সবটা অন্যরকম♥ পর্ব-৩৮

0
552

সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৩৮
Writer-Afnan Lara
.
আরিফ বড় ভাইয়াকে সামনে রেখে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করছে।আহনাফ সেটা বুঝতে পেরে চলে এসেছে ছাদ থেকে বাসায়
দিবা চায়ের কাপ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে মিনিকে কয়েকবার ডাকলো।ঐ রুম থেকে আনাফের চিৎকার চেঁচামেচি শুনা যায়।
-নিশ্চয় ওকে জ্বালাচ্ছে আবার।এই মিনিটাকে নিয়ে আর পারি না আমি
নিজেও বাচ্চা,জ্বালাচ্ছেও একটা বাচ্চাকে
মিনি!!অনেক হয়েছে দুষ্টুমি।আর একবার যদি আনাফকে জ্বালিয়েছিস তো তোর খবর আছে
.
মিনি শান্ত হয়ে দিবার কাছে এসে দাঁড়ালো।আনাফ জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে ছিল এতক্ষণ।শান্তির নিশ্বাস ফেলে সে নামতে নামতে বললো”থ্যাংক ইউ আপু।”
.
-আনাফ শুনো।মিনি যখন দেখে ওকে কেউ ভয় পাচ্ছে তখন ও আরও বেশি করে ভয় দেখায়।তুমি এমন ভাব করবা যেন তুমি ওকে ভয় পেলে না
.
-আচ্ছা
.
-দিবা?
.
দিবা পিছন ফিরে দেখলো আহনাফ এসেছে
চেহারায় ক্লান্তি ভাব।এগিয়ে এসে বললো”এক কাপ চা হবে?”
.
-একটু দাঁড়ান
আমি এনে দিচ্ছি।সবার জন্য বানানো হয়েছে মনে হয়
.
দিবা চলে যেতেই আহনাফ মিনিকে খপ করে ধরলো ফ্লোর থেকে নিয়ে।মিনি তো অবাক!
আহনাফ মিনিকে আবার ছেড়ে দিয়ে হাঁচি দিতে দিতে দূরে গিয়ে বললো”মন চাইলো এই তুলোর মতন বিড়ালটাকে আদর করি কিন্তু নাহ আমার শরীরে সইলো না”
.
মিনির তো বিশ্বাস হচ্ছে না আহনাফ তাকে কোলে নিয়েছে সে এবার আহনাফের কাছে এসে বসলো
আহনাফ বিছানায় হেলান দিয়ে বললো”আনাফ যাও তোমার ভাইয়াকে বলো এদিকে আসতে”
.
-ঠিক আছে
.
আনাফ চলে গেলো।আহনাফ ফ্যানের ভলিউম বাড়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।দিবা মিনিট দুয়েক পর এসে চায়ের কাপটা ওর পাশে রেখে চলে গেলো
ওর আসার আওয়াজ পেলো আহনাফ তাও চোখ খুললো না
আদনানের কথা শুনে চোখ মেলে নিজের কাপটা হাতে নিয়ে নিলো সে
আদনান আবার খালি খাওয়ার জিনিস দেখলে কাউকে জিজ্ঞেস না করেই ছোঁ মেরে নিয়ে নেয়
.
-আয় বস।চা খাবি?আনাফকে বলতাম?
.
-না।সবেই খেলাম।তা কি ভেবে ডাকা হলো শুনি?
.
-আমার বন্ধু জিসান।ওর ছোট বোন হলো জুঁই।ওর জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে। মেয়েটা বেশ ভালো।তুই চাইলে তোকে ছবি দেখাতে পারি
.
-এতই ভালো যখন তুই বিয়ে করছিস না কেন?
.
-কারণ আমার কল্পনার প্রেয়সীর মতন না সে। যার রুপ পানি পড়ার পর ঝলক দিয়ে উঠবে
.
-বাহ!দারুণ।তবে আমার পছন্দ আছে।
.
আহনাফের যেন চা গলায় আটকে গেছে।চোখ বড় করে সে বললো”কে সে?”
.
-উহু!সিক্রেট।বলা যাবে না।যখন প্রস্তাব দিয়ে সব ঠিক করবো তখনই জানাবো তোকে বুঝলি
.
-তার নাম কি “দ” দিয়ে শুরু হয়?
.
আদনান কপাল কুঁচকে বললো”কোনোরকম ক্লু পাবি না তুই।মনে কর সারপ্রাইজ।”
.
আহনাফ চুপচাপ চা শেষ করে থ হয়ে বসে থাকলো।
-দিবা নাকি অন্য কেউ।অবশ্য দিবা হলেও কি?
ভালোই তো।দিবা একটা ভালো পরিবারে আসবে।
আদনান ভালো চাকরি করে।আর কি লাগে!
.
দিবা খালামণির সাথে বসে বসে হলুদ বেছে নিচ্ছে।কাল গায়ে হলুদের জন্য কাঁচা হলুদ বাটা হবে তাই ভালো দেখে সব কালেক্ট করছে তারা দুজন।
.
কাজ সেরে রুমে এসে এখন খালামণি আদনানের আম্মুর সাথে মজা করছেন একটা বিষয়ে।বিষয়টা হলো আদনানের ফুফুকে নিয়ে
উনি উঠে পড়ে লেগেছেন দিবাকে তার বাড়ির বউ করতে
আদনানের আম্মু ও হেসে ফেললেন কথাটা শুনে।উনার নাকি এমন স্বভাব আছে যেখানেই সুন্দর ঠিকঠাক একটা মেয়ে দেখবে ওকে নিজের বাড়ির বউ করার স্বপ্ন দেখার তবে অনেকে রাজি হলেও পরে কথাটা ঠিক এগোয় না।
দুপক্ষের হানাহানি শুরু হয়ে যায় ঠিক কি কারণে সেটা খোলসা করে আদনানের আম্মু বলতে পারলেন না
দিবা ওদের কথা শুনছে আর একটা ঘাড়ো পেস্ট কালারের শাড়ী ভাঁজ করছে।শাড়ীটা জন্টুর মায়ের জন্য পাঠানো হবে।বেশ দেখতে।মধ্য বয়স্ক নারীদের এরকম শাড়ীতে দারুণ মানায়
শাড়ীটা চয়েস করে এনেছে আদনান নিজেই।অবশ্য সঙ্গে করে মণিতাকেও নিয়েছিলো
শাড়ীটা ভাঁজ করে রাখতেই ডাক পড়লো দিবার
আহনাফ ডাকছে ওকে।কারণটা হলো মিনি নাকি ওর কাছ থেকে নড়ছে না
তবে মিনিকে সরাতে ডাকছে না, ডাকছে টিসু বক্সটা খুঁজে এনে দিতে।হাঁচি দিতে দিতে সে কাহিল হয়ে যাচ্ছে
মিনিকে কাছে ধরে না রাখলে সে আবার গিয়ে আনাফকে ডিস্টার্ব করবে।আনাফকে আদনান কাজ দিয়েছে ডালা সবগুলোর একটা ভিডিও বানাতে।এখন ওকে ডিস্টার্ব করলে কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে
দিবা সবগুলো রুম খুঁজে টিসুর বক্সটা বের করতে লেগে পড়েছে।দূরে দাঁড়িয়ে আছেন আদনানের ফুফু আর তার ছেলে
ফুফু ইশারা করে ওকে বলছে দিবাকে দেখতে
পছন্দ হয় কিনা!।ছেলেটার মুখে হাসি দেখে বোঝায় যাচ্ছে যে দিবাকে তার বেশ পছন্দ হয়েছে।তার মা তার হাসি দেখে এক ছুটে গেলেন আহনাফের মায়ের কাছে
দিবা টিসু বক্সটা খুঁজে পেয়ে দিতে গেলো আহনাফকে
আহনাফ আর আদনান কি একটা কথা নিয়ে হাসতে হাসতে বিছানায় লুটোপুটি খাচ্ছে
দিবা চুপচাপ টিসু বক্সটা রেখে চলে আসলো।এবার মণিতার কাছে যাবে ঠিক করেছে
সেখানে মণিতার চাচাতো বোনেরা সব বিছানায় শুয়ে ফোন টিপছে। দূরে বারান্দায় মণিতা জন্টুর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত
-কি এক বোরিং ব্যাপার।সবাই সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত
আমি কি করি এখন?আচ্ছা মিনিকে নিয়ে ছাদে যাব
.
দিবা মিনির কাছে এসে ফিসফিস করে ওকে ডাকলো
মিনি ওর কাছে আসতেই ওকে ফ্লোর থেকে তুলে নিলো সে
আহনাফ বললো”ওকে নিয়ে কই যাও তুমি?”
.
-ঐ আসলে এখানে ভাল্লাগছে না তাই ছাদ থেকে ঘুরে আসবো একটু
.
-একা একা বাহিরে যাওয়ার দরকার নাই কোনো।মণুর যত চাচাতো বোন আছে সবগুলোকে নিয়ে মজা করো যাও
.
-আরে ভাই যাইতে চাইছে যখন যেতে দে।ছাদেই তো যাচ্ছে
আর ওখানে তো আরিফ ও আছে।কোনো সমস্যা নাই
.
-ঠিক আছে যাও তবে মিনিকে চোখে চোখে রাখবা।ছাদের রেলিং কিন্তু এক জায়গায় ফাঁকা
.
হুম
.
দিবা মিনিকে নিয়ে ছাদে চলে এসেছে
কোণায় বসে আরিফ ফোনে কথা বলছে বলে দিবা ওদিকে না গিয়ে আরেক দিকে গেলো।মেহেদি অনুষ্ঠান হয়েছিলো বলে কিছু গাঁদা ফুল আর গোলাপ ফুল এখনও আছে স্টেজে
ফুল দিবাকে আকর্ষণ করে বেশি
আর সেই ফুল দিয়ে মিনিকে সাজানো দিবার শখ
যেমন ভাবা তেমন কাজ।কয়েকটা ফুল নিয়ে মিনিকে সামনে বসিয়ে ওর মাথায় ফুল গুঁজে দিলো সে
মিনি বোর হয়ে বসে আছে দিবার দিকে চেয়ে।দিবা তার মনমত মিনিকে সাজিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো”তুই যদি মেয়ে বিড়াল হতি তাইলে শাড়ী পরিয়ে দেখতাম কেমন লাগে।যেহেতু তুই ছেলে তাই ফুল মাথা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রাখলাম”
.
দিবা মিনিকে ধরে কোলে নিয়ে আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে থাকলো এবার
আরিফ কথা বলা শেষ করে পুরো ডেকোরেশনের কিছু ছবি তুলে চলে গেলো বাসার দিকে।দিবাকে সে খেয়াল করেনি
বাসায় এসে আহনাফ আর আদনানের মাঝ বরাবর বসে ছবিগুলো ওদের দেখাচ্ছে সে এখন
সবার শেষ ছবিটাতে দিবার এক দারুণ ছবি দেখলো ওরা তিনজন
আরিফ নিজের অজান্তেই দিবার একটা ছবি তুলে এনেছিলো
দিবার কোলে মিনি।মিনির মাথায় ফুল আর দিবার চোখ চাঁদের দিকে।ছবিটায় চাঁদ ও উঠেছিলো। কি সুন্দর উঠেছে ছবিটা!
আহনাফ আরিফের থেকে ফোন নিয়ে ছবিটা বেশ মনযোগ দিয়ে দেখে বললো”বাহ!তুই তো ভালো ছবি তুলিস!”
.
-দিবা ওখানে নাকি?আমি তো একদম দেখতে পাইনি
.
-তা পাবি কি করে?
তোর তো মাথায় খালি আরিশা ঘুরে।যাই হোক ছবিটা আমাকে সেন্ড কর তো।দিবার জন্মদিনে ওকে গিফট করবো ছবিটা ফ্রেম আকারে বাঁধায় করে
.
আরিফ আর আদনান গালে হাত দিয়ে আহনাফের দিকে চেয়ে আছে
আহনাফ কপালটা কুঁচকে বললো”কি?ভূত টুত দেখলি নাকি তোরা?”
.
-তোর শরীর ঠিক আছে তো?নিজের কল্পনার প্রেয়সীর ছবি ফেলে এবার দিবার ছবি টাঙাবি?
.
-আদনান তোরে মেরে সত্যিকারের ভূত বানিয়ে দেব।আমি কি একবারও বলেছি যে ছবিটা আমি আমার কাছে রেখে দিব?ছবিটা তো আমি দিবাকে দেবো
ওর এত সুন্দর একটা ছবি। ও দেখলে খুশি হয়ে যাবে
.
আরিফ বিছানায় হেলান দিয়ে একটা ভাব নিয়ে বললো”এতদিন তো একজনের চুল আরেকজন ছিঁড়তা ইদানিং হঠাৎ করে আবহাওয়া বদলে গেলো কেন?”
.
আদনান আরিফকে খোঁচা দিয়ে বললো”সুবিধা টিকছে না।
নজরে রাখিস
আহনাফ এতদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে এখন সব গোপন করছে”
.
-তোদের দুটোকে মারবো অনেক
এত ফিসফিস কিসের হু?
.
-না ও কিছু না।দিবা তো ছাদে একা
ওকে যদি ভূতে বা অন্য কিছু ধরে নিয়ে যায়?
.
-তোরা চাস আমি ওখানে যাই?
.
-একদমই না।তবে তোর মন চাইলে যেতে পারিস।আমরা ফিসফিস করবো না সত্যি
.
আহনাফ পায়ের উপর পা রেখে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে বললো”যাব না।বাসার ছাদেই তো আছে।ওকে আবার কে নেবে।আর ওর সাথে ওর সেই মহাদুষ্টু বেড়ালটা আছে
সুতরাং টেক ইট ইজি গাইস।এখন আমাকে একটু রেস্ট নিতে দাও”
.
আদনান আহনাফের বুকে কিল বসিয়ে দিয়ে বললো”সত্য কথা স্বীকার করবি নাকি খালামণিকে জানাইতাম তুই আজকাল দিবার ছবি রিসিভ করস ”
.
-যা বল।আমার মা জানে তার ছেলের পছন্দ কেমন
আহা!!মুখে পানি পড়লে ঝলকাই ওঠে এমন বালিকা কোন হানে পাওয়া যায় ভৎস?
.
-আদনান ভাইয়া চলো যাই আমরা।ভাইয়ার মুখ দিয়ে কথা বের করা আর পুকুরে খালি হাতে পুঁটি মাছ খোঁজা একই জিনিস
.
-ঠিক বলেছিস।চল আমরা যাই
.
-আহনাফ??
.
-কি মা?
.
-দিবা নাকি ছাদে গেছে।ওকে ডেকে আন তো
আদনান আর আরিফ বাসার নিচে নাহলে ওদের বলতাম
.
-আনাফকে বলো
.
-সে তো বাথরুমে
.
-ঠিক আছে আমি যাচ্ছি
.
আহনাফ বাসা থেকে বেরিয়ে ছাদের দিকে গেলো।দিবা মিনির সাথে দৌড়াদৌড়ি খেলছে।যে দিকটায় ফাঁকা রেলিং সেদিকে যায়নি।সেফ জায়গায়তেই দৌড়াচ্ছে দুজন
আহনাফ ছাদে এসেছে পাঁচ মিনিট হলো
চুপচাপ সেখানে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে ওদের মজা করা দেখছে
দিবা একসময়ে থেমে গিয়ে বললো”অনেক হলো।চল এবার আমরা যাই”
.
মিনিকে আবারও কোলে তুলে দিবা পিছন ফিরতেই আহনাফকে দেখতে পেলো।আহনাফ হালকা কেশে বললো”ঐ আসলে মা ডেকেছিলো তোমায়!”
.
-হুম, আসছি
.
আহনাফ নেমে গেলো।পিছু পিছু দিবাও আসছে
দুজনে একসাথে বাসায় ঢুকার সময় আদনান আর আরিফের সামনে পড়েছে
আদনান আর আরিফ চোখ ছোট করে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললো”তাহলে এই ব্যাপার?”
.
-কি ব্যাপার?
.
-না কিছু না
কিছুক্ষন আগে একজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি বলেছিলেন তিনি নাকি দিবার ব্যাপারে অজ্ঞাত
.
দিবা আগামাথা কিছুই না বুঝে মিনিকে নিয়ে ভেতরের দিকে চলে গেছে
আহনাফ ওদের দুজনকে ধরে বললো”মা পাঠিয়েছিল আমায়।বিশ্বাস না হলে মাকে জিজ্ঞেস কর যা!পেয়েছে একটা।এখন সারাদিন এটা নিয়েই পড়ে থাকবে”
.
-অবশ্যই!তোর সাথে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের নাম জড়ালো না তাহলে কদিন ধরে হুট করে এমন জড়াচ্ছে কেন বলতো?
.
-আরিফ যা মায়ের কাছে।আমি আসছি একটু পর
.
আরিফ চলে যেতেই আহনাফ আদনানের গলা চেপে ধরে বললো”ও আমার খালাতো বোন হয়!”
.
-হুম।খালাতো বোন হয়!
.
কি?শুধু বোনই তো হয়
.
হুম!!শুধু বোনই তো হয়
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here