে। যাওয়ার সময় অফিসের গাড়িতে করে পৌঁছে দিবে নয়তো ফোন করে নিবে। হৈমন্তী গাড়ি বিদায় করে ভেতরে চলে গেলো।
________________
মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেনি আবির। সেক্রেটারি জাবেদের হয়েছে যত ঝামেলা। হুকুম শুনতে শুনতে বেচারা ক্লান্ত। আবির মেয়েকে নিয়ে একটা আবাসিক হোটেলে উঠবে সেই বন্দবস্ত করতে হচ্ছে। যদিও এটা আবিরের চেনাজানা হোটেল। কখনও রাতে থাকা হয়নি তবে অফিসের কাজের জন্য আসা লাগে। দূর থেকে যারা আসে তাদের থাকার জন্য এখানে রুম বুক করতে হয়। আবির মেয়েকে নিয়ে সেখানেই উঠবে। বাড়িতে ফিরলে আরশী হয়তো মায়ের একগাদা প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। হৈমন্তী যদি রাজি থাকতো এসব করতেই হতো না। সামান্য অনিমার জন্য এতকিছু করলো আর নিজের ভালোবাসার জন্য করতে পারতো না। পুরো পৃথিবীর বিপক্ষে গিয়ে মেয়ে আর বউয়ের পাশে থাকতো। আফসোস লেডি হিটলার বুঝতে পারে না। কথাগুলো ভেবে আবিরের রাগ হচ্ছে। হৈমন্তীকে নিয়ে ও আর ভাববে না তবুও কিভাবে জানি ওর ভাবনাতে মেয়েটা এসে উঁকি ঝুকি কাটে যায়। বেহুদ্দা মেয়ে একটা। জান্নাত বিছানার মাঝখানে বসে খেলছে। মেয়েটার দিকে তাঁকালে মনটা শীতল হয়ে যায়। আবিরের ধ্যান ভাঙলো জাবেদের কন্ঠ শুনে।
> স্যার সব ঠিকঠাক করে ফেলেছি আসুন।
> কেনাকাটা করতে বলেছিলাম সেসব?
> সব রেডি। আপনি চলুন রাত হচ্ছে স্যার।
> চলো।
আবির মেয়েকে নিয়ে উঠে আসলো। হোটেল গিয়ে খেতে হবে।মেয়েকে নিয়ে সারাদিন প্রচুর ঘোরাঘুরি হয়েছে। অফিসের একটা মেয়েকে দিয়ে জান্নাতকে গোসল করিয়ে নিয়েছিল। মেয়েটা থমথমে মুখে আবিরের হুকুম মতো দুধ গরম করে এনেছে বারবার। আবির বুঝতে পারেনি এর মুখের এই অবস্থা কিভাবে হলো। অন্যদিন তো হাসিখুশি থাকে। আবির তেমন পাত্তা দিলো না। মেয়েদের সাইকোলজি বেশ জটিল। সহজে বোধগম্য হয় না। আবির মেয়েকে নিয়ে আবাসিক হোটেলে গিয়ে উঠলো। জাবেদ চলে আসতে চেয়েছিল কিন্তু আবির ওকে ছাড়লো না। যদি কিছু দরকার হয় তখন ঝামেলা হবে। হোটেলে এসে আরেক ঝামেলা শুরু হলো জান্নাত কিছুতেই রুমে থাকতে চাইছে না। বাইরে বেরিয়ে এসে দৌড়াদৌড়ি শুরু করলো। আবির আর জাবেদ মিলে ওকে বারবার সামলে নিচ্ছে। হোটেলের ম্যানেজার দাঁত বের করে হাসছে। আধা ঘন্টার মধ্যেই দুজনেই ক্লান্ত হয়ে গেলো কিন্তু জান্নাতের কিছুই হলো না। না পেরে আবির মেয়েকে জোর করে বুকের সঙ্গে নিয়ে রুমে চলে গেলো। আবির মনে মনে ভাবলো মেয়েটা মায়ের মতোই হয়েছে। কখন কি মর্জি হয় বোঝা কষ্ট। বেশ কিছুক্ষণ মেয়েটা কান্নাকাটি করে বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে গেলো। আবির বেশ খুশী। রাতের মতো ঝামেলা শেষ কিন্তু যদি মাঝরাতে ক্ষুধা পাই রুমে যা ছিল সব শেষ। ও হন্তদন্ত হয়ে বাইরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখলো জাবেদ ঘুমিয়ে বিভোর। রাত দশটার বেশি বেজে গেছে। আবির ওকে আর না জাগিয়ে রুম লক করে ম্যানেজারকে বলে বেরিয়ে আসলো। জুস কিছু ফল আর কিনতে হবে।। বাচ্চা পালন করাও বেশ কষ্টের। মেয়েকে খালি পেটে রাখা ঠিক হবে না ভেবে পাশের একটা দোকানে ঢুকে পড়লো। রাস্তায় মানুষজন কম হয়ে গেছে। বেশি রাত হয়নি তবুও এমন নির্জন কেনো বুঝতে পারলো না। দোকানদারকে জিঞ্জাসা করে নিলো। বিরোধী দল রাস্তা অবরোধ করেছে আন্দোলন চলছে। গাড়ি চলছে না। সারাদিন জান্নাতকে নিয়ে বিজি ছিল তাই এসবের খোঁজ রাখেনি। আবির আর সময় নষ্ট করলো না রাস্তায় নামলো। পায়ে হেটেই বের হয়েছিল।
☆☆
মিটিং শেষ করে রাস্তায় নেমে হতবাক হলো হৈমন্তী। রাস্তায় একটা গাড়িও নেই। যারা ছিল তাদের বাসা আশেপাশে হওয়ার জন্য সকলেই হেটে চলে গেলো। একা পড়ে গেলো শুধু হৈমন্তী। কারো থেকে সাহায্য নিতে কেমন বিবেকে বাঁধছে। তাছাড়া বাড়ি থেকে আসার সময় ভূলে ফোন রেখে এসেছে। ভাবলো সামনে এগিয়ে গেলে কোনো গাড়ি নিশ্চয়ই পাবে। রাস্তা অবরোধ হয়েছে কথাটা কিছুক্ষণ আগে শুনেছে। আসার সময় তেমন কিছুই চোখে পড়েনি। কথাগুলো আনমনে ভাবতে ভাবতে বেশ কিছুদূর চলে আসলো ঠিক এমন সময় কয়েকজন ওর দিকে ছুটে আসলো। হৈমন্তী ভয় পেয়ে গেলো। ও পাশে সরে আসলো ভেবেছিল এরা হয়তো যারা আন্দোলন করছে ওদের দলের হবে কিন্তু ছেলেগুলার ওকে অবাক করে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আর চারদিক থেকে ওকে ঘিরে ধরলো। হৈমন্তী চিৎকার দিতে ভূলে গেছে। একটা ছেলে অনবরত ফোনে কথা বলছে,
> মেয়েটাকে পেয়েছি। এখানেই মেরে ফেলবো নাকি উঠিয়ে আনবো? এখানে মারলে ঝামেলা শেষ কোথাও নিতে হবে না।
ওপাশ থেকে কি বলছে শোনা যাচ্ছে না। হৈমন্তী ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। মারিয়াম আন্টির কথা বারবার মনে পড়ছে।।ভাবলো আজকেই হয়তো জীবনের শেষ দিন। ছেলেগুলার ওর হাত ধরে টানতেই হৈমন্তী জোরে চিৎকার দিয়ে বসলো। সঙ্গে সঙ্গে ওর আওয়াজ থেমে গেলো। ওর মুখটা বেঁধে ফেলা হলো। একটা ছেলে ধাঁরালো চাকু বের করে ওর দিকে এগিয়ে আসতেই কয়েকজন উল্টো ছেলেগুলার উপরে আক্রমণ করে বসলো। হৈমন্তী হাপাতে হাপতে বসে পড়লো ঠিক তখনই কেউ একজন ওকে ধরে ফেলল। হৈমন্তী ঝাপসা চোখে লোকটাকে দেখতে পেলো না। জ্ঞান হারালো। যখন জ্ঞান ফিরলো চোখ খুঁলে তাকাতেই আবিরের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।