#সভ্যতার_সভ্য
#চতুর্থাংশ
#NishchupSpriha
==============
ঝগড়ার পর সভ্য আমার সঙ্গে কথা বলা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখলো। এমনকি আমার রুমে আসা অবধি বন্ধ! কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে ও প্রতি রাতে আমার দোলনায় বসে ঘুমোয়।
আমিও আর যেচে পড়ে কথা বলতে যাইনি। এখন আমার পড়াশোনায় ফোকাস করার সময়। কারণ পরিক্ষা আমার দরজায় কড়া নারছে। আগে পরিক্ষাটা শেষ হোক। তারপর অনেক সময় আছে অসভ্যটাকে শিক্ষা দেয়ার।
আমার পরিক্ষার সময় ও কেনো আমাকে মেন্টালি প্রেশারের মধ্যে রাখলো? খবর তো ওর আছেই। আমি অপেক্ষায় রইলাম আমার পরিক্ষাটা শুধু শেষ হোক। তারপর ওর ফাজলামো আমি বের করবো।
অসভ্যটা আমার সাথে কথা না বললে কি হবে? আমার পরিক্ষার হলে যাওয়ার সময় ঠিকই সে প্রতিদিন আমার সাথে যাবে। আবার পরিক্ষা শেষে হওয়া অবধি আমার জন্য অপেক্ষা করবে। তারপর আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে বাসায় আসবে।
যাওয়ার সময় বাপির সাথে গাড়িতে গেলেও পরিক্ষা শেষে আসার সময় আমি আর সভ্য রিক্সায় একসাথে আসি। রিক্সায় আসার সময়ও সে আমার সাথে কথা বলবে না। কিন্তু রিক্সার হুড তুলে ঠিকই আমার কটিদেশ চেপে ধরবে। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ! কিছু বললেও শুনবে না। উল্টো আরো শক্ত করে চেপে ধরবে। অসভ্য ছেলে একটা। এখন মাঝে মাঝে মনে হয় ভুলটা আসলে আমারই। ও যে এতটা অসভ্য হবে আগে জানলে আমি অবশ্যই ওর নাম অসভ্য রাখতাম।
আচ্ছা, তাহলে কি সভ্যতার সভ্য না হয়ে সভ্যতার অসভ্য হতো.?
পুরো দেড় মাস আমার পরিক্ষা চললো। এখন ব্যবহারিক পরিক্ষা চলছে। আর শুধুমাত্র ম্যাথ ব্যবহারিক বাকি আছে মানে শনিবারে পরিক্ষা হয়েই শেষ! কি মজা..! আরেকটা মজার বিষয় হচ্ছে কালকে শুক্রবার এবং সভ্য নামক অসভ্যটার জন্মদিন।
অসভ্য ছেলেটা পুরো দেড় মাস আমার সাথে কথা বলেনি। কিন্তু কথা না বললে কি হবে? উনি ঠিকই আমাকে জ্বালায় মারছে!
মাঝে কয়েক বছর বাদে ছোট থেকে সভ্য আমার জন্মদিনে সব সময় আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে এসেছে। কিন্তু আমি ওকে সারপ্রাইজ দিতে গেলে উল্টো আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে যাই।
তাই এবার অনেক সাবধানে সভ্যর জন্য আমি প্লান করলাম। আজকে সব রাগ অভিমানের সমাপ্তি ঘটাবো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সভ্য সব সময় আমার সঙ্গেই থাকে। আমি যেখানেই যাবো ও আমার সঙ্গে সেখানেই যাবে। ওর জ্বালায় আমি একা কোথাও বের হতেই পারি না। শুধুমাত্র বিকালে ও ওর ফ্রেন্ডদের সাথে বের হয় আর তখন আমি ঘুমাই। এজন্য অনেক ভেবে চিন্তে বের করলাম মিথ্যা বলতে হবে।
তাই আজকে পরিক্ষার হলে যাওয়ার সময় সভ্যকে শুনিয়ে শুনিয়ে বাপিকে বললাম,
— ‘বাপি আজকে আমার ফ্রেন্ডরা মিলে একটু ঘুরাঘুরি করবো, আড্ডা দিবো। পরিক্ষার জন্য তো আমরা কেউ ভালোভাবে কথাই বলতে পারিনি এতদিন। তাই আজকে পরিক্ষা শেষে আমরা সবাই কৌশিকদের বাসায় যাবো। ওর কাছে আমরা সবাই একটা ট্রিট পাই। এজন্য দুপুরে আমরা ওদের বাসায় খাবো তারপর তিস্তার পাড়ে যাবো। সন্ধ্যার আগেই বাসায় চলে আসবো। তাই পরিক্ষা শেষে আমার জন্য কেউ যেন অপেক্ষা না করে।’
কথাটা বলেই আড়চোখে সভ্যর দিকে তাকালাম। মুখটা কেমন অন্ধকার করে রেখেছে।
আমার কথায় কাজ হলো। আজকে পরিক্ষা শেষে বের হয়ে দেখি সভ্য নেই। আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে কৌশিকদের বাসায় চলে গেলাম। আসলে সত্যিই আমার কৌশিকদের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিস্তায় যাওয়ার কথাটা মিথ্যা ছিল। বিকালে কৌশিকদের বাসা থেকে বের হয়ে আমি রিক্সা নিয়ে ক্যাপ্টেনে চলে গেলাম। সভ্যর পছন্দের কেক আমি আগে থেকেই অর্ডার করে রেখেছিলাম। কেক আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে বাসায় চলে এলাম।
এসে দেখি সভ্য বাসায় নেই। যাক আমার জন্য ভালোয় হলো। ফ্রেন্ডদের সাথে হয়তো জিলায় আড্ডা দিচ্ছে। আমার ভাগ্য ভালো যে আসার সময় রাস্তায় দেখা হয়নি।
আমি কেক নিয়ে সরাসরি রান্নাঘরে চলে এলাম। কেক রেখে তারপর ফ্রেশ হয়ে একটা ঘুম দিব। পড়াশোনাও নাই, কালকে রাতে প্রাকটিক্যাল খাতা দেখে নিলেই হবে।
রান্না ঘরে যেয়ে দেখি ছোটমা কেক বানাচ্ছে আর মাম্মাম রান্না করছে। আমি তো অবাক! আমিও কেক নিয়ে এসেছি আবার ছোটমাও কেক বানাচ্ছে!
আমাকে দেখে মাম্মাম বললো,
— ‘কিরে? তুই এত তাড়াতাড়ি যে? তোর বাপি তো বললো তোর আসতে সন্ধ্যা হবে।’
আমি জানতাম বাসায় এসে আমাকে এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। এর জন্য উত্তরও প্রস্তুত রেখেছিলাম।
আমি বললাম,
— ‘মাম্মাম আমরা তিস্তা যাওয়া ক্যান্সেল করে দিয়েছি। এতটুকু ঘুরাঘুরিতে আমাদের হবে না। পরিক্ষা শেষ হলে একদিন সারাদিনের জন্য ঘুরাঘুরি করবো। আজকে তিস্তা গেলে তো পরে তোমরা আর যেতে দিবে না। এ জন্য আজকে বাদ। পরে একদিন ডেট ফিক্সড করে আমরা সবাই যাবো।’
আমার কথা শুনে ছোটমা বললো,
— ‘ভালো করেছিস সভ্যতা। আয় দেখ আমি সভ্যর জন্য কেক বানাচ্ছি। ওর প্রিয় ফ্লেবারের।’
ছোটমার কথা শুনে আমি বললাম,
— ‘কিন্তু ছোটমা! আমি তো কেক নিয়ে এসেছি! ওর পছন্দেরই!’
ছোটমা বিস্মিত হয়ে বললো,
— ‘ওমা তাই নাকি! আমিও তো কেক বানালাম! এখন কি হবে? তুই কষ্ট করে কেন কেক আনতে গেলি?’
— ‘আমি তো তোমার ফাজিল ছেলেটাকে সারপ্রাইজ দিতে চাইলাম।’
আমার কথা শুনে মাম্মাম বললো,
— ‘তাতে কি হয়েছে? সভ্য দু’টো কেকই কাটবে।’
মাম্মামের কথা শুনে ছোটমা বললো,
— ‘হুম, ভাবি ঠিক বলেছো। সভ্য দুটো কেকই কাটবে। সমস্যা নেই।’
আমিও বললাম,
— ‘সেটায় তো কোন সমস্যা নেই।’
এবার মাম্মাম আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
— ‘সভ্যতা তুই কেক কেনার টাকা কোথায় পেলি?’
আমি জানতাম আমাকে এই প্রশ্নেরও সম্মুখীন হতে হবে। আমি এটার উত্তরও অনেক আগেই প্রস্তুত করেছি।
আমি বললাম,
— ‘মাম্মাম তুমি কি আমাকে ফকির মনে করো? কি ভাবো যে আমার কাছে কোন টাকা-পয়সা নেই?’
আমার কথা শুনে মাম্মাম অবাক হয়ে বললো,
— ‘আমি আবার তোকে ফকির কখন বললাম?’
— ‘তাহলে আর কি বলছো? এটার অর্থ তো এটায় দাঁড়ায়।’
— ‘এক থাপ্পড় দিবো বেয়াদপ মেয়ে। কোথাকার কথা কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছে। যা প্রশ্ন করেছি সেটার জবাব দে।’
— ‘আরে মাম্মাম, পরিক্ষার আগে তো সবাই আমাকে টাকাই দিলো। ছোটবাবা নিজেই কত টাকা দিয়েছে ড্রেস কেনার জন্য, মনে আছে? আর বাকি সবারটা তো আছেই নাকি? আমি ছোটবাবার টাকা দিয়েই ওনার ছেলের জন্য কেক কিনেছি।’
— ‘এই কথাটা কি সরাসরি বলা যায় না?’
আমার আর মাম্মামের কথার মাঝেই ছোটমা বললো,
— ‘আহ্ ভাবি। বাদ দাও তো। আমার মেয়েটাকে আর বকো না। এই সভ্যতা তুই যা তো যেয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে। আমি ছুফিকে দিয়ে তোর জন্য কিছু স্নাকস পাঠিয়ে দিচ্ছি।’
আমিও আর কিছু না বলে কেক রেখে ছোটমার কথা মতো আমার রুমে চলে এলাম। ফ্রেশ হয়েই একটা লম্বা ঘুম দিবো..! একদম রাতে উঠবো..!
===============
যেখানে আমরা প্রতিদিন রাত ৯ টার মধ্যে ডিনার করি সেখানে আজ রাত ১০ টায়ও কারো কোন খবর নেই। ১০ টা পার হওয়ার কিছুক্ষণ পর মাম্মাম এসে আমাকে খেতে ডাকলো। আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে যেতে প্রায় সাড়ে দশটা বেজে গেলো। যেয়ে দেখি সবাই টেবিলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি যেয়ে বসতেই সবাই খাওয়া শুরু করলো।
আজকে সবকিছু কেমন যেন স্লো মোশনে হচ্ছে। আমরা সবাই যেখানে ১১ টার মধ্যে যে যার যার রুমে চলে যাই। সেখানে সাড়ে এগারোটা বাজার পরেও সবাই নিচেই আছে। ইশ্! আমি ভাবলাম সবার আগে অসভ্যটাকে উইশ করবো। আমাদের সব মিটমাট করবো। কিন্তু সেটা মনে হয় না হবে!
সভ্যই সবার আগে ওর রুমে চলে গেলো। ও চলে যাওয়ার পরেই মাম্মাম আর ছোটমা মিলে সবকিছু রেডি করা শুরু করলো। বারোটা বাজার একটু আগে আমরা সব কিছু নিয়ে আমার রুমে চলে এলাম। বারান্দায় চেক করে দেখলাম সভ্য আমাদের বারান্দায় নেই। কিন্তু ওর রুমে লাইট জ্বালানো। অবশ্য গ্লাসে পর্দা ফেলা তাই ভিতরে কি হচ্ছে তা বাহির থেকে বোঝা যাচ্ছে না। আমরা সবাই তাড়াতাড়ি করে সব কিছু রেডি করে ফেললাম। বারোটা বাজার দুই তিন মিনিট আগে ছোটমা সভ্যর দরজায় নক করলো।
সভ্য দরজা খুলে কিছু না দেখেই দিলো একটা ঝাড়ি!
— ‘সমস্যা কি তোমার? জ্বলাচ্ছো কেনো আমাকে?’
কিন্তু যখন দেখলো ছোটমা দরজায় দাঁড়ানো সাথে সাথে চুপ! চোখ বড় বড় করে আমাদের সবার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি ওয়ান হান্ড্রেট পার্সেন্ট সিওর সভ্য মনে করেছে আমি নক করেছি। এই জন্যই এভাবে ঝাড়ি মারলো। মনে করারই কথা কারণ বারান্দার দরজা দিয়ে তো শুধু আমিই ওর রুমে যাই।
সভ্য বের হওয়ার সাথে সাথে ছোটমা, মাম্মাম, ছোটবাবা, বাপি সবাই একসাথে বলে উঠলো,
‘‘ Happy birthday to you,
Happy birthday to you,
Happy birthday to you dear Sovvo,
Happy birthday to you. ’’
সবাই উইশ করার সময় আমি চুপ করে ছিলাম। আমি উইশ করিনি। কেক কাটার পরে সবাই সভ্যকে গিফট দিলো।
আমাকে কোন কিছু না দিতে দেখে বাপি বললো,
— ‘কি ব্যাপার সভ্যতা তুমি সভ্যকে কিছু দিলে না?’
বাপির কথা শুনে আমি বললাম,
— ‘আসলে বাপি আমি না ভুলে গেছিলাম। আমার মনেই ছিল না যে আজকে সভ্যর জন্মদিন।’
আমার কথা শুনে ছোটমা বলে উঠলো,
— ‘কি বলছিস সভ্যতা? তুই যে কেক নিয়ে এলি?’
ছোটমার কথা শুনে আমি বললাম,
— ‘ছোটমা আজকে কৌশিকদের বাসায় কেক খাওয়ার সময় আমার মনে হলো আরে কালকে তো সভ্যর জন্মদিন। আমি তো কোন গিফটও কিনিনি তাই কেক নিয়ে এলাম।’
কথা গুলো আমি সভ্যর দিকেই তাকিয়ে বললাম। কিন্তু সভ্য আমার দিকে তাকায়নি। সে থমথমে মুখে কেকের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমার কথা শুনে ছোটবাবা বললো,
— ‘হয়েছে হয়েছে এবার সবাই চলো। অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন সবার ঘুমোনো উচিত।’
আমরা সবাই যে যার যার রুমে চলে গেলাম। সবাই ঘুমোনোর পর আমি নিচে যেয়ে কেক নিয়ে এলাম। তারপর রাত পৌনে একটার দিকে সভ্যর রুমে নক করলাম। এবার বারান্দা দিয়ে না, সরাসরি ওর রুমের মেইন দরজায়। নক করার কিছুক্ষণ পর সভ্য দরজা খুলে দিলো। দরজায় আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো। ও তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে আশেপাশে দেখলো কেউ আছে কি না। কাউকে না দেখে আমাকে টেনে ওর রুমে নিয়ে যেয়ে দরজা লক করে দিলো। সভ্যর কাজ কর্ম দেখে আমার প্রচুর হাসি পাচ্ছে।
সভ্য ওর দুইহাত কোমরে দিয়ে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। কিছুই বলছে না।
ওকে চুপ থাকতে দেখে আমিই বললাম,
— ‘কি?’
সভ্যও বললো,
— ‘সেটাই তো কি? তোমার আমার রুমে কি?’
আমি অবাক হয়ে বললাম,
— ‘মানে? আমি তোর রুমে আসতে পারি না?’
— ‘না, পারো না।’
— ‘কেনো আমি আসতে পারবো না?’
— ‘কারণ এটা আমার রুম।’
— ‘আর তুই যে সব সময় আমার রুমে পড়ে থাকিস? সেটার বেলায়?’
— ‘ওটা আমার ইচ্ছে। তোমার কি?’
— ‘এটাও আমার ইচ্ছে। তোর কি?’
— ‘উফ্!!! রং ঢং না করে বলো তো কেনো এসেছো?’
সভ্যর ব্যবহার দেখে আমি রীতিমতো হতবাক। কেমন রুক্ষ স্বরে আমার সাথে কথা বলছে! আমি সব কিছু ঠিকঠাক করার জন্য এলাম। আর ও কি না..! এখন মনে হচ্ছে আমার আসাটাই ভুল হয়েছে।
আমি কোন রকমে বললাম,
— ‘তোকে কেক খাওয়ানোর জন্য এলাম। তখন তো খাওয়াতে পারিনি। পরে আবার বলবি আমি তোকে কেক কেনো খাওয়াইনি। এটা নিয়েই আবার আমাদের মাঝে নতুন কোন সমস্যা ক্রিয়েট হবে।’
— ‘আমি কি তোমাকে আসতে বলেছি? নাকি বলেছি যে আমাকে কেক খাওয়াও? আমার কি মুখ নাই? নাকি হাত নাই যে নিজে তুলে খেতে পারবো না?’
এবার সভ্যর কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। উফ্! কেনো এলাম এখানে? কি বিশ্রী একটা পরিস্থিতি!
কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। চোখ গুলো জ্বালা করছে। সবকিছু কেমন ঝাপসা ঝাপসা লাগছে। নোনা জল দিয়ে চোখে যেন পুকুর তৈরি হয়েছে। গলাটাও কেমন যেন ব্যথা করছে। কথা বললেই মনে হয় চোখের পানি পড়ে যাবে! একটা বিষয় বুঝতে পারছি না কথা বলার সাথে চোখের পানির কি সম্পর্ক? কথা বললেই কেনো পানি পড়ে যাবে? লাস্ট কান্না করেছিলাম অনিকের কারণে। এরপর আর কখনো কান্না করিনি।
আমি ধরা গলায় কোন রকমে বললাম,
— ‘ওহ! স্যরি! আসলে…. আচ্ছা বায়… গুড নাইট।’
বলেই চলে এলাম।
দরজার কাছে এসে যেই দরজা খুলতে যাবো তার আগেই পিছন থেকে সভ্য আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার হাতে কেকের প্লেট, যার ফলে খুব একটা সুবিধা করতে পারলাম না।
তাই মুখে বললাম,
— ‘ছাড় আমাকে, সভ্য।’
— ‘কষ্ট লাগে, সুইটহার্ট?’
এবার আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেললাম। বললাম,
— ‘তুই আমার সাথে এভাবে কথা বললি?’
— ‘স্যরি, মাই জান। আ’ম রিয়্যালি স্যরি।’
— ‘ছাড়। তুই আমার সাথে আর কথা বলবি না।’
— ‘ওটা ইম্পসিবল, জান।’
— ‘ছাড় আমাকে বলছি।’
— ‘এটাও ইম্পসিবল!’
— ‘ছাড় তো!’
— ‘এতটুকুতেই এই অবস্থা?’
— ‘তুই আমাকে এভাবে বললি?’
— ‘স্যরি, সুইটহার্ট। প্লিজ জান, ডোন্ট ক্রাই।’
— ‘ছাড় আমাকে। খবরদার তুই আমাকে স্পর্শ করবি না।’
— ‘আমি বলেছি এটা অসম্ভব, জান। তোমাকে ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আর স্পর্শ আমি ছাড়া অন্য কেউ করার ক্ষমতা নেই।’
— ‘উফ! ছাড় তো আমাকে। অসহ্য লাগছে তোকে আমার।’
— ‘তাহলে ভাবো আমার কেমন লেগেছে এন্ড ছাড়ার তো কোন প্রশ্নই আসে না। দেড় মাস! দেড় মাস কম সময় না! এই দেড় মাস আমাকে কষ্ট দিয়েছো। পরিক্ষা ছিল জন্য কিছু বলিনি। এখন আবার নতুন করে কাহিনি শুরু করছো? আর আমি স্পর্শ করবো না তো কে করবে? হাহ্? কে করবে শুনি?’
বলতে বলতে সভ্য আমাকে ওর বিছানার কাছে নিয়ে এলো।
— ‘তুই আমার সাথে কথা বলবি না। ছাড় আমাকে।’
আমার কথা শুনে সভ্য আমাকে ছেড়ে দিলো। আমার হাত থেকে কেকের প্লেটটা নিয়ে ডেক্সের উপর রেখে আবার আমার কাছে এলো।
ওকে আমার কাছে আসতে দেখেই বললাম,
— ‘খবদার সভ্য আমার কাছে আসবি না।’
— ‘পারলে আটকাও দেখি।’
বলেই আমার বাম হাত পেঁচিয়ে পিছনে আমার পিঠে ধরলো। ডান হাতও পেঁচিয়ে ধরে পিছনে আমার কোমরে রাখলো। এরপর আমাকে একদম ওর বুকের সাথে মিশিয়ে ফেললো।
এবার আমি ধস্তাধস্তি শুরু করলাম। কিন্তু হায় খোদা! ওকে আমার কাছ থেকে এক চুল পরিমাণও সরাতে পারলাম না! তার উপর হাতেও ব্যাথা লাগছে প্রচুর!
আমাকে ধস্তাধস্তি করতে দেখে সভ্য বললো,
— ‘ওহ্! মাই জান! কা’ম ডাউন..কেনো এত নড়াচড়া করো তুমি? আমি না ছাড়লে তুমি কি পারবে আমাকে তোমার থেকে ছাড়াতে? কখনোই না। স্যো, সুইটহার্ট নো নড়াচড়া। আমি তোমার এত কাছে আছি আমাকে ফিল করো।’
— ‘তোর ফিলের গুষ্টির শ্রাদ্ধ করবো আমি। ওহ্! হাতির বাচ্চা একটা। ছাড় আমাকে।’
আমার কথা শুনে ও ওর মুখ আমার মুখের একদম কাছে নিয়ে এসে বললো,
— ‘ডোন্ট কল মি হাতির বাচ্চা সুইটহার্ট। আ’ম এবসোলুটলি ফিট এন্ড ফাইন। নিজে তো না খেয়ে না খেয়ে ঘোড়ার ডিমের ডায়েট করে একটা শুটকিমাছ হইসো। ধরতে গেলে হাড্ডি ছাড়া কিছুই পাই না। উল্টো আমারই লাগে। বাতাস আসলেই মনে হয় উড়ে যাবা। ছেচল্লিশ কেজি কোন ওয়েট হলো? পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চির একটা মেয়ের ওয়েট নাকি ছেচল্লিশ কেজি!! এই শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি ঠিক সময়ে বাবা হতে পারবো না। ডাক্তার তোমার ওয়েট দেখেই বলবে কিছু দিন ওয়েট করতে! প্রেগন্যান্সির সময় সব কমপ্লিকেশন শুরু হবে। তখন তোমার জিরো ফিগার ধুয়ে পানি খাইয়ো।’
সভ্যর কথা শুনে আমার কান্না আপনা আপনি কখন যে গায়েব হয়ে গেছে আমি বলতেই পারি না! আমি চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি! কি বলছে এগুলো? এই ছেলে তো রকেটকেও পিছনে ফেলে দিবে! কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে!
আমি বললাম,
— ‘ফালতু কথা বলবি না সভ্য। তুই জানিস কত মেয়ে এর জন্য কান্নাকাটি করে? সবাই জিরোতে আসতে পারে না।’
ও আমাকে ঝাড়ি দিয়ে বললো,
— ‘রাখো তোমার জিরো ফিরো। এই যে তোমার একটু ওয়েট বাড়লেই তুমি যে ডায়েট কর, না খেয়ে থাকো, কিছুই নাকি খাও না। নট ইভেন পানি! এটার কোন মানে হয়? মাথা ঘুরে পড়ে গেলে কি হবে? কোন খেয়াল আছে?’
— ‘এই গাধা না জেনে কথা বলবি না। এর মধ্যে…. ‘
আর বলতে পারিনি।
তার আগেই ও বললো,
— ‘কি হবে হোক। আই ডোন্ট কেয়ার। তুমি যদি অসুস্থ হয়ে যাও তখন আমার কি হবে?’
— ‘আরে আমি অসুস্থ হবো না তো। কিছুই হবে না আমার।’
— ‘তুমি বেশি কথা বলবে না। তুমি জানো যে তুমি অসুস্থ হবে না?’
আমি আর কিছু বললাম না। কারণ লাস্ট টাইম আমি অসুস্থ হয়ে গেছিলাম। তিন কেজি ওয়েট বেড়ে যাওয়ায় ডায়েট শুরু করি। যার ফলে ওয়াশরুমে মাথা ঘুড়ে পড়ে গেছিলাম। ভাগ্য ভালো তখন ছুফি আন্টি আমার রুমে ছিল। উনি রুম ঝাড়ু দিচ্ছিলো। এই খবর সভ্য জানে না। তখন ওর টেস্ট পরিক্ষা চলছিল। যার কারণে ও ক্যাডেটে ছিল। এটা শুনলে আমাকে চিবিয়ে খাবে।
আমাকে চুপ দেখে ও বললো,
— ‘কি হলো বলো?’
আমি কথা ঘুরানোর জন্য বললাম,
— ‘ওহ্ সভ্য! ছাড়ো তো। লাগছে আমার।’
— ‘নো ছাড়াছাড়ি। তোমাকে তো আমি… ওহ হ্যাঁ তখন তুমি কি বলেছিলে যেন? কি বলেছো মনে আছে?’
— ‘কি বলেছি আমি?’
— ‘তুমি আমার বার্থডে ভুলে গেছো?’
আমি বিরবির করে বললাম,
— ‘তোর বার্থডে ভুলবো কেমনে?? এই দিনেই তো আমার জীবন ছাড়খাড় করার জন্য তুই জন্ম নিছিলি।’
— ‘কি বললা? বুঝিনি আমি।’
— ‘কই? কিছুই বলিনি।’
— ‘ওহ্! এখন বলো।’
— ‘মানে? কি বলবো?’
— ‘আমার বার্থডে তুমি ভুলে গেছো?’
— ‘এমনি কি তোমাকে আমি ছাগল বলি? এই তোমাকে ক্যাডেট থেকে বের করে দেয় না কেনো?’
— ‘ফালতু কথা বলবে না।’
— ‘ফালতু কথা আমি না। তুই বলিস। এই গাধা কেক দেখে বুঝিসনি যে এটা অর্ডার করা কেক। আগেই অর্ডার করা হয়েছে।’
— ‘তাহলে মিথ্যা বললে কেনো?’
— ‘এমনি ইচ্ছা হইছে তাই মিথ্যা বলছি।’
— ‘হুহ! তো আমার গিফট কই?’
— ‘গিফটও আছে।’
— ‘তখন যে বললে ভুলে গেছো।’
— ‘মিথ্যা বলেছি। কজ ওটা সবার সামনে দেয়া যাবে নাহ্!’
আমার কথা শুনে সভ্য ওর ঠোঁটে দুষ্ট হাসি নিয়ে বললো,
— ‘তাই নাকি, জান? কি দিবে শুনি? আমার কিস? ইশ্! অবশেষে আমার অপেক্ষার অবসান ঘটলো!’
আমি রাগ হয়ে বললাম,
— ‘অসভ্য একটা। কোন কিস ফিস পাচ্ছো না তুমি। ছাড়ো আমাকে।’
আমার কথা শুনে ও মন খারাপ করার ভান করে বললো,
— ‘তাহলে আবার এমন কি দিবা যে সবার সামনে দেয়া যাবে না?’
— ‘আছে কিছু একটা।’
— ‘কি সেটা?’
— ‘তুমি কি ছাড়বা আমাকে?’
— ‘উঁহু! ছাড়তে মন চাচ্ছে না।’
— ‘না ছাড়লে দেখাবো কিভাবে যে কি দিবো?’
— ‘আচ্ছা ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু…..’
— ‘কি? কিন্তু কি?’
— ‘কিন্তু আমার চুমু? চুমুর কি হবে?’
— ‘নো চুমু টুমু। সব বাদ। আগে বড় হও।’
— ‘দিস ইজ নট ফেয়ার, জান। চুমুর জন্য আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি। তুমি প্রমিস করেছিলে।’
— ‘ভুলে গেছি প্রমিস।’
— ‘কিন্তু আমি তো ভুলিনি।’
— ‘তুমিও ভুলে যাও।’
— ‘না হবে না। আমার চুমু চাই ইইই চাই।’
— ‘ওহ্! সভ্য ছাড়বে আমাকে?’
— ‘নো ছাড়াছাড়ি। আগে আমার চুমু লাগবে।’
— ‘সভ্য অসভ্যতামি বাদ দেও। লাগছে আমার। ছাড়ো তো।’
— ‘নো মিন্স নো।’
— ‘তাহলে তোমার গিফট বাতিল।’
— ‘আই নো ইউ আর অ্যা গ্রেট পল্টিবাজ। তুমি সব সময় পল্টি খাও। প্রমিস করার পরেও আমাকে চুমু খেতে দেওনি আর না নিজে দিয়েছো। এখন আবার গিফটও দিবা না!’
— ‘এই ড্রামাবাজ ড্রামা বন্ধ করে আমাকে ছাড়। না ছাড়লে দিবো কিভাবে?’
সভ্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
— ‘এই যে যাও তোমাকে ছেড়ে দিলাম।’
আমি হাত দুটো ঘষতে ঘষতে বললাম,
— ‘ফাজিল ছেলে আমার হাত শেষ করে ফেলছে।’
আমার কথা শুনে সভ্য সাথে সাথে আমার হাত গুলো ওর হাতে নিয়ে বললো,
— ‘আ’ম স্যরি জান। আমি সত্যি বুঝতে পারিনি তোমার এতটা লাগবে।’
— ‘বুঝবি কিভাবে?? জলহস্তী একটা।’
— ‘আ’ম স্যরি সোনা।’
— ‘ইট’স ওকে। এখন আবার ধরিস না। সর।’
— ‘সর মানে? কই যাচ্ছো? আমার গিফট কই?’
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
— ‘পালাচ্ছি না। গিফট আমার রুমে। নিয়ে আসতে যাচ্ছি গাধা।’
— ‘ওহ্! আচ্ছা জান তাহলে বারান্দায় আসো।’
সভ্যর কথা শুনে আমি বললাম,
— ‘তুমি যাও। আমি আসছি।’
বলেই আমার রুমে এলাম গিফট নেয়ার জন্য।
………………………..
(চলব)
[ বিঃদ্রঃ যারা আগে পড়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ‘‘নো স্পয়লার প্লিজ…’’ ]