শেষ রাত পর্ব-২৯

0
1567

#শেষ_রাত
#পর্বঃ২৯
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘তুলতুল কেমন আছে ভাইয়া?’

কেবিনে ডুকেই গমগমে গলায় ভাইয়াকে প্রশ্ন করলাম। আচমকা আমার প্রশ্ন শুনে ভাইয়া কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে-ই পেছন ঘুরে তাকায়। আমার পেছন পেছনই মনি মা আর আব্বু কেবিনের দরজা ঢেলে ভেতরে প্রবেশ করলেন। আমি তাদের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবারও ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। ভাইয়া তুলতুলকে আড়াল করে বসে থাকায় তুলতুলকে দেখা যাচ্ছে না। গম্ভীর মুখে আমার দিকে খানিকক্ষন চেয়ে থেকে গাঢ় স্বরে বলল-

‘তুই নিজেই দেখে নে।’

ভাইয়া তুলতুলের সামনে থেকে সরে এসে দাঁড়ালো। আমি সংকোচিত মনে তুলতুলের দিকে চাইলাম। সঙ্গে সঙ্গেই জল তরঙ্গের মতো হাসির দেখা মেললো। তুলতুল হাসছে। প্রাণোচ্ছল তরল হাসি। মনে হচ্ছে লুকোচুরি খেলায় ধরা পরে ভীষণ খুশি হয়েছে। ভাইয়া হাসতে হাসতে বলল-

‘আমাদের তুলতুল পাখি একদম ঠিক আছে। ঘুম থেকে উঠেই আমার সাথে খেলছে, হাসছে, দুষ্টুমি করছে। ডক্টর এসে ওকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে। এই বয়সেও অসুস্থতায় এতটা হাসি খুশি দেখে উনি মুগ্ধ হয়েছেন। বলেছে মানসিক ভাবে সুস্থ থাকলে শারীরিক অসুস্থ খুব জলদি বিদায় নিবে। বেশিদিন হসপিটালে রাখতে হবে না।’

আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ম্লানমুখে তুলতুলের দিকে এগিয়ে গেলাম। তুলতুল আমার দিকে ডাগরডাগর চোখে তাকিয়ে আছে। অসুস্থতার জন্য মুখ শুকিয়ে যাওয়ায় যেন চোখদুটো আরও বড় বড় মনে হচ্ছে। আমাকে হাসতে না দেখেই যেন তার চোখে কৌতূহল চিকচিক করছে। আমি তুলতুলের পাশে এসে বসতেই তুলতুল আধো আধো গলায় বলল-

‘মামু আস..’

ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে কয়েকবার একই কথা বলল তুলতুল। ভাইয়া এগিয়ে আসলো। আমি উঠে যেতেই ভাইয়া আবারও আগের জায়গায় বসলো। তুলতুল কিছুক্ষন ভাইয়ার আড়ালে চুপ করে লুকিয়ে থাকলো। আমি, মনি মা আর আব্বু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি সে দিকে। খানিকক্ষণ পর তুলতুল ভাইয়ার হাতের ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে ভয় দেখানোর ভঙ্গিতে ‘ভাও’ বলে চিৎকার দিলো। আমি অবাক চোখে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তুলতুল তার মামুর সাথেই তাল মিলিয়ে হেসে যাচ্ছে। মনি মা আর আব্বুও হেসে ফেলল। ভাইয়া আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল-

‘আমাকে দোষ দিবি না। আমি তো শুধু একবার এমন করেছিলাম। কিন্তু তারপর থেকেই তোর মেয়ে নার্স, ডাক্তার যে আসছে তাকেই এমন করে ভয় দেখাচ্ছে। তোর মতোই স্বভাব পেয়েছে। তুইও ছোট বেলা একটা কিছু শুনলে সেটা একনাগাড়ে বলা শুরু করতি।’

আমি হেসে ফেললাম। তুলতুলের হাসিতেই চারপাশে আপনা আপনি খুশিতে মেতে ওঠে। এই মেয়েটা চুপ থেকলেই যেন সব কিছুতে বিষাদ আর অবসন্নতার ছোঁয়া লেগে থেকে।

———————

‘অনু তোকে কিছু জিজ্ঞেস করবো। আশাকরি তুই আমাকে সত্যিটা-ই বলবি।’

আমি শুকনো ঢোক গিলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। মনি মা আমার দিকে ঘুরে বসলেন। ভারী কন্ঠে একের পর এক প্রশ্নের তীর ছুড়তে লাগলেন আমার দিকে,

‘তোর আর ধ্রুবর মাঝে কি এখনও কিছুই ঠিক হয়নি? বিয়ের এতগুলো মাস পেরিয়ে গেছে অথচ ধ্রুব এখনও তোকে আপনি সম্মোধন করে এটা কেমন কথা! তোদের মাঝে কি এতটাই দূরত্ব যে একে অপরকে অপরিচিত মানুষদের মতো আপনি আপনি করে কথা বলতে হবে?’

যা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলাম ঠিক তা-ই হলো। মনি মা এত সহজে এই কথা মাথা থেকে ঝেরে ফেলার মানুষ না। ওনার প্রশ্নের মুখোমুখি আমাকে হতে হবে সেটা আমি জানতাম। কিন্তু এই প্রশ্ন গুলোর প্রতিত্তোরে আমি কি জবাব দিবো? ধ্রুব আর আমার মাঝে যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কিন্তু উনি আমাকে প্রায়শই ‘আপনি’ সম্মোধন করে কথা বলেন। ওনার এসব কথা শুনেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই আমিও এ বিষয় নিয়ে তেমন মাথা ঘামাইনি। কিন্তু মনি মা’কে কি করে বুঝাবো?

‘বিয়ে করলেই বউকে তুমি তুমি করে ডাকতে হবে এমন তো কোনো নিয়ম নেই মা। তুলতুলের আম্মুকে আপনি করে সম্মোধন করতেই আমার ভালো লাগে। তাই আমি প্রায়শই তুলতুলের আম্মুকে আপনি আপনি করে কথা বলি।’

ধ্রুবর কন্ঠস্বর শুনে আমি চমকে গিয়ে দরজার দিকে চাইলাম। অত্যন্ত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। মুখে কোনো সংকোচবোধ কিংবা অস্বস্তির চিহ্ন কিছুই নেই। সকালে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন জরুরি কাজের কথা বলে। সারাদিন পেরিয়ে রাত নয়টা বাজে এসে তার দেখা মিলল। কি এমন জরুরি কাজ যে সারাদিনে একবারও তুলতুলের খোঁজ নেননি। অফিস নেই তাহলে আর কিসের এত কাজ! কিসের এত ব্যস্ততা? এসব প্রশ্ন করতে চাইলেও আমি করতে পারবো না। কোথাও যেন একটা অদৃশ্য বাধা কাজ করে। হয়তো রেস্টুরেন্টে বলা ধ্রুবর সেই কথা গুলোই আমার মনে গেঁথে গেছে।

মনি মা তিক্ত গলায় বললেন- ‘নিজের বউকে কেউ আপনি বলে সম্মোধন করে কখনও দেখেছিস?’

ধ্রুব ক্লান্ত ভঙ্গিতে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন৷ আমি সোফা থেকে দাঁড়াতেই তিনি মনি মা’র পাশে বসে পরলেন৷ শার্টের উপরের একটা বোতাম খুলে ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে বললেন-

‘কে কি করলো না করলো তা দেখার বিষয় আমার না। আমার যেভাবে ভালো লাগে আমি সেভাবেই নিজের বউয়ের সাথে কথা বলবো৷ তা ছাড়া আমি তো বেশিরভাগ সময়ই তুমি সম্মোধন করে কথা বলি৷ তুমি দেখো না!’

মনি মা প্রচন্ডরকম বিরক্ত হলেন। ধ্রুবর পাশ থেকে উঠে খানিকটা দূরে গিয়ে রাগান্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়ালেন। চোখমুখ শক্ত করে রাগী গলায় বললেন-

‘তোদের যা ভালো মনে হয় তোরা তা-ই কর। আমি আর কিছুই বলবো না। তবে হ্যাঁ সময় থেকতে যেভাবে সময়ের মূল্য দিতে শেখা লাগে। সেভাবেই মানুষ থাকা অবস্থায় তার মূল্য দিতে হয়। পরে হারিয়ে ফেললে আফসোস ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। আর ধ্রুব তুই! জরুরি কাজের কথা বলে বাহিরে ঘুরাঘুরি না করে সম্পর্কের যত্ন নে। যত্ন ছাড়া কোনো কিছুই বেশিদিন টিকে না। মাথায় রাখিস।’

মনি মা’র কথা শুনে বুক ধক করে উঠলো। হারিয়ে ফেললে মানে কি? ধ্রুবকে হারিয়ে ফেলার কথা তো আমি কখনোই ভাবিনি। ওনাকে হারিয়ে ফেললে কি শুধুই আফসোস হবে না-কি এর চেয়েও ভয়ংকর কিছু! আমার সব কিছুতেই ওনার অস্তিত্ব খুঁজে পাই। আর উনি হারিয়ে গেলে হয়তো আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলবো।

‘আমি নিজেও হারিয়ে যাব না। আর অন্যকাউকেও হারিয়ে যেতে দিবো না। তোমার ছেলে এতটাও কাপুরষ না৷ আর বাকি রইলো সারাদিন এখানে না আসার কথা। তার কারণ হলো আমি কিছু পারসোনাল কাজে বিজি ছিলাম তাই সারাদিন আসতে পারিনি সরি।’

মনি মা আর কোনো কথা বাড়ালেন না। ধ্রুব আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তুলতুলের কাছে চলে যায়। বেশ খানিকক্ষণ তুলতুলের সাথে সময় কাটানোর পর মনি মা কাঠকাঠ গলায় বললেন-

‘অনেক রাত হয়ে গেছে তোরা এখন বাসায় যা। আজ রাতে আমি আর আপা থাকবো এখানে।’

মনি মা’র কথায় আমি কিছু বলবো তার আগেই আম্মু রুমে এসে বললেন-

‘হ্যাঁ তোরা এখন বাসায় যা। তুলতুলকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না, আমরা আছি।’

আমি দমে গেলাম। তুলতুল আর ধ্রুবর হাসাহাসি করছে। ঘাড় বাঁকিয়ে তুলতুলের দিকে একনজর চেয়ে মনি মা’র গম্ভীরমুখের দিকে দৃষ্টি স্থির করলাম। ধ্রুবর উপর রেগে আছেন তিনি তা ওনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। হয়তো আমার উপরেও রেগে আছে। তাই আমাদের দুজনকেই বাসায় পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছেন। আমি দীর্ঘ শ্বাস ফেললাম।

কৃষ্ণবর্ণের মেঘে ঢেকে আছে রাতের আকাশ। ক্ষনে ক্ষনে দূর আকাশে নিষ্ঠুর গর্জন দিয়ে আলোকিত করছে চারপাশ। পরক্ষণেই আবার ঘন অন্ধকারে ঘিরে নিচ্ছে শহরকে। ঝিরিঝিরি শীতল হাওয়ার বেগ বেড়েছে প্রবলভাবে। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে খানিকক্ষণ বাদেই ঝমঝমিয়ে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পরবে বৃষ্টির কণা। গাছপালা এলোমেলো করে শুরু হবে বৃষ্টি কন্যার মনমাতানো নৃত্য। মিনিট খানেক পেরুতেই ধ্রুব নিঃশব্দে এসে আমার পাশে রেলিঙ ঘেঁষে দাঁড়ালেন। আমি আড় চোখে পরক্ষ করলাম তাকে। সব সময়ের মতোই অতি স্বাভাবিক, শান্তস্বভাব তার। অদূর আকাশে তাকিয়ে আছেন মুগ্ধ নয়নে। চোখদুটোতে তার অসীম মুগ্ধতা। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতেই চিকচিক করে জ্বলে ওঠছে ওনার চোখ দুটো। ঠোঁটের কোণে স্নিগ্ধ তরল হাসি। আমার দৃষ্টি থমকে গেল। থমকে গেলাম আমি নিজেও। অদ্ভুত ভালো লাগার অনুভূতি এসে হানা দিলো আমার মনের কোণে। অনুভূতিরা মিছিল করছে। তীব্র চিৎকার করে বলছে এই মুহুর্তে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য আমার চোখের সামনে। সব চেয়ে সুন্দর এবং শুদ্ধতম পুরুষ আমার দৃষ্টিতে নিবদ্ধ। ধ্রুব তাকালেন। ফ্যালফ্যাল করে আমাকে দেখছেন। আমি এখনও তাকিয়ে আছি। ধ্রুবর ভ্রু নাচানোতেই আমার হুশ ফিরলো। দারুণ অস্বস্তি নিয়ে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করলাম। পর পর কয়েকবার ঢোক দিয়ে গলা পরিষ্কার করে মিহি কন্ঠে বললাম-

‘আপনি এখনও আমাকে আপনি সম্মোধন করে কথা বলেন কেন?’

ধ্রুব মৃদু হাসলেন। সহজ গলায় বললেন- ‘আজ থেকে আরও পনেরো বছর আগে আপনাকে তুই করেই বলতাম। কিন্তু সেদিন রেস্টুরেন্টে আপনাকে তুই বলায় আপনার প্রতিবাদ দেখে মনে হলো নাহ, আর যা-ই হোক এই গম্ভীর চরিত্রের মেয়েকে তুই বলা ঠিক হবে না। এই মেয়ে এখন আর ছোট্ট নেই। গম্ভীর, চাপা স্বভাবের রসকষহীন একটা মেয়ে। সম্মান দিয়ে কথা না বললেই হয়তো আমার গলা চেপে ধরবে। তাই আরকি আপনাকে একটু সম্মান দিয়ে কথা বলি।’

আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম ধ্রুবর দিকে। ভ্রু জোড়া কুচকে কপালে সুক্ষ্ম বলিরেখা পরেছে আমার। ধ্রুবর চোখে মুখে দুষ্টু হাসি। আমার চাহনি আরও তীক্ষ্ণ হলো। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম-

‘আমি রসকষহীন মেয়ে! সম্মান দিয়ে দিয়ে কথা না বললে আমি গলা চেপে ধরবো? আপনি তাহলে আমাকে নিয়ে এসব ভাবেন? আর এই হলো আপনার সম্মান দেওয়ার নমুনা!’

আমার কথা শেষ হতেই ধ্রুব শব্দ করে হেসে ফেললেন। ডান পাশের বাঁকা দাঁতটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমি ভ্রু কুচকে একদৃষ্টিতে ওনার হাসির দিকে তাকিয়ে আছি। আচমকাই উনি হাসি থামিয়ে ফেললেন। ঝুঁকে এলেন আমার দিকে। হঠাৎ করেই ওনার হাসি থেমে যাওয়ায় আমি হকচকিয়ে গেলাম। অথচ তিনি স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই গাঢ় স্বরে বললেন-

‘আপনাকে তিনটা সত্য কথা বলার আছে।’

‘কিসের সত্যি কথা?’

‘এক, আমি সত্যিই আপনাকে মন থেকে সম্মান করি। দুই, আমার ভালো লাগে তাই আমি আপনি সম্মোধন করে কথা বলি৷ তা ছাড়া অন্যসব কাপলদের মতো আমাদের মাঝেও যদি একই জিনিস হয় তাহলে সেটা বোরিং বোরিং লাগবে। তাই আমরা না-হয় অন্য সবার থেকে একটু আলাদা হলাম। তিন, আমি আপনাকে ভালোবাসি। আর আপনিও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছেন। খুব অসাবধানতার সাথেই নিজেকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন।’

আমি অপ্রস্তুত হয়ে দু এক পা পিছিয়ে গেলাম। আমতা-আমতা করে বললাম-

‘এসব আপনি কি বলছেন?’

‘সত্যি কথাই বলছি। কেন আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার?’

ধ্রুব ভ্রু নাচিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলেন। আমি প্রত্যুত্তর করলাম না। ইতস্তত করতে লাগলাম। আমি ধ্রুবকে ভালোবেসে ফেলেছি? সত্যি-ই কি তাই! ভালোবাসা কি বার বার হয়? এত তাড়াতাড়ি একজনের জায়গায় অন্যজনকে বসানো যায়? এটা কি সম্ভব! এসবের উত্তর আমার জানা নেই। ধ্রুব আমার হাতে হেঁচকা টান দিয়ে তার কাছে নিয়ে গেলেন। আমি কেঁপে উঠলাম ওনার স্পর্শে। চোখ বড় বড় ওনার দিকে চাইলাম। শহর তলিয়ে ঝমঝমে বৃষ্টি শুরু হলো। হিম শীতল বৃষ্টি কণার স্পর্শে আলাদা এক শিহরণ বয়ে গেল সর্বাঙ্গে। ঠিক এই শীতল আবহাওয়ার মতোই ধ্রুবর চাহনি। নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো এক অচেনা বৃষ্টিস্নাত শহর আছে ওই চোখে।

‘তোমার চোখদুটো-ই বলে দেয় তুমি আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছো। আমার দিকে তাকানোর ধরন আর তোমার চাহনি সবটাই বলে দেয় তুমি আমাতে আবদ্ধ হয়েছো। আমার স্পর্শে আগের মতো অস্বস্তি বোধ না করে লজ্জায় কেঁপে ওঠার সেই অনুভূতি বলে দেয় তুমি আমাকে অনুভব করো। এত কিছুর পরিবর্তন হলো অথচ তুমি তা লক্ষ্য করলে না। তবে আমি সবটাই লক্ষ্য করেছি। আর আমি এটাও জানি তুমি এই অনুভূতির মুখোমুখি হতে চাচ্ছো না। হয়তো ভয়ে নিজেকে আড়াল করে নিচ্ছো। আমি তোমাকে জোর করতে পারবো না। শুধু বলবো আমি কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবো না। আর তোমাকেও যেতে দিবো না। যতদিন না তুমি নিজের মুখে তোমার ভালোবাসার কথা বলবে ততদিন আমি শুধু অনুভব করবো তোমার না বলা অনুভূতি আর অপ্রকাশিত ভালোবাসা। অনেক কথা বলে ফেললাম টায়ার্ড হয়ে গেছি। এবার একটা চুমু দাও তো সানসাইন।’

ধ্রুবর শেষের কথাটা শুনেই আমি বিষম খেলাম। ধ্রুব ঝংকার তুলে হাসতে লাগলেন। বৃষ্টির শব্দের মতোই তার হাসির শব্দ ছড়িয়ে পরলো সর্বত্র। আমি একমনে তাকিয়ে রইলাম ধ্রুবর দিকে। আমি সত্যিই ভয় পাচ্ছি। আবারও ভালোবাসে ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার ভয়। ধ্রুবকে হারিয়ে ফেলার ভয়। ভালোবাসার সম্পর্ক এক পর্যায়ে তিক্ততার সম্পর্কে পরিনত হয়ে যাওয়ার ভয়। হ্যাঁ আমি ভয় পাচ্ছি আমার অনুভূতির মুখোমুখি হতে। ধ্রুব সবটাই বুঝতে পারেন। আমি না বললেও তিনি বুঝতে পারেন।
ফোনের তবে তীক্ষ্ণ শব্দে আমি ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম। ধ্রুব ফোন হাতে নিয়ে হতাশ ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছেন। আমি কৌতূহলী চোখে চেয়ে রইলাম ধ্রুবর দিকে৷ ধ্রুব ম্লান হেসে বললেন-

‘বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। আপনি রুমে যান নাহলে পুরোপুরি ভিজে যাবেন।’

আমি বুঝলাম ধ্রুব স্পেস চাচ্ছে ফোনে কথা বলার জন্য। আমি নিঃশব্দে রুমে চলে আসলাম। কিছুটা দূর আসতেই ধ্রুবর চাপা কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম।

‘এত রাতে কল করেছো কেন?’

আমি থমকে গেলাম ধ্রুবর কথা বলার ধরন আর আন্তরিকতা শুনে। চিন্তিত শোনাচ্ছে তার গলার স্বর। কে ফোন করেছে? সকালেও এক ফোন কলেই সব কিছু ফেলে দিয়ে চলে গেলেন। আর এখন এত রাতে!

চলবে…

[রিচেক করা হয়নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here