সর্বনাশিনী পর্ব-১০

0
2400

#সর্বনাশিনী
#সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
পর্ব-১০
কর্মের ফল সবাইকে ভোগ করতেই হবে। সেটা এই কালেই হোক বা পরকালে। একেই বলে কার্মা। যেমন বপন করবে? তেমনিতো পাবে? তাই নয় কি?? দূরে দাঁড়িয়ে থেকে মারিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট মারিয়ার ধরি কি মরি অবস্থা দেখে এসব ভেবে যাচ্ছে। আজ এই নিয়ে ১০ বারের মতো মারিয়াকে মানা করে দিলো ডাইরেক্টর। গত এক সপ্তাহে মারিয়ার অবস্থা রাস্তার কুকুরের মতো হয়ে গেছে। এলোমেলো চুল আর কুঁচকানো কাপড়ে লো ক্লাসের মনে হচ্ছে। মারিয়া ডিরেক্টরের এবার পা চেপে ধরে বসলো,

” স্যার প্লিজ স্যার এমনটি করবেন না। এমনটি করবেন না স্যার। আমার ক্যারিয়ার এখানেই শেষ হয়ে যাবে তাহলে।”

ডাইরেক্টরের মাথায় চুল নেই। যতটুকু আছে, পেঁকে গেছে। লোকটির ইয়া বড় পেট। চোখ দু’টি ভয়ানক লাল। এক দম কোনো হিংস্র পশুর মতো। ঠিক তেমন যেন এখনি গিলে ফেলবে মারিয়াকে। মারিয়ার বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। এমন তো নয়, অভিনয়ের এর চকমকে জগতে কারো সাথে বিছানায় যায় নি। তবে এই লোকটি বেশিই কুৎসিত। মারিয়ার ভাবার মাঝেই লোকটি ডিরেক্টর বলল,

” এই অভিনয় , ফভিনয় ছাড়ো, তোমার ধারা এসব আর হবে না। ”

তারপর খানিকটা ঝুঁকে এলো সে। মারিয়ার কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে বলল,

” তার থেকে বরং আমার রক্ষিতা হয়ে থাকো। যখন ডাকবো, যেখানে ডাকবো চলে এসে। আমাকে তুমি খুশি করো আর আমি তোমাকে। টাকা পয়সার অভাব থাকবে না।”

এই বলেই লোকটি আরাম করে চেয়ারে হেলে বসে পড়লো। মারিয়ার চোখে পানি চলে এলো রাগে, দুঃখে।মারিয়ার অভিনয়ের জগতে পদার্পন হয় দিলশাদের মাধ্যমে। সেই দিলশাদের কাছে সাহায্য চেয়েও মারিয়া পায় নি। বিন্দুকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেও কোনো কাজ হয় নি। তাহলে কি তার ক্যারিয়ার এখানেই শেষ? মারিয়া চোখের জল মুছে সুপ্তপর্ণে শ্বাস লুকিয়ে ফেললো। চোখের সামনে সব রাস্তাই যে বন্ধ। তাহলে কি এবার মারিয়া কারো রক্ষিতা হতে বাধ্য? মারিয়া রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো। তারপর জবাব দিলো,

” জি স্যার আমি রাজি!”

দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখে বড্ড আফসোস করলো মারিয়ার এসিস্ট্যান্ট। আহ ভরতে লাগলো মনে মনে।

————-

সকালের মিষ্টি রোদ গুন গুন করে গান গাইছে। দোল খাচ্ছে এদিক ওদিক। ঠান্ডা দিনের মিষ্টি রোদের সুর মাতিয়ে তুলেছে রাস্তার ধারের পথচারীদের উপর। মেতে উঠেছে বড় বড় দালান আর যানবাহন। গাড়ি দুলছে গতির সাথে। দুলছে গাড়ির ভিতরে থাকা দুটো নরনারীর। বাহিরের প্রকৃতির অপরূপ সাজসজ্জা দেখতে ব্যস্ত একজন তো আরেকজন ব্যস্ত ফোনের অপর প্রান্তের মানুষটির সাথে কথা কথোপকথন। স্নেহা আজ বসে আছে দিলশাদের পাশেই। লোকটির শরীরের ব্র্যান্ডেড পারফিউমের সুবাস গাড়ির ভেতরটি মাতিয়ে তুলেছে। স্নেহে কটাক্ষ চোখে তাকালো দিলশাদের দিকে। তীক্ষ্ণ বুদ্ধিদিপ্ত দুটি গাড়ো নীল রঙ্গের চোখ, টিকালো নাক আর পাতলা ঠোঁট, চওড়া বুক। লম্বা এতটুকু যে দীর্ককায় শরীরে স্নেহা হারিয়ে যাবে। স্নেহা মনে মনে ভাবলো,

” এত টা সুদর্শন না হলেও পারতেন দিলশাদ।”

স্নেহার ভাবার মাঝেই দিলশাদ সশব্দে আঘাত করে বসলো গাড়ির জানালার কাচে। স্নেহা শিউরে উঠলো স্নেহা ধড়পড় করে উঠলো বুক। ভয় ভয় তাকালো দিলশাদের দিকে। লোকটি রাগে ফেঁটে যাচ্ছে। হাত থেকে পড়ছে টপটপ লাল রক্ত। চলতি গাড়ির ভিতরে বাহিরে কাচের ছড়াছড়ি। ড্রাইভার সঙ্গে সঙ্গেই ব্রেক কসেছিলো। এদিকে দিলশাদের হঠাৎ রিয়াকশনে কেনো জানি স্নেহার বুকে ভিতর তীব্র ব্যথা অনুভব করলো। যদিও সে জানতো এম কিছুই হবার কথা। তবে রক্তাক্ত অবস্থায় দিলশাদকে দেখতে চায়নি সে। স্নেহার বিচলিত হয়ে দিলশাদকে বলল,

” মি. আমরিন এই কি করলেন? রক্ত পড়ছে তো।”

বলেই স্নেহা হাত ধরতে গেলে দিলশাদ থামিয়ে দেয়। এবং ঠান্ডা গলায় বলে,

” আমি ঠিক আছি মিস শেখ। চাচা গাড়ি ইউট্রাণ নিয়েন!”

ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে কথাটুকু বলেই দিলশাদ বাহিরে তাকালো। ফোনটি আবার বাম হাতে নিয়ে আবারো কাউকে ফোন দিলো। ওপাশ থেকেই কেউ ফোন তুলতেই দিলশাদ শক্ত কন্ঠে বলল,

” ফাহাদ খোঁজ লাগাও আমাদের প্রেজেন্টেশনকে মিশ্র গ্রুপের কাছে কিভাবে পৌঁছেছে। ১০০ কোটি টাকার ডিল এভাবে হাত ছাড়া কিভাবে হলো। এই ডিল আমাদের কোম্পানির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ জানোই তো?”

ওপাশ থেকে কি বলল , শোনা গেলো না। দিলশাদ ফোন রেখে দিলো। রাগে গজরাতে লাগলো শুধু। স্নেহা ডিল হাত ছাড়া হওয়াতে মনে মনে খুশি হলেও চুপসে গেলো ভয়ে। অজানা ভয়ে। দিলশাদের কাছে এত জলদি ধরা পড়তে চায় না সে। আগে বদলা নিতে চায়। বদলা। কিন্তু তাই বলে দিলশাদকে রক্তাক্ত করে প্রতিশোধ নিতে চায় না। এতে যে নিজের-ই মনের রক্তক্ষরণ হয়ে যাচ্ছে। স্নেহা বলল,

” মি. আমরিন আপনার হাত থেকে অনেক রক্ত বের হচ্ছে। হসপিটালে যেতে। ড্রাইভার চাচা আপনি সামনেই কোনো হসপিটালে নিয়ে যান। ”

দিলশাদ বলল,

” তার প্রয়োজন নেই মিস শেখ। আমি ঠিক আছি। অফিসে গিয়ে ফাস্টেড করিয়ে নিব। ডোন্ট ভরি।”

স্নেহার রাগ লাগলো বলল,

” আশ্চর্য লোক তো আপনি, দেখেছে এখনো হাতে কাচ লেগে আছে, হসপিটালে কি ড্রেসিং না করালে ইনফেকশন হতে পারে। এত হেলামি ঠিক না। আগে হসপিটালে চলুন!”

” মি. শেখ আমি ঠিক আছি আপনি অযথাই….! ”

কথাটুকু শেষ করতে পারলো না দিলশাদ। স্নেহা এক ধমক মেরে বলল,

” চুপ করুন তো সব সময় বেশি বুঝেন কেন? কিভাবেন নিজেকে হ্যাঁ? ২১ শতকের ভাঙ্গা চোরা রোবট? যে হাজার বাড়ি দিলেও প্যাচ প্যাচ শব্দ করেও কাজ করবে? একদম কথা বলবেন না। খবরদার না হয় খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম!”

দিলশাদ আকৃতা শেখের হঠাৎ ধমকে ভেবাচেকা খেয়ে গেলো। কোনো অজানা কারণেই চুপ করে গেলো। কিছু বলল না। শুধু এক দৃষ্টিতে চোখ দুটি ঘুর ঘুর করতে লাগলো স্নেহারমুখের আদল খানাতে। স্নেহা সেদিকে পাত্তা দিলো না। কঠোর কন্ঠে বলল,

” রুমাল আছে?”

দিলশাদ বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়লো হ্যাঁ বোধক। বলল,

” আছে!”

স্নেহা হাত বাড়িয়ে বলল,

” তো দিন!”

দিলশাদ বলল,,

” বের করতে হবে যে!”

স্নেহা হতাশার শ্বাস ছেড়ে বলল,

” তো কার অপেক্ষা করছেন? জলদি বের করুন।”

দিলশাদের মাথায় দুষ্টুমি খেলছে তখন। সে এক হাত দিয়ে অন্য হাত ধরে আছে। সে হাত উঠিয়ে অসহায় মুখ করলো,

” কিভাবে বের করি?”

স্নেহা উপরের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আল্লাহ! কোথা রেখেন বলেন বের করে দিচ্ছি। ”

দিলশাদ ডান পাশের পকেটে ইশারা করলো। স্নেহা কোনো কিছু না ভেবেই দিলাশাদের দিকে ঝুঁকে পড়লো। দিলশাদের শ্বাস প্রশ্বাস তখন পড়ছে স্নেহার মুখে। স্নেহার পূব পরিচিত একটা অনুভূতি শরীরের মাঝে দোলা দিয়ে গেলো। এদিকে স্নেহা কাছে আস্তেই দিলশাদে বুকের ভিতর বুডুম বুডুম শব্দ হতে শুরু করেছে। দিলশাদে নাকে এসে লাগছে পরিচিত মানুষের সেই সুবাস। দিলশা তাকিয়ে রইলো স্নেহার দিকে। স্নেহার এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে তার গলা শুকিয়ে গেছে, সাত দরিয়ার পানি এক ঢুকে পান করলেও কি এই পিপাসা মিটবে?? স্নেহা চোখ বুঝে নিজেকে ইচ্ছা মতো ধমকালো। তারপর হাতে পকেট থেকে রুমাল বের করে নিয়ে সরে এলো। দিলশাদের শক্ত পোক্ত হাতটি টেনে নিলো নিজের হাতে। ধীরে কাচের টুকরো গুলো সরিয়ে নিতে লাগলো।দিলশাদের হাতের কাঁচ গুলো উঠানোর সময় স্নেহের মুখের ভঙ্গিমা ব্যথিত দেখা যেত। ভাঙ্গা জানালা দিয়ে আসা মৃদুমন্দ বাতাস এসে উড়িয়ে দিচ্ছে স্নেহার খোলা চুল। দিলশাদ এমন একটি দৃশ্য মুগ্ধ হয়ে অনুভব করছে। স্নেহা যখন বুঝতে পারলো দুটি চোখ তার উপর ঘুর ঘুর করছে। স্নেহা একটু বিব্রতবোধ করলো। এবং সরে এলো তৎক্ষনাৎ। শুরু হলো গাড়ির ভিতরে পিনপতন নীরবতা। কিন্তু এর মাঝে বন্ধ্য হলো না দিলশাদের ঘুর ঘুর দৃষ্টি। কি যেন আবারো গভীর ভাবে খুঁজে যাচ্ছে সে। স্নেহা? স্নেহা? স্নেহা? সত্যি কি মিলানো যায়। কে এই নারী? যার সাথে মিলে গিয়েও বড্ড অমিল স্নেহার??

চলবে,

বিঃদ্রঃ খুব কষ্ট লাগচ্ছে ফোনটি নেই বলে। মানুষ মরে গেলে যেমন কষ্ট লাগে, কান্না পায়, খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে শোক পালন করে। আমার টিক সেই অবস্থা। তার উপর গল্প???? ভাইয়ের সাথে ঝগড়াঝাটি মারামারি করে তার ফোনটা কিছুক্ষণের জন্য হাতিয়ে নিয়েছি । এবং সুযোগ মতো যতটুকু লিখা যায়। লিখে ফটাফট আপলোড দিলাম। জানি না কেমন লাগছে গল্প আপনাদের। এত কষ্টের পর যদি আপনাদের মন জয় করতে নাই পারলাম? তাহলে আমি ব্যর্থ লেখিকা…..🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here