সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৪৯
Writer-Afnan Lara
.
-“কিন্তু আমি তো পাত্তা দিচ্ছি।দেখি উঠুন।খাবারটা খাওয়া হলে ঔষুধ খেয়ে নেবেন”
.
-“লাগবে না।আমি ঠিক আছি”
.
-“এত জেদ ধরলে আমি কিন্তু এখনই বাবার বাসায় চলে যাব বলে দিচ্ছি”
–
আহনাফ কপাল কুঁচকে বললো”যাও।এখনই যাও।তোমার যদি দেরি না সয় তো যাও।আমি কি বাধা দিচ্ছি?আমি বাধা দেওয়ার কে?”
.
-“ঠিক আছে।চলে যাচ্ছি”
.
দিবা রুম থেকে বেরিয়ে দুষ্টুমি করে মেইন দরজাটা খুললো আওয়াজ করিয়ে তারপর আবারও লাগালো।এরপর লুকিয়ে পড়লো সোফার কিণারায় এসে
আহনাফ রুম থেকে বেরিয়ে দরজা পর্যন্ত এসে দরজা খুলে এদিক ওদিক তাকালো।
-“দিবা কি সত্যি চলে গেছে নাকি?
কি করি এখন।দিবা??দিবা!!!”
.
-“আমি এখানে”
.
আহনাফ পেছনে তাকিয়ে দেখলো দিবা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
আহনাফ ধরা খেয়ে মুখটা নিচু করে রুমের দিকে যাওয়া ধরতেই দিবা ওর সামনে দাঁড়িয়ে পথ আটকালো।হাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বললো”আমি খুব শীঘ্রই আপনার হবো।ততদিন অপেক্ষা করা যায়না?”
.
-“আমি কি বলেছি যে অপেক্ষা করতে পারবো না?আমার কষ্ট হচ্ছে তোমার আর মিনির চলে যাওয়ার কথা ভেবে”
.
-“রোজ ভার্সিটিতে এসে দেখা হবে আমাদের।দরকার হলে শুক্রবারেও ভার্সিটিতে আসবো।ঠিক আছে?”
.
-“ঘুমাবো।খাব না”
.
দিবা রাগী লুক নিয়ে বললো”তাহলে কিন্তু সত্যি সত্যি চলে যাব এখন”
.
আহনাফ দিবার হাত ধরে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো”আচ্ছা তুমি খাইয়ে দাও।”
.
দিবা হাত ধুয়ে এসে আহনাফের পাশে বসলো খাবার খাইয়ে দেবে বলে।
মিনি কোথা থেকে এসে হাজির।আহনাফ ওকে কাছে নিয়ে এসে বললো”এরে বেশি মিস করবো”
.
মিনি যে অভিমান করেছিল সে কথা ভুলে গেছে আহনাফের ছোঁয়া পেয়ে।আদুরে হয়ে সে গুটিয়ে আহনাফের কোলের ভেতর শুয়ে পড়লো
দিবা চুপচাপ আহনাফকে খাবারটা খাইয়ে দিয়ে ঔষুধ খু্ঁজে আনলো।সেটাও খাইয়ে দেওয়ার পর মিনিকে কোলে নিলো চলে যাবে বলে।আহনাফ ওর হাতটা ধরে বললো”একটু বসো”
.
দিবা তাই মিনিকে নিচে ছেড়ে দিয়ে আহনাফের পাশে বসলো।আহনাফ শুয়ে আছে।দিবা আহনাফের চুলে হাত বুলাচ্ছে চুপচাপ
আহনাফ কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো দিবা টেরই পেলো না।দিবার চোখে ঘুম নেই।নিজের চোখের সামনে আহনাফ আর মিনিকে ঘুমোতে দেখছে সে।এত সুন্দর দৃশ্য দেখার সময় কি কারোর চোখ জুড়ে ঘুম আসে?
তার পরেও রাত ১টার দিকে দিবার চোখ ও বন্ধ হয়ে আসলো।আহনাফের পাশেই গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে পড়লো সে।
রাত আড়াইটা বাজতেই আহনাফ হঠাৎ জেগে গেছে।দিবাকে পাশে দেখতে পেয়ে মনে শান্তি পেলো ঠিক কিন্তু এটা ঠিক না,কেউ দেখে ফেললে অন্য কিছু ভাববে তা ভেবে দিবাকে সে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো
দিবা ঘুম ঘুম চোখে শুধু বললো”পানি খাবেন?পিপাসা লাগছে?”
.
-“নাহ।যাও নিজের রুমে গিয়ে ঘুমাও।এখানে থাকাটা ঠিক না”
.
দিবা আহনাফের কথা মতন উঠে চলে গেলো।মিনিকে নিলো না
মিনি ওখানেই ঘুমাচ্ছে আরামসে
.
পরেরদিন সকালে দিবার আগে আহনাফ উঠে পড়েছে দিবার উঠতে দেরি কারণ সে কাল রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি।আহনাফ জগিংয়ে যাওয়ার সময় দিবার রুমের দিকে একবার তাকালো।বাতাসে পর্দা সরে যেতেই এক ঝলক দিবাকে দেখলো সে
বালিশের উপর হাত ভাঁজ করে রেখে তাতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে সে।মা উঠেছে সবে।দিবা নাস্তা বানাচ্ছে কিনা দেখতে এসে দেখলেন দিবা নেই রান্নাঘরে।আহনাফ বাসা থেকে যেতে যেতে বললো”আসার সময় হোটেল থেকে নাস্তা কিনে আনবো।কাউকে বানাতে হবে না”
.
মিনি লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে আহনাফের সাথে চললো।দিবা ঘুম থেকে উঠেছে সাড়ে আটটার দিকে।এত দেরি হয়েছে দেখে ছুটে গেলো সে রান্নাঘরের দিকে।তার ছুটে আসা দেখে খালামণি বললেন”টেনসন করিস না।আহনাফ বলেছে আসার সময় নিয়ে আসবে”
.
-“ওহ।ঠিক আছে”
.
দিবা গেলো ফ্রেশ হতে।ঘন্টা খানেক পর আহনাফ মিনিকে সাথে করে আবার ফেরত আসলো।দিবা ডাইনিং টেবিলে প্লেট সাজাচ্ছিলো।দুজনের চোখাচোখি হলো কিন্তু একজনেও হাসলো না।দুজনের মুখেই কষ্টের ছাপ।কিছুক্ষণ পরেই দিবা এই বাসা ছেড়ে চলে যাবে তা ভেবেই তাদের কারোর মুখেই হাসি নেই।আহনাফ নাস্তার ব্যাগটা টেবিলে দিবার সামনে রেখে চলে গেছে নিজের রুমে
দিবা খাবার প্লেটে রেখে খালামণিকে ডাক দিলো।কলিংবেল বাজছে।এসময়ে কে আসতে পারে তাই ভাবছে দিবা।তার হাতে ঝোল লেগে থাকায় আহনাফের রুমের দিকে তাকালো সে।আহনাফ বিছানায় বসে এদিকেই চেয়ে ছিল।দিবার ইশারাতে উঠে আসলো দরজা খুলবে বলে
দরজাটা খুলতেই দেখলে সাদাত স্যার দাঁড়িয়ে আছেন।দিবাকে নিতে এসেছেন।আহনাফের মনটা আরও খারাপ হয়ে গেলো।ভেবেছিল দিবাকে নিজের সাথে করে ভার্সিটিতে নিয়ে যাবে।ঘুরবে তারপর বিকালে ওকে বাসায় দিয়ে আসবে কিন্তু স্যার দেখি সকাল সকাল চলে এসেছেন
খালামণি সাদাত স্যারকে দেখে হেসে বললেন”সাদাত আসো নাস্তা করবে আমাদের সাথে”
.
সাদাত স্যার মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসে বললেন”নিজের মেয়েকে বাসায় নিয়ে যাব বলে আর দেরি সহ্য হচ্ছিলোনা।কাল রাতে আমার ভাইয়েরা তাদের পরিবার নিয়ে এসেছে দিবাকে দেখবে বলে তাই জলদি চলে এলাম”
.
আহনাফ সোফায় বসে বলপয়েন্ট ঘুরাচ্ছে হাতের তালুতে রেখে।দিবা তার বাবার সামনে প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে আহনাফের প্লেটটা নিয়ে ওর সামনে রাখলো তারপর নিজের প্লেটটা নিয়ে ওর পাশে এসে বসলো।খালামণি আর খালু স্যারের সাথে বসেছেন।স্যার তার ভাইদের কথা বলছেন উনাদের সাথে
দিবা পরোটা মুখে দিয়ে আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ খাচ্ছে না
দিবার রাগ হলো আহনাফের এমন বিহেভ দেখে।কষ্ট পেলে মানুষ খাবারের সাথে কেন রাগ করে?
রেগে রেগে সে পরোটা নিয়ে আহনাফের মুখ টিপে ধরে মুখে পুরে দিয়ে বললো”রাগ আমারও আছে”
.
খাওয়া শেষ হতেই বাবা দাঁড়িয়ে রইলেন যাবেন বলে।দিবা ব্যাগটা নিয়ে বের হলো রুম থেকে।আহনাফ তার রুম থেকে বের হচ্ছে না বরং দরজা আটকে রেখেছে।দিবা খালামণিকে বলে বাবার সাথে চলে গেলো
বাসায় আসতেই দেখলো মানুষ আর মানুষ
সব সাদাতের আত্নীয় -স্বজন। সবাই এক হয়ে আছে বাসায়।দিবাকে দেখতে এসেছেন।দিবা ব্যাগটা রেখে মিনিকে বুকে ধরে বললো”আমার রুমটা দেখিয়ে দিন।”
.
-“আগে সবার সাথে আলাপ করো।কথা বলো।”
.
-“আমার ভালো লাগছে না”
.
-“কোণার রুমটা তোমার।যাও রেস্ট নাও”
.
দিবা ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো রুমের দিকে।দরজা লাগিয়ে মন খারাপ করে জানালার পাশে এসে বসলো।মিনি চুপ করে বসে আছে ফ্লোরের উপর
রুমটাতে বিছানা,টেবিল, আলমারি, ওয়ারড্রব সব কিছুতে ভরপুর।খুলনায় তার রুমে একটা বিছানা আর টেবিল ছিল শুধু।আর এখানে এত কিছু
আহনাফদের বাসায় ও সব ঠিকই ছিল।মন বসছে না কিছুতেই।মন বলছে ছুটে চলে যাই উনার কাছে।
সারা দিন ধরে মেহমানে পুরো বাড়ি ভর্তি ছিল।দিবা আহনাফের মতন রাগ করে কিছুই খায়নি।বাবা খাবার দিয়ে গেলেও সে খাবারটা ছুঁয়েও দেখেনি।মা যদি একবার ফোন করে বলতো”তোর এরকম টানাটানিতে থাকতে হবে না।চলে আয় খালামনণির বাসায়”
.
সন্ধ্যা হয়ে গেছে।দিবা জানালার পাশ থেকে এসে রুমের লাইট জ্বালালো।মেহমান এখনও আছে।কথা শুনা যায়।দিবা দরজা খুলে উঁকি দিয়ে বুঝলো বাবার রুম থেকে আওয়াজ আসছে। সবাই মনে হয় ওখানে
দিবা আস্তে করে দরজা খুলে বাসা থেকে বের হলো। সোজা বাগানে আসলো সে
এখানে অন্তত নিরিবিলি মনে হচ্ছে।মিনি ফুলগাছ কতগুলো দেখে কোনটা রেখে কোনটার ঢালে উঠবে তাই ভাবছে।দিবা ফুলগাছগুলোয় হাত বুলিয়ে একটা আমগাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।মিনি একটা বিদেশী ফুল গাছের ডালে ঝুলে আছে।ঝুলতে ভালোই লাগছে।
হঠাৎ পাশ থেকে হাঁচির আওয়াজ আসতেই দিবা চমকে সেদিকে তাকালো।কালো জ্যাকেট পরা একজনকে দেখতে পেলো সে।আরেকদিকে ফিরে চোরের মতন একবার একদিকে তাকাচ্ছে লোকটা
দিবা এগিয়ে আসতে আসতে বুঝতে পারলো ওটা আহনাফ।কাঁধে হাত রাখতেই আহনাফ চমকে তাকালো দিবার দিকে
.
-“আমার সাথে মিট করতে এসে এত ভয়?”
.
দিবার কথার উত্তর না দিয়ে আহনাফ ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।মিনি ধুরুম করে গাছটা থেকে নিচে পড়ে গেছে আহনাফের কথা শুনে।তারপর ছুটে আসলো এদিকে
দিবা ফিসফিস করে বললো”বাবা দেখে ফেলবে”
.
আহনাফ দিবাকে টেনে গাছের পেছনে নিয়ে আসলো।দিবা নিজেকে ছাড়িয়ে বললো”চব্বিশ ঘন্টাও পূর্ন হয়নি”
.
-“তো?আর থাকা পসিবল হচ্ছিলো না বলেই চলে এলাম।
কিছু খাওনি মনে হয়।এরকম দূর্বল রোগীর মতন হয়ে গেছো কেন?”
.
-“আমি কি আপনার মতন যে রাগ করে খাওয়া অফ দিব?”
.
-“তোমার কথা বিশ্বাস করতে পারলাম না।চলো কিছু খাবে”
.
-“কোথায়?”
.
-“আমি যেখানে নিয়ে যাব সেখানে।”
.
-“কিন্তু বাবা?”
.
আহনাফ মুচকি হেসে দিবার হাত ধরে ওর বাসার দিকে নিয়ে যাচ্ছে
দিবা ভয়ে ভয়ে বললো”বাবা দেখলে খুব খারাপ হয়ে যেতে পারে”
.
আহনাফ ওর কথার উত্তর না দিয়ে ওকে নিয়ে সাদাত স্যারের সামনে এসে দাঁড়ালো
.
-“আহনাফ?তুমি?”
.
কথাটা বলে স্যার আহনাফের হাতের দিকে তাকালেন।কারণ ও দিবার হাত মুঠো করে ধরে রেখেছে
.
-“কি ব্যাপার?দিবা?”
.
-“স্যার আমি ওকে নিয়ে একটু ঘুরতে যেতে চাই।এক ঘন্টায় চলে আসবো”
.
-“এখন?”
.
-“হ্যাঁ”
.
-“এত রাতে যাওয়া ঠিক হবে না।তোমরা বরং কাল যেও”
.
আহনাফ দিবাকে টেনে ধরে বললো”আপনার মেয়ে সকালে নাস্তার পর আর এক গ্লাস পানিও খায়নি।তারে খাওয়াইতে নিয়ে যাচ্ছি।আপনি বললে একেবারে কাল সকালে খাবে সে।ওকে ফাইন আমি তাহলে চলে যাই”
.
-“দাঁড়াও।দিবা?তুমি খাওনি?”
.
দিবা মাথা নিচু করে বললো”নাহ।ভালো লাগে না আমার”
.
-“আহনাফের সাথে যেতে চাও?”
.
দিবা মুচকি হেসে বললো”হুম”
.
-“ঠিক আছে যাও।সাবধানে যেও”
.
আহনাফ বাইকে বসতে বসতে বললো”আমার ফুটফুটে আজাইরা বেড়ালটাকেও সাথে নাও”
.
দিবা হেসে বললো”সামনে তাকিয়ে দেখেন”
.
-“ওমা মিনি আগে থেকেই বাইকের সামনে বসে আছে দেখছি।”
.
দিবা বাইকে বসে আহনাফের সামনে দিয়ে হাত নিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর সবসময়কার মতন ওর পিঠের উপর মাথাটা রাখলো সে
সাদাত স্যার বাগানে থেকে দেখছেন ওদের।আহনাফ যে দিবাকে পছন্দ করে আর দিবাও যে ওকে পছন্দ করে তা তিনি বেশ বুঝতে পেরেছেন।কিছুক্ষণ আগেই তার একজন ফ্রেন্ড তার ছেলের সাথে দিবার বিয়ের কথা বললেন।সাদাত চেয়েছিলেন দিবার মত নিয়ে তারপর হ্যাঁ জানাবেন কিন্তু এখন মনে হয় দিবাকে কিছু জিজ্ঞেস করার দরকার নেই
সকালে ওদের সোফায় বসে নাস্তা খাওয়ার দৃশ্য ও তিনি দেখেছিলেন।এত যত্ন করে কেউ জাস্ট সম্পর্কে আত্নীয় কাউকে খাবার খাওয়ায় না
বিষয়টা যে একটু এগিয়ে আছে তা দেখলেই বোঝা যায়।আহনাফকে স্যার অনেক আগ থেকেই পছন্দ করতেন।এই পছন্দ করার ভিত্তি যে তার নিজের মেয়ের পালায় এসে পড়বে তা কখনওই ভাবেননি।মেয়েকে কখনও ভালো
কিছু দিতে পারেননি ভাগ্যের দোষে।কিন্তু এই বেলায় তিনি তার মেয়েকে সেরাটাই দিবেন যেনো তার মেয়ে এই ছুঁতোতে অন্তত তাকে বাবা হিসেবে স্বীকার করে নিতে পারে
চলবে♥