সিক্ত সুভানুভব’ পর্ব-১৭

0
2506

‘সিক্ত সুভানুভব’
[১৭]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

আলো রোদের সামনে এসে দাঁড়ায়,আর রোদের পায়ের উপর ভর দিয়ে আলো রোদের গলা জড়িয়ে ধরে আর রোদের কপালে একটা কিস করে,রোদ চোখ বড় বড় করে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে,রোদ কল্পনাও করে নি আলো এমন কিছু করবে।এবার আলো রোদের পায়ের উপর থেকে নেমে যায়
আর রোদকে উদেশ্য করে বলে,

আলোঃআপনি নিজে হাতে আমাকে এভাবে সাজিয়ে দিবেন আমি কল্পনাও করি নি।এত যত্ন আর এত কষ্ট করে সাজানোর জন্য এই আদরটা দিলাম,এটা আপনার কাজের স্যালারি।আমি সত্যি খুশি হয়েছি,তবে একবারো বললেন না তো আমাকে কেমন লাগছে,।

রোদঃতুমি মোটেও এতটা সুন্দর নই যে,তোমাকে সাজলেই সুন্দর দেখাবে।একটা কথা মনে রাখবে কাক ময়ুরের পেখম লাগালেই কাক ময়ুর হয়ে যাই না।সো তোমাকেও তাই লাগছে,,,আশা করি উওর পেয়ে গেছো।আর এসব আদর আমার লাগবে না,আমি কিছু পাওয়ার জন্য তোমাকে সাজিয়ে দেইনি,আম্মু বলছে এজন্য রাজি হয়েছি।তাছাড়া অন্য কিছু ভেবে নিজেকে বোকা প্রমাণ করবে না।
(ওর সাহস কতবড় আমাকে নাকি স্যালারি দিবে,রোদ মেহবুব তার বউকে সাজানোর জন্য স্যালারি নিবে।(মনে মনে)

আলোঃহুমম ধন্যবাদ আবার সবকিছু মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য, সত্যি আমি কোনদিন ময়ুর ছিলাম না আরো কখনো হতেও চাইনা।তবে একটা জিনিস চাইবো দিবেন প্লিজ।

রোদঃতোমার তো এখন কোন কিছু চাওয়া থাকতে পারে না তাই না,আগে না ছিলে নিম্নবিত্ত এখন তো উচ্চবিত্ত তাহলে আমার কাছে তোমার কি চাওয়া থাকতে পারে?

আলোঃবাহ্ আপনার এই খোঁচা মারা কথা গুলো শুনে বার বার নিজেকে এত ছোট মনে হয় যা কাউকে বোঝাতে পারবো না।আচ্ছা যে জিনিস চাওয়ার কথা বলছিলাম সেটা হলো,,,আপনি আমাকে যা কষ্ট দেওয়া সেটা চার দেওয়ালের মাঝেই দেন।প্লিজ এটা বাইরের মানুষকে বুঝতে দিবেন না,কারন আম্মু বাপি সবাই খুব কষ্ট পাচ্ছ আর আপনাকেও ভুল বুঝছে।

রোদঃতারমানে তুমি এখন আমাকে সবার সামনে অভিনয় করে চলতে বলছো?আমি তোমার মত এত অভিনয় করতে পারি না,কি করবো বলো এটা আমার ব্যথতা। আমি তো আলো না, আমি রোদ সো এসব অভিনয় ন্যাকামি আমাকে দিয়ে হবে না।

রোদ আর কিছু বললো না ওর ড্রেস বের করে নিয়ে মেঘের রুমে চলে গেল।রোদ আলোকে এত খোঁচা মেরে কথা বলো তাও আলো মুখ খোলে না,রোদ বার বার আলোকে রাগিয়ে দেয় যাতে আলো রেগে গিয়ে সব সত্যি রোদকে জানিয়ে দেয়।রোদ সাওয়ার নিয়ে নীল কালারের একটা পান্জাবী পড়ে ওর রুমে গেল,রুমে গিয়ে দেখে আলো নেই।রোদ চারদিকে তাকালো বাট আলো সত্যি রুমে নেয়, রোদ ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে চুল গুলো জেল দিয়ে স্পাইক করে নিল তারপর হাতে একটা ওয়াচ আর পারফিউম দিয়ে নিল।রোদ শেরওয়ানি পছন্দ করে না এজন্য রোদের আম্মু আলোর শাড়ির সাথে ম্যাচ করে পান্জাবী কিনেছে।রোদের ফোনে রোদের আম্মু ফোন দেয় আর বলে,,

আম্মুঃরোদ আমার রুমে এসো আলোকে সাথে নিয়ে নিচে যাও,সব গেস্টরা চলে এসেছে আর তোমাদের খুঁজে বেড়াচ্ছে।

রোদঃ আম্মু আমি নিচে যাচ্ছি তুমি আলোকে নিয়ে নিচে নামো,,,আমি পারবো না ওকে নিয়ে নামতে।

আম্মুঃতোমার আসতে বলছি এত কথা শুনতে ফোন দেয়নি।রোদঃহুমম আসছি।(দাঁতে দাঁত চেপে)

রোদ ওর আম্মু রুমে গিয়ে নক করে, ওর আম্মু দরজার খুলে আলোকে নিয়ে নিচে নামতে বলে,আর উনি রুম থেকে চলে যায়। রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে দেখে আলোর একটা নেটেরমত ওড়না দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।রোদ আলোকে কিছু না বলে হাত ধরে সিড়ি দিয়ে নামতে শুরু করে,রোদের বন্ধুরা রোদ আর আলোকে দেখে সিটি বাজাতে শুরু করে।রোদ ওর হাসি হাসি মুখ করে ফাহাদ আর আবির আর সাগরের দিকে তাকায়, আলো এতমানুষের সামনে এভাবে রোদ হাত ধরাতে লজ্জা পাচ্ছে আর আলোর হাত কাঁপছে। রোদ পেছনে তাকায় আর আলো যে নার্ভাস ফিল করছে সেটা বুঝতে পারে। রোদ আলোর হাত আলো শক্ত করে ধরে,, হয়তো বোকা মেয়ে রোদের এভাবে হাত ধরার কারনটাই বুঝতে পারে নি।

রোদ হয়তো এভাবে হাত ধরে বোঝাতে চেয়েছে আমি আছি,ভয় পেও না।হয়তো রোদ মুখে সব বলতে পারে না বাট এভাবে আলোকে কতটা ভালবাসে সেটা বোঝায়।হয়তো রোদ আলোকে বার বার কষ্ট দিয়ে নিজেই হাজার গুন কষ্ট পাচ্ছে।হুমম রোদ একটা ছেলে বলে হয়তো সব মনের কথা গুছিয়ে বলতে পারে না,হয়তো আলো এগুলোর কিছু বুঝে আবার কিছু বুঝেো না।রোদ হয়তো দেখাতে চায়না আলোর প্রতি রোদ কতটা দূর্বল।

রোদ আলোর হাত ধরে সামনে হাটছে,আলো পেছন পেছন ওর শাড়ির কুচি ধরে হাটছে,আলো সিড়ের উপর থেকে নিচে তাকাতে দেখে আবৃতি দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে,রোদ আলোকে এনে ওদের বসার জন্য যে জায়গাটা করা হয়েছে ওখানে বসিয়ে দেয়।আলোর কাছে আবৃতি এগিয়ে এসে,আলোকে জড়িয়ে ধরে, আলো কল্পনাও করে নি আবৃতির সাথে ওর আর দেখা হবে।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,,,

রোদঃতোমাকে খুঁজতে খুঁজতে আমরা যখন হোস্টেলে যেতাম,তখন আবিরের সাথে আবৃতির ভাল বন্ধু হয় তারপর দুজনের মাঝে রিলেশন এখন বাড়ির সবাই ওদের বিয়েও ঠিক করছে দুইমাস পরেই ওদের বিয়ের ডেট,,,।

আবৃতিঃতোমার নামে কেস করবো আমাদের অনেক কষ্ট করিয়েছো,,আর আমাকে রোদ ভাইয়াকেও অনেক কষ্ট দিয়েছো।একটা ছেলে দুইদিনের পরিচয়ে একটা মেয়েকে এত ভালবাসতে পারে সেটা রোদ ভাইয়াকে না দেখলে বুঝতাম না,আর কোন রাগ, বা অভিমান না এবার দুজন চুটিয়ে সংসার করো।আর আমাদের খুব তারাতারি খালামনি বানাও।

আলো লজ্জা পেল।

আবিরঃআরে ভাবি লজ্জা পাবেন না,আপনার কোন চিন্তা করতে হবে না।রোদ সব জানে সো যা করার রোদই করবে,আর আমি আবৃতি তো আছি আপনাদের সাহায্য করার জন্য।

আবৃতিঃ ছিঃ! ভাইয়ার সামনে আছে আমাদের,এগুলো কি বলো?

রোদঃতুই আর মানুষ হবি না ফাজিল,কোথায় কি বলতে হয় তাও জানিস না?আমার বউকে ফাসাতে গিয়ে যে তোর বউ লজ্জা পাচ্ছে আমার সামনে তার কোন হুশ নেই।

আবৃতিঃসেই হুশ থাকলে তো ভালোই হতো ভাইয়া,অসভ্য লোক একটা।

আবির চুপ করে গেল।

আবির আর রোদ কথা বলতে বলতে আর বাকি বন্ধুদের কাছে গেল,রোদ যাওয়া মাএই সবাই রোদের উপর হামলে পড়লো।কারন আজ কতদিন পর রোদকে সবাই হাসতে দেখছে।রোদের আম্মু আলোর সাথে রিলেটিভদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে আর আলো মিষ্টি হেসে সবাই সালাম দিয়ে হাসি হাসি মুখে কথা বলছে,আর রোদ একটু দুরে বসে সেটা দেখছে।আলোর পাশে আবৃতি বসে আছে টুকটাক কথা বলছে আর আলো সেগুলোর উওর দিচ্ছে।আলো একবার চারপাশে তাকালে বাট রোদকে কোথাও পেলো না,আলো তাকানোর আগেই রোদ আড়াল হয়ে যায়।আলো বেশ কয়েকবার রোদকে খুজলো বাট পেলো না।রোদের আম্মুকেও খুজলো বাট কাউকে পেলো না।রোদ বুঝতে পারছে আলোর কোন সমস্যা হয়েছে রোদ উঠতে গেলে,,ফাহাদ আটকে দেয়।

ফাহাদঃএখন বউ পেয়ে আমাদের কাছে মন বসছে না, আর কালকে রাতে কি কি হলো শোনায় তো হলো না।আর এখন এখান তোকে তো ছাড়াই যাবে না।

রোদঃআলো কিছু লাগবে মে বি দাঁড়া ভাই,আমি যাবো না আসবো।ওকে অনেক সময় থেকে দেখছি কেমন জানি ছটপট করছে আর তোদের লজ্জা করে না,এসব জিজ্ঞাসা করতে।

আবিরঃ লজ্জা এটা আবার কি জিনিস খায় নাকি মাথায় দেয়, আর আমাদের লজ্জা থাকলে তো লজ্জা করবে,আরে বল না ইয়ার।

বাকিরাঃঠিক ঠিক।

রোদঃ ভাই আমাকে ছাড় সত্যি বলছি আমি যাবো আর আসবো।

ফাহাদঃওকে ছেড়ে দিলাম।এসে কিন্ত শুনবো কাল রাতে মিশন কেমন চলছে।

রোদঃফাজিল একটা,,তুই বিয়ে কর তারপর লাইভে দেখিস আসলে মিশন কেমন চলে।

রোদ আলো কাছে গেলো আর আবির আবৃতিকে ইশারা করে ডেকে নিলো ওদের প্রাইভেসি দেওয়া জন্য।রোদ আলোর পাশের চেয়ারে দিয়ে বসে পড়লো আর আলোর দিকে তাকিয়ে দেখে, আলো কেদে দিবে এমন ফেস বানিয়ে রাখছে। রোদ ভ্রু কুচকে আলোর দিকে তাকায় আর আস্তে আস্তে বললো,,,

রোদঃকি সমস্যা এমন উশখুস করছো কেন?সেই কখন থেকে দেখছি এমন করছো কাহিনী কি?কিছু লাগলে আমাকে বলো।

আলোঃ আম্মু একটু ডেকে দিন না প্লিজ, আমি আম্মুকে বলবো(কাঁদো কাঁদো মুখে করে)

রোদঃ আম্মু তো বিজি আছে আমাকে বলো কি সমস্যা?তুমি কি ওয়াশরুমে যাবে?বললে বলো না বললে উঠলাম।

আলোঃআমার খুব কষ্ট হচ্ছে বসে থাকতে, আমি আর বসে থাকতে পারছি না।

রোদঃশরীর খারাপ করছে রুমে যাবো,কখন থেকে সমস্যা হচ্ছে?আমাকে ডাকো নি কেন? (উওেজিত হয়ে)

আলোঃ শরীর খারাপ লাগছে না একটু সমস্যা হচ্ছে আসলে,,ইয়ে মানে আমার,,,,আর কাউকে খুজে পাচ্ছিলাম না যে ডেকে বললো।

রোদঃআবৃতি বসে ছিলো ওকে দিয়ে আমাকে ডাকতে পাঠাতে,হুম এবার তো বলো,,,, এই মেয়ে তুমি কি বলবে?আমার সত্যি সত্যি খুব রাগ লাগছে,আলো।

আলোঃআসলে আমার পেটিকোটের নাড় খুব বেশি টাইট হয়ে গেছে,এজন্য আমি বসে থাকতে পারছি না।আমার খুব ব্যাথা লাগছে।আর আম্মুকেও পাচ্ছে না যে বলবো,আবার একা একা উঠে যেতে পারছি না।

রোদঃwhat???

চলবে,,,
(নো কিপ্টামি অনলি বড় বড় কমেন্ট।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here