শেষ রাত পর্ব-২৮

0
1615

#শেষ_রাত
#পর্বঃ২৮
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন কেন ধ্রুব? বলুন কি বলবেন!’

ধ্রুব আমার দিকে চেয়ে স্মিত হাসলেন। আমার সকল প্রশ্ন, রাগ, অভিমান কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করেই আলতো করে জড়িয়ে ধরলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে অত্যন্ত নরম গলায় বললেন-

‘শান্ত হও তুলতুলের আম্মু।’

আমি থমকে গেলাম ক্ষনিকের জন্য। মনে জমে থাকা সকল রাগ আপনাআপনি-ই ধীরে ধীরে মাটি হয়ে যেতে লাগল। নিজের অজান্তেই আমি শান্ত হয়ে গেলাম। একদম শান্ত। রাগ, অভিমান, জেদ সব কিছু হঠাৎই কিভাবে মিলিয়ে গেল, কিছুতেই বোধগম্য হলো না। ভীষণ ক্লান্ত হয়েই ধ্রুবর বুকে মাথা এলিয়ে দিলাম। সারাদিনের ক্লান্তি গ্লানিগুলো চোখেরজল হয়ে নিঃশব্দে বিসর্জন হতে লাগলো ওনার ঘামার্ত বুকে। ধ্রুব আগলে নিলেন আমাকে। ওনার স্পর্শে কোনো মিথ্যা স্বান্তনা কিংবা মিথ্যে আশ্বাস নেই৷ আছে শুধু ভরসা, বিশ্বাস আর……। আর কি? ভালোবাসা!! হয়তো তা-ই হবে।

‘আমি জানি তুমি অনেকটা রেগে আছো। তোমার রাগ করাটা-ই স্বাভাবিক। তবে আমি চাই না তুমি রাগের মাথায় এমন কিছু বলে ফেলো যার কারণে রাগ কমলে তুমি নিজেই তার জন্য অনুতপ্ত হও। হ্যাঁ, আমি সাদাফের মতো বেখেয়ালি, বেপরোয়া সেটা আমি মানছি। তবে আমি কখনও তোমাকে নিয়ে বেপরোয়া ছিলাম না। কখনোই আমার কাছের মানুষদের প্রতি বেখেয়ালি হইনি। আমি নিজেকে বদলে নিয়েছি। বদলাতে বাধ্য হয়েছি। তোমাকে ভালোবাসার পর নিজের বেপরোয়া স্বভাবটা নিজের মধ্যে পুষে রাখার দুঃসাহস আমি দেখাতে পারিনি। কারণ আমি ভয় পাই। তোমাকে হারানোর ভয় পাই। সেই ভয় থেকেই নিজেকে আমি গুছিয়ে নিয়েছি। বাউন্ডুলেপনা বাদ দিয়ে একজন দায়িত্বশীল জীবনসঙ্গী আর একজন ভালো বাবা হওয়ার চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত।’

ধ্রুব থামলেন। ছোট্ট করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবারও বললেন-

‘তবে আজ কোনো এক কারণেই হয়তো আমি বেপরোয়া হয়ে গেছি। তুলতুলের এই অবস্থায় পাশে থাকতে পারিনি। এটা আমার ভুল। অনেক বড় ভুল। আর এই ভুলের জন্য তোমার রাগ করাই উচিত। মা হয়ে সন্তানের এমন অবস্থা দেখে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। শুধু তুমি একা নও সব মায়ের জন্যই সন্তানের অসুস্থতা তার উপর ভয়ংকরভাবে প্রভাব ফেলে। দিশেহারা হয়ে যায়। তুমিও স্বাভাবিকভাবেই ভয়ে, চিন্তায় সেই সময় আমাকে খুঁজেছো কিন্তু পাশে পাওনি। তবে আমি জানি তুলতুল তোমার কাছে ভালো থাকবে। তোমার কাছে থাকা অবস্থায় কখনোই তুলতুলের কিছু হবে না। যেকোনো মা-ই তার সর্বস্ব দিয়ে সন্তানকে রক্ষা করে আগলে রাখে। তাই আমি না থাকালে তুলতুলের কি হবে সেই ধারনা আমি নিজের মাঝে আনতে চাচ্ছে না। আমি জানি তুমি আমাকে বুঝবে।’

আমি বুঝলাম। ধ্রুবর বলা প্রতিটি কথাতেই নিজেকে নিরব আর হিমালয়ের মতোই শান্ত শীতল হিসেবেই আবিষ্কার করলাম। কান্না থেমে গেল। প্রায় প্রচন্ড ক্লান্ত হয়েই থেমে গেলাম আমি। সকল ভয়, চিন্তা নিমিষেই কেটে গেল ধ্রুবর কথায়। আমাকে চুপ থাকতে দেখে ধ্রুব আমাকে ছেড়ে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। দু হাতে আমার মুখ মুছে চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে শান্ত গলায় বললেন-

‘এখন চলো একটু ঘুমাবে। না ঘুমিয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে পরবে।’

আমি মুখ দিয়ে টু শব্দও বের করলাম না। ধ্রুব নিজেই আমাকে ধরে নিয়ে সোফায় বসালেন। আমার মাথা ওনার কাধে রেখে খুব যত্নের সাথে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আমি চুপ থাকলাম পুরোটা সময়। কিছু বলার মতো শক্তি কিংবা কথা কিছুই নিজের মাঝে খুঁজে পেলাম না। মিনিট খানেকের মাঝেই রাজ্যের ঘুম এসে আমার চোখে ধরা দিলো। শেষ রাতে এসে একজন ভরসার মানুষ আর ভরসায় জায়গা হিসেবে তার বুকে নিজের আশ্রয় পেয়ে নির্ভয়েই ঘুমে তলিয়ে গেলাম। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলাম আমি।

‘নাহ.. আমি ডক্টরের সাথে কথা বলেছি। তুলতুলকে আপাতত চার দিন জন্য তাদের অবসেরভেশনে-ই রাখবে।’

আমি পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালাম। চোখ মেলেই সামনে তুলতুলের পাশে ভাইয়াকে বসে থাকতে দেখলাম। বুঝলাম ভাইয়াই এতক্ষণ ফিসফিস করে কথা বলেছে। আমাকে সজাগ হতে দেখেই ভাইয়া বলল-

‘কিরে, এতক্ষণে তোর ঘুম ভেঙেছে!’

কপাল কুচকে আমার চাহনি তীক্ষ্ণ হলো। ঘুম থেকে ওঠার পর মানুষের মস্তিষ্ক সচল হতে কিছুক্ষণ সময় লাগে। আমারও সময় লাগলো। চোখ থেকে পুরোপুরি ঘুমের ঘোর কেটে যেতেই নিজের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করলাম। পুরুষালী গাঁয়ের তীব্র গন্ধ নাকে ভেসে আসছে। ঘাড় বাঁকিয়ে আমার বাহুতে পুরুষালী শক্তপোক্ত হাত দেখতে পেলাম। এটা ধ্রুবর হাত। আমার বলহীন শরীর পুরোটাই লেপ্টে আছে তার সাথে। আচমকাই কানের কাছে তীব্র এক ভূমিকম্প অনুভূত হলো। খুব নিষ্ঠুর ভাবে কিছু একটা লাফাচ্ছে। তৎক্ষনাৎ আমার হুশ ফিরলো। ভীষণ লজ্জা আর অস্বস্তি নিয়েই ছিটকে দূরে সরে আসলাম সেই নিষ্ঠুর বুক থেকে। অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে বার বার এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। লজ্জায় ভাইয়ার দিকে তাকানোর মতো সাহস নিজের মাঝে খুঁজে পেলাম না। ধ্রুব গলা খেকরিয়ে হাত পা ঝেড়ে সোজা হয়ে বসলেন। আমি আড় চোখে চাইলাম ওনার দিকে। বরাবরের মতোই শান্ত তার মুখ। ঠোঁটের কোণে স্বভাবগত সরল হাসি। দারুণ আগ্রহ নিয়ে তিনিও আমার দিকে তাকালেন। চোখাচোখি হলো। আবারও আগের মতোই অনুভূতিরা এসে ঝাপটে ধরলো আমাকে। লজ্জায় দৃষ্টি সরিয়ে নিতেই ভাইয়ার মুখোমুখি হলাম। সরু চোখে আমার দিকে চেয়ে সহজ গলায় বলল-

‘এত লজ্জা পাচ্ছিস ক্যান তুই? নিজের জামাইয়ের বুকেই ঘুমিয়েছিস অন্য কেউ তো আর না।’

ভাইয়ার কথা শুনে আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম। ছোট থেকেই ভাইয়া আমার সাথে খুব ফ্রী। সারাক্ষণ মা’রামা’রি ঝগড়াঝাটি এসব আমাদের মধ্যে লেগেই থাকে। কিন্তু তাই বলে ধ্রুবর সামনে এমন কথা বলবে? ছিঃ লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। আমি না-হয় ঘুমিয়ে ছিলাম কিন্তু ধ্রুব! উনিই বা কেমন মানুষ! ভাইয়ার সামনেও কি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে বসে থাকা লাগে! ছেলে মানুষ বলতেই নির্লজ্জ। লজ্জার ছিটেফোঁটা তাদের মাঝে নেই। না আছে আমার ভাইয়ের মাঝে। আর না আছে ধ্রুবর মাঝে।

‘থাক থাক ভাই তোর আর লজ্জা পাইতে হইবো না। তুই এখন ধ্রুব ভাইয়ের সাথে বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আয়। কাল থেকে খাওয়াদাওয়া না করে এখানে পরে আছিস।’

ভাইয়ার কথা শুনে আমি অস্থির হয়ে বললাম- ‘নাহ নাহ আমি তুলতুলকে এখানে একা রেখে যাবো না।’

‘এত বেশি কথা বলিস ক্যান তুই? তুলতুল একা কোথায় আমি তো আছিই এখানে আর মা-ও আসতাছে। আমাকে ফোন করছে বলছে এখন রাস্তায় আছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে।’

ভাইয়ার ভারী গলার স্বর শুনে আমি খানিকক্ষণ চুপ থেকে নিম্ন স্বরে বললাম- ‘কিন্তু ভাইয়া…’

আমার কথায় মাঝেই ধ্রুব উঠে দাঁড়ালেন। শার্টের কলার ঠিক করতে করতে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন- ‘শাকিল ঠিকই বলেছে। এখানে সারাক্ষণ এভাবে না খেয়েদেয়ে বসে থাকলে তুমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পরবে। তখন তুলতুলের খেয়াল কে রাখবে? তাই কথা না বাড়িয়ে এখন আমার সাথে বাসায় চল।’

আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। ধ্রুবর দিকে মলিন মুখে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। আর কোনো বাক্যব্যয় না করে থমথমে পায়ে তুলতুলের কাছে আসলাম। ভাইয়া তুলতুলের পাশ থেকে উঠে অন্য পাশে যেয়ে দাঁড়ালো। আমি শান্ত চোখে তুলতুলের দিকে চাইলাম। মেয়েটার দিকে তাকাতেই বুকে মোচড় দিয়ে চিনচিনে ব্যথা শুরু হলো। একদিনেই কি হাল হয়েছে মেয়েটার। ঠোঁট মুখ শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে মুখ। ঠোঁটের কোণের হাসিটা যেন কোথাও হারিয়ে গেছে। সব সময় খিলখিল করে হাসিতে মেতে থাকা মেয়েটা হঠাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেল। এই নিস্তব্ধতা, নিশ্চুপ থাকা মেনে নেওয়ার মতো না। কিছুতেই না। এই নিরবতা যন্ত্রণার। তীব্র যন্ত্রণা আর হাহাকারের৷ আমি আলতো করেই তুলতুলের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম। ধ্রুব এসেও তুলতুলকে চুমু দিয়ে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পরলেন। সারা রাস্তা আমি আর কোনো কথা বলিনি। ধ্রুবও কিছু বললেন নি। নিরবতায় কেটেছে সারা পথ।

‘আপনি রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি অন্য রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসছি।’

ধ্রুব এই কথা টুকু বলেই অন্য রুমে চলে গেলেন। আমি স্থির চেয়ে রইলাম তার যাওয়ার পথে। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলাম মনি মা অদ্ভুত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি বিস্ময় নিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে মনি মা’র এই চাহনির মানে খুঁজতে লাগলাম। পরক্ষণেই বুঝলাম ধ্রুবর আপনি সম্মোধন করা নিয়েই তিনি অবাক হয়েছেন। ধ্রুব হয়তো কোনো কিছু খেয়াল না করেই আমাকে আপনি সম্মোধন করেছেন। আমি ইতস্তত করে বললাম-

‘আমি রুমে যাচ্ছি মনি মা।’

মনি মা যন্ত্রের মতোই মাথা নাড়লেন। আমি আর কোনো কথা না বলেই দ্রুত রুমে চলে আসলাম। ওনার কৌতূহল মেটানোর কোনো উপায় আমার জানা নেই। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেকে মনি মা’র কৌতুহলী চোখের আড়াল করতে চাইলাম।

ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হতেই ধ্রুবর মুখোমুখি হলাম। দরজার কাছেই থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি। বিস্ময়ের চাহনি স্থির করলাম ধ্রুবর নির্লিপ্ত মুখে। আধ ভেজা চুল গুলো লেপ্টে আছে তার কুঞ্চিত কপালে। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। ধূসর রঙের শার্টের কিছু কিছু জায়গা ভিজে আছে। আমি দৃষ্টি নামিয়ে নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক করে নিলাম। তপ্ত শ্বাস ওনাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আমার হাতে টান পরলো। আমি চমকে ধ্রুবর দিকে চাইলাম। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধ্রুব আমার হাত টান দিয়ে ঝড়ের বেগে রুমে এনে দরজা লাগিয়ে দিলেন। আমাকে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন-

‘এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন আমাকে?’

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম ধ্রুবর এহেন কাজে। ধ্রুবর চোখে মুখে বিরক্তি রেশ। আমি শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে চলে যেতে নিলেই ধ্রুব আমার হাত চেপে ধরলেন। অন্য হাতে আমার মাথা তুলে খানিকটা ঝুঁকে এলেন আমার মুখের দিকে। খানিকক্ষণ স্থির চেয়ে থেকে চাপা কন্ঠে বললেন-

‘এখনও রেগে আছেন আমার উপর? আমি তো সব কিছুই খুলে বলেছি।’

আমি প্রত্যুত্তর করলাম না। অস্বস্তিতে দম আটকে আসার উপক্রম হলো আমার। ধ্রুব নড়ছেন না। আগের মতোই এক দৃষ্টিতে ভ্রু কুচকে আমার দিকে চেয়ে থাকলেন। আবারও বললেন-

‘আচ্ছা রাগ থাকলে সেটা প্রকাশ করুন। বকা দিন, ধমক দিন। দরকার পরলে আমার গালে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিন। তবুও এভাবে চুপচাপ থেকে আমাকে এড়িয়ে যাবেন না। দিন দিন এই গালেই একটা চড় দিয়ে নিজের রাগ মিটিয়ে নিন।’

ধ্রুব সত্যি সত্যিই তার ডান গাল আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। আমার বিস্ফোরিত চোখজোড়া বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। লোকটা কি পাগল না-কি! এসব কি ধরনের অদ্ভুত কথাবার্তা! নির্ঘাত মাথায় সমস্যা টমস্যা আছে। তা নাহলে কেউ কি নিজের বউকে এই কথা বলে? বউয়ের হাতে চড় খাওয়ার এতটাই শখ ওনার? আমি হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে ডান হাতে ওনার গাল সরিয়ে দিয়ে ক্ষীণ স্বরে বললাম-

‘আমি এখনও আপনার উপর রেগে নেই। আসলে কালকের কথা গুলোর জন্য আমি সরি। তুলতুলের ওমন অবস্থা দেখে মাথা ঠিক ছিল না। তাই রাগের বশে আপনাকে যা-তা বলে ফেলেছি। আর এই কারণেই কিছুটা লজ্জিত বোধ করছি বলে কথা বলতে পারছিলাম না। সরি আমার কালকে ওভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি।’

আমার কথা শেষ হতেই ধ্রুব অবাক চোখে আমার দিকে চাইলেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই ঠোঁট প্রসারিত করে মনকাড়া একটা স্নিগ্ধ হাসি দিলেন। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গ টেনেই মধুর কন্ঠে বললেন-

‘তাহলে একটা চুমু দাও।’

আমি চোখ বড় বড় করেই চাইলাম। ওনাকে ধাক্কা দিয়ে সরে যেতে চাইলেও পারলাম না। তিনি ঠিক আগের মতোই আমাকে ধরে রাখলেন। বাঁকা হেসে বললেন-

‘থাক তোমার কষ্ট করতে হবে না। আমি নিজেই নিয়ে নিচ্ছি।’

ধ্রুব ঝুঁকে তার মুখ এগিয়ে নিয়ে আসতে লাগলেন আমাত দিকে। আমি মূর্তির মতো জমে দাঁড়িয়ে রইলাম। বুক ধড়ফড় করছে আমার। এখনই বুঝি বুক চিড়ে বেরিয়ে আসবে হৃদপিণ্ড। আচমকাই ধ্রুবর ফোন বেজে উঠল। ভীষণ বিরক্ত হয়েই তিনি সরে গেলেন। পকেট থেকে ফোন বের করে হতাশ চোখে তাকিয়ে থেকে রিসিভ করলেন। কি কথা হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না। তিনি শুধু বললেন ‘আচ্ছা আমি আসছি।’ ধ্রুব ফোন কানে রেখেই আমার দিকে চাইলেন। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললেন-

‘আমার একটু জরুরি কাজে যেতে হবে। তুমি আম্মু আব্বুর সাথে তুলতুলের কাছে চলে যেও।’

আমার কথার কোনো অপেক্ষা না করেই ধ্রুব দরজা খুলে হনহনিয়ে চলে গেলেন। আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম। ড্রয়িং রুমে আসতেই আব্বুর প্রশ্নের মুখোমুখি হলাম।

‘কিরে মা ধ্রুব কই?’

আমি গাঢ় কন্ঠে বললাম- ‘অফিস থেকে হয়তো কোনো জরুরি কল এসেছে তাই কিছুক্ষণ আগেই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন।’

আব্বু অবাক হয়ে বললেন- ‘আজ আবার কিসের অফিস? শুক্রবার আমাদের অফিস বন্ধ থাকে ভুলে গেলি! এই গাধা ছেলে জীবনেও মানুষ হবে না। আমি কোনো কাজ দেইনি তাহলে আবার কিসের জরুরি কাজ? আবারও হয়তো শুরু করেছে নিজের গাধামির পরিচয় দেওয়া।’

আব্বু রাগে চিড়বিড় করে একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছেন। আমি নিঃশব্দে শুনছি আব্বুর কথা। ধ্রুব কোথায় গেলেন? অফিস ছাড়া তো তার আর কোনো কাজ নেই তাহলে কিসের এত তাড়াহুড়ো? কি এমন কাজ যে তুলতুলের কাছে না যেয়ে ওখানে চলে গেলেন!

চলবে…

[কিছুদিন ধরে মাইগ্রেনের ব্যথায় অসহ্য হয়ে গেছি। তাই অনেক চেষ্টা করেও ঠিক টাইমে গল্প লেখা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও আমি চেষ্টা করেছি বড় পর্ব দেওয়ার। জানি না কেমন লিখেছি। রিচেক করা হয়নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। অপেক্ষা করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here