১.
ডিভোর্স পেপারটাতে সাইন করার শেষ মূহূর্তেও আমি আমার স্বামী আরিশের দিকে তাকালাম এই আশায় হয়তো সে এখনি বলে উঠলো,
“সাইন করোনা মুগ্ধ সাইন করোনা,আমি তোমাকে ভালোবাসি এইসব মিথ্যা”
কিন্তু না আমার আশাকে মিথ্যা করে আরিশ চুপ করে বসে আছে মাথা নিচু করে।আমি চোখের কোণে জমে থাকা জলটাকে মুছে কাপাকাপা হাতে সাইন করে দিলাম’মেহরুবা ইসলাম মুগ্ধ’।
কি আজব এই ধরনির নিয়ম তাইনা।তিন অক্ষরের একটা শব্দ দিয়ে দুটো মানুষ একটা পবিত্র সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। আবার এই তিন অক্ষরের একটা শব্দ দিয়েই সেই পবিত্র সম্পর্ক হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দুটো মানুষ।আচ্ছা একটা পবিত্র সম্পর্কের ভিত কি এতই হালকা যে সামান্য মহো মানুষ ত্যাগ করতে পারেনা।
আমার সাইন শেষ হতেই উকিল সাহেব ফাইলটা নিয়ে আরিশের কাছে দিলেন।আমি আরিশের দিকে এক পলক তাকালাম। তার চোখে মুখে কোনো বিষন্নতা নেই আর না আছে আনন্দ।আরিশ আমার দিকে একবার তাকালাও না ফোটাফোট সাইন করে দিলো।এমন মনে হচ্ছে সাইনটা করলেই সে বেঁচে যাবে।
হয়তো সত্যিই বেঁচে যাবে আজকের পর।
উকিল সাহেব ফাইল হাতে নিয়ে যেই কথাটা বললেন তা আমার কাছে তিক্ততার মতো লাগ্লো।
উকিল:আজ থেকে আপনারা আলাদা।আপনাদের মাঝে আর কোনা স্ত্রীর সম্পর্ক নেই।
অবশেষে শেষ হয়ে গেলো আমাদের দুইবছরের বিবাহীত জীবন।আজ থেকে আমরা আলাদা।দুজনের জীবন আজ দুদিকে চলে গেলো।আরিশের উপর আর আমার কোনো অধিকার রইলনা।আজ থেকে আমি হয়ে গেলাম তার প্রাক্তন স্ত্রী।শেষ হয়ে গেলো আজীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি।মিথ্যা হয়ে গেলো ভালোবাসা।
কোর্ট থেকে বের হয়ে দেখলা এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছেন আমার বাবা আমার সৎ মা আর বোন সায়মা।এই একটা মেয়ে যার জন্য নিজের শৈশবকালও কোনো শান্তি পাইনি আর না এখন নিজের সংসারে পেলাম।আমি সামনে হাটার জন্য পা বাড়ালে পিছন থেকে আরিশ আমার নাম ধরে ডেকে উঠলো,
আরিশ:মুগ্ধ শোনো!
আরিশের এই নাক ধরে ডাকাটা এখনো শুনলে বুকের ভিতর একটা হিম বাতাস বয়ে যায়। কিন্তু আফসোস এই মানুষটাই আজ আমাকে এভাবে ছেড়ে দিলো ঠকালো আমায়।আমি থেমে গেলাম তবে পিছনে ফিরে তাকালাম না।আমার সৎ মা আর বোন রাগে ফুসছে। হয়ত এটাই ভাবছে যে এখনো আরিশ কেন আমায় ডাকলো।
আরিশ আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমার হাতে একটা খাম দিয়ে বল্লো,
আরিশ:এখানে কাবিনের ৩লক্ষ টাকা আছে তোমার পাওনা টাকা এটা।
আমি একবার আরিশের দিকে আর একবার খামটার দিকে তাকাচ্ছি। করুনা করছে আরিশ আমায়। ও কি ভেবেছে ও আমায় ছেড়ে দিয়েছে বলে আমি আর চলতে পারবোনা। আমি চুপ করে দাঁড়িয়েছিলাম এর মাঝে সায়মা এসে আরিশকে জরিয়ে ধরলো। আরিশকে এভাবে জরিয়ে ধরতে দেখে আমার কলিজার ভিতরটা মনে হয় কেউ আগুনে জালাচ্ছিলো।সায়মা আরিশকে জরিয়ে ধরে থাকা অবস্থাতেই বল্লো,
সায়মা:আরিশ চলো এখন আর এই মেয়ের সাথে তোমার কোনো কাজ নেই।তোমার অফিসে লেট হচ্চে।
আরিশ:হু
আরিশ সায়মা চলে যাবে এমন সময় কেউ আরিশের গালে একটা কষে থাপ্পরের আওয়াজ পড়ার শব্দ পেলাম। আমি সহ আসে পাশের সবাই তাকালাম। আমি তো অবাক হলাম কারণ আমার ভাইয়া দাঁড়ানো। সেই আরিশকে থাপ্পরটা মেরেছে।ভাইয়ার চোখ লাল হয়ে আছে অনেক রেগে আছে ভাইয়া।আরিশের শার্টের কোলার ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলে,
মেহের:এই হারামি তোর সাহস কি করে হয় আমার বোনকে তুই টাকা দেস। দোয়া করছিস আমার বোনকে তুই হ্যা দোয়া করছিস। শোন তোর মতো এক আরিশ ওকে ছাড়লে কি হবে এই আরিয়ান ইসলাম মেহের এর নিজের বোনকে বসিয়ে খাওনার মতো ক্ষমতা আছে।তোর মতো নর্দমার কীট আমার বোনকে কোনাদিন ডিজার্ব করেনা।পচা শামুকে মুখ দিয়ে তুই ভালো শামুকটাকে অবহেলা করলি একদিন তুই বুজবি তুই কি ভুল করেছিস।
ভাইয়া এক নাগারে কথা গুলা বলে আমার কাছে এগিয়ে আসলো। আর আরিশ কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।পাশে সায়মা রাগে ফুসছে।ভাইয়া আমার কাছে এগিয়ে আসতেই আমি ভাইয়া দেখে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না ভাইয়া জরিয়ে ধরে কেঁদে উঠলাম।
মুগ্ধ:ভাইয়া!!!!
মেহের বোনকে বুকে জরিয়ে ধরে নিলো তার চোখেও পানি একমাত্র আদরের বোনের চোখের পানি তার সয্য হয়না তার বোন আজ কাঁদছে অথচ সে ভাই হয়ে কিছু করতে পারছেনা।
মেহের:কাঁদিস না চড়ুইপাখি আমার।ভাইয়া এসেগেছিতো। আর কেউ তোকে কিছু করতে পারবেনা কেউ তোকে আঘাত করতে পারবেনা।চল আমার সাথে।
মুগ্ধ মেহেরের কথায় মাথা ঝাকিয়ে মেহের সাথে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে মেহরাব সাহেব পিছন থেকে বলে উঠলেন,,
মেহরাব:মেহের তুমি ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো মুগ্ধ আমাদের সাথে বাসায় যাবে।
মেহের মেহরাব সাহেবের এই কথা শুনে রেগে উঠলো মুগ্ধকে গাড়িতে গিয়ে বসতে বলে মেহরাব সাহেবের কাছে এগিয়ে এসে বল্লো,
মেহের:ডোন্ট ইউ ডেয়ার মিস্টার খান।আপনি আমার বোনের জন্য অনেক করেছেন।এমন ভালো করেছেন যার ফোলে আজ আমার বোনের এই অবস্থা।আপনার কাছে একবার আমার বোনকে আমি রেখে গিয়ে অনেক বড় ভুল করেছি সেই ভুল আবার করবো আপনি ভাবলেন কি করে।আপনার কি মিনিমাম লজ্জা নেই। আপনার অই মিসেস এর মেয়ে আমার বোনের সংসার নষ্ট করে দিলো। আর আপনি সেই মেয়েকে কিছু না বলে এখানে চলে আসলেন আরেক মেয়ের সংসার ভাংগা দেখতে ওয়াও আপনাত তারিফ না করেতো পারিনা।শুনেন মিস্টার খান আমার বোন আজ থেকে আমার কাছে থাকবে আমার বোনের আসেপাশে যেনো আপনার ছত্রছায়াও না দেখি।
মিসেস খান:মেহের বাবার সাথে কিভাবে কথা বলছো।এতো বেয়াদব হয়েছো তুমি।বাবাকে সম্মান করোনা।
মেহের:বাবা!বাবার কোন দায়িত্ব উনি পালন করেছেন যে উনি সম্মান পাবেন আর আপনি।আপনাকে আগেও বলেছি আমার সাথে কথা বলবেন না।
মেহরাব:মেহের!!!উনি তোমার মা হয়।
মেহের:নাহ্!উনি আমাদের মা নয়।উনি শুধু আপনার স্ত্রী আর আপনার মেয়ের মা।আমার আর আমার বোনের মা তো সেই ২০ বছর আগেই মারা গেছে।মারা গেছে না মেরেফেলেছিলেন আপনারা তা শুধু মহান আল্লাহ জানেন।তবে ভালো হয়েছে মা চলেগেছে মুক্তি পেয়েছে আপনার মতো লোকের থেকে নাহলে এই দিন দেখলে মায়ের হোয়তো কষ্টের সীমা থাকতোনা।
কথা গুলো বলে মেহের চলে আসলো।মুগ্ধ এত্তখন ধরে গাড়িতেই বসে ছিলো আর কান্না করছিলো। ভাইয়াকে আসতে দেখে চোখের পানি মুছে নিলো।মেহের গাড়িতে এসে বসে বোনের দিকে তাকালো চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।মেহের কিছু না বলে গাড়ি স্ট্রাট দিলো।
মেহরুবা ইসলাম মুগ্ধ।বাবা মায়ের ছোট মেয়ে।হালকা শ্যাম্ববতি তবে অনেক মায়াবি তার মুখ।মুগ্ধরা দুইভাই বোন।মেহের আর মুগ্ধ।মুগ্ধের মা মেহেজাবিন ইসলাম মুগ্ধের বয়স যখন চার আর মেহেরের বয়স যখন পাঁচ তখন একটা গাড়ির এক্সসিডেন্টে তিনি মারা যান।এক্সসিডেন্টের সময় মুগ্ধ তার মায়ের সাথে ছিলো নানুবাড়ি থেকে ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে।ভাগ্যক্রমে মুগ্ধ বেঁচে গেলেও তার মাকে বাঁচানো যায়নি।মেহের তখন তার বাবার সাথে বাসায় ছিলো।ঘটনা শুনে তারা তৎক্ষনাক হাসপাতালে গেলেও মেহেজাবিনকে জীবিত পাননি।মেহের মাকে জরিয় সে কি কান্না আর মুগ্ধ তো মাথায় হাল্কা ব্যাথা পাওয়ার কারনে অজ্ঞান ছিলো।মেহেজাবিনকে মাটি দেওয়ার আগে একবার মুগ্ধকে দেখানো হয় মুগ্ধ এত অল্প বয়সে মায়ের শোকটা মেনে নিতে পারেনি বলে অজ্ঞান হয়ে যায়।মেহেরের নানাবাড়ির সবাই বলেছিলো এটা কোনাও দূর্ঘটনা হতে পারেনা কারণ পুলিশ ইনভেস্টিকেশন করে পেয়েছিলাও গাড়ির ব্রেক কেউ ইচ্ছে করে নষ্ট করেছিলো। তাই তারা পুলিশকে এই বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যেতে বলে। কিন্তু পুলিশ আর কোনো প্রমান হাতে পায়নি বলে কেস বন্ধ করে দেয়।মুগ্ধ মাকে হারিয়ে সারাদিন কান্না করত তাই তাকে আর মেহেরকে তার মামারা তাদের কাছে নিয়ে গেলো।তারা মুগ্ধ মেহেরকে দেখা শুনা করতে লাগলো।এভাবে এক বছর পর মেহেরাব বিয়ে করে আনেন সালমাকে।সালমা ছিলেন মেহেজাবিনের বান্ধুবি।সবাই অনেকটা অবাক হয়েছিলো তবে মেহেরাব জানিয়েছিলো সে মুগ্ধ আর মেহেরের জন্য সালমাকে বিয়ে করেছে তাদের দেখাশুনার জন্য সালমাকে আনা।বিয়ের পরেই মেহেরাব মুগ্ধ আর মেহেরকে নিজের কাছে আনতে চায় মেহের সাফ জানিয়ে দেয় সে যাবেনা।কিন্তু মুগ্ধ ছোট থাকায় তাকে জোর করেই নিয়ে যায় তার বাবা।মুগ্ধের প্রথম প্রথম ছোট মায়ের সাথে থাকতে কষ্ট হতো কিন্তু আসতে আসতে সে মানিয়ে নিলো।আর ছোট মাও তাকে অনেক আদর যত্ন করতো।কিন্তু মুগ্ধতো জানতোনা এই ভালোবাসা যত্ন সব ছলোনা।মুগ্ধের যখন সাতবছর ছোট মায়ের কোল জুরর এলো সায়মা অগাত্য সায়মার দায়িত্ব এসে পরলো মুগ্ধের ঘারে।অতুটুকু বাচ্চা মেয়ের যার নিজের এখন হেসে খেলে বেড়ানোর কথা তাকেই এখন একটা বাচ্চা সামলাতে হচ্চে।সায়মাকে সামলানোর পাশাপাশি বাড়ির সকল কাজ তাকে করতে হচ্ছে।সায়মা হবার পরেই ছোট মা পালটে গেলো।যে আগে তাকে একটু বকা দিতো না এখন বোকাতো দেই সাথে মারও খায় সে।আর বাবা,সে তো সেই ছোট মায়ের হাতে দেওয়ার পর তার কোনো খোজনেইনি।আগে যেই বাবা তার সাথে কত খেলতো বেড়াতে নিয়ে যেতো আজ সেই বাবাই তার কত পর হয়ে গেছে।তার পুরো দুনিয়াত জুরে শুধু ছোট মা আর সায়মা।এভাবেই মুগ্ধের জীবন চলে যেতে লাগলো।মুগ্ধ পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়ির সকল কাজে দক্ষ্য হয়ে উঠলো।মুগ্ধের নানা বাড়ির সাথে তাকে তেমন যোগাযোগ করতে দেওয়া হতোনা।মুগ্ধ তার ভাই মেহেরের সাথে কথা বলতে পারতোনা।লুকিয়ে লুকিয়ে খুব কান্না করতো সে তার ভাইয়ের জন্য।সায়মাকে ছোট থেকে মুগ্ধ লালনপালন করলেও সায়মা তাকে ছোট থেকে দেখতে পারেনা।সব সময় মায়ের কাছে মিথ্যা নালিস করে মার খাওয়ায় তাকে।মুগ্ধ শুধু রাতের আধারে বসে চোখের পানি বিসর্জন দেয়।মুগ্ধের মাধ্যমিক পরিক্ষার পর তার ছোট মা জানিয়ে দেয় তারা আর তার পড়ালেখার খরচ বহন করতে পারবেনা।পড়ালেখা করতে হলে নিজে যেনো জোগার করে পড়ে।মুগ্ধ কিভাবে টাকা জোগার করবে সে ভেবে পাচ্ছিলোনা।তখন তার নানাবাড়ির সাথে সে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।মুগ্ধের নানা জানেন মুগ্ধের বাবা মুগ্ধকে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছেনামুগ্ধ খুব কষ্ট করে তাদের সাথে যোগাযোগ করে আর পুরা বিষটা খুলে বলে তখন মুগ্ধের মামারা মিলে মুগ্ধের পড়াশুনার দায়িত্ব নেয়।মুগ্ধ তখন ও মেহেরের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি কারন মেহের স্কলারশিপ পেয়ে দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিলো।মুগ্ধ যখন এ.সে.সি পরিক্ষা দিলো তখন একদিন হঠ্যাৎ আরিশদের বাড়ি থেকে প্রাস্তাব এলো।আরিশ মুগ্ধকে তার এক রিলেটিবের বাসায় দেখছে সেখান থেকেই ওকে পছন্দ হয়েছে তার।সালমা কখনো চায়নি সতিনের মেয়ে এতো ভালো ঘরে যাক কিন্তু তবুও বিয়েটা হয়ে যায়।বিয়ের কথা মুগ্ধের নানাবাড়ির কাউকে প্রথমে জানানো হয়নি জানালে তারা বাধাদিতেন।তাই বিয়ে হবার পর মেহেরাব জানান।মেহের তখন ও জানেনা তার বোনের ব্যাপারে কিছু।
বিয়ের পর আরিশের সাথে মুগ্ধের সম্পর্ক ঠিক হতে বেস সময় লাগে।ছয় মাস তারা শুধু বন্ধুর মতো ছিলো।তবে আরিশের ভালোবাসায় মুগ্ধ হার মেনে যায়।শুরু হয় তাদের সংসার জীবন।মুগ্ধের গুনের প্রশংসা সবাই করতো।মুগ্ধ নিজের মোনের মাধুরি দিয়ে সংসারটাকে সাজিয়ে নিয়েছিলো।রাতে আরিশের সাথে জেগে জেগে গল্প করার জন্য বারান্দাটাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে।গোলাপ,জবা,হাসনাহেনা,একটা দোলনা লাইট দিয়ে বারান্দাটা সাজিয়েছে।আরিশ রোজ শুক্রুবার মুগ্ধকে নিয়ে ঘুরতে যায়।আরিশের সাথে বিয়ের পর মুগ্ধের জীবন একদম পালটে যায়।আরিশের মা বাবা অনেক আগেই মারা যায় তাই এই দুই টোনাটুনির সংসার চলছিলো মধুর হয়ে।
কিন্তু ওইযে সুখ সবার কপালে সয়না।বিয়ের দুই বছরের মাথায় সব কিছু তছনছ হয়ে যায়।তার সুখের সংসার ভেংগে দেয় তার নিজের বোন যাকে সে সেই ছোট থেকে লালনপালন করলো সেই ভেংগে দিলো।আরিশের সাথে সায়মার অবৈধ সম্পর্কের কথা জানতে পারলো মুগ্ধ নিজের চোখেই সব দেখতে পায় সে।সেদিন চিৎকার করে কেঁদেছিল সে।আর এই সম্পর্কের ফল সরূপ ডিভোর্স হয়ে যায় আরিশ আর মুগ্ধের।মুগ্ধ মুখ ফূটে একবার ও জিজ্ঞেশ করেনি কেন আরিশ এমন করলো।শুধু জিজ্ঞেশ করেছিলো।আমায় এভাবে না ঠকালেকি হতোনা।সেদিন আরিশ কিছু বলেনি।সুধু বলেছিলো ডিভোর্স দিয়ে দেও আমায়।
২.
মেহেরের ডাকে হুস ফিরলো মুগ্ধের।এত্তখন অতীতের কথা ভাবছিলো সে।চোখের কোনে পানি জমে গেছে আবার।পানিটা মুছে নিলো সে।মেহের গাড়ি থেকে নেমেগেলো মুগ্ধও নামলো।মেহের একজন নামকরা বিজনেসম্যান।অনেক কঠোর পরিশ্রম করে আজ সে এই জায়গায় এসেছে।মেহের বিয়ে হিয়েছে তার ভালোবাসার মানুষ রুহির সাথে।মেয়েটা অনেক ভালো মনের।খুব ভালোবাসে সবাইকে।মেহের মুগ্ধ ঘরে ঢুকা মাত্র রুহি এসে মুগ্ধকে জরিয়ে ধরলো।মুগ্ধো রুহিকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো।এক মাত্র ভাইয়ের বউ না আসতে পেরেছিলো বিয়েতে না কোনো যোগাযোগ।মুগ্ধ রেগে কোনো যোগাযোগ করেনি।তার ভাইয়ের প্রতি অভিমান হয়েছিলো।কিন্তু আজ সেই ভাই তাকে আগলে নিলো।
রুহি মুগ্ধের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ওকে শান্ত করছে,,
রুহি:কাঁদিস না পাখি।আমরা আছিনা।তোর পাশে আমরা আছি কাঁদিস না।
মুগ্ধ:ভাবিপু সব শেষ হয়ে গেলো।আমার জীবনটা পুরো এলোমেলো হয়ে গেলো।
রুহি:কিচ্ছু শেষ হয়নি।কাঁদিস না।
মেহের:রুহি চড়ূইপাখিকে নিয়ে রুমে যাও।
ওকে কিছু খাইয়ে দেও। সারা সকাল কিছু খায়নি ও আমি জানি।আমাকে না বল্লেও ওর ভাই সব বুজে ওকে বলে দিও।
মেহের কথাটুকু বলে নিজের ঘরে চলে গেলো।
রুহি মুগ্ধকে নিয়ে রুমে এলো মুগ্ধকে ফ্রেশ হতে বলে খাবার আনতে বল্লো।
মুগ্ধ ওয়াশ্রুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে এলো।কান্না করার কারনে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রুহি খাবার নিয়ে বসে আছে।মুগ্ধ গিয়ে রুহির পাশে বস্লো।রুহি মুগ্ধকে খাওয়াতে নিলে মুগ্ধ খাবেনা বলে জানায়।রুহি অনেক জোরাজুরি করে কিছু খাইয়ে দেয়।খাওয়া শেষে মুগ্ধ রুহির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।শুনেছি মায়ের পর বড় ভাইয়ের বউরা মায়ের মতো হয়।মুগ্ধ তাই ভাবিপুর কোলে শুয়ে পড়লো।রুহি মুগ্ধের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মুগ্ধ কান্না করার কারনে ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পরলো।
আরিশ অফিসে এসে চুপচাপ বসে আছে। কিছুই তার ভালো লাগছেনা। মুগ্ধের কান্না তার কোনোদিন সয্য হতোনা। আজ ও তার সয্য হচ্চিলোনা।আচ্ছা সে কোনো ভুল করলোনাতো।কিন্তু সে তো সব প্রমান হাতে পেয়েছিলো আর দেখেওছিলো।নাহ্ সে ঠিক করেছে।বেইমান মুগ্ধ বেইমান।সায়মা আরিশের কাছে এসে ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
সায়মা:কি ভাবছো জান।
আরিশ:কিছুনা আর এভাবে এসে জরিয়ে ধরবানা অফিসের সবাই দেখলে খারাপ ভাব্বে।
সায়মা:আচ্ছা চলো মিটিং আছে না তোমার।
আরিশ:হ্যা আর তুমি এখানে কেন আজ তোমার ক্লাস নেই।
সায়মা:আছে তো এইযে এখোনি যাবো।
আরিশ:যাও তাহলে
সায়মা:ওকে বাই লাভ ইউ জান
আরিশ:……….
সায়মা চলে গেলো আর আরিশ তার মিটিংএ গেলো।
বিকালে মুগ্ধের ঘুম ভাংলো।আসতে করে উঠে বসলো।শরিলটা এখন কিছুটা হালকা লাগছে।মুগ্ধ উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলো।দেখলো মেহের বসে আছে।মেহের মুগ্ধকে দেখে ওর পাশে এসে বসতে বল্লো।মুগ্ধ গিয়ে বসে পরলো ওর পাসে।রুহি রান্না ঘরে চা বানাচ্ছে মুগ্ধের পছন্দের আদা লেবুর চা।চা নিয়ে এসে মুগ্ধ মেহেরকে দিলো।চা খেয়ে মুগ্ধের আরো ভালো লাগছে।এই চাটা তাকে অনেক রিফ্রেশ রাখে।
মেহের বোনের দিকে তাকিয়ে ওকে বল্লো,
মেহের:চড়ুইপাখি এই এতো বছরে তোর কি আমার কথা একটুও মনে পরেনি?
মুগ্ধ ভাইয়ের প্রশ্নে একটুও অবাক হয়নি সে জানে তার ভাই এই প্রশ্নটা করবেই তাই সে বসা থেকে উঠে মেহেরের কাছে গিয়ে হাটু গেরে বসে কোলে মাথা রেখে বলতে লাগলো,
তোমাকে কি করে ভুলবো বলো ভাইয়া।তোমার কথা আমার সব সময় মনে পড়তো।কিন্তু ওই লোকটা আমার তোমার সাথে নানুদের সাথে যোগাযোগ করতেদিতোনা।ছোট মায়ের অত্যাচার সয্য করতে পারতাম না তখন খুব কাঁদতাম।মাকে তোমাকে খুব মনে পরতো।জানো ভাইয়া মাঝে মাঝে ইচ্ছা করতো পালিয়ে যাই।তোমার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছা করতো কিন্তু তুমি নাকি স্কলারশিপ পেয়ে বাহিরে চলেগিয়েছিলে।তাই অনেক অভিমান হয়েছিলো।তারপর অই লোকটা আর ছোটমা মিলে বিয়ে দিয়ে দিলো আরিশের সাথে।ভেবেছিলাম হয়ত এখন একটু সুখে থাকবো কিন্তু আমার মতো অভাগীর কপালে সুখ নেই রে ভাইয়া সুখ নেই।কেন যে সেদিন মা আমাকে সাথে নিয়ে গেলোনা।বলেই হুহু করে কদে উঠলো মুগ্ধ।
বোনের দুঃখের কথা গুলো শুনে চোখ থেকে পানি পরছে মেহেরের।সে ভাবতেও পারেনি তার বোন এত কষ্টে ছিলো।ভেবেছিলো বাবানামক মানুষটা তার বোনকে অন্তত ভালো রাখবে।কিন্তু না বোনকে কতটা কষ্ট দিয়েছে লোকটা।মেহের বোনকে জরিয়ে ধরে বলতে লাগলো,
“আমিও তোকে খুব মনে করতাম।কিন্তু তোর সাথে যোগাযোগই করতে পারতামনা।নানু মামাদের জিজ্ঞেশ করলে বলতো তারা কল করে কিন্তু অই লোকটা তোর সাথে কথা বলতে দেয়না।আমি রাগে দুঃখে আর কল দিতে না করতাম।এতপর পড়াশুনায় মন ডুবিয়ে দিলাম।ভালো রেজাল্ট করলাম।স্কলারশিপ পেয়ে চলে গেলাম দেশের বাহিরে।আমি ভাবতাম অই লোকটা তোকে ভালো রেখেছে। কিন্তু আমি তো পুরা ভুল আমি তোকে আর কোনোদিন অই লোকের কাছে যেতে দেবোনা।তুই আমার সাথে থাকবি আর আমাকে ক্ষমা করে দে।”
ভাই বোনের মানঅভিমানের পালা শেষে এখন কান্নাবর্না বইছে ভাই বোন এক অপরকে এত গুলা বছর পর পেয়ে আজ সব মানঅভিমান মুছে দিচ্ছে।রুহির চোখে পানি এতগুলা বছর পর অবশেষে ভাই বোন এক হলো।
#চলবে
শেষ_থেকে_শুরু
পর্ব_১
#নন্দিনি_চৌধুরী