#সবটাই_তুমিময়
#লেখনিতে-মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ৩৪
বেশ অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে।অঙ্কুর ওভাবেই গাড়িতে হেলান দিয়ে চাঁদ,তারাবিহীন আকাশের দিকে তাকিয়ে।আর আমি,তার দিকে।আজ আবারো,দ্বিতীয়বারের মতো তার মুখে ভালোবাসার কথা শুনেছি।তার সব কথার গভীরতা জানতে চাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছে হচ্ছে আজ।এই ভালোবাসা শব্দটি উনি কার জন্যে এতো সযত্মে আগলে রেখেছেন,জানার ইচ্ছে হচ্ছে।তার রহস্যে ঘেরা কথার জালে কোথাও কোথাও নিজেকে খুজতে ইচ্ছে করছে।একপ্রকার ঘোরের মধ্যেই বলে উঠলাম,
-তারমানে কাউকে ভালোবাসেন আপনি?
-সিডনেতে তুমি নিজে বলেছিলে,আমার কাছে ভালোবাসার কথা শুনতে চাওনা।আজ হঠাৎ আগ্রহ দেখাচ্ছো কেনো?
ওনার স্পষ্ট জবাবে ধক করে উঠলো ভেতরটা।নিজেকে সামলে একবার চোখ সরিয়ে নিয়ে আবারো ছলছল চোখে তাকালাম তারদিকে।উনি আমার দিক না তাকিয়েই বললেন,
-আছে একজন।তবে তাকে নিয়ে জানার অধিকার এখন তোমার নেই!
টুপ করে চোখের জল বেরিয়ে আসলো।অধিকার নেই আমার।অঙ্কুর ঘড়িটা দেখে গাড়ির ছাদে হাত রেখে পা উচিয়ে তানহা তিহানকে দেখলেন হয়তো।তারপর বলে উঠলেন,
-চলো,গাড়িতে উঠে বসো।
ধ্যান ভাঙলো।চোখ মুছে সাতপাচ না ভেবে চুপচাপ ঘুরে এসে গাড়িতে বসতে যাওয়ার আগে আমিও একবার তাকালাম তানহা তিহানের দিকে।তিহান বলছে,
-এখন তুই এই কেসটা থেকে আমাকে বাচাতে বিয়েটা করতে চাইছিস।তো ব্যাপারটা তো একই দাড়ালো!দায়িত্বের বিয়ে!
গাড়ির দরজা খুলে দাড়িয়ে রইলাম আমি।হুট করেই তানহা ওর পান্জাবী মুঠো করে নিলো।রাগী গলায় বললো,
-শোন তিহান,আমার বন্দুক আমাকেই তাক করবি না খবরদার!বিয়েটা হবে!তুই এই বন্ধুত্ব ছেড়ে থাকতে পারবি না,আর আমি আমার ভালোবাসা ছেড়ে থাকতে পারবো না।কথা শেষ!আর একটা কথা বললে মেরে ফেলে মরে যাবো!
তিহান ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো তানহার হাতের মুঠোতে থাকা ওর পান্জাবী আর রাগী চেহারার তানহার দিকে।হয়তো ওর এরুপ আশা করেনি।করবেই বা কেনো?কোনোদিন অভিমান দেখানোর অধিকারবোধ খাটানোর সাহস হয়নি ওর।তানহা ওর চাওনি দেখে পান্জাবীটা ছেড়ে গাল ফুলিয়ে জরিয়ে ধরলো ওকে।আস্তেকরে ওর বুকে মাথা রাখলো।তিহান যেনো আটকে আছে।তানহা ওর হাত তুলে নিজেকে জরিয়ে নিয়ে বললো,
-জরিয়ে ধর ডাফার!তোকে এভাবে হাতে ধরেই প্রেম শেখাবো!খবরদার বিয়ের পর বউয়ের কাছে অতিরিক্ত আত্মসম্মানবোধ দেখাতে আসবি না!মেরে তক্তা বানিয়ে দেবো একদম!
তিহান হেসে দিয়ে ওকে জরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।সবটাই দেখে হাসি মুখে গাড়িতে উঠে বসলাম।সাথেসাথে অঙ্কুর হর্ন বাজালেন।এতোক্ষন বেশ সুন্দর মোবাইল দেখছিলেন,এখনই হর্ন বাজাতে হবে?কিছুটা রাগ নিয়ে তারদিকে তাকালাম।আমি জানি উনিও সবটা দেখেছেন।তাহলে ওদের মোমেন্ট নষ্ট করার কোনো মানে হয়?উনি সামনে তাকিয়ে বললেন,
-আগে বিয়েটা হোক,রোমান্সের অনেক সময় পাবে।
কিছু বললাম না।তানহা তিহান এসে ব্যাকসিটে বসলো।অঙ্কুর বললেন,
-তো?আগে কাকে,কোথায় পৌছে দেবো?
-দুজনকেই।একসাথে।কাজি অফিস।
তানহার স্পষ্ট জবাব।অঙ্কুর বললেন,
-তাতে আমার লাভ?তাছাড়া আমি তো ভুল সংশোধন করবো,যাকে যেখান থেকে তুলেছি,তাকে সেখানে পৌছে দিয়ে।
-সরি ভাইয়া।
অঙ্কুর হেসে দিলেন।তানহা সরি তো অপরাধবোধ থেকেই বলেছিলো,অঙ্কুরের হাসি শুনে পরপরই কড়া গলায় বললো,
-এতো হাসির কিছুই হয়নি।আমাদের এই বিয়েটার উইথনেস আপনাকে হতে হবে!সিসিক্যাম না দেখার শাস্তি এটা আপনার!
-যো হুকুম।
একটা বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন অঙ্কুর।কানে গোজা ব্লুটথে বলতে লাগলেন,
-হ্যালো রোহান?তোকে কিছু জিনিসের লিস্ট সেন্ড করেছি দেখ।সাথে একটা এড্রেসও।ওগুলো নিয়ে ওই এড্রেসে চলে আয়।এজ সুন এজ পসিবল।আর হ্যাঁ,লিস্টের সবগুলো জিনিসই আনবি।কোনোটাই যেনো বাদ না যায়।
রোহান ভাইয়ার কথা শুনে আমার আস্থার কথা মনে পরে গেলো।বেচারী ওর দ্বিতীয় বান্ধবীরও পালিয়ে বিয়ে হয়েছে শুনলে হার্ট এটাকই করবে।তারথেকে এখনই কিছুটা জানিয়ে রাখি।পরে বলা যাবে,অতো রাতে তুই আসতে পারতি না।ইতস্তত করে অঙ্কুরকে বললাম,
-আ্ আপনার ফোনটা একটু দেবেন?
-কাকে ফোন করবে?
-ওই আসলে….
-সে ইট ক্লিয়ারলি।
-আস্থাকে।
-রিল্যাক্স।রোহানকে বলা লিস্টের মধ্যে আস্থার নামও আছে।ও নিয়ে আসবে ওকে।ডোন্ট ওয়ারি!
মুচকি হাসলাম।অঙ্কুরের সবগুলো কাজ আলাদা।উনি মানুষটাই আলাদা।উনি ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ রেখেই বললেন,
-কারো কথায় ওভাবে হাসতে নেই।প্রেমে পরে যাবে।দুরে থাকতে পারবে না আবার।
দুরে থাকার কথাটা শুনে বুক ভারি হয়ে আসতে লাগলো।সিটের পেছনে মাথা ঠেকিয়ে বাইরে চোখ রাখলাম।আজকের এই অল্পকিছু মুহুর্তের মুগ্ধতা সত্যিই কোনোভাবে ওই সর্বনাশা অনুভূতিগুলোকে গাঢ় করে দেবে না তো?দুরে থাকতে কি আদৌও পারছি?নাকি পারবো?
.
রেজেস্ট্রি অফিসের সামনে গাড়ি থামলো।মধ্যরাতে অফিস খোলা থাকার মতো কাজটা এএসএ’র দ্বারাই সম্ভব জানতাম।তাই ওনাকে কোনো প্রশ্ন করিনি।গাড়ি থেকে নেমে দেখি আস্থা রোহান ভাইয়া দাড়িয়ে।আস্থা লাজুক ভঙিতে দুলছে আর রোহান ভাইয়া প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে হাতে দুটো ফুলের মালা আর ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে।আস্থা হেলতে দুলতেই বললো,
-এভাবে বিয়ের কি দরকার মিস্টার রোহান?আম্মুর তো আপনাকে খুব পছন্দ।আপনি চাইলে কালই বাসায় বলবো।এতো তাড়া কিসের আপনার?
কটমটে চোখে তাকালেন রোহান ভাইয়া।আস্থার হাসি তাতে আরো প্রসারিত হলো।আমি আর তানহা একসাথে এগোলাম।তানহাকে কনে সাজে দেখে আস্থা সর্বহারার মতো আর্তনাৎ করে বললো,
-আল্লাহ্ গো!তোমার দিল কি দয়া হয় না?এক বান্ধবী পালিয়ে বিয়ে করলো,মানলাম।কোনো ট্রিট পাইনাই।কিন্তু আরেকজন তো বড়লোকের মেয়ে!ওর বিয়েতে ভালোভালো খাবারদাবার খাওয়ার কপালটাও দিলা না আমারে?কি দোষ আমার?কি দোষ আমার পেটের?ইয়া খোদা?আমি কেনো এতো কপালপুড়ী?বেস্টুর বিয়ে আমার কপালে নাই কেনো?
ওর আহাজারি শেষ করার জন্য সময় দিলাম ওকে।নইলে কারো কথা কানে তুলতো মা ও।তারপর আস্তেধীরে বুঝিয়ে বললাম সবটা।তিহান তানহার বিয়ে শুনে আগেপরের সবটা ভুলে গেছে ও।খুশিতে তানহাকে জরিয়ে ধরে কেদে দিয়েছে।সবাই মিলে ভেতরে ঢুকলাম।রোহান ভাইয়া কাজিও এনেছিলেন সাথে।সবরকমের নিয়ম মেনে তানহা তিহানের বিয়েটা হয়ে গেলো।তানহার সাথে কথা বললেও,তিহানের সাথে এখনো কথা বলিনি।বিয়েটা শেষ হতেই অঙ্কুর কাউকে ফোন করে বলতে লাগলেন,
-হ্যালো মিস্টার চৌধুরী,আপনার মেয়ে তানহাকে খুজে পাওয়া গেছে।এড্রেস সেন্ড করছি,চলে আসুন।তিহানও এখানেই।আর যাকেই হোক,ওই প্রেসমিডিয়াকে জানাবেন না কিছু।কি জানি আপনার মেয়ে ঠিক কোন অবস্থায় আছে!পাব্লিক হলে আবার আপনারই মান সম্মানের অন্তরায় না হয়!
ফোন কেটে দিলেন উনি।তানহা বললো,
-আপনি পাপাকে কেনো ডাকলেন?
-দেখো তানহা,আমি চাইনা তোমাদের বিয়েটার জন্য তিহানের ফ্যামিলি কোনোভাবে হ্যারাস হোক।তাই এসব ঝামেলা এখান থেকে মিটিয়ে যাওয়াটাই ভালো হবে।তোমার বাবা তো পুলিশ ছাড়া ঘুরবে না।এখানেও পুলিশ নিয়েই আসবে দেখো।তিহানের বাড়িতে পুলিশ যাবে,যদিও কিছু করতে পারবে না,তবে বিষয়টা ভালো দেখাবে না।তাই…
মুগ্ধতায় মনপ্রান ভরে উঠলো।উনি আস্থা,তানহা তিহানের সাথে আড্ডায় ব্যস্ত।আর এদিকে রোহান ভাইয়ার চেহারায় ঘুম নষ্ট হওয়ার আফসোস স্পষ্ট।মিনিট দশেকের মধ্যেই তিনটে গাড়ি হাজির।একটা থেকে তানহার বাবা মা বেরিয়ে এলো।বাকি দুটোতে পুলিশ।তানহার বাবা সোজা এসে চড় লাগাতে যাচ্ছিলো।তিহান তার হাত আটকে দিয়ে শান্তভাবে বললো,
-আপনি আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলতে পারেন না স্যার।
তানহার মা বাবা দুজনেই অগ্নিচক্ষু করে ওর দিকে তাকালো।তানহা স্পষ্টভাবে বললো,
-ও ঠিকই বলেছে।আমার আর ওর বিয়ে হয়ে গেছে পাপা।আমি ওর বউ!
তানহার বাবা ঝারা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,
-কোনো বিয়ে হয়নি!কোনো বিয়ে মানি না আমি!ইন্সপেক্টর,এই ছেলেটা আমার মেয়েকে বিয়ের আসর থেকে তুলে এনেছে।জোর করে বিয়ে করেছে ওকে।অ্যারেস্ট হিম!ডু ইট ইন্সপেক্টর!ডু ইট!
-আমাকে কেউ তুলে আনেনি।আর আমি স্বেচ্ছায় বিয়েটা করেছি।তিহানকে কেউ কিছু করবে না!
তানহার মা বললো,
-চুপ করো তানহা!এসবের জন্য এতো স্বাধীনতা দিয়েছি তোমাকে?ইন্সপেক্টর?এই ছেলেকে থানায় নিয়ে যান!ওই আমার মেয়েকে ফাসিয়েছে।
-স্বাধীনতা তো চাইনি আমি মাম্মি।সময় চেয়েছিলাম তোমাদের।পারোনি দিতে।সেটাকেই স্বাধীনতা বলছো তুমি।আর হ্যাঁ,কেউ ফাসায় নি আমাকে।আমিই ভালোবাসি তিহানকে।ওকে কিছু বলবে না!
তানহার বলার পরও পুলিশ এগোচ্ছিলো তিহানের দিকে।এবার অঙ্কুর মাঝখানে এসে দাড়ালেন।ইন্সপেক্টর বিস্ময়ে থেমে গেলো।তানহার বাবা বললেন,
-এএসএ?তুমি?
-ওমা!অবাক কেনো হচ্ছেন?আমিই তো আপনাকে ঠিকানাটা দিলাম।এখানে আমি না থাকলে চলে?তাছাড়া,আমিই তো দায়িত্ব নিয়ে ওদের বিয়েটা করালাম মিস্টার চৌধুরী!বাবা হয়ে মেয়ের ভালোটা বুঝলেন না,বাধ্য হয়ে আমিই তানহাকে ওর ভালো বুঝতে শেখালাম।
-এএসএ!
-গলা নামিয়ে।আর এইযে ইন্সপেক্টর? তানহা তিহান দুজন এই স্বাধীন দেশের স্বাধীন,প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক।নিজেরা ভালোবেসে বিয়ে করেছে।মিস্টার চৌধুরীর কাছ থেকে চা নাস্তার টাকা নিয়ে আপনারা এই কেসে যাকে ভিক্টিম বানাচ্ছেন,তার স্বীকারোক্তি,সে স্বেচ্ছায় পালিয়েছে।আর যাকে দোষী দেখিয়েছেন,সে তানহার বর।ওরা দুজন বিবাহিত।বিয়ের সব ডিটেইলসের মুল কপিটা এখন দেখাচ্ছি,কাল ফটোকপি থানায় পাঠিয়ে দেবো।আই হোপ আর কোনো কথা বলতে হবে না আমাকে?এবার আপনারা আসুন!নইলে আপনার এই ভুয়া কেইস বানানোর কাহিনী আমি সোজা কমিশনারকে জানাতে বাধ্য হবো!
একদমে পুরোটা বললেন অঙ্কুর।ইন্সপেক্টর ঘেমে উঠেছে।কম্পিত কন্ঠে বললো,
-স্ সরি স্যার।এক্সট্রেমলি সরি।মিস্টার চৌধুরী?আপনার কেইসটা আমরা পোস্টপন্ড করছি।আপনার মেয়ে নিজে স্বীকার করেছে তাকে কোনোভাবেই জোর করা হয়নি।তাই এই কেসের কোনো তাৎপর্যই হয়না।মেয়ে মেয়েজামাইকে নিয়ে বাসায় ফিরুন।এই বিষয়ে আপনার আর কোনো কেস নেওয়া হবে না।
আবার অঙ্কুরের দিকে ফিরে বললো,
-আ্ আসছি স্যার।ভালো থাকবেন।
অঙ্কুরের সৌজন্য হাসি।বৃদ্ধাঙ্গুলে কপালের ঘাম মুছে একপ্রকার ছুট লাগালেন ইন্সপেক্টর।তানহার বাবার চোখে রাগে লাল হয়ে আছে।কাপছেন উনি একপ্রকার।তিহান বললো,
-ক্ষমা করবেন স্যার।আপনার অনুমতি ছাড়া বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছি।আমার কাছে ওই মুহুর্তে তানহার খুশি ছাড়া আপনার বিজনেসকে গুরুত্বপুর্ন বলে মনে হয়নি।
তানহা এগিয়ে গিয়ে বললো,
-আমি কিন্তু চেয়েছিলাম,নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে তোমার মতে বিয়েটা করতে।কিন্তু তুমি আমার জন্য তোমার এই বিশাল বিজনেসের এক অংশকে তুচ্ছ করতে পারলে না পাপা?
অঙ্কুর বললেন,
-মিস্টার চৌধুরী,আপনার একমাত্র মেয়ে তানহা।বিয়েটা ওর সারাজীবনের বিষয়।আর ও তিহানকে ভালোবাসে।যা হওয়ার হয়ে গেছে।ভুলে যান।ওদেরকে মেনে নিন।দোয়া করুন যাতে ওরা আজীবন একসাথে ভালো থাকে।মেয়ের জন্য কিছুটা তো ভাবুন মিস্টার চৌধুরী?
কিছু না বলে রাগ নিয়েই চলে গেলেন উনি।সাথে তানহার মাও।কাদতে লাগলো ও।তিহান জরিয়ে রেখেছে ওকে।সান্তনা দেওয়ার মতো ভাষাও ফুরিয়ে এসেছে আমাদের।আজ,এমন একটা মুহুর্তেও মা বাবাকে কাছে পেলো না ও।পাশে পেলো না।এই মুহুর্তে কোনো শান্তনাই ওর কষ্ট কমাতে পারবে না।
.
রাত দুটো বাজে।পৌছালাম তিহানদের বাসায়।দুবার নক করতেই ওর ছোট বোন দরজা খুলে দিয়ে তিহানকে দেখে বললো,
-এতোরাতে বাইরে কেনো তুই ভাইয়া?সকালেই তো জার্নি করে ফিরলি।এখন আবার কোথায় ছিলি?
-তুই ঘুমোস নি?
-পড়ছিলাম।কিন্তু তুই বাসার বাইরে কেনো?কখন বেরিয়েছিলি?
…..
-আচ্ছা আয়।ভেতরে আয়।দরজা ঠিকমতো লাগিয়ে আসিস।
-ত্বোহা?
-কি?
তানহার সামনে থেকে সরে দাড়ালো তিহান।লাল বেনারসিতে কনের সাজে থাকা তানহাকে দেখে ও ঠিকই বুঝেছে কি ঘটেছে।উৎফুল্ল কন্ঠে চেচিয়ে উঠলো,
-তানহা ভাবি?মা?ও মা?দেখো কে এসেছে!তানহা ভাবি?এসো,এসো না!ভেতরে এসো?মা?কই তুমি?
আন্টি আসলো।আঙ্কেলও চশমা মুছতে মুছতে বেরোলেন।তানহাকে দেখে আন্টির ঠোটে হাসি,চোখে জল।
এগিয়ে এসে ওর গালে হাত রেখে বললো,
-মাশাল্লাহ্!
তানহা সালাম করলো ওনাদের।আস্থা আগেই বলেছিলো আন্টিকে,তানহা তিহানকে ভালোবাসে।তিহানের বিষয়টা জানতো না ওরা।তবে বরাবরই চেয়েছে,তানহা ওর জীবনে আসুক।সবটা বুঝিয়ে বললাম তাকে।আন্টি তানহাকে বললো,
-মা রে,এই কুড়েঘরে থাকতে পারবি তো?
তানহা এগিয়ে আন্টির হাত মুঠো করে বললো,
-ভালোবেসে তোমার পায়ের নিচে একটু জায়গা দিও,আমি আমার জান্নাত খুজে নেবো আন্টি।
আন্টি জরিয়ে ধরলো ওকে।তাপর মিষ্টিমুখ করালো।অঙ্কুর রোহান ভাইয়ার সাথে কথা বলে আমার পাশে এসে দাড়াতেই ত্বোহা বিস্ময়ে বললো,
-এএসএ!
-রিল্যাক্স!তোমার ভাইয়ার বেডরুমটা দেখাও তো ত্বোহা!
উনি তানহা তিহানের গলার মালাদুটো নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন।ত্বোহা আটকে দাড়িয়ে ছিলো,পরে তিহানের ইশারায় স্বাভাবিক হলো ও।গুটিগুটি পায়ে আমিও চললাম তাদের পিছনে।অঙ্কুর মালাদুটো ছিড়ে ফুল বিছানায় ছড়িয়ে দিলেন।হুট করেই চোখাচোখি হয়ে গেলো আমাদের।উনি এগোতে এগোতে বললেন,
-ত্বোহা?দুটো মোম আনো তো।
একদৌড়ে চলে গেলো ত্বোহা।ইতস্তত করে চলে আসবো বলে সবে পা বাড়িয়েছি,অঙ্কুর একটানে তার সামনে দাড় করালেন আমাকে।কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাত পিছনে মুড়িয়ে ধরে অনেকটা কাছে টেনে নিয়েছেন উনি আমাকে।বড়বড় চোখে তাকালাম।ওনার কথা আর কাজের আগামাথা বুঝতে মনে হয় পাগল হয়ে যাবো আমি।উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে বললেন,
-ইদানিং তুমি যেনো কেমন কেমন করে তাকাও অদ্রি!তোমার অগ্নিদৃষ্টির চেয়ে এই চাওনিতে ভয় হয় আমার!নেশায় পরে যাই!ট্রাস্ট মি পর্বতশৃঙ্গ,এই নেশা কাটাতে ওই চাওনিতে ডুব দিতে ইচ্ছে করে,সবটা বিলিন করে দিতে ইচ্ছে করে,হাসতে হাসতে নিজস্বতা হারাতে প্রস্তত হই আমি।কিন্তু ওইযে,কর্মফল!সেটা তো তোমাকে ভোগ করতেই হবে!যা আমি সয়েছি,সইছি,তা থেকে তুমি কেনো বঞ্চিত হবে?সো,সাফার!সাফার দিজ সুইট কনসিকুয়েন্সেস!এই মিষ্টি যন্ত্রনায় দগ্ধ হয়ে খাটি হয়ে ওঠো।অপেক্ষায় থাকবো।তার মিষ্টি পরিনতির জন্য।
#চলবে…