# গল্প—
# সখি ভালোবাসা কারে কয়?
পর্ব—-৩
~কানিজ ফাতেমা
“শোনো মিষ্টি মেয়ে
বুকের মাঝে একটা নদী
উথাল পাথাল ঢেউ,
এই জনমে তুমি ছাড়া
জানবে না আর কেউ”
ছাদে এসে মীরা আপুর হাতে চিঠিটা দিতেই সে মজা করার ছলে দ্রুত ঠিকানা বিহীন খামের ভেতরের কাগজটা খুলে জোরে জোরে পড়তে শুরু করলো। চিঠি নয় কবিতার ভাষায় লেখা কিছু একটা। মীরা আপুকে শুভ ভাইয়ের সামনে জোরে জোরে লেখাটা পড়তে দেখে ভীষণ অপ্রস্তুত লাগলে বলে উঠলাম – মীরা আপু কি করছো?
সে আমার কথায় কান না দিয়ে মজা নিয়ে ছন্দ মিলিয়ে একবারে কাগজে লেখা কথাগুলো পড়ে গেলো। অনুরোধ ইশারা কোনো ভাবেই মীরা আপুকে থামাতে না পেরে আমি এগিয়ে গিয়ে আমার ডান হাত দিয়ে মীরা আপুর মুখটা চেপে ধরলেও সে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলল- “কি রে নিধি তুই তো দেখি খুব পেকে গেছিস।ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস॥”
“বাজে কথা বলো না তো মীরা আপু। একটু চুপ করো প্লিজ”- বলে শুভ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অসহায়তা দেখিয়ে বললাম
“ভাইয়া এই চিঠির ঝামেলার কথা বলার জন্যই আপনাকে ছাদে ডেকে এনেছিলাম। আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন প্লিজ।ভাইয়া কিংবা বাবা কারো কানে গেলে আমার আর ঢাকাতে পড়তে যাওয়া হবে না। কে এটা করছে তাকে খুঁজে এসব থামাতে হবে”
শুভ ভাইয়া এতক্ষণ হাসিমুখ নিয়ে আমাদের হেঙলামু দেখছিল। আমার কথা শুনে হাসি থামিয়ে একটু গম্ভীর ভাব নিয়ে আমার দিকে তাকালো ঠিকই কিন্তু তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দিল না- “কি মনে করে ছাদের এক পাশে হেঁটে গিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হেসে বলল- কি সাহায্য করবো বলো?”
“এই চিঠি ওয়ালাটা কে খুঁজে দিতে হবে আমাকে”
“কেনো?”
কেনো আবার? বললাম না?
যেটা বললে সেটা কোনো কারণ হতে পারে না। কারণ তুমি বিরক্ত হলে চিঠি রিসিভ করো কেনো? আর পড়ে দেখই বা কেনো? তার মানে সে যেটা লিখে পাঠায় সেটা তোমার পড়তে ভালো লাগে। আর সেই জন্যই তুমি সেই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে চাইছো, তাই তো? কি ভালোবাসো সেই অদৃশ্য ব্যক্তিকে?”
শুভ ভাইয়ের আকস্মিক প্রশ্নে থতমত খেয়ে বললাম- “না না ভাইয়া, এসব কি বলছেন ?”
তাহলে খুঁজতে চাইছো কেনো?
এমনি। কথাটা বলে পরক্ষণেই মনে হলো সত্যিতো কে না কে চিঠি পাঠায় তাকে নিয়ে আমি কেন ভাবছি।
শোন নিধি সামনে মাসে ঢাকা চলে যাবে এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কি হবে? আশেপাশের কেউ হবে হয়তো তোমার মুখে না শোনার ভয়ে সামনে আসে না। আর তুমি না চাইলে চিঠি লিখতে লিখতে হাঁপিয়ে গেলে নিজেই তোমার জীবন থেকে চলে যাবে।
এবার বুঝেছিস বলে কাগজটা আমার হাতে দিয়ে মীরা আপু বলল “চল নিচে যায় বহুত কাজ আছে আমার “-বলে শুভ ভাইয়ার সামনে আমাকে একা ফেলে মীরা আপু ছাদ থেকে নিচে নেমে গেলো।
মীরা আপু নিচে নেমে যেতেই শুভ ভাইয়া খুব শান্তভাবে বলল- “নিধি তুমিও যদি চিঠির ছেলেটাকে পছন্দ করো তবে বলো আমি খুঁজে বের করবো”
না না ভাইয়া কাউকে না দেখে পছন্দ করার মত স্টুপিড আমি নই। এমনি একটু কিউরিসিটি হচ্ছিল যে এখানে কে এমন আছে যে আমাকে চিঠি পাঠায়।
কেনো পাঠাতেই পারে।তোমাকে দেখে কারো ভালো লাগতেই পারে এতে অবাক হওয়ার কি আছে?
শুভ ভাইয়া আজ এভাবে কথা বলছে কেনো? ভেবে কেমন যেনো লাগলো আমার তাই বললাম ভাইয়া নিচে সবাই খুঁজবে বলে সিঁড়ির দিকে যাচ্ছি দেখে শুভ ভাইয়া পেছন থেকে ডেকে বলল -“ও সব ফালতু মানুষের ফালতু চিঠির কথা ভেবে টেনশন করো না নিধি। তোমার সামনে ব্রাইট ফিউচার।”
শুভ ভাইয়া তাচ্ছিল্য করে ফালতু বলে চিঠির মানুষটাকে সম্বোধোন করাতে কেমন যেন অনুভূতি হলো। সাথে এটাও মনে হলো শুভ ভাইয়াকে জানানোই ভুল হয়েছে।
তবুও জি ভাইয়া বলে শুভ ভাইয়াকে ছাদে একলা রেখে খামসহ চিঠিটা হাতে নিয়ে নিচে নেমে আসার সময় নির্ঝর ভাইয়া সামনে এসে দাঁড়াতেই গলাটা শুকিয়ে আসলো। হাতের চিঠির খামটা লুকোতে গিয়েও নির্ঝর ভাইয়ার চোখে ধরা পড়ে গেলাম। নির্ঝর ভাইয়া ছোঁ মেরে খামটা হাতে নিয়ে চিঠিটা বের করে পড়তে শুরু করলে আমি ভয়ে মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
কে দিয়েছে এটা খুব জোরে কথাটা বলতেই আশেপাশে বসে থাকা আত্মীয় স্বজনেরা উৎসুখ চোখে আমাদের দিকে নিজেদের
মনোযোগ স্থির করলো।
সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে দেখে লজ্জায় আমার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো।
মীরা আপু এগিয়ে এসে বলল নিধি আয় তো আমরা আমাদের ঘরে যায়। কিন্তু মীরা আপুর কথায় কোনো কাজ হলে না।
এর মধ্য নির্ঝর ভাইয়া চিৎকার করে মাকে ডাকতে লাগলো।
তার চিৎকার শুনে মা, বড়চাচী, বড়খালা সবাই সিঁড়ির কাছে আসতেই শুভ ভাইয়াকেও ধীর পায়ে ছাদ থেকে নামতে দেখলো নির্ঝর ভাইয়া। শুভ ভাইয়াকে আমার পেছনে নামতে দেখে কি বুঝলো কে জানে রাগে রাগে চিঠিটা নিয়ে সোজা আমাদের সামনে থেকে চলে গেলো।
আম্মু আমার হাত ধরে অস্থির হয়ে মীরা আপুর ঘরে এসে আমাকে সামনে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
পেছনে বড় খালা বড় চাচীকে আসতে দেখে ভয়ে কুকড়ে যাওয়া আমি থমথমে চেহারা নিয়ে আম্মুকে বলে উঠলাম-“ আম্মু আজও কে চিঠি পাঠিয়েছে। আর নির্ঝর ভাইয়া সেটা পড়ে ফেলেছে।”
বড়খালা জিজ্ঞেস করলো কিসের চিঠি॥
আম্মু অস্বস্তি নিয়ে বলল- পরে বলছি বড় আপা আগে আমার গাধা ছেলেটাকে সামলে আসি। সব সময় মাথা গরম করে। বাড়ি ভর্তি মেহমানের সামনে একটু হিসেব করে কথা বলবে না! দেখেছেন বড় ভাবি কত শান্তিতে থাকি আমি। নিধি তুই মীরার সাথেই থাক আমি বাড়ি গিয়ে দেখি কি হচ্ছে।”- বলে আম্মু সাথে বড় খালাও অস্থির হয়ে বাড়ি চলে গেলো আর আমি মীরা আপুর সাথে কাঁদো কাঁদে চেহারা নিয়ে বিছানায় বসে রইলাম॥
চলবে—-
~কানিজ ফাতেমা~