সবটা অন্যরকম♥ পর্ব-৩১

0
469

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩১
Writer-Afnan Lara
.
রাত দশটায় আহনাফের রুমটাকে কেমন একটা ভূতুড়ে পরিবেশ বানিয়ে রেখেছে মিনি,খালামণি তার রুমে,,খালু গেছেন বাসার নিচে আড্ডা জমাতে
এই মিনিটা এসময়ে এটা কি করে ফেললো,,মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করতে পারবো কিনা ভেবে পাচ্ছি না,সামনে পাইলে ধরে আছাড় একটা মারতাম ওরে
নিজের কপালে একটা চড় মেরে দিবা ওড়না কোমড়ে পেঁচিয়ে শুরু করলো সবগুলো জামাকাপড় ফ্লোর থেকে তোলার কাজ
কত কত জামা লোকটার,অথচ সব কালো কালো,
কালো জ্যাকেট,কালো টিশার্ট,হাতে গোনা কয়েকটা মাল্টিকালার,একটা মানুষ কালো প্রেমী হলে বুঝি সব কিছু কালো রঙের কিনে রাখে?উফ!
একটা একটা করে ঝাড়তে হবে এখন,একটুখানি বালি পেলেও আমাকে সন্দেহ করবে লোকটা,এই মিনিকে নিয়ে হয়েছে যত জুটঝামেলা,আমার কাজ বাড়াতে দাও সেটা পারবে,ওরে আমার রুমে আটকে আসাই ভালো ছিলো
শার্ট দেখি শেষই হচ্ছে না,কতক্ষণে আলমারি গুছাবো আর কতক্ষণে উনার চাকরির রহস্য বের করবো
.
মিনিট দশেক পর বাসার মেইন দরজা খুলে ঢুকলো আহনাফ,,ডাইনিং রুমে আলো জ্বলছে তার মানে কেউ এখনও ঘুমায়নি মনে হয়,বাবাকে দেখলাম চায়ের দোকানে,যাক একসাথে আজ ডিনার করা যাবে
.
এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে আহনাফ,দিবা সব গুছিয়ে লাস্ট একটা টিশার্ট নিয়ে ঝাড়ছে,ওটাই গোছানো বাকি
আহনাফ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই দেখলো দিবা ওদিকে ফিরে কি যেন নাড়ছে
তার মানে নিশ্চয় আবারও গোয়েন্দা গিরি করতে এসেছে,,দিবা!!????
.
আহনাফের গলা শুনে দিবার নিজের গলাই শুকিয়ে গেছে,ভয়ে পিছনে তাকাচ্ছে না সে,এসময়ে আসবে জানতামই না
এদিকে আহনাফ নিজেকে তার ড্রেসিং টেবিলের মিররে দেখে চমকে আরেকদিকে ফিরে গেলো
কি সর্বনাশ! আমি দেখি বারের শার্টটা খুললাম না
.
আস্তে করে হাতের ব্যাগটা বিছানার উপর ছু্ড়ে আহনাফ গায়ের জ্যাকেটটা খুলে ফেললো তারপর গায়ের শার্টটা খুলছে এখন,ভেতরে আরেকটা টিশার্ট আছে অবশ্য
.
দিবা দোয়াদরুদ পড়তে পড়তে পিছনে তাকালো,তার মুখের সামনে আহনাফের টিশার্টটা ধরে রেখে মুখ লুকিয়ে রেখেছে
.
অসহায়ের মতন কি আর করবে ভেবে না পেয়ে আস্তে করে বললো” সরি,আসলে আমি না মিনিকে খুঁজতে এসেছিলাম”
কথাটা বলে চোখ খুললো দিবা,ওমা আহনাফ দেখি দরজার দিকে ফিরে গায়ের শার্ট খুলছে,,আমাকে ধমক দিয়ে জামাচেঞ্জ করছেন কেন উনি?আমার কথা কি ভুলে গেছে?আচ্ছা ভুলে গেলেই ভালো,আমি বরং এই সুযোগে পালাই
দিবা টিশার্টটা ফেলে সাইড করে পালাতেই যাচ্ছিলো আহনাফ একহাতে টিশার্টটা খুলতে খুলতে আরেক হাতে দিবার হাতটা ধরে ফেললো ঠিকসময়ে
দিবা বুঝেছে আজ তার কপালে মাইর আছে আর নয়ত ইয়া বড় বড় ধমক সাথে মিনিও ধোলায় খাবে
.
যাচ্ছো কোথায়??রাত বিরাতে আমার রুমে এসে থাকছো,বিষয়টা তো আমাকেই খতিয়ে দেখতে হবে তাই না??তোমাকে ঐদিন কি বলছিলাম?আমার রুমে নেক্সট টাইম আসবে না,তাহলে আজ কি করছিলে?তাও ঐ সময়ে যেসময়ে আমার অফিস থেকে আসার সময়ই না
.
ইয়ে আসলে মিনিকে পাচ্ছিলাম না তো,ভাবলাম ও তো আপনাকে পছন্দ করে নিশ্চয় আপনার রুমে এসেছে
.
আচ্ছা ও আমার রুমে এসেছে?তাহলে আমার টিশার্ট হাতে নিয়ে তুমি মিনিকে খুঁজছিলে কেন?
.
না ওটা তো আসলে মিনি….
.
মিনি?
.
নাহহ,ওটা আলমারি থেকে পড়ে গেছিলো নিচে,আমি সেটা তুলে রাখতে চেয়েছিলাম
.
আমার আলমারি খুলতে হাতের কঠোর শক্তি প্রয়োগ করতে হয়,আর আমার সেই আলমারি থেকে কিনা টিশার্ট পড়ে ছিলো?কেউ দরজা না খুললে তো আর এমনি এমনি ভেতরের জিনিস ফ্লোরে পড়ে না
.
দিবা অসহায়ের মতন একটা লুক নিয়ে আহনাফের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো”হাত ছেড়ে দিন,আর কখনও আসব না”
.
ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল আমার মধ্যে এফেক্ট করে না
.
দিবা হাতটা নড়াচড়া করতে করতে ভাবছে ভেগে খালামণির কাছে ছুটে যাবে নাকি অন্য কিছু করবে
কিন্তু কথা হলো আমি যদি খালামনির কাছে যাই উনিও যাবেন,তখন উনি খালামণিকে বলবেন আমি তার রুমে কারণে অকারণে যাই,ইস তখন তো খালামনি খারাপ ভাববে আমায়
.
আহনাফ হাতে এক টান দিয়ে বললো”কি এত ভাবো?আমার রুমে আসছো কেন খোলসা করে বললে হাত ছেড়ে দেবো”
.
দিবা জানে সত্যিটা বললে আহনাফ ওর তেরোটা বাজিয়ে দেবে,তাহলে কি বলবো?
.
আহনাফ দিবার হাত ধরে টেনে নিয়ে বিছানায় জোর করে বসিয়ে দিলো তারপর নিজের আলমারিটা খুলে দেখলো সব ঠিক আছে গুছানো
আর উপরে থাকা ব্যাগটাও ঠিক আছে
দিবা বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে,পালাবো?যদি পালাতে না দেয়,আচ্ছা পালিয়ে দেখি
.
আহনাফ বাসায় পরার শার্টটা খুঁজতে খুঁজতে বললো”আমি কি চাকরি করি সেটা জেনে তোমার কি লাভ,তোমার ঠিকমত খরচ জোগাচ্ছি,তোমার মিনির খরচ দিচ্ছি,তোমার সব চাহিদা পূরন করছি আর কি চাই তোমার?”
.
দিবা এক ছুটে পালিয়ে গেছে ততক্ষণে
আহনাফ সেটা টের পেয়ে শার্টটা নিয়ে ওদিক ফিরে তাকিয়ে কোমড়ে হাত দিলো তারপর বললো”পালিয়ে যাবে কোথায়?”
.
পর্দার আড়াল থেকে খচখচ আওয়াজ আসছে সেই কখন থেকে,,আহনাফ সেদিকে খেয়াল না করে গায়ের টিশার্টটা পাল্টে নিলো তারপর বিছানায় এসে বসতেই খেয়াল করলো পর্দার আড়ালের শব্দটা
এগিয়ে এসে পর্দাটা সরাতেই সে দেখলো মিনি চোরের মতন বসে আছে ওখানে,পর্দা সরাতেই সে এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো
“চৌদ্দ গুষ্টি নিয়ে আমার রুমে করছিলো কি এই মেয়েটা?”
.
ভাবতে ভাবতে আহনাফ বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে আলমারির উপরের ব্যাগটার দিকে চেয়ে রইলো
ওটার ভেতরে লুকিয়ে রাখা ছবিগুলো দেখেনি তো আবার?দেখিতো চেক করে,,আমার হিসেব মতে ওখানে ষোলোটা ছবি আছে

হুমমমমম,এই ছবির মাস্ক পরা ছেলেটা রহস্য সৃষ্টি করছিলো,আমার এখন এর সাথে আহনাফের মিল বের করতে হবে
আচ্ছা এমন নয়ত যে এই লোকটাই উনি?না না,, উনি কেন হবে?? এই লোকটার হাতে ইয়া বড় ট্যাটু আঁকা আর আহনাফ ভাইয়ার হাতে তো সেরকম কোনো ট্যাটু দেখলাম না আমি,তাছাড়া খালামণি বলেছিল উনি ব্যাংকে জব করেন
তাহলে কেন বার নামটা উনার সাথে এভাবে জড়িয়ে আছে??
.
মা,ও মা,খেতে দাও
.
কথাটা শুনে দিবা ওড়না নিয়ে ছুটে গেলো খাবার দেবে বলে,রুম থেকে বের হতেই দেখলো আহনাফ দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক ওর সামনে,দিবার আর বুঝতে বাকি নেই যে আহনাফ ওকে বোকা বানিয়ে রুম থেকে বের করেছে
ঢোক গিলে দিবা হাতের ছবিটা লুকিয়ে ফেললো
.
আহনাফ ব্রু নাচিয়ে বললো”তা দিবা,আমাকে আমার রুমে থাকা ছবিটা ফেরত দিবা?”
.
দিবা জোর করে হাসার চেষ্টা করলো,হাসতে হাসতে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বললো”সত্যি আমার কাছে কোনো ছবি- টবি নেই”.
.
আহনাফ নিজের হাতটা দিবার মুখের সামনে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো”সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে কি করতে হয় জানো?”
.
আঙ্গুল ব্যাঁকাতে হয়
.
কারেক্ট!!তাহলে তুমি কি চাও তোমার হাতের হাড্ডির জায়গা নড়িয়ে দিই মোচড় দিয়ে?
.
দিবা ভ্রু কুঁচকে বললো”সত্যি এমন করবেন?”
.
আহনাফ দুম করে দিবার পাশে দেয়ালের উপর হাত রেখে একটু ঝুঁকে বললো”ভবিষ্যতে আমার কপালে একটা বউ আছে বলেই তোমার দিকে এত সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না,চুপচাপ আমার ছবি আমায় ফেরত দাও নয়ত ঐ যে হাড্ডি সেটাকে জায়গা থেকে নাড়িয়ে দেবো”
.
দিবা চোখটা বড় করলো তারপর বললো”খালামণি!”
.
আহনাফ দেয়াল থেকে হাত উঠিয়ে চমকে পিছন ফিরে তাকালো দিবা সাথে সাথে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফেললো ভেতর থেকে,বড় বড় করে শ্বাস নিতে নিতে বিছানায় এসে দপ করে বসে পড়েছে সে
আহনাফ দেয়ালে একটা বাড়ি দিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো
এই মেয়েটা এত চালু!!আর মা বলে ও নাকি ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না
ওকে ফাইন!আহনাফ ও কম না,ছবিটা ওর কাছে থাকলে আমার মহাবিপদ,ছবিটা যে করেই হোক আবার আগের জায়গায় নিয়ে আসতে হবে আমায়,তবে এই মেয়েটা মনে হয় না সোজাসুজি দেবে আমায়
জোর করেও নিতে পারলাম না,অন্য কোনো ছেলে হলে গলা টিপে আদায় করে নিতো কিন্তু আমি কি করবো,আমার তো ওরে ছুঁতে গেলেও আমার ফিউচার ওয়াইফের কথা মাথায় আসে,তাই আর ছুঁতে পারি না,কিন্তু ছবিটা নিতে হলে কিছু একটা করতে হবে আমায়,এবং সেটা আজকেই
.
কিরে আহনাফ,এত জলদি আসলি??
.
আহনাফ মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো”হুম মা,আজ বারে…
.
বারে?
.
নাহ মানে আমার ব্যাংকে রঙ করা হচ্ছে তাই ছুটি
.
ওহ,এসময়ে কিসের রঙ করায়,কাল করালে তো কাল ছুটি পেতি
.
হুম
.
মা আহনাফের পাশে বসে বললেন”তোকে তো এসময়ে পাই না কখনও,আজ পেলাম,খুব গল্প করবো তোর সাথে,আরিফটাও নেই,ওকে ছাড়া মনটা কেমন কেমন করছে
.
আমি আছি না?
.
কথাটা বলে আহনাফ মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো সোফায়
.
মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন”পরশুদিন তো মণিতার মেহেদি অনুষ্ঠান।তুই তো ভার্সিটি মিস দিবি না।অবশ্য দেওয়ার দরকারও নেই,অনুষ্ঠান তো রাতে হবে।
সন্ধ্যা থেকে।আমরা বিকালেই চলে যাব বরং।ঐবারের মতন কাজ করিস।আমি আর তোর বাবা একসাথে বাসে করে চলে যাব,আর তুই দিবা বাইকে আসিস।
বারতি খরচ তাহলে হবে না,আরিফ তো ওখানেই আছে
.
আহনাফ মাথা তুলে বললো”তোমার পা টা দাও ধরে মিনতি করি আমারে ঐ বিলাই আর দিবার ভার দিও না,দেখলে তো কি হয়েছিলো ঐবার”
.
২০০টাকা কি তোর কাছে কম লাগে?
আমার ছেলের উপার্জন করা একটা টাকাও আমার কাছে অনেক কিছু।দিবার যদি তোর সাথে যেতে সমস্যা হতো তাহলে হয়ত আমি কষ্ট করে হলেও দুইশ টাকা জমাইতাম,কিন্তু ওর তো সমস্যা হয়না,সমস্যা শুধু তোরই হয়
একটু মানিয়ে নিলে কি হয়?ভাব না মেয়েটা অসহায়,,তার বাবার পরিচয় ছাড়া,মায়ের পরিচয় ছাড়া সে আমাদের এখানে থাকছে,কথাটা বললাম কারণ নিজের মা ও কে দেখতে পারে না,স্বার্থপর হয়ে গেছে ইভান আর ইতির জন্য।
আমাদের উচিত ওর মন ভালো করার সবটা করা,আর তুই আছিস সারাক্ষণ ওকে বকাবকি, ওর বিড়ালকে বকাবকি নিয়ে,মেয়েটার মন খারাপ হয় না?
.
তুমি ওর হয়ে তদারকি করতেছো?আমি কিছু না?
.
মা আহনাফের কপালে চুমু খেয়ে বললেন”তুই তো আমার গোটা কলিজা,কিন্তু এখন দিবাও তো আমাদের পরিবারের একজন,ওকে তো সেভাবেই ট্রিট করতে হবে তাই না?”
.
ওকে বলবা আমার পার্সোনাল লাইফে যাতে ইন্টারফেয়ার না করে,আমার এসব পছন্দ না,তুমি জানো? ও বিশ্বাস করে না আমি কিসের জব করি
.
মা মুচকি হেসে বললেন”বাচ্চা মেয়ে,বাসায় থেকে কি আর করবে,তোদের দেখে মনে হয় কত কাল ধরে এরকম খুনসুটি করিস,অথচ দিবা এই বাড়িতে এসেছে এখনও এক মাস হলো না”
.
সেধে সেধে ও আর ওর ঐ আজাইরা বিড়াল আমার পিছনে লেগে থাকে,ডিউটিতে গিয়েও শান্তি নাই,আর এখানেও..
.
ডিউটিতে শান্তি নাই কেন রে?
.
ওহ কিছু না,খাবার রেডি করো,খেয়ে এক ঘুম দেবো
.
মা উঠে গেলেন খাবার টেবিলে আনতে,বাবা এসেছে মাত্র,আহনাফকে দেখে ওর পাশে এসে বসলেন উনি,দিবা দরজাটা একটু ফাঁক করে বাহিরে তাকালো,বাহিরে মুখটা বের করতেই দেখলো আহনাফ পায়ের উপর পা তুলে ওর দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে যেন বাঘ আর হরিণ একে অপরকে দেখছে
আহনাফ বাঘ আর দিবা হরিণ
আহনাফ চোখ দিয়ে ইশারা করলো এদিকে আসতে,মুখ দিয়ে কিছু বললো না কারণ পাশেই বাবা বসে আছে,আর রান্নাঘরে মা
দিবা ভয়ে আবারও দরজা লাগিয়ে ফেললো,এই ছবিটা তাহলে দিয়ে দিতে হবে,নাহলে এই লোকটা আমাকে রুম থেকেই বের হতে দিবে না
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here