শেষ রাত পর্ব-২৬

0
1557

#শেষ_রাত
#পর্বঃ২৬
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘আমি আপনার উপর রাগ করিনি। তবে সাদাফের সঙ্গে আপনাকে দেখে মেজাজ বিগড়ে গেছে।’

ধ্রুব কাঠ কাঠ গলায় কথা গুলো বলেই ড্রাইভিং-এ মনোযোগ দিলেন। আমি কিছুটা সময় চুপ থেকে নিম্ন স্বরে বললাম-

‘কিন্তু আমি তো ইচ্ছে করে সাদাফের সাথে দেখা করিনি।’

ধ্রুব কপট রাগ দেখিয়ে বললেন- ‘আমি সেটা জানি তবুও আমার রাগ লাগছে।’

আমি সরু চোখে ওনার দিকে চেয়ে থাকলাম। আজ প্রথম উনি আমার সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বলছেন। সাদাফকে নিয়ে তার প্রব্লেম হচ্ছে কিংবা রাগ লাগছে এটাও আজকেই প্রথম প্রকাশ করলেন। মানুষটাকে এতদিন নির্বিকার, অনুভূতিহীন মনে হতো। কোনো কিছুতেই রিয়েক্ট করেন না। রাগ দেখান না৷ স্ত্রীর প্রাক্তন নিয়েও মাথা ঘামান না। সব বিষয়েই যেন তিনি নির্বিকার থাকেন। তবে আজ ভিন্ন মনে হচ্ছে। নির্বিকার মানুষটার মধ্যেও রাগ আছে। স্ত্রীর প্রাক্তন নিয়েও তিনি জেলাস। এটাই কি স্বাভাবিক নয়! আমি ছোট্ট করে একটা শ্বাস ফেলে দৃষ্টি নামিয়ে নিম্ন স্বরে বললাম-

‘সরি আমার ভুল হয়ে গেছে। নেক্সট টাইম আর এমন কিছু হবে না।’

ধ্রুব গাড়ির স্পিড কমিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে আমার দিকে চাইলেন। ভ্রু জোড়ার মাঝে সুতীক্ষ্ণ ভাঁজ পরেছে। আমার কথায় যেন তার বিরক্তি ভাব আরও দ্বিগুণ হয়েছে। চোখমুখ কুচকে তিক্ত গলায় বললেন-

‘আমি কি বলেছি আপনাকে সরি বলতে!’

‘আপনি রেগে আছেন বলেই তো সরি বললাম। এখন তো দেখছি সরিও বলা যাবে না। তাহলে আপনিই বলুন কি করলে আপনার রাগ কমবে?’

ধ্রুব প্রতিত্তোরে কিছু বললেন না। আগের মতোই ড্রাইভিং করতে লাগলেন। আমি মলিন মুখে তাকিয়ে থাকলাম ওনার দিকে। গাড়ি থামলো বাসার সামনে এসে৷ আমি তুলতুলকে কোলে নিয়ে গাড়ি থেকে নামতেই ধ্রুব আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। নিঃশব্দে তুলতুলকে আমার কাছ থেকে নিয়ে গাঢ় স্বরে বললেন-

‘আমার রাগ ভাঙানোর জন্য আপনাকে কিছুই করতে হবে না। সময় হলে আমি নিজেই চেয়ে নিবো।’

ধ্রুব গাম্ভীর্যের সাথে পা বাড়ালেন বাসার ভেতরে। আমি কয়েক মুহুর্ত সেদিকে স্থির তাকিয়ে থেকে হাঁটা শুরু করলাম। এই মানুষটাকে শুধু একটা কথাই বলা যায় আর তা হলো “অদ্ভুত” ভীষণ ভীষণ ভীষণ অদ্ভুত।

‘তোদের মধ্যে কি কিছু হয়েছে অনু? দুপুরে আসার পর থেকে ধ্রুব কেমন যেন গোমড়া হয়ে আছে।’

মনি মা’র কথায় আমি মাথা নিচু করে ফেললাম। ডাইনিং টেবিলের প্লেট গুলো গোছাতে গোছাতে বললাম-

‘তেমন কিছু হয়নি মনি মা। উনি এমনিতেই একটু রেগে আছেন।’

আমি প্লেট গুলো নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যাবো তখনই মনি মা আমাকে আটকে দিলেন। আমার হাত থেকে প্লেট গুলো নিয়ে আবারও টেবিলে রাখলেন। আমি বিস্মিত চোখে মনি মা’র দিকে তাকালাম। আমাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে মনি মা নিজেও বসলেন। কিছুক্ষন আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন-

‘আমি জানি তোদের সম্পর্ক আর দশ-টা সম্পর্কের মতো না। তবে তোরা মন থেকে চাইলেই তোদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হবে। সময় নে, চেষ্টা কর দেখবি ধীরে ধীরে তোরা দু’জনেই এই সম্পর্কে স্বাভাবিক হয়ে আসবি। আমি ধ্রুবকে বুঝিয়েছি। আজ তোকে বলছি। বিয়ের সম্পর্কটা অনেক পবিত্র আর মূল্যবান একটা সম্পর্ক। কবুল বলার সাথে সাথেই স্বামী স্ত্রীর মনে একে অপরের প্রতি আলাদা একটা টান বা অনুভূতির জন্ম নেয়। না চাইতেও তখন এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন হয়ে যায়। কারণ সব সম্পর্কের উর্ধ্বে হলো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। তাই এই সম্পর্কের যত্ন নিতে শিখ। আশাকরি তুই আমার কথা বুঝতে পারছিস।’

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। মনি মা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন-

‘এসব আমি গুছিয়ে রাখছি। তুই এখন রুমে যা। অনেক রাত হয়ে গেছে।’

আমি মনি মা’র কথা অগ্রাহ্য করে প্লেট গুলো নিয়ে রান্না ঘরে যেতে যেতে বললাম-

‘ভাইয়ার জন্য পাত্রী দেখতে যাবে তাই আম্মু তোমাকে পরশু ওই বাসায় যেতে বলেছে।’

মনি মা আমার কাছে এসে ভ্রু জোড়া ঈষৎ কুচকে বললেন-

‘কেন তুই যাবি না!’

‘নাহ মনি মা। এক্সামের প্যারায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। তাই কিছুদিন বাসায় থেকে রেস্ট নিবো। আর তুলতুলকে একটু সময় দিবো।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে এখন রুমে যা। বেশি দেরি হলে ধ্রুব হয়তো আরও রাগে যাবে। বাপের মতোই কিন্তু রগচটা হয়েছে। তবে বেশি প্রকাশ করে না।’

আমি হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে অলস ভঙ্গিতে রুমের দিকে যেতে লাগলাম। দুপুর থেকে ধ্রুব আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলেননি। সারাক্ষণ মুখ ভার করেই বসে ছিলেন। উনি সাদাফকে নিয়ে এতটা জেলাস ফিল করেন তা আমার ধারনা ছিল না। মনের ভেতর এত কিছু লুকিয়ে সব সময় সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলেন কিভাবে! কি অদ্ভুত চরিত্র ওনার। ওনাকে বোঝার চেষ্টা করতে করতেই হয়তো আমি বুড়ি হয়ে যাবো। তবুও হয়তো ওনাকে বুঝতে পারা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।
বিছানার মাঝ বরাবর তুলতুল ঘুমিয়ে আছে। পুরো রুমে আমি চোখে বুলিয়ে নিলাম। ধ্রুব রুমে নেই। বারান্দার দরজা খোলা। ঘুটঘুটে অন্ধকার বারান্দা। আমি নিঃশব্দে এগিয়ে গেলাম সেদিকে। আবছায়া আলোতে ধ্রুবর পেছন সাইড স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। রেলিঙের উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি৷ আমি বারান্দার লাইট জ্বালিয়ে ওনার পাশে এসে দাঁড়ালাম। ধ্রুব আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলেন। এক পলকের জন্যেও আমার দিকে ফিরে তাকালেন না। ভাবটা এমন যে, আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি এটা যেন তিনি লক্ষ্যই করেন নি। আমি উদাসীন চোখে আকাশের দিকে চাইলাম। কৃষ্ণবর্ণের মেঘ গুলো এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে। ঝিরিঝিরি হাওয়ার বেগ বেড়েছে প্রবলভাবে। বেলি গাছের পাতা গুলো এক একটা ঢালের সাথে বাড়ি খেয়ে শব্দ তুলছে। আমি এবার হাল ছেড়ে ধ্রুবর দিকে ফিরে দাঁড়ালাম। ক্লান্ত গলায় বললাম-

‘আপনি এখনও রেগে আছেন?’

ধ্রুব প্রত্যুত্তর করলেন। আমার প্রশ্ন সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে তাকিয়ে রইলেন অদূর মেঘলা আকাশে। কয়েক মুহুর্ত নিরব থেকে পালটা প্রশ্নে করলেন আমাকে,

‘সাদাফ চলে যাচ্ছে, আপনার কষ্ট হচ্ছে না?’

আমি থমকে গেলাম কয়েক মুহুর্তের জন্য। মস্তিষ্কে এলোমেলো ভাবনার সৃষ্টি হলো। সাদাফ চলে যাচ্ছে এ কথাটা আমার মাথায় একদমই ছিল না। দুপুর থেকে ধ্রুবকে নিয়ে ভাবতেই ব্যস্ত ছিলাম। কীভাবে ওনার রাগ ভাঙানো যায়৷ ওনার গাম্ভীর্যতা দূর করা যায় এসব চিন্তা-ই মাথার মধ্যে সর্বক্ষণ ঘুরছিল।
আমাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে ধ্রুব আমার দিকে ফিরে তাকালেন। অত্যন্ত নরম গলায় বললেন-

‘আমি জানি আপনার মনে এখন সাদাফের জন্য কোনো জায়গা নেই। আপনি কখনও সাদাফের কাছে ফিরে যাবেন না এটাও আমি জানি। আমি আপনাকে ভালোবাসি তার চেয়েও বেশি বিশ্বাস করি। আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিংবা না বাসেন তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে আমি কখনও আপনাকে ছাড়তে পারবো না। আপনি চাইলেও না। আপনার ব্যাপারে আমি ভীষণ স্বার্থপর। আপনার ছায়াও অন্য কারও পাশে আমার সহ্য হয় না। সেটা সাদাফ হোক কিংবা অন্য কোনো পুরুষ। আর আমার সহ্য হয় না বলেই তখন রাগ হয়েছিল।’

আমি মাথা তুলে ধ্রুবর দিকে চাইলাম। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। এই শান্তশিষ্ট মানুষটা আমাকে নিয়ে এতটা-ই জেলাস! আমি থমথমে গলায় বললাম-

‘আপনার রাগ ভাঙানোর জন্য কি করতে হবে আমাকে?’

ধ্রুব আমার দিকে ঝুঁকে মুখোমুখি হয়ে বললেন-

‘আপাতত আমার বুকের যে তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে সেটা কমিয়ে দিন। তাহলেই হবে।’

‘কীভাবে?’

আমি বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করতেই ধ্রুব সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। ঠোঁট প্রসারিত করে মৃদু হাসলেন। দু হাত দু’দিকে ছড়িয়ে দিয়ে শীতল কন্ঠে বললেন-

‘আসুন। এখানে মাথা রাখুন। বুকে মাথা রাখলেই সেই যন্ত্রণাদায়ক ভারি জিনিসটা শান্ত হয়ে যাবে।’

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধ্রুব আমার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে ওনার বুকে আগলে নিলেন। আমি কেঁপে উঠলাম। আচমকাই আগমন ঘটলো তুমুল বর্ষণের। হিম শীতল বৃষ্টির ফোটা ছুঁয়ে দিলো আমাদের শরীর। অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে গেল সর্বাঙ্গে। অনুভূতিরা যেন দিশেহারা হয়েই মন মস্তিষ্কের সর্বত্র জুড়ে ছুটোছুটি করতে লাগল।

‘তুলতুলের আম্মু আমি যাচ্ছি।’

ধ্রুব কথায় আমি মাথা তুলে ওনার দিকে তাকালাম৷ শার্টের হাতা ঠিক করছেন তিনি। অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তুলতুলের গায়ে চাদর টেনে দিয়ে নিম্ন স্বরে বললাম-

‘আচ্ছা। সাবধানে যাবেন।’

‘আজ অফিসে প্রচুর কাজ। আসতে অনেক দেরি হবে।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে।’

ধ্রুব এবার কিছুটা উচ্চস্বরে বললেন- ‘ওকে তাহলে যাচ্ছি।’

ধ্রুবর কন্ঠে তুলতুল নেড়েচেড়ে উঠলো। আমি এবার খানিকটা বিরক্ত হলাম। তুলতুলের বুকে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে চাপা কন্ঠে বললাম-

‘কি শুরু করেছেন আপনি? তুলতুল উঠে যাচ্ছে তো৷ আব্বু ড্রয়িংরুমে অপেক্ষা করছে। আপনি যান এখন।’

ধ্রুব আহত দৃষ্টিতে আমাকে একবার তুলতুলকে একবার দেখে রুম থেক বেরিয়ে গেলেন। কয়েক সেকেন্ড পর তিনি আবারও ফিরে এলেন। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গাঢ় স্বরে ডাকলেন আমাকে,

‘তুলতুলের আম্মু একটু এদিকে আসুন তো।’

আমি সরু চোখে ওনার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। কেমন যেন কাচুমাচু করছেন তিনি। কি অদ্ভুত এর আগে তো কখনও তিনি অফিসে যাওয়ার সময় এমন করেননি। আজ আবার কি হলো ওনার! আমি তুলতুলের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে এলাম ওনার কাছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওনার দিকে চেয়ে ক্ষীণ রাগ নিয়ে বললাম-

‘আপনার কি হয়েছে বলুন তো!’

ধ্রুব আচমকাই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন৷ আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম ধ্রুবর এহেন কাজে। ঘটনার আকষ্মিকতা বুঝে আমার মস্তিষ্ক সচল হওয়ার আগেই ধ্রুব আমার গালে নিজের ওষ্ঠদ্বয় চেপে ধরলেন। আমি বরফের ন্যায় জমে গেলাম। বিস্ময়ে চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেল আমার। এভাবেই কেটে গেল কিছু মুহুর্ত। ড্রয়িং রুম থেকে আব্বুর আকর্ষণ কাড়া ডাকে আমার হুশ ফিরলো। প্রচন্ডরকম অপ্রস্তুত হয়েই ধ্রুবর বুকে ধাক্কা দিয়ে প্রতিবাদ জানালাম। ধ্রুবর মাঝে পরিবর্তন হলো না৷ তিনি আমার গাল থেকে তার উষ্ণ ঠোঁট জোড়া সরিয়ে নিলেন। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। আমার কানের কাছের মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন-

‘তুলতুলের জন্য দিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠলে আমার পক্ষ থেকে তুলতুল পাখিকে আদর করে দিয়েন।’

ধ্রুব কথাটা বলে আমাকে ছেড়ে দিয়েই হনহনিয়ে চলে গেলেন। আমি অবাক চোখে ওনার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলাম। খানিকক্ষণ পর আনমনেই হেসে ফেললাম। মনে মনে একটু আফসোস হলো ওনার জন্য। বেচারা আমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য, একটুখানি ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য তুলতুলের অযুহাত দিচ্ছেন বার বার। তুলতুলের নাম করেই প্রতিবার আমাকে জড়িয়ে ধরছেন। আর আজ তো চুমুও দিয়ে গেলেন তুলতুলের নাম করেই। কি অদ্ভুত সব ছেলেমানুষী তার! ওনার এসব ছেলেমানুষীতেই যেন আমি বার বার দূর্বল হয়ে পরছি। অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি ওনার অদ্ভুত অদ্ভুত কর্মকান্ডে।

সব সময় হাসতে খেলতে থাকা মেয়েটা হঠাৎ করেই চোখের সামনে নিস্তেজ হয়ে পরছে। প্রচন্ড জ্বরে শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠছে মেয়েটার। আমি প্রচন্ডরকম ব্যস্ত হয়েই এক হাতে তুলতুলের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছি আর অন্য হাতে ধ্রুবকে কল দিচ্ছি। ধ্রুব কল রিসিভ করছে না। আমি বার বার কল দিতে লাগলাম কিন্তু কোনো লাভই হলো না। বাসায় আর কেউ নেই৷ ধ্রুব আর আব্বু অফিসে গেছেন। আর মনি মা সকালেই বেরিয়ে পরেছেন আমাদের বাসার উদ্দেশ্যে। মাথা কাজ করছে না। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে আমার। বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে। তুলতুল গোঙাচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি করে তুলতুলে কোলে নিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে রাখলাম। জ্বরের তাপে যেন পুরে যাচ্ছে মেয়েটার শরীর। সকালের হাল্কা জ্বর দুপুর হতেই তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। মেয়েটার খাওয়া যাওয়া একদমই বন্ধ হয়ে গেছে। মুখে কিছু দিতেই বার বার বমি করছে। ক্লান্ত হয়েই শরীর একদম নেতিয়ে গেছে। ঠোঁট মুখ শুকিয়ে ফ্যাকাসে বর্ণের হয়ে গেছে। আমি আবারও ধ্রুবকে কল দিলাম। ধ্রুব এবার রিসিভ করলো না। বরাবরের মতোই কয়েকবার রিং বেজে কেটে যাচ্ছে। এবার আমার চোখের বাধ ভেঙে গেল। গাল বেয়ে পরতে লাগলো নোনাজল। আর কোনো উপায় না পেয়ে আমি একাই তুলতুলকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম রাস্তায়। মেয়েটা এখনও আগের মতোই ছটফট করছে।

চলবে…

[দুঃখিত এত দেরি করে গল্প দেওয়ার জন্য। কাল সকালেই আমার এক্সাম। পড়াশোনা আর মাইগ্রেনের ব্যথায় গল্প লিখতে পারছিলাম না। জানি না তাড়াহুড়ো করে কি লিখেছি এই পর্বে। মাথায় যা এসেছে তা-ই লিখে ফেলেছি। এলোমেলো হয়েছে অনেক। তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here