শেষ_প্রহর পর্বঃ০৬

0
1200

#শেষ_প্রহর
পর্বঃ০৬
জাহান আরা

৬ তলায় রিসিপশনে তোজাম্মেল সাহেব,নিশান,নিষাদের ছবি লাগানো বড় করে।রুমি এগিয়ে গিয়ে রিসিপশনিস্টকে জিজ্ঞেস করে এই ছবিগুলো কাদের।

রিসিপশনিস্ট জবাব দেয় হাসপাতালের মালিক ওনারা।
রুমি সবার নাম জেনে এলো।

চন্দ্র ঠোঁট কামড়ে বসে আছে,রুমির বাড়াবাড়ি চন্দ্রর সহ্য হচ্ছে না।আদিবের এই এক্সিডেন্টের কথা রুমি বেমালুম ভুলে গেলো,রুমি বসে বসে নিষাদের গুণকীর্তন করছে,নিষাদ কে দেখে মনেই হয় না কতো ধনী পরিবারের ছেলে নিষাদ,কি সুন্দর রুমির সন্ধানে ভার্সিটি তে চলে গেলো রুমি বিশ্লেষণ করে বলছে।

রুমির ফালতু বকবকানি মিরার ও সহ্য হলো না,এক দমক দিয়ে উঠে মিরা।
চন্দ্রর মাথা ধরে যায় রুমির বকবকানি শুনে,পরে আসবে বলে বের হয়ে যায়। টিউশনিতে কল দিয়ে বলে আজকে যেতে পারবে না।

বাসায় পৌঁছে সোজা রুমে চলে যায়। চেঞ্জ না করেই সোফায় দপ করে শুয়ে যায়।চিন্তায় কিছু ভালো লাগছে না।অনেক দিন মায়ের সাথে,অনিতার সাথে কথা হয় না।
অনিতার ফোন নেই,অনিতার সাথে কথা বলতে হলে মা’কে কল দিতে হবে কিন্তু মায়ের উপর কেমন অভিমান জমে গেছে,কেনো মা সুলতানার কথা তে এখানে বিয়ে দিয়ে দিলো,বলির পাঁঠা হতে হলো তাকে।
এই মিথ্যা সম্পর্ক কতো বয়ে বেড়াবে সে?

এই জীবন নরকের মতো লাগছে চন্দ্রর,এতো আরাম আয়েশ সে চায় নি,রোজ রোজ রাজকীয় খাবার ও চায় না,দুবেলা দুমুঠো কোনোমতে খেতে পারলেই তো খুশি ছিলো।

সেই আগের জীবন,ঘুম থেকে উঠে অনিতা চলে যেতো পড়াতে,মা ও চলে যেতো পড়াতে,চন্দ্র রান্নাবান্না করে রাখতো,মা অনিতা ফিরে এলে খেয়ে সবাই বের হতো কলেজ,ভার্সিটি আর স্কুলের জন্যে। ভার্সিটি শেষ করে চন্দ্র টিউশনি করতে যেতো,ফিরতে ১০ টা বেজে যেতো।

কি কষ্টের দিন ছিলো,তবু প্রতি শুক্রবার ছিলো ঈদের মতো আনন্দের,সপ্তাহে এই একদিন সবাই বাড়ি থাকতো,ছুটোছুটি নেই। আরাম করে ঘুমাতো দুবোন মিলে।
সপ্তাহের এই দিনটি মা চাইতো একটু ভালো কিছু রান্না করতে,অভাবের সংসারে ভালো খাবারের স্বপ্ন দেখা বিলাসিতা।

তবু তিনি চেষ্টা করতেন সেদিন অন্তত মেয়েদের জন্য কিছু রান্না করার।

আর এখন,প্রতিদিন মাছ,মাংস,ডিম হাজার আইটেম,সব আইটেম মুখে দেওয়া ও হয় না তবু রোজ রোজ রান্না হয়।
এই রাজকীয় খাবার চন্দ্রর মুখে রোচে না,খেতে বসলে মনে পড়ে ছোট বোনটা না জানি কি খেয়েছে,হয়তো মা আজকেও ডিম ভেজে রেখে দুই ভাগ করে রেখেছে দুই বেলা দুই টুকরো খাবে বলে অনিতা।

আচ্ছা বাবা কেনো এতো তাড়াতাড়ি চলে গেলো?
বাবা থাকলে তাদের জীবন বড় খালাদের মতো সুখের হতো।
জীবনের সব টুকরো টুকরো স্মৃতি মনে পড়ে যায় চন্দ্রর,কিছু স্মৃতি আছে এতোই ভয়ংকর যা কখনো কাউকে বলতে পারে নি চন্দ্র।
জীবনে কতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যায় প্রতিটি মানুষের কে জানতে পারে সেটা!

চন্দ্র বাসায় চলে এসেছে শুনে নিষাদ ও আসে।চন্দ্র শুয়ে আছে সোফায় নিষাদকে দেখে উঠে বসে চন্দ্র।

চন্দ্রকে শাড়ি পরা দেখে নি নিষাদ ভালো করে বিয়ের রাতে,আজ এই নরমাল সাজে চন্দ্রকে দেখে নিষাদের বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা হতে থাকে।

খোলা চুল উড়ছে,কালো শাড়ির উপর দিয়ে চন্দ্রর নাভি দেখা যাচ্ছে,কি গভীর,এই নাভির দিকে তাকিয়েই নিষাদের নিজেকে মাতাল মাতাল লাগে।
ইচ্ছে করছে ছুঁয়ে দিতে,কিন্তু সামনে বাঁধা,এক অদৃশ্য দেয়াল তাদের মাঝে,কিন্তু মনের আগুন তো কোনো বাঁধা মানছে না।
চন্দ্র কেনো সোফায় ঘুমোয়?
সোফার একটা ব্যবস্থা করতে হবে,মনে মনে নিজেকে কন্ট্রোল করে নিষাদ।

“তোমার ধাঁধার উত্তর পেয়েছি কিন্তু আমি”

“বলুন তবে”

“৩৬+৩৬+১৮+৯+আমি=১০০”

“হ্যাঁ হয়েছে”

“এবার তোমাদের ভালোবাসা সম্পর্কে বলো,আমার ভালোবাসা তো আমাকে ছেড়ে চলে গেছে দেখি তোমাদের সম্পর্ক জোড়া লাগিয়ে দিতে পারি কি-না”

“আমাদের সম্পর্ক মানে?” চন্দ্র অবাক হয়।

“তুমি না বললে তোমরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসো,সম্পর্ক আছে?”

“ওটা তো বন্ধু হিসেবে ভালোবাসি সেটা বলেছি”

নিষাদ হকচকিয়ে যায় চন্দ্রর কথা শুনে। “তু তু তুমি তো কাল বলো নি বন্ধু হিসেবে ভালোবাসো”

“প্রেমিক হিসেবে ভালোবাসি সেটা ও তো বলি নি”

নিষাদ এবার পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে যায়। কি বলছে এই মেয়ে!!
তবে যে সে আদিবকে মেরে এলো!!
কাল রাতেই তো চন্দ্র ফোনে বলেছিলো বিয়ের টেনশন তুই ছাড় আমি সামলে নিবো,তারপর আরো কি যেনো?
ওহ,টাকা পয়সা থাকলেই মন পাওয়া যায় না।

নিষাদের মাথায় প্যাচ লেগে যায়। এই মেয়ে এতো ধোঁয়াশায় রাখছে কেনো তাকে,সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারে না।

যেচে পড়ে নিষাদ আবার জিজ্ঞেস করে।

“যদি আরেকটা ধাঁধার উত্তর দিতে পারেন তবে বলবো”

নিষাদ হাল ছেড়ে দেয়।অসম্ভব এই মেয়েকে কাছে পাওয়া,কে জানে হয়তো ভীষণ উত্তেজক মুহূর্তে ও এই মেয়ে বলে বসবে আগে ধাঁধার উত্তর দিন তবে আদর করতে দিবো।

নিরাশ ভঙ্গিতে নিষাদ জিজ্ঞেস করে,”কি ধাঁধা বলো?”

” কোনো ক্লাসে যতোজন শিক্ষার্থী আছে তারা তত পয়সা করে চাঁদা দেওয়ায় ৩৬ টাকা উঠলো,ক্লাসে কতোজন শিক্ষার্থী আছে? ”

নিষাদ ধাঁধা শুনে রুম থেকে বের হয়ে যায়। চন্দ্রর থেকে কোনো কথা বের করার আশা নিষাদ ছেড়ে দেয়।
বাগানে হাটতে হাটতে চিন্তা করে কি হতে পারে।
মাথা কুলোচ্ছে না নিষাদের।

কৌশিক,ময়ূখসহ সবাইকে গ্রুপ কল দেয় আবার।১০ মিনিটের মধ্যে ধাঁধার উত্তর চাই বলে ফোন কেটে দেয়।
বাগানের এই মাথা থেকে ওই মাথা চষে ফেলেছে নিষাদ ভাবতে ভাবতে কিছুতেই মাথায় কিছু আসছে না।

হঠাৎ নিষাদের মনে পড়ে মাত্র ২ দিনে চন্দ্রকে সে কি রকম ভালোবেসে ফেলেছে। চন্দ্রর সাথে কথা বলার জন্য ধাঁধার মতো সামান্য বিষয় নিয়েও সে মাথা ঘামাচ্ছে।
বৌ বুঝি এটাকেই বলে!
মনে মনে সুলতানা কে ধন্যবাদ দেয়।

৭ মিনিটের মাথায় ময়ূখ কল দেয়,ধাঁধার উত্তর জানতে পেরেছে তাদের স্কুলের গণিতের স্যারের থেকে।বেচারাকে স্যার এখন বসিয়ে অংক শিখাচ্ছে,ফোনে ময়ূখ নিষাদকে হাজার কথা শুনিয়ে দেয়।
হাসতে হাসতে নিষাদ ফোন রাখে।

রুমে গিয়ে দেখে চন্দ্র এখনো সেভাবে বসে আছে।

“ধাঁধার উত্তর পেয়েছি”

“বলুন”

“৬০ পয়সা করে চাঁদা দেয় ৬০ জন শিক্ষার্থী।”

“আপনার তো ব্রেইন খুব ভালো দেখছি”

“এবার বলো”

“আসলে সমস্যা হচ্ছে মিরাকে নিয়ে,সেই এসএসসির আগে থেকে আদিব আর মিরার প্রেম,মিরার বাবা হুট করে মিরার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। মিরা আদিবের কথা বলেছে,উনি বলেছে আদিব এখনো স্টুডেন্ট,মিরাকে বিয়ে করতে হলে ওকে অবশ্যই একটা চাকরি পেয়ে দেখাতে হবে ওনাকে,যেখানে মাস্টার্স কমপ্লিট করে মানুষ বেকার ঘুরে আপনার মতো,সেখানে ওতো এখনো অনার্স শেষ করতে পারে নি,কিভাবে কি হবে,সেটা নিয়েই কথা বলছিলাম”

“আমি বেকার ঘুরি বলে তোমার ধারণা?”

“ধারণা কেনো হবে,আমি তো জানি আপনি যে বেকার,সেই কবে থেকেই তো আপনাদের বাড়িতে আছি,কখনো তো কোনো কাজ করতে দেখালাম না আপনাকে,তো কি বলবো?”

নিষাদ চন্দ্রর কথা শুনে থমকে যায়,চন্দ্রর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে না-কি!
চন্দ্র কি জানে না তাদের কতোবড় বিজনেস?
হাসপাতাল,হোটেল,গার্মেন্টস,হাউজিং,বাস,ট্রাক,ট্রাভেল,শিপিং বিজনেস,কি নেই তাদের?

“তুমি আমাকে বেকার বলছো?
তুমি জানো আমি যে আমাদের সব কোম্পানির এমডি?”

“না-তো,কিভাবে জানবো?
কখনো তো দেখি নি কোনো কাজে আপনাকে,আমার তো ধারণা আপনাকে অফিসের পিয়নের চাকরি ও দিবে না কেউ”

নিষাদের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। কি বলছে এই মেয়ে?
” আমি চাইলে এখনই অফিসে যেতে পারি,কি ভেবেছো তুমি আমাকে?
নিষাদ চৌধুরী কে তুমি কি ফেলনা মনে করো?”

“মনে করবো কেনো,আমি তো জানি আপনি ফেলনা ই”

নিষাদের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। এই মেয়ে তাকে কি-না বলে সে বেকার,মাস্টার্স পাস করে বেকার ঘুরছে?
রাগে মাথার রগ দপদপ করছে নিষাদের।

“ওয়েল,জাস্ট ওয়েট এন্ড সি মাই ডিয়ার ওয়াইফ,আমি আগামীকাল থেকেই অফিস করবো,দেখিয়ে দিবো তোমায়,মাইন্ড ইট”

গজগজ করতে করতে নিষাদ রুম থেকে বের হয়ে যায়।
চন্দ্র মুচকি মুচকি হাসতে লাগে নিষাদের রাগ দেখে।আপার খুব ইচ্ছে ছিলো নিষাদ ব্যবসায় দেখাশোনা করুক,কিন্তু সে ওসব মাথায় ও নেয় নি।
রাগের মাথায় যদি দায়িত্ব নেয় তবে তো ভালোই।

ধানমন্ডি লেকে বসে আছে নিষাদ।আদিবের সাথে যে অন্যায় করে ফেলেছে তার জন্য কিভাবে মাফ চাইবে তাই ভাবছে। না জেনে না বুঝে ছেলেটার এতো ক্ষতি করলো সে!

হাসপাতালের দিকে রওনা হয় নিষাদ।৬ তলায় গিয়ে দেখে কেবিনের বাহিরে বিমর্ষ হয়ে বসে আছে একটি মেয়ে।এই মেয়েটি মিরা নিষাদ বুঝতে পারে।
এগিয়ে গিয়ে মিরার পাশে বসে।

নিষাদ কে দেখে মিরা অবাক হয়ে যায়।

“হাই,আমি নিষাদ”

“হ্যালো”

“ভুল না করলে তুমি মিরা,রাইট?”

“কিভাবে জানলেন আমার নাম?”

“তোমার ফ্রেন্ডের থেকে”

“রুমির থেকে?”

“রুমি কে?”

“কেনো,যাকে আপনি ভালোবাসেন,যার জন্য গতকাল আমাদের ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন সে-ই তো রুমি”

নিষাদ হাহাহা করে হেসে উঠে। যেনো এতো মজার জোকস ও জীবনেও শোনেনি।
কোনোমতে হাসি থামিয়ে মিরাকে বলে,”আমি তো ভার্সিটিতে গিয়েছি আমার স্ত্রী কে দেখতে,ও ব্রেকফাস্ট করে যায় নি,তাই মা খাবার পাঠিয়েছিলো।”

মিরা এবার অবাক হয়।

“তোমার বান্ধবী চন্দ্র,সি ইজ মাই বেটারহাফ”

মিরা অবাকের সপ্তমে পৌঁছে যায় এই কথা শুনে। এই ছেলেটা চন্দ্রর হাজবেন্ড,অথচ চন্দ্র ওদের কে দেখালো না।

“আমি এসেছি ক্ষমা চাইতে,সেই সাথে ক্ষতিপূরন দিতে”

“কিসের ক্ষমা?”

“চলো কেবিনে গিয়ে বলি”

আদিব জেগে ছিলো,মিরাকে দেখে আদিবের দুচোখ বেয়ে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। এতোক্ষন মিরাকে কেউ ভিতরে আসতে দিচ্ছিলো না,অথচ এখন কেউ কিছু বলে নি।উপরন্তু একটা সোফা দিয়ে গেছে দুজন ওয়ার্ড বয় এসে।

নিষাদ মিরাকে বসতে বলে নিজেও বসে।
তারপর দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি আসলে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি,এরজন্য হয়তো শাস্তি পাওয়া উচিৎ আমার।আমি ক্ষমা চাচ্ছি তাই তোমাদের কাছে।”

“কি করেছেন আপনি? ”

“তোমার ভালোবাসার মানুষ কে আমিই মার খাইয়েছি। গতকাল চন্দ্রকে ওর কাঁধে মাথা রাখতে দেখে আসলে আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। তারপর রাতে আদিব চন্দ্রর সাথে এক রিকশায় যায়,আবার রাতে দুজন ফোনে কথা বলে যা আমার সহ্য হয় না। চন্দ্র আমার স্ত্রী,অথচ আজ পর্যন্ত চন্দ্র আমার সাথে কথা বলে না।
অন্য ছেলের সাথে ওর এরকম কথা তাই আমার সহ্য হয় নি।কিন্তু কিছুক্ষণ আগে চন্দ্রর থেকে সব জানার পর ভীষণ লজ্জিত আমি,বিশ্বাস করো ভাই,আমি যদি জানতাম আগে তবে এরকমটা করতাম না।”

আদিব হেসে ফেলে,মিরার চোখ জলে ছলছল করে।

“ভাইয়া,আমাকে মেরেছেন তাতে আমার যে ব্যথা ছিলো,চন্দ্রর প্রতি আপনার ভালোবাসা দেখে সেই ব্যথা আমার নিমিষেই মুছে গেছে”

“চন্দ্রর থেকে জানতে পেরেছি তোমাদের ভালোবাসা সম্পর্কে,আমি যদি তোমাকে একটা রিকুয়েস্ট করি ভাই হিসেবে তুমি কি রাখবে ভাই,আমার ভুল শোধরাবার একটা সুযোগ আমি চাই,প্লিজ বলো রাখবে?”

নিষাদের কাতর চাহনির দিকে তাকিয়ে মিরা আদিব দুজনেই অবাক,এই ছেলেটাই দুদিন আগে চন্দ্রকে অপছন্দ করতো,অথচ আজ কি পাগল সে!!!

“বলুন ভাইয়া”

“তোমাকে যে আঘাত করেছি তা হয়তো মুছে দিতে পারবো না,তবু আমি যদি আমাদের কোম্পানি তে তোমাকে জব অফার করি তুমি কি রাজী হবে??
তুমি হ্যাঁ বললে আমি আগামীকাল ই তোমায় এপয়েন্টমেন্ট লেটার,দুমাসের এডভান্স দিয়ে দিবো।সেই সাথে কোম্পানি থেকে তোমার জন্য একটা ফ্ল্যাট আর গাড়ি থাকবে,আমাকে এই ক্ষুদ্র উপকারটুকু করতে দিবে?”

মুহূর্তের জন্য মিরা আদিব দুজনেই বোবা হয়ে যায় যেনো।মিরা খুশীতে চিৎকার করে উঠে। এভাবে স্বপ্ন পূরণ হবে ভাবতেই পারে নি তারা কেউ।

“আপনি বুঝতে পারছেন না ভাইয়া আপনি আমার কি উপকার করেছেন,একটা চাকরির অভাবে আমি আমার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলতে চলেছিলাম,আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো আমি জানি না”

“ধন্যবাদ দিতে হবে না,তবু একটু ফেভার চাই”

“কি বলুন”

“চন্দ্র যাতে না জানে তোমার এই অবস্থা আমি করেছি অথবা এই জব আমি দিয়েছি,তোমাদের সাথে আমার কোনোরকম কথা বা দেখা হয়েছে এটা যেনো না জানে চন্দ্র”

“ঠিক আছে ভাইয়া,চির কৃতজ্ঞ থাকবো আপনার কাছে আমি আর মিরা”

নিষাদ চলে যায় উঠে।

মিরা আদিবের হাত শক্ত করে ধরে কাঁদছে অঝোরে। সুখের কান্না তার এটা।জিতে যাওয়ার কান্না।

চন্দ্র রান্নাঘরে উঁকি দেয়,বিয়ের পর থেকে একবার ও রান্নাঘরে যায় নি।মাজেদা খালা কাটাকুটি করছে,নাসিমা বেগম রাতের রান্না করছেন।

চন্দ্রকে দেখে নাসিমা বেগম খুশি হয়ে যায়। কালাম কে ডেকে বলে চেয়ার দিয়ে যেতে।কালাম চেয়ার দিয়ে যাওয়ার পর চন্দ্রকে চেয়ারে বসিয়ে প্লেটে খাবার বেড়ে দেয়
দুপুরে চন্দ্র খায় নি সেটা তিনি ভোলেন নি।

শাশুড়ী মায়ের এই আদরে চন্দ্রর চোখের কোণ ভিজে উঠে ।
এই বাড়ি থেকে চলে গেলে এই মানুষ টাকে চন্দ্রর ভীষণ মনে পড়বে।

নিষাদ উঁকি দিয়ে দেখে চন্দ্র কিচেনে বসে আছে। নিষাদ উপরে চলে যায়।হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে সোফার নিচের অংশ ভেঙে ফেলে যাতে চন্দ্র শোয়া মাত্র বা বসা মাত্র ভেঙে নিচে পড়ে যায়।

নিষাদের বিকেলে কফি খাওয়ার অভ্যাস,চন্দ্র এক মগ কফি নিয়ে উপরে উঠে। নিষাদ চন্দ্রকে আসতে দেখে বিছানায় গিয়ে নিরীহ ভাব নিয়ে বসে পড়ে।

কফির মগ টেবিলের উপর রেখে চন্দ্র সোফার দিকে এগিয়ে যায়,নিষাদ অপেক্ষা করছে কখন চন্দ্র সোফায় বসবে,চন্দ্র এগিয়ে গিয়ে সোফার সামনে দাঁড়ায়।

চলবে……???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here