সবটা অন্যরকম♥
#পর্ব_৭
Writer-Afnan Lara
.
আহনাফ বাইক গ্যারেজ থেকে এনে বসে আছে,দিবা ওড়না ঠিক করতে করতে আসছে এদিকে
কাছে এসে আহনাফের পিছনে বসতে যেতেই এক ধমক দিলো আহনাফ
ভয় পেয়ে মূর্তির মতন হয়ে গেছে দিবা,ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না,কি এমন করলো সে যে ধমক দিলো উনি সেটাই ভাবছে দিবা
আহনাফ দিবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে বললো”ওড়না এভাবে পরে??তাহলে আর ওড়না নিছো কেন?”
.
কেন??আমি তো শালীন ভাবেই পরেছি
.
এত বড় ওড়না একপাশে ফালাই রেখে চুল দিয়ে ওড়নার কাজ চালাচ্ছো?
.
এটা স্টাইল
.
থাবড় দিয়ে স্টাইল ছুটাই দেবো তোমার,,ওড়না পুরো গায়ে পেঁচাইয়া পড়ো
.
না,আমি যেমন আছি তেমনই ঠিক আছি
.
আহনাফ একটান দিয়ে দিবার ওড়না নিয়ে নিলো,দিবা গায়ে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে
কিছুক্ষণ বাদে রেগে রেগে বললো”আপনি এরকম করলেন কেন?মানুষ কি বলবে,আমার ওড়না দিন বলছি”
.
আহনাফ ওড়না ঘুরিয়ে এনে পরিয়ে দিয়ে বললো”আমি সচরাচর মেয়েদের সাথে মিশি না,তবে তুমি যেহেতু আমার সাথে এখন থেকে যাবে আসবে সেহেতু আমার মতন হওয়ার চেষ্টা করো,এক কথায় ধার্মিক”
.
দিবা ওড়না এক পাশে এনে বললো”আমি এমন করেই যাব
বাই,আপনাকে আমায় দিয়ে আসতে হবে না,আমি একাই যেতে পারবো”
.
দিবা হাঁটা শুরু করলো,আহনাফ ও কম না! সে বাইক চালিয়ে চলে গেলো
ভার্সিটির নাম অনুযায়ী মানুষকে জিজ্ঞেস করে দিবা হেঁটে হেঁটে চলেছে সেখানে,হাতে টাকা নেই বলে রিকশা নিতে পারলো না
এদিকে আহনাফ ভার্সিটিতে গিয়ে পরীক্ষা দিতেও বসে গেছে
দিবা প্রায়ই দেড় ঘন্টা হেঁটে ঢাকা শহর বেশ কিছুটা চক্কর দিয়ে ভার্সিটিটা পেলো,ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সে হাঁপাচ্ছে,,ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকে প্রিন্সিপালের রুমের সামনে গেলো সোজা,,তারপর সেখানে বাহিরের একটা চেয়ারে চুপটি করে বসে ফোন করলো আহনাফকে
আহনাফের খবর নাই
তার পরীক্ষা শেষ হবে তিরিশ মিনিট পর
দিবা দুই তিনবার কল করে ওকে না পেয়ে ক্যামপাসটা ঘুরে দেখায় মন দিলো এবার,আর কত বসে থাকবে সে
ক্যামপাসে এখন অন্য ইয়ারের স্টুডেন্ট সব
কাউকেই দিবা চিনে না,চুপচাপ সবার মাঝ দিয়ে হেঁটে চলেছে সে
ক্লাসগুলো দেখতে দেখতে সে হঠাৎ ধাক্কা খেলো একটা ছেলের সাথে
ছেলেটা দিবাকে দেখে মুচকি হেসে বললো”নতুন?”
.
দিবা মাথা নাড়ালো,সে এবার বললো দিবা কি আজ ভর্তি হয়েছে
দিবা বললো সে এখনও ভর্তি হয়নি,তার খালাতো ভাই তাকে ভর্তি করিয়ে দিবে কিন্তু তাকে এখন পাচ্ছে না সে
ছেলেটা দিবার হাত ধরে বললো”চলো তোমাকে ভর্তি করাই দিই”
.
দিবা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো”নাহ,ধন্যবাদ,,উনি আসুক আমি তখন ভর্তি হবো”
.
ছেলেটা এবার জোরাজুরি শুরু করে দিয়েছে,সে বললো এখন ভর্তি না হলে আর হওয়া যাবে না
দিবা তার সাথে কথায় পারছেই না,ছেলেটাও পিছু ছাড়ছে না
একটা সময়ে সে আবারও দিবার হাত ধরতে গেলো ঠিক তখনই দিবা একটু পিছোতেই টের পেলো ওর পাশে কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছে
আহনাফ এসেছে,ওর পরীক্ষা সবে শেষ হলো,,ক্যামপাসে নেমে সবার আগে ওর নজর পড়েছে দিবার উপর,কারণ দিবাকে এই ছেলেটা ডিস্টার্ব করছিলো তখন থেকে
.
আহনাফ নিজের ব্যাগটা দিবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে বললো”কি ছোট ভাই??ভর্তি করাইবা??আমারে চেনো??আমি ভর্তি করাইতেও পারি আবার বের ও করাইতেও পারি,নাম শুনছো আমার?”
.
আসলে আহনাফ ভাই মজা করছিলাম,মেয়েটা নতুন স্টুডেন্ট তো
.
মজা করলে অন্য ইয়ারের মেয়েদের সাথে করো না!!নতুন নিয়ে টানাটানি কেন?
.
ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে চলে যেতে নিতেই আহনাফ ওর ঘাড়ে হাত রেখে আটকালো ওকে
ছেলেটা ভয়ে পিছনে তাকাচ্ছে না
আহনাফ ওর ঘাড় ঝাঁকিয়ে বললো”যার সাথেই মজা করো আই ডোন্ট কেয়ার!বাট আহনাফের সাথে সংযুক্ত কারোর সাথে মজা করতে এসো না খুকু”
.
ছেলেটা চলে যেতেই দিবা কোমড়ে হাত দিয়ে আহনাফের সামনে দাঁড়িয়ে বললো”আমাকে না নিয়ে এসে এখন আবার কেয়ার দেখানো হচ্ছে?”
”
আহনাফ দিবার হাত থেকে ওর ব্যাগটা নিয়ে বললো”কিসের কেয়ার?তোমাকে আমি কেয়ার দেখাবো?আমি?
হাসালে!!!তোমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে হলেও আমি এমনটা করতাম
যাই হোক দেখলে তো ঘাউড়ামি করলে দেড় ঘন্টার খাটনি খাটতে হয়?”
.
দিবা ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে চুপচাপ পানি খেলো,ওর পুরো মুখে ঘাম,,মনে হয় কার সাথে যেন ফাইট করেছে
আহনাফ পকেট থেকে টিসু বের করে দিবার মুখে লাগিয়ে ধরে বললো”তোমার মুখে সাগর হয়ে আছে,মুছো ভালো করে”
.
দিবা টিসুটা ধরে বললো”ভদ্র ভাবেও টিসু দেওয়া যায়,আচ্ছা আপনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না কেন বলুন তো?”
.
আহনাফ কিছু না বলে প্রিন্সিপালের রুমের দিকে গেলো
তাই উপায় না পেয়ে দিবাও চুপচাপ যাচ্ছে ওর পিছু
দিবাকে ভর্তি করানো শেষে আহনাফ বললো”সে বাড়ি ফিরতে আরেকটু দেরি হবে দিবা যেন তার ক্লাসে গিয়ে বসে”
.
আমার তো ক্লাসের বই খাতা নাই,ক্লাসে গিয়ে কি হবে?
.
তাহলে আমার সাথেই থাকো
.
আহনাফ ক্যামপাসের দিকে গেলো,দিবা ঐ ছেলেটাকে আবারও দেখলো
সেই ছেলেটা কেমন করে যেন চেয়ে আছে,দিবা ভয়ে আহনাফের জ্যাকেট একটু টেনে ধরলো
আহনাফ থেমে গিয়ে বললো”খবরদার আমাকে টাচ করবা না”
.
দিবা হাত সরিয়ে বললো”ঐ ছেলেটা কেমন করে তাকায় আছে”
.
ওর দিকে না তাকালেই হয়,তুমি এতো বোকা কেন?
এখনকার মেয়েরা কোনো ছেলে তাদের দিকে তাকালেও চোখ তুলে ফেলার ক্ষমতা রাখে আর তুমি এখনও পুরান ভার্সন হয়ে আছো
.
দিবা মুখটা ছোট করে বললো”আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
.
তোমাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো,জামাকাপড় নিসো তো?
.
আপনি কি ঠিক করে কোনো কথাই বলতে পারেন না?
.
আহনাফ কথার উত্তর বা দিয়ে ক্যানটিনে গিয়ে বসলো,সেখানে ওর বন্ধুবান্ধব সব
.
কি আহনাফ ভাই,দিনকাল কেমন চলে,আজকে তোমায় মিঙ্গেল দেখছি
.
আহনাফ ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে হেসে বললো”পিয়াস!ও আমার খালাতো বোন হয়,,ভর্তি করাতে আনছি”
.
পিয়াস লাচ্ছি খেতে খেতে বললো”কিন্তু বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে কেন?”
.
আহনাফ ওদিকে তাকিয়ে বললো”ভেতরে আসি বসো নাহয় ঐ ছেলেটা আবার এসে ধরবে,আমার সামনে ধরলে আমি সেভ করতে পারবো”
.
দিবা এক ছুটে চলে আসলো,,পিয়াসের পাশে বসে ছিলো জিসান,,জিসান বললো”কোন ছেলেটা?”
.
ওরে প্রথমদিনেই ইমরান আছে না?ও টিজ করছিলো,,আমি টাইট দিয়ে দিছি
.
এই ইমরান নতুন কাউরে পাইলেই শুরু হয়ে যায়
.
আহনাফ জুসের বোতল দুইটা কিনে এদিকে আসতে আসতে বললো”ঠিক তখন!!! যখন মেয়েটা বুদ্ধ হয়”
.
দিবা ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে,কথাটা ওর গায়ে লাগলো,আহনাফ দিবার সামনে জুসের বোতল রেখে নিজের হাতের বোতলটার ছিপি খুলে খেতে বসলো জিসান আর পিয়াসের সাথে
দিবা অনেক চেষ্টা করেও ছিপি টা খুলতে পারলো না তাই জুসের বোতলটা ব্যাগে পুরে নিলো
.
আহনাফ জিসান আর পিয়াসের সাথে গল্প করতে করতে খেয়াল করলো দিবা জুস খাচ্ছে না
.
কি হলো?জুস খাও না তুমি?
.
খাই তো
.
তাহলে ব্যাগে পুরলে কেন?
.
না মানে এখন খেতে ইচ্ছে করছিলো না
.
এত গরমে ঠাণ্ডা জুস পেয়েও খেতে মন চাচ্ছে না?
.
হুম
.
কাহিনী কি??তোমার চোখ আমাকে চিল্লাইয়া বলতেছে তুমি মিথ্যা বলছো
.
দিবা ঢোক গিলে একটু মাথা এগিয়ে ফিসফিস করে বললো”আমি ছিপি খুলতে পারি না”
.
আহনাফ নিজের কপালে নিজে একটা বাড়ি মেরে বললো”দাও খুলে দিই”
.
জিসান দুষ্টুমি করে বললো”কি খুলবি?”
.
আহনাফ জিসানের গলা টিপে ধরে বললো”তোর মাথা খুলবো একদম ছিঁড়ে”
.
দিবা বোতলটা এগিয়ে দিতেই আহনাফ জিসানকে ছেড়ে বোতলটা হাতে নিয়ে ছিপি খুলে দিলো
খোলা বোতলটা নিয়ে দিবা পুরো বোতল এক নিমিষে শেষ করে দিয়েছে,গলা বারবার শুকিয়ে যায় একবার এক কারণে
.
আহনাফ চকলেট মুখে দিয়ে ক্যামপাসের দিকে তাকালো কথা বলতে বলতে
ওর চোখে পড়লো বারের সেই মিঃবাবলুর মেয়ের দিকে
ওকে দেখে আহনাফ দাঁড়িয়ে পড়লো
.
কিরে?কি হলো তোর??ভূত দেখলি নাকি
.
আহনাফ পকেটে হাতিয়ে দেখলো মাস্ক আর চশমা নেই,কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,,
জলদি করে একটুদূরে সরে গিয়ে ক্যানটিন থেকে নতুন মাস্ক পেয়ে গেলো সে,সেটা কিনে মুখে পরে চুপচাপ সিটে এসে বসলো আবার
.
পিয়াস বললো”কিরে??এরকম করছিস কেন?হঠাৎ মাস্ক পরলিই বা কেন?”
.
না মানে এখন যাব তো
.
আহনাফ আড্ডাটা শেষ দিয়ে বললো এবার সে যাবে
অনেক কষ্টে মেয়েটার চোখ এড়িয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো আহনাফ
বাইকে বসে দিবার দিকে চেয়ে দেখলো দিবা চোরের মতন চেয়ে আছে আগে থেকেই
.
কি?যাবেন নাকি আবারও হাঁটিয়ে নিতাম?সারাদিন হেঁটে কেমন লাগলো?
.
দিবা তো নাছোড়বান্দা,সে মুখ ঘুরিয়ে বললো সে যেমন থাকবে তেমনই,দরকার হলে হেঁটে যাবে
.
আহনাফ দিবার দিকে রাগী লুক নিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে বললো”মেয়েদের আমি টাচ করি না,বাট তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে তোমার একই ধরনের জিদের কারণে বাধ্য হয়ে তোমার হাত ধরতে হয়,মুখ ধরতে হয়
এখন আমাকে বাধ্য করো না তোমাকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার জন্য
.
আমি তো যেতে চাই কিন্তু আপনি তো আমায় হুজুরনি বানিয়ে তারপর ছাড়বেন
.
এখনও তাই,,মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসো তা নাহলে বসতে পারবা না
.
যাব না আমি,আপনি যান
.
আহনাফ চুপ করে থাকলো,,দিবাকে না নিয়ে বাসায় ফিরলে মা কাঁচা গিলে খাবে
এখানে আবার দিবা আমার কথা শুনতে চায় না
থাক আমার কি,ও যার ওয়াইফ হবে সে ভাববে তার বউ কেমন বেশে থাকে
আমি তো আমার বউকে হুজুরনি বানিয়ে রাখবো
.
আচ্ছা ফাইন,বসো বাইকে
.
দিবা সাথে সাথে বাইকে বসে পড়লো,অনেক ভেবে আহনাফের ঘাড়ে হাত রাখলো সে
আহনাফ পিছনে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো”আলতো করে ধরতে পারো না?এরকম চুম্বকের মতন ধরো কেন?আমার বুকে ধুক করে ওঠে”
.
আমি আলতো করেই ধরি,আপনার বুক ধুক করে কেন?
.
তোমার ধরাতে সন্দেহ আছে,আরেকটু আলতো ভাবে ধরো
.
দিবা হাতটা আলতো করে রাখলো আর মনে মনে ভাবলো লোকটা আস্ত ঝগড়ুটে
আহনাফ না রেখে আহাজারি রাখা উচিত ছিলো
.
মোড় আসতেই আহনাফ বাইক ঘুরালো
দিবা পড়ে যেতে নিতেই আহনাফকে কোনোমতে শক্ত করে ধরে ফেললো
.
আহনাফ টের পেলো তাও কিছু বললো না
দিবা ভয় কাটিয়ে হাতটা আবার আলতো করে রাখলো
বাসার সামনে নামতেই দিবা তার বারান্দার দিকে তাকালো,মিনিকে দেখা যাচ্ছে না,বেচারা কোথায় কে জানে
দিবা চট জলদি লিফটে ঢুকে গেলো,মিনির জন্য চিন্তা হচ্ছে
আহনাফ বাইক গ্যারেজে রাখতে গেছে
দিবা ছুটে এসে মিনিকে খুঁজতে লাগলো নিজের রুমে,কিন্তু পেলো না,ওর তো চিন্তায় অবস্থা ঢালভাত হয়ে গেছে,বারান্দাতেও নেই
খালামণি রান্নার কাজ সেরে গেছেন গোসল করতে
দিবা রুম থেকে বের হতেই আহনাফের সাথে ধাক্কা খেলো হুট করে
.
দূরে থাকতে বললে আরও কাছে আসো কেন?সবসময় যার তার সাথে ধাক্কা খাওয়াই লাগবে তার
.
কথা শেষ করে আহনাফ মুখ বাঁকিয়ে নিজের রুমে চলে গেছে
দিবা মাথায় হাত দিয়ে কোণায় কোণায় মিনিকে খুঁজছে
আহনাফ নিজের রুমে এসে টেবিলে ব্যাগটা রেখে দিয়ে দুম করে বিছানায় লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো
চোখ বন্ধ করে ঘুমের রাজ্যে ডুবে গেলো সে
মুখের সাথে নরম নরম তুলোর খোঁচা লেগে আরও ভালো লাগছে তার
হালকা হেসে পাশ থেকে সেই নরম বস্তুটাকে জড়িয়ে ধরলো আহনাফ তাতে আবার মুখ লুকালো আরামে
এরপর…হাইচ্ছু!!!!!হাহাহাহাহাইচ্ছু
চলবে♥