#শেহজাদী
Part–11
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
মিরাদের গাড়ি স্বপ্ননীড় ভিলার তথা তাদের বাসার সামনে এসে থামলো। বাসার সামনের সেই মসজিদ, একটু পাশে ইয়া লম্বা সুপারি গাছ দুটোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিরার মন অনাবিল আনন্দে মেতে উঠে। নিজের দেশের মাটির একটা পরিচিত সুভাস আছে সেই মধুর সুভাসটাই নাকে এসে লাগছে তার। কি মিস্টি সেই ঘ্রাণ!
সে গাড়ির দরজা খুলে বের হলো। ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে গেছে। বৃষ্টি থামলেও ঝড়ো হাওয়া বইছে বাইরে৷ সত্যি বলতে মিরার বৃষ্টি খুব পছন্দ! আগে বৃষ্টি হলে সে ছাদে গিয়ে ভিজত!
দমকা হাওয়া এসে আছড়ে পড়লো তার মুখে। কি মোলায়েম সেই হাওয়া! মিরা আনমনে হেসে বাড়ির ভিতরে ঢুকে সিড়ি দিয়ে হাটা শুরু করলো। তার পেছন পেছন ইরা, মা, সায়েমা আপা আর বড় আব্বু আসছে।
মিরা নিজের বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো।পুরনো স্মৃতি তাজা হয়ে উঠলো। সে কাঁপা-কাঁপা সদর দরজার হাতল ধরে খুলে দেয়। নিজের সেই চিরচেনা বাসা চোখের নাগালে এলেই যেন সে এক চিলকে হাসলো। ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে সে।
ড্রয়িং রুমের সোফায় সোনালী আপু বসে আছে। আপু সাত মাসের গর্ভবতী।
মিরাকে দেখেই সে খুশিতে উত্তেজিত হয়ে বলে, ও আল্লাহ! মিরু চলে এসেছে!
মিরার তর সইছিলো আর সে আপুর কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, কেমন আছো আপু
— আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো৷
— আমার ভাগ্না কেমন আছে?
— খুব ভালো। তোর আওয়াজ শুনেই একটা কিক মারলো মাত্র!
— আল্লাহ তাই?
— হুম।
মিরার আপুর ফোলা পেটে হাত রেখে আদরের ভঙ্গি করলো। সোনালী আপু হেসে দিলো।
মিরা ফিসফিস করে বলে, দাদী কোথায়?
— নিজেত ঘরে দরজা বন্ধ করে আছেন। তোর সঙ্গে সাক্ষাৎ সে করবে না।
মিরা হালকা হেসে বলে, উনি দেখা না করলেও আমি করব।
সোনালি আপু মুখ গোমড়া করে বলে, আমার এইসব আর ভালো লাগেনা রে। এবার তো সব আগের করে করে দে! বাসায় আর আগের আমেজ নেই।ইদ করে আর আড্ডার আসর জমে না। সবাই কেমন যেন রোবট বনে গেছে। তোর বোনটাকে দেখলে আমি মাঝে মাঝে ভাবি ও মানুষ নাকি রোবট! নো ইমোশন, নো ফিলিংস!
মিরা একটা হতাশামাখা দম ফেলে বলে, আমি এসেছিই সব মান-অভিমান ভেঙে ফেলতে । বাবা কোথায়?
— চাচা তো বাইরে গেলেন।
মিরা আরেকদফা হতাশ হলো।
সুপ্তি বেগম এসে তাড়া দিয়ে বলে, মিরা, তুই এভাবে গোসল না করেই বসে গেলি কেন? বিদেশে গিয়ে নোংরা থাকা শুরু করেছিস? যা গোসল করর আয়। আমি তোর জন্য খাবার বেড়ে দিচ্ছি৷
মিরা উত্তরে বলে, যাচ্ছি আম্মু।
সে উঠে দাড়ালো এবং নিজের রুমে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে একবার তাকিয়ে সম্পূর্ণ রুমট দেখে নিলো। আগের মতোই আছে৷
মিরা সবার আগে গোসল সেড়ে নিজের রুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতেই হচকচিয়ে গেল। ঠিক আগের কলেজ পড়ুয়া মিরার মতো লাগছে তাকে! এর পেছনে একটা কারণ ও আছে। সে নিজের পুরাতন একটা কামিজ পড়েছে। মিরা ভাবতেও পারেনি এতো আগের জামা তার গায়ে ফিট হবে! অবশ্য হালকা টাইট-টাইট লাগছেন।তবুও পরিধান করে থাকা যাচ্ছে। কেউ যদি জানে নিজের কাপড়ের দোকান থাকা সত্ত্বেও মিরা টাইপ জামা পড়েছে তবে নিশ্চয়ই অবাক হবে?
সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে চশমা পড়ে নিলো। এরপর চুল গুলো মুছে হালকা হেয়ার ব্রাশ করে নিলো৷
নিজে পরিপাটি হয়ে ডাইনিং রুমে গেল। ডাইনিং রুমে যেন খাবারের মেলা বসেছে। কাচ্চি বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজি, চিংড়ি মাছের মালাইকারী, গরুর মাংস, রোস্ট, বেগুন ভাজা। আবার পায়েস, বুটের হালুয়াও আছে।
মিরা এতো খাবার দেখে চমকে উঠে বলে, আম্মু এতো রান্না কেন করেছো?জানো না আমি ডায়েট করছি। এইসব একদম খাব না। এগুলো খেলে এতোদিনের কষ্টে পানি পড়ে যাবে৷
সুপ্তি বেগম রাগ দেখিয়ে বলস, রাখ তোর ডায়েট-ফায়েট। আমার বাসায় কোন ডায়েট করা যাবেনা। যা রাধবো, দিন শেষে পাতিল খালি করতে হবে।
মিরা এতো এতো লোভনীয় খাবারের লোভ সামলাতে না পেরে ডায়েটের কথা ভুলে গিয়ে গপাগপ খেতে লাগলো। গরুর মাংসের রেজালার সঙ্গে কাচ্চিটা জাস্ট দুর্দান্ত হয়েছে। রোস্টের কথা নাই লিখা হোক! মিরা তো দু-দুটো রোস্ট খেয়ে নিল। সে পরিমাণের চেয়ে বেশি খেয়ে উঠল।
রান্নাঘরে গিয়ে বাসন মাজতে ধরলে সুপ্তি বেগম বলে উঠে, আরে আরে বাসায় এসেই কাজ করছিস ক্যান? আমি আছি তো!
মিরা বাসন মেজে বলে উঠে, ইরা কই গেল?
সুপ্তি বেগম একটা প্লেটে খিচুড়ি আর ইলিশ ভাজা সাজিয়ে নিয়ে বলে, ওর পরীক্ষা। বাসায় এসেই পড়ার জন্য রুমে চলে গেছে। আজকে দুপুরে কিছু খায়নি মেয়েটা৷
— সেকি কেন?
— বলে তো পরীক্ষার চিন্তায় খেতে পারছেনা কিন্তু আমি জানি তুই আসছিস সেই খুশিতে ও কিছু খায়নি।
— আমি আসায় ও কি খুশি হয়েছে?
— হবে না কেন? ও তোর জন্য সেই দুই ধরে প্লাকার্ড বানালো। মিস্ত্রি ডাকায় স্পেশালি বানিয়েছে। এক কাজ কর, তুই গিয়ে ওকে খাবার দিয়ে আয়।
— আচ্ছা দাও। আমি নিয়ে যাচ্ছি।
মায়ের হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে মিরা তার ছোট বোনের রুমে গেল।
ইরা দরজা না লাগিয়ে হাট করে খুলে রেখে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। এতোই মনোযোগী সে যে অন্য কেউ তার রুমে প্রবেশ করেছে তা সম্পর্কে সে অবগতই নয়।
মিরা বিনা শব্দ করে খাবারের প্লেটটা ডান হাত থেকে বাম হাতে নিয়ে, ডা হাতে দিয়ে ইরার চুল নাড়াচাড়া শুরু করে দিলো।
ইরা কিছুটা কেপে উঠে। এরপর এক সেকেন্ড বিরতি নিয়ে বলে, আপু! বিরক্তি করবেনা৷
মিরা সুর তুলে বলে, বিরক্তি কই করলাম? তোর জন্য খিচুড়ি এনেছি। খেয়ে নিয়ে পড়।
ইরা রাগী রাগী গলায় বলে, খিচুড়ি কে রান্না করেছে?
— আম্মু।
— কেন?
— কেন আবার? খাওয়ার জন্য।
— এতো খাবার থাকতে খিচুড়ি কেন রান্না করলো?
— তোর প্রিয় তাই।
ইরা আর কিছু বললোনা। এই বাড়ির প্রতিটা সদস্য আজব প্রকৃতির। সে একবার নিজের বড় বোনের দিকে তাকালো।
মিরা গুনগুন করে গাইতে লাগে,
আমার ভীনদেশী তারা
একা রাতেরই আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলেকোঠার পাশে
ইরা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইল। সামনে বসে গুনগুনিয়ে গান গাওয়া মেয়েটা যদি তার নিজের রক্তের বোন না হত তাহলে মেয়েটার রুপের ঝলকানিতে সে অবশ্যই হিংসাবোধ করব।
ইরা কাঠ গলায় বলে, আমার রুমে গান গাওয়া যাবেনা।
— ওহো গানপ্রুভ রুম নাকি এটা?
___________________
ইমান বাসায় ফিরে আসলো। ক্লান্ত লাগছে তার। বাসায় এসেই শাওয়ার নিয়ে নিজের বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। বিছানায় শোয়ামাত্র ফোনের রিংটোনে তার নিদ্রাভাব দূর হলো। বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে ফোন হাতে নিলো সে।
সোনালী আপুর ফোন। ইমান একদমই মিরার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়না কিন্তু ওই যে রক্তের আত্মীয়তা ছিন্নকারীকে আল্লাহ অপছন্দ করে এইজন্য বাধ্য হয়ে যতো কমে পারা যায় কথা বলে সে৷ এছাড়া আপু প্রেগন্যান্ট। কোন সাহায্য ও লাগতে পারে একারণেই সে ফোন রিসিভ করলো।
সোনালী আপু ওপাশ থেকে বলে, কেমন আছিস ইমান?
— এইতো আলহামদুলিল্লাহ। অফিসের কাজে ব্যস্ত একটু।
— রাখ তোর ব্যস্ততা। শোন না, বাসায় আয়। তোর জন্য কাবাব ভাজব। আয় ভাই।
— আপু বললাম তো বিজি আছি। কাজ শেষ করে আসব।
— তোর সমস্যা, রাগ-ক্ষোভ, অভিমান মিররা উপর। আমার আর তোর ভাগ্না কি দোষ করলো?
— আমার রাগ কারো উপরেই নেই! আমি কারো উপরই অভিমান করিনা। অভিমান শব্দটা আমার জন্য নয়।
সোনালী আপু একদণ্ড থেমে বলে, মিরা এসেছে সিডনি থেকে
— কে এসেছে?
— মিরা
ইমান চমকে উঠে ফোন বাম কান থেকে ডান কানে নিয়ে বলে, কবে এলো?
— আজকে?
— আসার কথা ছিল?
— হ্যাঁ। তিনমাস আগে থেকে প্লান করে এসেছে। আসবি তুই?
— আমি কেন যাব? রাখছি।
________
মিরা কানে হেডফোন লাগিয়ে ছাদে হাটাহাটি করছে ঠিক ছয় বছর আগের ন্যায়। হাটতে হাটতে ছাদের এপাশ থেকে ওপাশে যাচ্ছে। সে কি যেন ভেবে ছাদের উলটো পাশে গিয়ে রেলিং ঘেঁষে দাড়ালো। ফোন হাতে নিয়ে মাথাটা একটু নত করতেই সে চোখ করে ফেলে। এরপর আস্তে করে বলে, ইমান!
চলবে।
[ আজকে রিচেক করতে পারিনি সেজন্য বানান ভুল থাকলে অগ্রীম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আজকে লেখার সময় পাইনি এইজন্য এলোমেলো, অগোছালো ছিল পর্ব সেজন্য আরো একবার ক্ষমাপ্রার্থী। ]