-‘সাঁঝক বাতি-‘
নূরজাহান আক্তার (আলো)
[০৫]
-‘এই তেজের জন্য তোমাকে আমার এত্ত ভালো লাগে। নয়তো কবেই খেয়ে ছেড়ে দিতাম।’
একথা শুনে শিফা শব্দ করে হেসে উঠল। যেন খুব মজার কথা শুনেছে। হাসি থামাতে পারছে না। দিগন্ত ভ্রু কুঁচকে তাকাল। হেসে যে অপমান করছে, বুঝতে বাকি নেই। মেয়েটা খুব ধূর্ত। পাল্টা জবাব দিবেই, হেসে হোক বা কথার খোঁচা মেরে। এই ব্যাপারটা দিগন্তেরও বেশ লাগে। সে পকেটে হাত গুঁজে শিফার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েরা রুপবতী হলেও, তেজী। ঠিক গোলাপের মতো। গোলাপ যেমন সৌন্দর্য এবং কাঁটায় পূর্ণ। তেমনি এই মেয়েটা রুপ আর তেজে। এজন্যই ওর কাজে আকৃষ্ট হয়েছে। তবে রুপের ফাঁদে সে কখনোই গলবে না। এমন রুপবতীরা ভোগের যোগ্য, ভালোবাসার নয়। তাছাড়া ভালোবাসা, মায়া, টান, ওর মধ্যে নেই বললেই চলে। এটাও ওর কাছে গর্বের! কারণ এসব জিনিস পুরুষদের
কাবু করে। এসব ভেবে দিগন্ত ফিচেল হাসল।
শিফাকে সে ধীরে ধীরে আঘাত করবে। ওর ধৈর্য্য আর সহ্য ক্ষমতা দেখবে। কতদূর অবধি যায়; পরীক্ষা করবে। একেবারে মারলে কষ্ট কম হয়। এতে মজা পাওয়া যাবে না। আর খেলাতে টুইস্ট না পেলে ইচ্ছেও জাগে না। বিরক্ত এসে খেলার মজা নষ্ট করে দেয়। এজন্য টুইস্ট খুঁজতেই সে শিফাকে ব্যবহার করবে। লাগামহীনভাবে উড়তে দিবে। কারণ পিপীলিকা মরার জন্য বেশি উড়ে।
শিফাকে ক্ষুদে পিপীলিকা ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না। তখন শিফা বলল,
-‘খাবেন জানতাম। এজন্য তো তোড়জোড় করে বৈধতা দিলাম।’
একথা শুনে দিগন্ত তালি বাজিয়ে মাথা নাড়াল।
শিফা তাচ্ছিল্যের হাসল। তখন দিগন্ত গদগদ হয়ে বলল,
-‘ওহ হো, সত্যি জানতে? দারুন তো! তবে বেশ
ভালো অভিনয় পারো। একদম আমার’ই মতো। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুমি পারফেক্ট।’
কথাটা বলে দিগন্ত পায়ের উপর পা তুলে বসল।
শিফা ড্রেসিংটেবিলের সামনে এদিক-ওদিক ঘুরে বলল,
-‘ড্রেসটাতে আমাকে বেশ মানিয়েছে না? আগুন সুন্দরী মানবেই তো।’
একথা বলে শিফা বেডে শুয়ে পড়ল। এমনভাব, ঘুমে তাকাতে পারছে না। দিগন্ত ওর পাশে শুয়ে হাত বাড়াতেই শিফা ওর হাত মুচড়ে দিলো।উফ, শব্দ করে বসে দিগন্ত হাত ঝাড়ল। চোখে রাগের ছাপ। বাঁধা দেওয়া ওর মোটেও পছন্দ নয়। দিগন্ত
শুয়ে পুনরায় হাত বাড়াল। শিফার দু’চোখ বন্ধ।
তবে ষষ্ঠইন্দ্রীয়ও জানান দিচ্ছে, মানুষটা এদিকে তাকিয়ে আছে। দিগন্ত ওকে ঝাপটে শুয়ে পড়ল।
শক্ত বাঁধনে নড়ার চেষ্টাও বৃর্থা। নিষিদ্ধ জিনিসে
ওর আকষর্ণ বরাবরই বেশি। কেউ বারণ করলে; আড়ালে সেকাজ করবেই, করবে। আর এটা ওর পুরনো অভ্যাস। নয়তো মনটা অশান্ত থাকে।
শিফা নড়ল না। নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে রইল। কবুল বলে; সে শরীর এবং মনকে প্রস্তুত করে নিয়েছে। জান, মান, এবং যৌবণপূর্ণ শরীরের মায়াত্যাগ করেছে। বাঁধা দেওয়া এখন ফিঁকে। তাই ঢং করে দিগন্তকে বাঁধা দিচ্ছে না। কারণ অবগত, বাঁধা দিলে দিগন্ত সেটাই করবে। এজন্য দিগন্ত কাছে আসতে চাইলে বোঝায়, সেও প্রস্তুত। আর এটা দিগন্তের পছন্দ নয়। এজন্য গতদু’বারে সিদ্ধান্ত বদলেছে। কারণ দিগন্ত নিজের মর্জিমতো চলে। কেউ কিছুতে আগ্রহ দেখালে সেটাতে সে পিছিয়ে যায়। কেন? এর উত্তর কেবল দিগন্তেরই জানা।
ওকে যতটা ভালো দেখায় সে ততটাই ভয়ংকর।
যে ভদ্র ভাববে সেই চরম বোকা। বাহ্যিকরুপটা অমায়িক হলেও ওর অভ্যন্তরটা….!!
আর শত্রুপক্ষের খুঁটিনাটি তথ্য শিফার জানা। অহেতুক লড়াইয়ে নামে নি। জেনে, বুঝে, প্রাণের মায়া ত্যাগ করে স্বজ্ঞানে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কথায় আছে, করো নয়তো মরো। তাই সে লড়াই করে মরবে। এটা তার দৃঢ় কল্পনা! এর শেষটা দেখেই ছাড়বে।
আশ্চর্যজনক ভাবে দু’জনই ওদের পরিকল্পনার ব্যাপারে জ্ঞাত। তবুও নিখুঁত অভিনয় করেছে।যেন দু’জনেই এই বিয়েতে খুব খুশি। কারো মনে আক্ষেপ নেই। সুখী দম্পতি! শিফা কেন বিয়েটা করেছে; দিগন্ত জানে। আর দিগন্ত কেন সম্মতি
দিয়েছে; শিফা জানে। এজন্য দু’জন বেশ মজাও পাচ্ছে। জেনেবুঝে ভালো সাজতে এই অভিনয়। তা দু’জনেরই, স্বার্থে। শত্রুকে চোখে চোখে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। ওরা সেটাই করছে। চুন খেলে মুখ পুড়ে। কথাটা দু’জনেরই জানা। তাই দেখার পালা, সময় কি বলে?
______________________________
পরেরদিন রৌদ্রজ্জ্বল একটা দিন। রান্নাঘরে বেশ তোড়জোড় চলছে। মেয়ের জামাইয়ের সমাদরে ত্রুটি যেন না থাকে! সকালথেকে সেই অয়োজন চলছে। ঘন্টায় ঘন্টায় নতুন নতুন পদ জামাইকে দেওয়া হচ্ছে। দিগন্ত খুব বিরক্ত হলেও, নিশ্চুপ।
আদিখ্যেতা জিনিসটা ওর বরাবরই অপছন্দ।
তনয়ও খুব জ্বালাচ্ছে। মনটা চাচ্ছে, বুক বরাবর ঘুষি মেরে দম আটকে দিতে। যাতে চিরতরে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। শিফা সকাল থেকেই বাসায় নেই।
জুরুরি কাজের জন্য বাইরে গেছে এখনো ফিরে নি। কি কাজ? একমাত্র সেই ভালো জানে। তবে এভাবে দিগন্ত মাথা ঘামাচ্ছে না। আপাতত রাগ
দমন করে তনয়ের সঙ্গে খেলায় মন দিলো।এবং প্রতিজ্ঞাও করল, সুযোগ বুঝে তনয়কে সে উচিত শিক্ষা দিবে। ঘন্টা দু’য়েক পর শিফা ফিরল।ওর
মুখে কুটিল হাসি। দিগন্ত দেখেও নিশ্চুপ রইল।
শিফা তনয়কে বাইরে রেখে ফিরে আসল। পানি খেয়ে গুনগুন করতে করতে ফ্রেশও হয়ে আসল।
এমনভাব, রুমে আর কেউ নেই। আর থাকলেও পাত্তা দেওয়ার সময় নেই। সে তার কাজে ব্যস্ত।
শিফা কিছু একটা ভেবে দিগন্তের দিকে খানিক ঝুঁকে বলল,
-‘লোক লাগিয়েছেন। তবুও ফাঁকি দিয়ে গেলাম। আহারে, বৃথা কষ্ট।’
দিগন্ত শিফার গালের ঠোঁট ছুঁইয়ে আদুরে সুরে বলল,
-‘বেশ করেছো। চলো আদর আদর খেলি।’
-‘ওকে।’
একথা বলে শিফা ওর পাশে বসে পড়ল। দিগন্ত পুনরায় শুয়ে ফোন স্কল করতে লাগল। মুড চলে গেছে। সত্যি, শিফার পেছনে সর্বদা লোক থাকে।
শিফার কার্যকলাপের খবর দেওয়াই ওদের কাজ।
মেয়েটা ধরে ফেলেছে। বুদিমতী ধরা অস্বাভাবিক নয়। তখন শিফা হাসতে হাসতে বলল,
-‘পুরুষত্বে অহংকার শেষ? এছাড়া পুরুষরা কী বা পারে?’
-‘তোমাকে পুরুষত্বের জোর দেখাব না। আমাকে হারিয়ে দেখাও। যাও, এইটুকু ছাড় দিলাম। তুমি
বৈধ শত্রু বলে কথা। তবে না পারলে; শর্ত মেনে
আত্মসমর্পণ করতে হবে।’
শিফা দিগন্তের চোখে চোখ রেখে হাতটা বাড়িয়ে দিলো। অর্থাৎ সম্মত। দিগন্ত মৃদু হেসে করমর্দন করল। দু’জনের চোখে’ই তেজ। যেন কেউ কারো থেকে কম নয়। তাদের চাহনিতে স্পষ্ট অঘোষিত লড়াইয়ের পুনরায় আহ্বান।ফলস্বরূপ; নিঃশেষ।
ঠোঁটের কোণে ফিচেল হাসি। মস্তিষ্কও পরিকল্পনা
তৈরিতে সক্ষম। শিফা রুম থেকেই বেরিয়ে গেল। অর্ধদিন আর দিগন্তের সামনেই গেল না। রাগে অথবা ঘৃনায়! দুপুরে খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে দু’জনেই বেরিয়ে পড়ল। শিফা ফোনে গেম খেলছে। আর দিগন্ত লেপটপে কিছু করছে। মুখটা বেশ গম্ভীর। হঠাৎ ফোনে কাউকে বলল,
-‘একসপ্তাহ মুখ দেখাবি না। নয়তো শুট করতে দু’বার ভাববো না।’
কথাটা বলে কল কাটল। অপর ব্যাক্তির উপরে প্রচন্ড রেগে আছে। হয়তো ওর মনমতো কাজ হয় নি। শিফা ঠোঁট টিপে হাসল। সে জানত, এমন কিছুই হবে। কারণ সকালে দিগন্তের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করতেই বেরিয়েছিল। সে ছদ্মবেশে কাজটা করেছে। সফলও হয়েছে। দিগন্তের লোক যখন ওকে খুঁজছিল, সে পেছনেই ছিল। দেখছিল ওরা কি করে? কাজ সম্পূর্ণ করে ফেরার সময়, ভিক্ষা চাওয়াতে তাদের থেকে ধমকও খেয়েছে। ধমকে প্রচন্ড ভয়ের ভান ধরে কেটে পড়েছে। পিছু ফিরে তাকায় নি। লোকগুলো হন্ন হয়ে খুঁজে না পেয়ে পরে ফিরে গেছে। ওরা ধরতে না পারলেও, দিগন্ত ঠিক বুঝে ফেলেছে। কারণ সে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পূর্ণ মানুষ। তাতে কী! কাউকে পরোয়া করে নি, আর করবেও না। তখন দিগন্ত লেপটপটা সরিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
-‘এবার শান্তি হয়েছে?’
-‘প্রচুর।’
-‘ বাহ! তা স্বপ্নীলের বিরহে কাঁদছ না কেন? ইস, বেচারাকে কষ্ট না দিলেও পারতে। সময় আছে, ফিরে যাও।’
-‘ভয় পাচ্ছেন?’
-‘সো ফানি, বেইব।’
দিগন্তের কথায় পাত্তা না দিয়ে অবজ্ঞায় ভঙ্গিতে বসল। কয়েকবার শিষ বাজিয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজতে গুঁজতে শিফা বলল,
-‘স্বপ্নীলকে মেরে দিন। নয়তো আমিই শেষ করে দিবো। সিংহ-সিংহীর লড়াইয়ে দূর্বল প্রাণীদের না থাকায় উত্তম। ঝামেলা মাত্র।’
(বিঃদ্রঃ-রেসপন্স করার দায়িত্ব আপনাদের আর পোষ্ট করার দায়িত্ব আমার।)
To be continue……..!!