#শেহজাদী
Part–37
Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
ইমান শক্ত করে মিরাকে জড়িয়ে ধরে বলে, কাদছো কেন আজব? তোমার এসব ফ্যাচ-ফ্যাচ কান্না ভালো লাগে না তো!
মিরা কান্না থামিয়ে দিয়ে বলে, আমি কল্পনাও করিনি কোনদিন আপনি আমাকে প্রোপোজ করবেন। ভাবা যায় এসব? যে ছেলে লগের অংক না পারলে বকা দিতে দিতে জান বের করে দিত, সে কিনা আই লাভ ইউ বলেছে!
ইমান মুখ বাকিয়ে বলে, তুমি আমাকে টিচারের নজরে কেন দেখছো?
— তাহলে কোন নজরে দেখব? হু?
ইমান হাসতে হাসতে বলে, প্রেমিকের নজরে দেখো বালিকা৷
মিরা হাসলো। কিছু বললো না। সে অপলক নয়নে চেয়ে আছে ইমানের হাস্যজ্বল মুখটার পানে। এই ছেলেটাকে সে একসময় ভুল বুঝেছিল! তাকে ভেঙে-চুড়ে রেখে পাড়ি জমিয়েছিল বিদেশে! ভাবতেই অবাক লাগছে তার! এখন, বর্তমানে এই ছেলেটাকে সামান্য দূরে যেতেও আতংক সৃষ্টি হবে মনে। ভালোবাসা কি এমনই? যাকে ভালোবাসি, তার সঙ্গে দূরত্ব সহ্য হয় না। মিরার মাথায় একটা ভাবনা খেলে গেল, ইমানও তো তাকে কতো আগে থেকে ভালোবাসত! সে যখন ইমানকে বিয়ে না করে দূরে চলে গেল, তখন ইমানের কেমন কষ্ট লেগেছিল? নিশ্চয়ই অসহনীয় ছিল সেই যন্ত্রনা?
মিরা অনুতপ্ত বোধ নিয়ে বলে, আপনি কি আমাকে ক্ষমা করবেন?
ইমান তার দিকে তাকালো এরপর স্মিত হেসে বলে, আসলে আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তোবা তোমাকে এতোদিনে কেবল ঘৃণাই করত। আমিও তোমাকে ঘৃণা করতে চাইতাম কিন্তু বিশ্বাস করো, পারিনি তোমাকে ঘৃণা করতে। যাকে ভালোবাসি, তাকে ঘৃণা করা যায় না। আর যদি কেউ ঘৃণা করে, তাহলে হয়তোবা তার ভালোবাসায় ফাঁক ছিল !
— আমাকে একবার জানাতে পারতেন আপনি সবকিছু?
ইমান দম ফেলে বলে, আকারে-ইঙ্গিতে বুঝানোর ট্রাই করতাম, তুমি বুঝতে চাইতে না৷ আমাকে নিয়ে ওভাবে ভাবতে না যে। তাছাড়া আমার নিজেরও ফল্ট আছে। আমার উচিত ছিল এ টু জেট সব তোমাকে জানানো।
— কি জানাতে চান?
— আবিরকে মনে আছে?
আবির নাম শুনে মিরা রেগেমেগে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে, ওই পোলার নামে আমি সাইবার মামলা দিব।
ইমান মুখ কাচুমাচু করে বলে, ইয়ে মানে শোন্ন,আবির বলে আসলে কেউ নেই। ওইটা আমারই ফেইক আইডি।
মিরার রাগ ধপ করে পড়ে গিয়ে অবিশ্বাসের আভা চাউনীতে প্রকাশ পেল। সে বাকহারা হয়ে তার দিকে তাকাতেই ইমান বলে, আমি নিরুপায় ছিলাম। তুমি তো দেখতেই পারতে না আমাকে। ব্লক করে রেখে দিয়েছিলে। সো উপায় না পেয়ে ফেক আইডি দিয়ে প্রেম করলাম তোমার সাথে।
— ওটাকে প্রেম বলে? আপনি আমাকে পালাতে বলেছিলেন বিয়ের আগের দিন?
— তুমি বলেছিলে। আমি জাস্ট তাল মিলিয়েছিলাম নাহলে তো সন্দেহ করতে। পরে তো ইমান হয়েই তোমার সামনে ধরা দিয়েছিলাম।
মিরা ইমানের বুকে একটা কিল দিয়ে বলে, আপনার নাম ইমান না বেঈমান হওয়া উচিত! কিভাবে চোখে ধুলো দিয়েছিলেন?আমি সরল মনে বিশ্বাস করে,,,,,
— সরল মনে কেন বিশ্বাস করবে? এটা ভারচুয়াল লাইফ। সাবধানে থাকা উচিৎ ছিল। আমার জায়গায় যদি খারাপ কোন ছেলের পাল্লায় পড়তে? একটা অপরিচিত ছেলেকে বিশ্বাস করে বাসা থেকে পালিয়ে গেলে, ছেলে যদি অসাধু হতো, তবে কি হতে পারত সেরাতে তোমার? নিজেকে সর্তক থাকা দরকার। দুনিয়ায় ভালো মানুষ যেমন আছে, খারাপ মানুষ ও সেই সংখ্যক আছে।
মিরা বলে, আমি আগে এসব কম বুঝতাম। নতুন নতুন ফেসবুক খুলেছিলাম। তেমন ধারণাও ছিল না ফেসবুক সম্পর্কে। তখনই আবিরের মানে আপনার সঙ্গে পরিচয় হয়। কলেজের সিনিয়র জন্য প্রোপোজ রিজেক্ট করার সাহস পাইনি।
ইমান সোজাসাপটা বলে, মামা-মামীর ও তোমার ব্যাপারে কেয়ারফুল হওয়া উচিত ছিল।
— আব্বু-আম্মু তো টেকনোলজির ব্যাপারে তেমন কিছু বুঝে না।
— শুধুমাত্র এক কারণেই আমাদের দেশের অনেক কিশোর-কিশোরী সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। যাগগে সেসব কথা! ভবিষ্যতে এসব সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়ে সচেতন ও সর্তক থাকবে।
মিরা মাথা নাড়ালো। ইমান বলে উঠে, আজকে আর এসব নিয়ে কথা না বলি। আজকের রাত কেবল ভালোবাসার! আসো কেক কাটব।
— কেকও আনিয়েছেন?
— হ্যাঁ। আসো।
ছাদের একপাশেই একটা ছোট টুলের উপর কেক রাখা। ইমান মিরাকে নিয়ে কেক কাটলো।
ওই সময়ে দরজার ওপাশে খুট করে শব্দ ভেসে আসে। মিরা কিছুটা ভয় পেলে, ইমান তাকে আশ্বস্ত দিয়ে বলে, বাতাসের কারণে দরজা খুলে গিয়েছিল বোধহয়।
— হতে পারে৷
মিরা-ইমান কেক কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ছাদের বাইরে সিড়িতে দাঁড়িয়ে আছে ইরা। রাতে পানি খেতে উঠে যখন মিরাকে দেখতে পায়নি, সে সোনালী আপুর রুমে যায়। সেখানেও আপু নেই। বড্ড চিন্তায় পড়ে যায় সে। অনেক ভেবে ছাদে এসে খোজ নেওয়ার কথা ভাবে। অতঃপর ছাদে এসে আপু আর ইমানকে একসাথে দেখে ফেলে সে। দরজা কিঞ্চিৎ খুলে ছাদের মাঝ বরাবর আই লাভ ইউ লেখাটা তার চোখে সবার আগে পড়ে৷ সঙ্গে সঙ্গে তার বুক ছ্যাত করে উঠে।
ইরা সিঁড়ির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বুদ্ধি লোপ পেয়েছে তার৷ নিজেকে অনুভূতি শূন্য লাগছে৷ একবার মন চাচ্ছে, ইমানকে গিয়ে নিজের মনে কুয়াগর্তে করে রাখা অনুভূতির কথা সব বলে দিতে, মূহুর্তেই ভাবনাটা কালো মেঘের ন্যায় আড়াল হয়ে গেল যখন ছাদের দরজা খুলে ইমান তার সামনে এসে দাড়ালো।
ইরা ভূত দেখার মতো চমকে, দুই সিড়ি পিছিয়ে গেল৷
ইমান হতভম্ব সেই সাথে খানিকটা লজ্জাবোধ নিয়ে বলে, ইরামনি তুমি এতোরাতে এখানে কি করছো? এনিথিং রঙ?
ইরা চুপ রইল৷ কথার জবাব দিলো না।
ইমান আরো জিজ্ঞেস করে, কিছু হয়েছে?
ইরা সেই প্রশ্নের জবাবে বলে, কিচ্ছুটি হয়নি দুলাভাই৷
ইমান প্রথমে ইরা কি বলল তা বুঝেনি। ক্ষণেই যখন বুঝতে পারলো, সে সরাসরি তার দিকে তাকালো।
ইরা মুচকি হেসে বলে, আমি কিন্তু সব দেখে ফেলেছি। আপনি আপুর জন্য সারপ্রাইজ ডেট এরেঞ্জ করেছেন তাই না?
— হুম। প্লিজ মামাদের কিছু বলো না। তোমার জন্য কালকে চকলেট এনে দিব৷
ইরা হাসলো। হাসার সময় হালকা করে চোখের কোণে নোনাজল ঝিলিক মেরে উঠে৷ ইমান ভাইয়া আজও তাকে ছোট্ট ভাবে!
সে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে, আমার চকলেট লাগবে না। আপনি সুখে থাকুন এটাই আমার জন্য উপহার।
ইরা এলোমেলো পায়ে হাটা ধরলে, ইমান তাকে পেছন থেকে ডেকে বলে,ইরা তুমি ঠিক আছো তো?
ইরা না তাকিয়েই বলে, হ্যাঁ ঠিক আছি৷
— তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে কোন একটা ব্যাপারে তুমি আপসেট।
ইরা না চাইতেও জোরপূর্বক হেসে দিয়ে বলে, কালকে সকালে এক পিস কেক চাই! আসছি।
ইমান তার কথায় মৃদ্যু হেসে ছাদের দিকে পা বাড়ায়। তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই আপাতত ইরার বুকের ভেতরে কি ঘূর্ণিঝড়টাই না বইছে।
ইরা সিড়ি দিয়ে নামছে। তার চোখে পানি নেই। বুকে শুধু নিরব ব্যথা। বেশ শক্ত হয়ে মনের সঙ্গে বিবেকের লড়াই সামলাচ্ছে সে। বারবার বিবেককে জিতিয়ে দিচ্ছে। বিবেক বলছে, ইমানকে ভুলে যেতে। কিন্তু সেটা মন মানতে চায় না। কিন্তু অবশেষে মন যুদ্ধে হেরে গেল। সাধারণত সবসময়ই মন জিতে যায় কিন্তু ইরার বেলায় উলটো ঘটলো। সে ইমানকে ভুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কারন ইমান কখনোই তার হবে না। ইমানের উপর কেবল তার বোনের অধিকার আছে। তার মনের উপর কেবল আপুর আধিপত্যতা রয়েছে। সে কেবল অতিথি পাখি কেবল!
ইমাম ফিরে এসে বলে, তুমি তো আমাকে কেক খাইয়ে দিলে না?
মিরা কেকের পিস হাতে তুলে নিয়ে বলে, সিড়িঘরে কি করছিলেন আবির সাহেব?
ইমান চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকাতেই, সে তার মুখে কেক পুড়ে দিল, শুধু তাই না! অন্য হাত দিয়ে তার গালে ক্রিম মেখে দিয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগে।
ইমান রাগ দেখাতে গিয়েও থমকে যায় মিরার হাসিতে। তার হাসিতে নেশা জাতীয় কিছু মিশানো আছে বোধহয়, নাহলে ওই হাসিতে কেন ইমান আসক্ত হচ্ছে?
ইমান তার হাত ধরে ফেলে নিজের দিকে টেনে এনে বলে, কাজটা ঠিক করো নি!
মিরা কিছু বলবে তার আগেই ইমান নিজের ক্রিম মাখানো গালটা, তার গালের সাথে ঘষতে লাগলো। মিরা নড়াচড়া শুরু করলে, ইমান তার দুই হাতের আঙুলের ভাজে, হাত গুটিয়ে নিয়ে বলে, একটা অন্যায় কাজ করি?
মিরার বুকে তখন কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে। এতো কাছাকাছি দুইজনে অবস্থান করায় তার সারা শরীর কাপছে।
তারপর ও কাপা-কাপা গলায় বলে, কি?
— আই ওয়ান্ট টু কিস অন ইউর লিপস।
মিরার চোখ রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেল। সে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। নিশ্বাস নিতেও যেন ভুলে গেল। ইমান তার দিকে এগিয়ে আসতেই চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।
চলবে।
[ প্রচন্ড মাথাব্যথা কাজেই বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ রইল। ]