সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৬
Writer-Afnan Lara
.
আহনাফ বিছানায় ধপ করে বসে ফ্লোরের দিকে চেয়ে থাকলো,,,কিছুক্ষন আগে দিবাকে সে দেখেছিলো,দিবা ওকে কিছু বলেছিলো তা ভাবছে না সে এখন
সে শুধু ভাবছে কি করে তার জীবনের এই অভিশাপ ঠিক করবে
♣
দিবা দরজা আটকাতে গেলো ঘুমাবে বলে তখন দেখলো আহনাফ ডাইনিং রুমের লাইট জ্বালিয়েছে
দিবা দরজা আটকাতে গিয়েও আটকালো না,,দাঁড়িয়ে ওদিকে মুখ করে চেয়ে রইলো
আহনাফ চেয়ার টেনে বসে খাবার প্লেটে নিয়ে বাম হাতে খাওয়ার চেষ্টা করলো তাও পারলো না,এক চামচ মুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে গিলছে সে,,চামচ দিয়ে কি আর মাছ বাছা যায়?
.
দিবা একটু এগিয়ে এসে বললো”আমি খাইয়ে দিই?”
.
আহনাফ চোখ খুলে এমন ভাবে তাকালো যেন এখনই চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে দিবাকে
দিবা ঢোক গিলে বললো”আপনার তে হাত কাটা গেছে তাই”
.
তো??তোমার কি?যাও নিজের রুমে,আমার ব্যাপারে নাক গলাতে আসবা না একদম!
আমি বাম হাতে খাবো নয়ত না খেয়ে থাকবো,এতদিন ছিলে তুমি?একদিনে দরদ উতলিয়ে পড়ছে?
.
দিবার রাগ হলো খুব,রেগে রেগে বললো”আপনার কি সমস্যা বলুন তো!এই জন্য মানুষের ভালো করতে নেই,ভালোই ভালোই এসেছি খাবার খাইয়ে দিতে উল্টে আমাকে কথা শুনাচ্ছে
.
আমার ভালো করতে হবে না তোমায়,হু দ্যা হেল আর ইউ?
.
দিবা মুখ ফুলিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে,
রুমে ঢুকে আহনাফকে এক রাশ গালি দিতে দিতে দরজাটা আটকাতে যেতেই আহনাফ এসে আটকালো ওকে
.
দিবা কিছু বলার আগেই আহনাফ দিবার মুখ টিপে ধরে বললো”আমার যে হাত কাটা গেছে তা যদি তুমি অন্য কাউকে বলেছো তো কাল তোমার নিজের হাত কাটা দেখবা,বুঝেছো?”
.
দিবা নিজের মুখটা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো”খালামণিকে বলে দেবো”
.
আহনাফ আরও জোরে চাপ দিয়ে বললো”তাহলে দুইহাত কেটে দেবো তোমার,চিনো তো আমাকে??”
.
কথাটা বলে আহনাফ দিবার মুখ ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে
দিবা মুখ ধরে দাঁড়িয়ে আছে,লোকটা এত জোরে ধরেছিল মনে হয় দাঁত গুলো এক এক করে পড়ে যাবে এবার, এমন করে ধমকালো কেন,উনার মা জানলে কি হবে,আরও ভালো মলম লাগিয়ে দেবে,পাগল লোক একটা!
.
দিবা মুখ ডলতে ডলতে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো
পরেরদিন আবার ভোর হতে না হতেই দিবা উঠে গেছে,,বাসায় ও ভোরেই ওঠে সে,,এখন তার প্রথম কাজ হলো নামাজ পড়ে নাস্তা বানানো,,
নামাজ পড়া শেষ করে দিবা রান্নাঘরের দিকে গেলো,মিনি আরামসে ঘুমাচ্ছে বিছানার এক কোণায়
দিবা টুকিটাকি করতে করতে টের পেলো হালিমা বেগম এসে গেছে,দরজায় নক করছেন তিনি
দিবা সাথে সাথে দরজা খুলে দিলো,ওদিক থেকে খালা চোখ ডলতে ডলতে এসে বললেন”ওহহ দিবা খুলেছো?এত জলদি উঠলে?”
.
হুম,আপনি ঘুমান,আজ আমি নাস্তা বানাবো
.
না একদম না,গিয়ে ঘুমাও যাও,এত সকাল সকাল কিছু করতে হবে না
.
প্লিস খালামণি
.
দিবা অহসায় মুখ নিয়ে চেয়ে থাকাই আহনাফের মা আর মানা করতে পারলেন না,চলে গেলেন
দিবা হালিমা বেগমের সাথে মিলে নাস্তার কাজটা সারছে
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ায় ডাইনিং থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে খেলো সে,ওর মাথা ঘুরছে হঠাৎ
সকাল সকাল বেশি কাজের চাপ হলে এমন মাথা ঘুরে ওর
খালামণি এই সুযোগে রান্নাঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বললেন”গিয়ে রেস্ট নাও দিবা,আমি কিন্তু কাজ করতে দেবো না আর,যা করেছো সেটাই অনেক”
.
দিবা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”এটা কিন্তু চিটিং!”
.
এরপর মন খারাপ করে নিজের রুমে ফেরত যাওয়ার আগে দিবা শুনতে পেলো আহনাফের রুম থেকে কোরআন শরীফ তিলাওয়াতের আওয়াজ ভেসে আসছে
দিবা হালকা করে দরজাটা ফাঁক করলো,,আহনাফ জায়নামাজের উপর বসে কোরআন শরীফ পড়ছে
দিবা বেশ কিছুক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে শুনলো
এত সুন্দর করে পড়ছে আহনাফ,দিবা কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গেলো মুগ্ধতায়
পরেই কাল রাতের কথা মাথায় আসতেই রেগে দিবা নিজের রুমে চলে গেলো আবার
আহনাফ কোরআন পাঠ করা শেষে গেলো জগিংয়ে
জগিং স্যুট পরে সে বাসা থেকে বের হলো
ওদিক দিয়ে দিবা চুল ঠিক করে পাঁচ মিনিট আগেই বেরিয়েছে মিনিকে নিয়ে হাঁটার জন্য
বাসার থেকে একটু দূরে একটা পার্ক আছে,,শুধু হাঁটাহাঁটির পার্ক
দিবা সেখানেই গেছে,,আহনাফ ও আসছে এদিকে
দিবা একটা সিটে বসে মিনির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মানুষের সমাগম দেখছে
কেউ জগিং করছে,কেউ হাঁটছে,কেউ বা রেস্ট নিচ্ছে
বেশিরভাগই বয়স্ক মানুষ,,বাচ্চাকাচ্চা নেই বললেই চলে
মিনি আবারও ছুটলো সামনের দিকে
দিবা আর গেলো না,কারণ সে জানে মিনি আবার ফেরত আসবে
মিনি দৌড়াতে দৌড়াতে আহনাফের সামনে গিয়ে পড়েছে
আহনাফ থেমে গেলো ওকে দেখে,তারপর ব্রু কুঁচকে বললো”তুমি মিনি না?ঐ দিবার বিলাই”
.
মিনি বললো”মিঁয়াও”
.
হ তোমারে চিনছি,বেহাইয়া আজাইরা বিলাই কোথাকার,এখানে কি করো এখন?তোমার সো কলড্ বইন জানলে ঢাকা উল্টায় ফেলবে তেমাকে খুঁজতে গিয়ে
.
মিনি আহনাফের পায়ের সাথে লেগে বসে গাল ঘষা শুরু করলো
আহনাফ ওকে ছাড়িয়ে দূরে দাঁড়িয়ে বললো”দূরে থাকো,আমার এলার্জি সেটা জানো না?”
.
এমন করে একটা প্রানীর সাথে কথা বলে কেই?
.
গরমে আহনাফ জ্যাকেটের চেইন হালকা খুলে মিনির দিকে চেয়ে বললো”তোমার বইন ও আসছে বুঝি?”
.
আপনি আমার মিনির সাথে সুন্দর করে কথা বলবেন নয়ত…
.
নয়ত কি?
.
আপনার আম্মুকে বলে দিব আপনি হাত কেটেছেন কাল রাতে
.
আহনাফ হাতের গ্লাভস খুলতে খুলতে এগোচ্ছে আর বলছে”বলে দিবে?”
.
দিবা পিছিয়ে যেতে যেতে এক দৌড় মারলো,সাথে মিনিও
.
আহনাফ হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে,অনেকদিন পর এরকম পেট ফাটা হাসি পেলো ওর
দিবা দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে থেমে গেলো একটা সময়ে,,দূরে আহনাফকে দেখতে পাচ্ছে সে
সবুজ রঙের জগিং সুট পরনে ওর,,এক জায়গায় দাঁড়িয়ে এখনও হাসছে সে
দিবা ব্রু কুঁচকে মিনিকে বললো”দেখলি?আমাদের ভয় দেখিয়ে কেমন হাসছে?”
.
মিনি ও আহনাফের দিকে তাকালো,দিবা নিচু হয়ে মিনিকে কোলে নিয়ে বাসার দিকে চললো
পথেই দেখা হলো একজনের সাথে,,,মেরিনা আন্টি, আহনাফদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন উনি
উনি দিবাকে থামিয়ে বললেন”নাম কি তোমার?”
.
দিবা নিজের নাম বললো,তারপর উনি বললেন দিবা আহনাফদের কে হয়
দিবা বললো”আমি আরিফ ভাইয়ার খালাতো বোন”
.
ওহ আচ্ছা,বেড়াতে এসেছো বুঝি?
.
দিবা মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেললো তারপর বললো”হুম”
সে আর ওখানে থাকলো না,চলে আসলো বাসায়,,দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দিবা আহনাফের বাবা আর আরিফকে দেখলো সোফায় বসে চা বিসকুট খাচ্ছে
মা রান্নাঘর থেকে এসে বললেন”দিবা?আহনাফকে দেখেছো?”
.
এই তো মা আমি
.
বস,তোর বাবা কি কথা বলবে তোদের সাথে
.
আহনাফ মাথার ক্যাপটা খুলে আরিফের সামনা সামনি বসলো তারপর টেবিলের উপর থেকে বিসকুট নিয়ে বললো”হুম বাবা বলো”
.
বাবা দিবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন”আসো দিবা,আহনাফের পাশে বসো,,চা বিসকিট খাও আমাদের সাথে
দিবা চাইলো আহনাফের সাথে না বসে আরিফের সাথে বসবে
কিন্তু ওর বসার আগেই আরিফের পাশে খালামণি বসে গেলেন
দিবা আর কি করবে বাধ্য হয়ে আহনাফের পাশেই বসলো,আহনাফ তাকাচ্ছে না এদিকে
.
আহনাফের বাবার নাম হলো আনিসুর কামাল,,,তো তিনি দিবাকে সবার আগে জিজ্ঞেস করলেন দিবা কতদূর পড়েছে
.
দিবা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বললো”ইন্টার পাশ করেছে,,২০২০ব্যাচ”
.
আহনাফ আর আরিফ ফিক করে হেসে দিয়ে বললো”ওহ তাহলে অটো পাশ?”
.
দিবা ব্রু কুঁচকে তাকালো ওদের দিকে
.
বাবা এরপর বললেন”তোহ ভার্সিটিতে ভর্তি হবা না?পড়ার ইচ্ছা নাই? ”
.
আছে,কিন্তু….
.
তাহলে আর কি!আহনাফ তুমি আজ সাথে করে দিবাকে তোমাদের ভার্সিটিতে নিয়ে যাবা,,সেখানে ওকে ভর্তি করিয়ে দেবে আর এখন তো ভর্তির সিজন চলছে
পাবলিকে তো আর সম্ভব নাহ,প্রাইভেট ভার্সিটিই ভরসা,তাই না আহনাফ?
.
আমি?আমার ওতো সময় নাই,আর জানো তো আমার পরীক্ষা চলে,তুমি বরং আরিফকে বলো,,
.
তোমাকে বলার কারণ আছে,আর সেটা হলো দিবার রুমে তোমার আম্মু ওর সার্টিফিকেট দেখেছে,দিবার রেসাল্ট দেখে তো আমরা অবাক,,এত ভালো রেসাল্ট!!,,তোমার ভার্সিটিতে এই রেসাল্টের স্টুডেন্ট অনায়াসে ভর্তি হয়ে যাবে,আরিফকে বলিনি কারণ আরিফের ভার্সিটিটা কেমন জানো তুমি,,ওর পড়ালেখা ভালো না বলেই ওমন একটা ভার্সিটিতে গিয়ে পড়েছে
.
আরিফ মাথা চুলকিয়ে চুপচাপ চোরের মতন চা শেষ করছে
.
আহনাফ মনে মনে ভাবছে সব টপাররা দেখতে ভেজা বিড়ালের মতন হয়,এই দিবা তার প্রমাণ
.
দিবা চুপটি করে আছে,হ্যাঁ বলবে নাকি না সেটা ভাবছে
ভেবে দেখলো সে এতদিন বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলছিল না কারণ তার পড়াশুনার প্রতি ঝোঁক অনেক
তাহলে রাজি হওয়ায়ই যায়,বাসায় থেকে কি বা করবো
.
আহনাফ চায়ের খালি কাপটা টেবিলের উপর রেখে নিজের রুমে চলে গেলো
খালামণি রান্নাঘরে যেতে যেতে বললেন দিবা কাগজপত্র গুছিয়ে নাও জলদি
.
দিবা মিনিকে নিয়ে নিজের রুমে এসে কাগজপত্র গুলো সব একটয় ফাইলে নিয়ে নিলো তারপর একটা জামা বের করে রাখলো যাওয়ার সময় পরে যাবে
সকাল আটটা বাজে এখন
ডাইনিং থেকে ঠুসঠাস আওয়াজ আসছে,,খালামণি নাস্তা এনে এনে রাখছেন
আরিফ তার রুমে গিয়ে টেবিলে বসে জোরে জোরে পড়ছে,বাবা ওকে খোঁচা দিলো পড়া নিয়ে,তাই এবার সে অনেক পড়বে
.
আহনাফ গান একটা প্লে করে নিজের ময়লা জামাকাপড় ঝুড়িতে ফেলছে এক এক করে
দিবা মিনিকে রেখে যাবে ঠিক করলো,,চুলগুলো আঁচড়িয়ে নিলো সময় করে,,রেডি ও হয়ে গেলো
রেডি হয়ে এখন সে বিছানার মাঝখানে বসে আছে,খালামণি ডাকলে যাবে
আহনাফ নীল রঙের একটা টিশার্টের উপর কালো জ্যাকেট পরে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে রুম থেকে বের হলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে
ডাইনিংয়ে এসে ব্যাগ কোলে নিয়ে বসলো নাস্তা করার জন্য
মা দিবাকেও ডাকলেন
দিবা রুম থেকে সাথে সাথে বের হলো যেন আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলো সে
আহনাফ রুটি এক টুকরো মুখে দিয়ে দিবার দিকে তাকালো,দিবা আর ও একি রঙের জামা পরেছে
দিবা নীল রঙের একটা লং থ্রি পিস পরেছে,,চুল অর্ধেক ডান পাশে এনে,,গায়ের ওড়নাটা ওপাশে দিয়েছে,কানের কাছে নীল রঙের প্রজাপতির আকারের দুটো ক্লিপ আটকানো,কানে ছোট্ট দুল,,গলা খালি
হাতে নীল রঙের কাঁচের চুড়ি,আর একটা সাইড ব্যাগ
মা আহনাফের পিঠে কিল দিয়ে বললো”কিরে??খাবার মুখে দিয়ে চিবাচ্ছিস না কেন??তোর ছোটবেলার স্বভাব টা আর গেলো না”
.
আহনাফ চোখ নামিয়ে খাওয়াতে মন দিলো
দিবা এসেছে দেখে মা ওকে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললেন”ঠিক করে খাও,নিজের শরীর দেখছো?না খেয়ে চিকনি হয়ে আছো,আমি তোমায় এক মাসেই মটু বানিয়ে দেবো দেখো,,আহনাফের সাথে সাথে থাকবা,,হারিয়ে গেলে ওকে ফোন করবা,ঠিক আছে?ওর নাম্বারটা মনে করে নিয়ে নিবা,,আর ফেরার সময় ওর সাথেই আসবা,,একা আসার দরকার নাই
.
ঠিক আছে
.
আহনাফ খাবার শেষ করে উঠে চলে গেলো হাত ধুতে
দিবা তার রুটিটা শেষ দিয়ে সেও ছুটলো
চলবে♥