শেষ রাত পর্ব-২৭

0
1544

#শেষ_রাত
#পর্বঃ২৭
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

বিষন্নতার ধূসর বর্নের চাদরে মুড়ি দিয়েছে আজ আকাশ। রৌদ্র নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে সেই ধূসর বর্ন মেঘের আড়ালে। ভ্যাপসা গরমে ফুলে-ফেঁপে ওঠেছে সারা শহর। স্তব্ধ হয়ে আছে চারপাশ। দুপুরে শেষ সময়। রাস্তাঘাট তখন মানুষের কোলাহলে গমগমে অবস্থা। বিদঘুটে নিমপাতার মতো তিক্ত একটা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমি। নিজের অসহায়, ব্যর্থ জীবনটা কাঁধে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি রাস্তায় রাস্তায়। এই মুহুর্তে আমার বেঁচে থাকাটাও মরে যাওয়ার চেয়ে কষ্টকর মনে হচ্ছে। মস্তিষ্কে যেন ভয়াবহ জ্যাম লেগেছে। কি করা উচিত আর কি করা উচিত না কিছুই মাথায় খেলছে না। মাথায় তখন একটাই চিন্তা ঘুরছে ধ্রুবকে সবটা জানাতে হবে। উনি একমাত্র ব্যক্তি যে সব কিছু চোখের পলকেই ঠিক করতে পারে। আলাদীনের জিনির মতোই তার জাদু দিয়ে সব ঠিক করে ফেলতে পারে। খুব সুন্দর ভাবে ঠান্ডা মাথায় সব কিছু সামলে নিতে পারে। কিন্তু এই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় তিক্ত ও বিষাক্ত সত্য হলো আমি তাকে কাছে পাচ্ছি না। বার বার ফোন করেও তাকে পাচ্ছি না। আমি একা পরে গেছি। ভীষণ একা। কোলে থাকা মেয়েটাকে ছটফট করতে দেখেই যেন বার বার ভয়ে আঁতকে উঠছি। রাস্তায় বের হতেই বুঝলাম আমি কখনও হসপিটালের ধারের কাছেও যাইনি। হসপিটালে যাওয়ার দরকার পরেনি কখনও। এরকম পরিস্থিতিতে নিজেকে আগে কখনোই আবিস্কার করিনি। আমি এদিক ওদিক ঘুরছি সাহায্য পাওয়ার আশায়। একটা ভরসার হাত পাওয়ার আশায় কিন্তু কাউকে পাচ্ছি না। ত্যক্তবিরক্ত হয়ে অবশেষে নিজেকে নিজের ভেতরে শামুকের মতো গুটিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে। তবে আফসোস শামুকের খোলস হিসেবে ধ্রুবকে খুঁজে পাচ্ছি না। তিনি বলেছিলেন নিজেকে লুকিয়ে নিতে চাইলে তার মাঝেই লুকিয়ে নিতে হবে। আমি শামুক হলে তিনি হবেন আমার খোলস। তবে তিনি কথা রাখেননি। কথা রাখতে পারেন না। কথা রাখতে জানেন না। সব চেয়ে বড় তিক্ত সত্য তাকে আমি কাছে পাচ্ছি না।
ধ্রুবকে ফোনে পেলাম না। তিনি ফোন ধরছেন না। বার বার রিং বেজে কেটে যাচ্ছে। আমি হতাশ হলাম। আর কোনো উপায় না পেয়ে ফোন রেখে দিলাম ব্যাগে। আশেপাশে তাকিয়ে তুলতুলকে নিয়ে উঠে পরলাম থেমে থাকা একটা বাসে। সিটে বসার কিছুক্ষণ পরেই তুলতুল আরেক দফায় বমি করলো। আবারও সেই ছটফটিয়ে ওঠা। আমার ধারণা নেই মেয়েটার কি হচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে! মেয়েটার এমন অবস্থা দেখে চোখের জল ফেলা ছাড়া আমি আর কিছুই করতে পারছি না। আমি হয়তো ব্যর্থ একজন মা। যে কি-না নিজের সন্তানের কোনো সাহায্য করতে পারছে না।

‘কি হইছে মা কানতাছো কেন? মাইয়ার শইল ভালা না?’

পাশ থেকে এক মধ্যবয়স্কা মহিলার কন্ঠস্বর শুনে আমি ক্ষীণ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকালাম। পাশের জানালার সাথের সিটে বসা পাঁক ধরানো চুলের ফর্সা বর্ণের মহিলা। প্রশ্নোত্তর চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি মুখে কোনো প্রকার শব্দ না করে ডানে বায়ে আস্তে করে মাথা নাড়লাম। তিনি একবার তুলতুলের দিকে চেয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে আমার পাশের সিটে এসে বসলেন। তুলতুলের শরীর থেকে জামা কাপড় সরিয়ে দিতে দিতে অধৈর্য্যে সঙ্গে বললেন-

‘মাইয়ার তো দেখি খিঁচুনি উঠছে। শইল ডাইক্কা রাখা যাইবো না। জ্বর তো অনেক বাড়ছে। জলদি জ্বর নামাইতে না পারলে অসুবিধা হইবো।’

আমি এক হাতে চোখের পানি মুছে ওনার দিকে পূর্নাঙ্গ দৃষ্টিতে তাকালাম। তিনি আমার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন-

‘প্রথম বাচ্চা! তোমার বয়সও বেশি মনে হইতাছে না। বাড়ির কাউরে সাথে আনো নাই ক্যান? একলা একলা এই বাচ্চা নিয়া সব সামলাইতে পারবা? বাচ্চার বাপেরে জানাইছো?’

আমি মাথা দুলিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললাম- ‘ফোন দিয়েছি তবে…’

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। গলার স্বর জড়িয়ে গেল। তিনি হয়তো বুঝলেন আমার অসম্পূর্ণ কথার মানে। তুলতুলকে আমার কোল থেকে নিজের কাছে নিয়ে চিন্তিত গলায় বললেন-

‘অন্য কাউরে কল দিয়া জানাও। আর চিন্তা কইরো না আমার বাড়ি হাসপাতালের সামনেই।’

আমি ওনার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম। কি সুন্দর করে তুলতুলকে আগলে রেখেছেন। একদম মনি মা’র মতোই। তিনিও হয়তো আমার মনি মা’র মতোই একজন মমতাময়ী। যে কি-না নির্দ্বিধায় অন্যের সাহায্য করতে ব্যস্ত হয়ে পরেন। আমি জোড়ালো শ্বাস ফেললাম৷ ফোন বের করে ভাইয়াকে কল দিলাম। পর পর দু’বার রিং বাজতেই ফোন রিসিভ হলো। পরমুহূর্তেই ওপাশ থেকে তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর ভেসে আসলো,

‘আমাকে কল দিয়েছিস কেন তুই? আমার কাছে তোর কি প্রয়োজন?’

ভাইয়ার অভিমানী গলা শুনে আমার ভেতরটা যেন দুমড়েমুচড়ে যেতে শুরু করলো। অন্য সময় হলে ভাইয়ার কথায় ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু ঝাঁঝালো কথা শুনিয়ে দিতাম। কিন্তু আজ আমার কান্না পাচ্ছে। নিজেকে একা পেয়ে ভীষণ কান্না পাচ্ছে। অবশ্য ভাইয়ার অভিমান করাটা-ই স্বাভাবিক। বেশি কিছু তো চায়নি। পাত্রী দেখতে যাওয়ার সময় তার সাথেই আমাকে থাকতে হবে এইটুকুই তো আবদার করেছিল। কিন্তু আমি নানানরকম অযুহাত দেখিয়ে ভাইয়ার সাথে যাওয়ার বিষয়টা এড়িয়ে গেছি। বড় ভাইয়ের আবদারটুকু রাখতে না পারা ব্যর্থ বোন আমি। ভাইয়ার ধমকে আমি যথাসম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে জড়ানো কন্ঠে বললাম-

‘ভাইয়া! তুই একটু আসবি!’

‘কি হয়েছে অনু? তোর কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন? কান্না করছিস!’

ভাইয়া অস্থির হয়ে প্রশ্ন গুলো করলো আমাকে। ভাইয়ার প্রশ্নে যেন আমি এবার আরও ভেঙে পরলাম। কান্না করতে করতে ধরা গলায় বললাম-

‘তুলতুল খুব অসুস্থ ভাইয়া। কেউ নেই আমার সাথে। তুই কি মনি মা’কে নিয়ে একটু আসবি! আমার খুব ভয় করছে।’

‘কি হয়েছে তুলতুলের? ধ্রুব ভাইকে কল করিস নি? আর এখন তুই কোথায়?’

ধ্রুবর ভাই শুনেই অভিমানে ভার হয়ে এলো আমার হৃদয়। ওনার বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে গাঢ় স্বরে বললাম-

‘আমি পপুলার হসপিটালে যাচ্ছি। এখন বাসে আছি।’

ভাইয়া ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললেন- ‘আচ্ছা তুই সাবধানে যা। আমরা আসছি। চিন্তা করিস না।’

এত গুলো মানুষের মাঝেও নিজেকে বড্ড একা একা লাগছে। ভাইয়া, আম্মু, মনি মা সবাই হন্তদন্ত হয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে। তুলতুলকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। খুব সম্ভবত তিন দিনের জন্য রাখা হয়েছে। জ্বরের সাথেই খিঁচুনি উঠছে। বমির সময় কিছুটা শ্বাসনালীতে ডুকে গেছে। যে কারণে তুলতুলের অবস্থা আরও খারাপ দিকে চলে গেছে। তবে ঠিক সময়ে জ্বর কমে যাওয়ায় কিছুটা আশংকা মুক্ত হয়েছে এখন। আমি মূর্তির মতো বসে আছি কেবিনের বাহিরে। খানিকটা সময় পর মনি মা এসে আমার পাশে বসলেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম গলায় বললেন-

‘ভয় পেয়েছিলি তাই না অনু? চিন্তা করিস না পূর্নতার কিছু হয়নি। তুই সময় মতোই ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিস।’

‘আজ যদি ওর কিছু হয়ে যেত মনি মা তখন আমি কি করতাম! আমি ঠিক মতো তুলতুলের খেয়াল রাখতে পারিনি। আমার জন্যই ওর এমন হয়েছে। মা হিসেবে আমি ব্যর্থ মনি মা।’

কথাগুলো বলতে বলতে আমার গলার স্বর ধরে এলো। চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে পরলো নোনাজল। মনি মা আমাকে নিজের বুকে আগলে নিলেন। পরম মমতায় আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন-

‘ধুর পাগলি মেয়ে। এসব কেন ভাবছিস? বাচ্চাদের এই বয়সে প্রায়শই খিঁচুনি হয় এটা তেমন কিছু না। আর তুই ঠিক মতো পূর্নতার খেয়াল রাখতে পেরেছিস বলেই তো ঠিক সময় হাসপাতালে নিয়ে এসেছিস। তাই এসব আজেবাজে চিন্তা করিস না।’

মনি মা তার শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার মুখ মুছে দিয়ে বললেন-

‘চল তো এখন। তোর সাথের ওই আপা-টা ওনার বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে এসেছে সবার জন্য।’

আমি অবাক চোখে চাইলাম। অচেনা একজন মানুষ দুপুর থেকেই আমার সাহায্যে উঠে পরে লেগেছেন। এই পর্যন্ত বেশ কয়েকবার এসে তুলতুলের খবর জেনে গেছেন। আর এখন কি-না রান্নাও করে নিয়ে এসেছেন। আশেপাশে এখনও কিছু নিঃস্বার্থ মনের মানুষ আছে মনি মা’র মতো।

রাত প্রায় বারোটা। হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে ছুটে আসলেন আব্বু। কেবিনে ঢুকেই তুলতুলকে কিছুক্ষন দেখলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আমার দিকে চেয়ে নিম্ন স্বরে বললেন-

‘আমি তো কিছুই জানতাম না। বাসায় যাওয়ার পর তোর মনি মা আমাকে এসব কিছু বলল। তোরা কেউ আমাকে একটু জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না?’

আব্বু মুখ অন্ধকার করে আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি হতাশ নিঃশ্বাস ফেললাম। আম্মু মনি মা’কে নিয়ে চলে গেছে ঘন্টা খানেক আগেই। এত চিন্তার মধ্যে আব্বুকে জানানোর কথা মনেই ছিল না। আমি আব্বুর দিকে চেয়ে বললাম-

‘তুলতুলের এমন অবস্থা দেখে চিন্তায় আর কিছুই মনে ছিল না আব্বু। তা ছাড়া আমি তোমার ছেলেকে হাজার বার কল দিয়েছিলাম কিন্তু উনি কল রিসিভ করেননি।’

নিস্তব্ধ থমথমে একটা পরিবেশ। পুরো কেবিন জুড়ে শুধুই নিরবতা। তুলতুল ঘুমাচ্ছে। বসে থেকে শরীর অসার হয়ে যাওয়ায় ভাইয়া কেবিনের বাহিরে হাঁটাহাঁটি করতে গেছে। আব্বু চলে গেছেন ঘন্টাখানেক হবে। ভাইয়া জোর করেই ওনাকে বাসায় পাঠিয়েছে। এত কিছুর মাঝেও ধ্রুবর দেখা মেলেনি। একটি বারের জন্যেও তার কল আসেনি। আব্বু বলেছেন ধ্রুব অফিসে কাজে কোথাও গেছে কিন্তু এখনও ফেরেনি। ফোনও না-কি অফিসেই রেখে গেছেন। তার ভাষ্যমতে ওনার ছেলে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গাধা, বেপরোয়া। এরকম গাধা ছেলে জন্ম দিয়ে তিনি লজ্জিত। আফসোস ছাড়া এখন আর তার কিছুই করার নেই। এই বেপরোয়া ছেলে তার নিজের সন্তান এটা নাকি ভাবতেই তার আফসোস হয়।
শেষ রাত। আচমকা মৃদু শব্দ করেই কেবিনের দরজা খুলে গেল। আমি সোফায় বসে থেকেই নির্লিপ্ত চোখে দরজার দিকে তাকালাম। ভীষণ ক্লান্ত মুখ। এলোমেলো চুল। শরীরে লেপ্টে থাকা ঘামে ভেজা শার্ট। দুর্ধর্ষ শরীর নিয়ে একটি মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। চোখাচোখি হলো আমাদের। চাপা রাগ আর অভিমানের ভীড়ে হারিয়ে গেল আমার লজ্জা মিশ্রিত সকল অনুভূতি। বোঝার চেষ্টা করলাম না তার চাহনির গভীরতা। পড়তে চাইলাম না তার চোখের ভাষা। তাকে বোঝার, তাকে জানার সকল আগ্রহ আমি হারিয়ে ফেললাম। অনুভূতিহীন আমি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই নিজের চোখ সরিয়ে নিলাম। ঠিক আগের মতোই বসে রইলাম। মানুষটা থমথমে পায়ে এগিয়ে গেল তুলতুলের বেডের কাছে। খানিকক্ষণ সেখানেই চুপচাপ বসে থাকলেন। মিনিট পাঁচেক পর নিঃশব্দে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন৷ আমার দৃষ্টি আগের মতোই ধবধবে সাদা মেঝেতে স্থির রইলো। ওনার দিকে মুখ তুলে তাকানোর ইচ্ছে জাগলো না।

‘তুলতুলের আম্মু আপনি কি রেগে….’

আমি মুখ তুলে তাকাতেই ধ্রুবর কথা থেমে গেল। আহত চোখে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম। ফোন নিয়ে কল লিস্ট বের করে ওনার সামনে ধরলাম। অত্যন্ত শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলাম-

‘কয়বার কল করেছি?’

ধ্রুব আমার ফোনের স্ক্রিন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে ক্লান্ত চোখে চাইলেন। শুকনো ঠোঁট জোড়া নাড়িয়ে মৃদুস্বরে বললেন-

‘আসলে আমি ফোন অফিসে ফেলে রেখেই চলে গিয়েছিলাম। খেয়াল ছিল না।’

আমি তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাসলাম। হঠাৎ করেই কিছু তিক্ত অনুভূতি এসে বিষিয়ে দিলো আমার সারা শরীর। শরীরে প্রতিটি শিরায় শিরায় বয়ে গেল তিক্ততা। ভয়াবহ জেদ চেপে বসলো আমার সর্বাঙ্গে। মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে বয়ে গেল ভয়ংকর রাগ। হাতের ফোনটা সজোরে আছাড় মারলাম মেঝেতে। থরথর করেই কেঁপে উঠলো রাগে জ্বলে ওঠা আমার শরীর। কঠিন চোখে ওনার দিকে চেয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বললাম-

‘খেয়াল ছিল না আপনার? এক বার দু’বার নয় বহুবার কল দিয়েছি আমি৷ তুলতুলের এমন অবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে বার বার আপনাকে খুঁজে পেতে চেয়েছি। কিন্তু আপনার তো খেয়ালই ছিল না।’

ধ্রুব নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি এক পা এগিয়ে গেলাম ওনার দিকে। তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম-

‘খুব তো বড় বড় কথা বলতেন। আপনি সব সময় আমার পাশে থাকবেন। আমার চোখেরজল ফেলার জন্য আপনার বুক সব সময় আমার সামনে থাকবে। এটা করবেন ওটা করবেন। তাহলে আজ কোথায় ছিলেন? যখন আপনাকে আমার খুব প্রয়োজন ছিল তখন কেন আমি আপনাকে পাইনি? পাগলের মতো কল করে গেছি আপনাকে। কি করবো, না করবো কিছুই মাথায় ছিল না। শুধু জানতাম আপনাকে আমার পাশে লাগবে। আপনি সব সামলে নিবেন। কিন্তু আপনি ছিলেন না। একা পরে গিয়েছিলাম আমি। ভীষণ একা। দিশেহারা হয়ে শুধু এদিক ওদিক ছুটেছি। মেয়ের এমন অবস্থা দেখে আমার কি হাল হয়েছিল আপনি ভাবতে পারছেন ধ্রুব? যদি মেয়েটাকে ঠিক মতো হাসপাতালে না আনতে পারতাম তখন কি হতো! কোনো ধারণা আছে আপনার? জানি কোনো ধারণা নেই আপনার। আমি কেমন ছিলাম! আমার কখন আপনাকে প্রয়োজন! কে কখন আপনাকে পাশে চায়! এসব নিয়ে আপনার কোনো ধারণা নেই। আপনিও বেপরোয়া। বেখেয়ালি। নির্বিকার একজন মানুষ। আপনিও আপনার ফ্রেন্ডের মতোই। নিজের বাহিরে অন্য কাউকে নিয়েই আপনাদের চিন্তা থাকে না। আপনারা শুধু নিজের মতোই চলতে পছন্দ করেন। শুধু মুখেই ভালোবাসি বলতে পারেন তবে ভালোবাসার যন্ত নিতে কিংবা আগলে রাখতে জানেন না আপনারা। আপনিও সাদাফের মতোই ধ্রুব। আপনারা সব এক।’

ক্লান্ত হয়েই আমার গলারস্বর মিলিয়ে গেল। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ছে। বলহীন সারা শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে খুব কঠিন মনে হলো।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ দুঃখিত একটানা পরিক্ষা হওয়ায় গল্প দিতে পারিনি। পরিক্ষা আর বাসায় মেহমান থাকায় লেখালেখির একদমই সুযোগ হয়নি। ইনশাআল্লাহ আগামীকাল থেকে ঠিকমতো গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো। ঘুমের ঘোরে তাড়াতাড়ি করে কি লিখেছি জানি না। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর হ্যাঁ অপেক্ষা করানোর জন্য আবারও দুঃখিত। সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here